বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের উড়িয়ে বাংলাদেশের ‘পঞ্চাশ’

দাপুটে ব্যাটিং-বোলিংয়ে টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচে দারুণ জয় পেয়েছে বাংলাদেশ।

শাহাদাৎ আহমেদ সাহাদচট্টগ্রাম থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 March 2023, 01:18 PM
Updated : 9 March 2023, 01:18 PM

ক্রিস জর্ডানের অফ স্টাম্পের বাইরের বল সাকিব আল হাসানের ব্যাটের বাইরের কানায় লেগে চলে গেল থার্ড ম্যানে। ঝাঁপিয়েও থামাতে পারলেন না ফিল্ডার। রান নিতে গিয়ে ঘুরে বল সীমানাছাড়া হতে দেখে থামলেন সাকিব। কাছে এসে তাকে জড়িয়ে ধরলেন আফিফ হোসেন। উদযাপন বলতে ব্যস এটুকুই! বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের উড়িয়ে দিয়েও উচ্ছ্বাসে ভেসে যায়নি বাংলাদেশ।

জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে বৃহস্পতিবার টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচে ইংল্যান্ডকে ৬ উইকেটে হারিয়েছে বাংলাদেশ। বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের ১৫৬ রান পেরিয়ে গেছে ১২ বল বাকি থাকতে। এই জয়ে তিন ম্যাচের সিরিজে এগিয়ে গেল সাকিবের দল। 

আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ১৪৫ ম্যাচে বাংলাদেশের এটি পঞ্চাশতম জয়। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দুই ম্যাচে প্রথম।  

এই জয়ের পর টেস্ট খেলুড়ে দেশগুলোর মধ্যে স্রেফ দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে জেতা বাকি রইল বাংলাদেশের।  

ওয়ানডে সিরিজের শেষ ম্যাচে দর্শকখরা দেখা গেলেও, প্রথম টি-টোয়েন্টিতে ইংল্যান্ডের ইনিংস শেষ হতে হতে কানায় কানায় ভরে যায় গ্যালারি। মাঠভর্তি দর্শককে স্মরণীয় জয় উপহার দিল সাকিবের দল।   

দাপুটে জয়ে ঝড়ো ফিফটি করেছেন নাজমুল হোসেন শান্ত, জিতেছেন ম্যাচ সেরার পুরস্কার। দারুণ ব্যাটিং করেছেন সাকিব, রনি তালুকদার ও অভিষিক্ত তৌহিদ হৃদয়। এর আগে চমৎকার বোলিংয়ে লক্ষ্যটা নাগালের মধ্যে রাখেন তরুণ পেসার হাসান মাহমুদ। 

বাংলাদেশের ৭৮তম ক্রিকেটার হিসেবে টি-টোয়েন্টি খেলতে নেমে ১৭ বলে ২৪ রান করেন হৃদয়। ২০১৫ সালে অভিষেকের পর ১০০ ম্যাচ বিরতি দিয়ে আবার খেলতে নেমে ২১ রান আসে রনির ব্যাট থেকে।  

ব্যাটসম্যানদের কাজটা অবশ্য সহজ করেন হাসান। তার দুর্দান্ত বোলিংয়ে শেষ ৫ ওভারে স্রেফ ৩০ রান তুলতে পারে ইংল্যান্ড, হারায় ৪ উইকেট। 

প্রথম দুই ওভারে ২১ রান দেওয়া হাসান নিজের শেষ দুই ওভারে খরচ করেন স্রেফ ৫ রান। এই দুই ওভারে তার শিকার বাটলার ও স্যাম কারান। সব মিলিয়ে ৪ ওভারে স্রেফ ২৬ রান খরচ তার। 

রান তাড়ায় শুরু থেকেই নিজেদের অভিপ্রায় পরিষ্কার করে দেন লিটন দাস ও রনি। দ্বিতীয় বলে বাউন্ডারি মারেন লিটন। দীর্ঘ ৮ বছর পর দলে ফেরা রনিও চার মেরে রানের খাতা খোলেন।

প্রথম তিন ওভারেই দুইটি করে বাউন্ডারি মারে বাংলাদেশ। স্কোরবোর্ডে যোগ হয় ৩২ রান।  

চতুর্থ ওভারে আক্রমণে এসে জুটি ভাঙেন আদিল রশিদ। তার গুগলি পড়তে পারেননি রনি। ৪ চারে ১৪ বলে ২১ রান করে ফেরেন তিনি। এক বল পর রিভিউ নিয়ে এলবিডব্লিউ থেকে বাঁচেন শান্ত। 

তবে পরের ওভারে ড্রেসিং রুমের পথ ধরেন লিটন। জফ্রা আর্চারের অফ স্টাম্পের বাইরের বল পুল করেত গিয়ে হাওয়ায় ভাসিয়ে দেন তিনি। সহজ ক্যাচ নেন ওকস। ২ চারে ১০ বলে ১২ রান করেন লিটন।

চার নম্বরে নেমে অভিষিক্ত হৃদয় ওকসকে মারেন জোড়া চার। পাওয়ার প্লে শেষে বাংলাদেশের স্কোর দাঁড়ায় ২ উইকেটে ৫৪ রান। সপ্তম ওভারে মার্ক উডকে টানা চার বলে চারটি বাউন্ডারি মারেন শান্ত।  

সব মিলিয়ে টানা ছয় বাউন্ডারিতে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ মুঠোয় পেয়ে যায় বাংলাদেশ। শান্ত-হৃদয়ের আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে ১০ ওভারে স্বাগতিকরা করে ৯৮ রান। শেষ ১০ ওভারে তাদের প্রয়োজন ছিল কেবল ৫৯ রান।  

দ্বাদশ ওভারে মইন আলির বলে ছক্কা মারতে গিয়ে মিড উইকেটে স্যাম কারানের হাতে ক্যাচ তুলে দেন হৃদয়। ২ চার ও ১ ছয়ে ১৭ বলে ২৪ রান করেন বিপিএল মাতানো তরুণ। শান্তর সঙ্গে তৃতীয় উইকেট জুটিতে ৩৯ বলে উপহার দেন ৬৫ রানের জুটি। 

হৃদয় আউট হওয়ার আগের বলে ১ রান নিয়ে ক্যারিয়ারের তৃতীয় ফিফটি করেন শান্ত। স্রেফ ২৭ বলে ৮ চারে পঞ্চাশে পৌঁছান বিপিএলের গত আসরে সর্বোচ্চ রান করা বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। 

তবে ফিফটির পর এগোতে পারেননি শান্ত। মার্ক উডের হঠাৎ নিচু হয়ে যাওয়া গতিময় ডেলিভারিতে বোল্ড হন তিনি (৩০ বলে ৫১)। 

দুই ওভারে দুই উইকেট হারালেও দলের বিপদ আর বাড়তে দেননি সাকিব ও আফিফ হোসেন। দুজনের ৩৪ বলে ৪৬ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে সহজ জয় পায় বাংলাদেশ। সাকিব ২৪ বলে ৩৪ ও আফিফ ১৩ বলে ১৫ রান করেন।

এর আগে চলতি সফরে টানা চতুর্থবার টস হারেন জস বাটলার। ব্যাটিংয়ে নেমে ফিল সল্টকে নিয়ে দারুণ শুরু করেন ইংলিশ অধিনায়ক। পাওয়ার প্লেতে কোনো উইকেট না হারিয়ে ৫১ রান নেয় সফরকারীরা।  

পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে দুই ওপেনারই ফিরতে পারতেন। প্রথম বলে ২০ রানে থাকা সল্টের ফিরতি ক্যাচ ছাড়েন নাসুম আহমেদ। দুই বল পর মিড অনে বাটলারের সহজতম ক্যাচ ছাড়েন সাকিব। ইংলিশ অধিনায়ক তখন ছিলেন ১৯ রানে। 

জীবন পেয়েও কাজে লাগাতে পারেননি সল্ট। ৯ ওভার শেষে তার নামের পাশে ছিল ৩১ বলে ৩১ রান। দশম ওভারের শেষ বলে তাকে কট বিহাইন্ড করেন নাসুমই। ৪ চার ও ১ ছয়ে ৩৫ বলে ৩৮ রান করেন ইংলিশ ওপেনার। 

বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি দাভিদ মালান। সাকিবের বলে ছক্কার চেষ্টায় লং অনে ধরা পড়েন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান।   

সল্ট ব্যর্থ হলেও দ্বিতীয় জীবনের সদ্ব্যবহার করেন বাটলার। দ্রুত দুই উইকেট পড়ার পর তৃতীয় উইকেটে বেন ডাকেটকে নিয়ে গড়েন ৪৭ রানের জুটি।  

হাসান মাহমুদের করা ১৩তম ওভারের শেষ দুই বলে ছক্কা মারেন বাটলার। প্রথমটি দিয়ে পৌঁছে যান ব্যক্তিগত পঞ্চাশে। ক্যারিয়ারের ২০তম ফিফটি করতে ৩২ বল খেলেন তিনি। মারেন ৩টি করে চার ও ছয়।

১৫ ওভারে ১২৬ রান করে বিশাল সংগ্রহের পথে ছুটছিল ইংল্যান্ড। দুর্দান্ত ডেথ বোলিংয়ে তাদেরকে ধরাছোঁয়ার বাইরে যেতে দেননি হাসান। তাকে দারুণ সঙ্গ দেন তাসকিন আহমেদ ও মুস্তাফিজুর রহমান। 

১৬তম ওভারের শেষ বলে চমৎকার স্লোয়ারে ডাকেটকে (১৩ বলে ২০) বোল্ড করেন মুস্তাফিজ। পরের ওভারের প্রথম বলে হাসানকে ছক্কা মারতে গিয়ে ওয়াইড লং অনে ধরা পড়েন বাটলার। ৪টি করে চার-ছয়ে ৪২ বলে ৬৭ রান করেন তিনি। 

অধিনায়কের বিদায়ের পর বাকি ব্যাটসম্যানরা কিছু করতে পারেননি। 

হাসান ছাড়া বাংলাদেশের বাকি চার বোলারের সবাই নেন ১টি করে উইকেট। সাকিব ২৬, নাসুম ৩১, মুস্তাফিজ ৩৪ ও তাসকিন দেন ৩৫ রান। 

সংক্ষিপ্ত স্কোর:  

ইংল্যান্ড: ২০ ওভারে ১৫৬/৬ (সল্ট ৩৮, বাটলার ৬৭, মালান ৪, ডাকেট ২০, মইন ৮*, কারান ৬, ওকস ১, জর্ডান ৫*; নাসুম ৪-০-৩১-১, তাসকিন ৪-০-৩৫-১, মুস্তাফিজ ৪-০-৩৪-১, সাকিব ৪-০-২৬-১, হাসান ৪-০-২৬-২)  

বাংলাদেশ: ১৮ ওভারে ১৫৭/২ (লিটন ১২, রনি ২১, শান্ত ৫১, তৌহিদ ২৪, সাকিব ৩৪, আফিফ ১৫*; কারান ২-০-১৮-০, ওকস ২-০-২১-০, আর্চার ৩-০-২৭-১, রশিদ ৩-০-২৫-১, উড ২-০-২৪-১, মইন ৪-০-২৭-১, জর্ডান ২-০-১৬-০)  

ফল: বাংলাদেশ ৬ উইকেটে জয়ী 

ম্যান অব দা ম্যাচ: নাজমুল হোসেন শান্ত