সিলেটের মাঠে শেষ ম্যাচেও স্ট্রাইকার্সের হার, শীর্ষে রংপুর রাইডার্স

এক ম্যাচ জয়ের পরই আবার সেই পুরোনো চেহারায় সিলেট স্ট্রাইকার্স, বাবর আজম-নুরুল হাসান সোহানদের হাত ধরে সবার ওপরে রংপুর।

ক্রীড়া প্রতিবেদকসিলেট থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Feb 2024, 04:49 PM
Updated : 3 Feb 2024, 04:49 PM

সিলেট স্ট্রাইকার্সের ম্যাচ সন্ধ্যায়। কিন্তু স্টেডিয়ামে রেশ বেশ আগে থেকেই। বিকেল গড়ানোর আগেই গ্যালারির অনেকটা ভরে গেল গোলাপি জার্সি গায়ে দর্শকে। সমর্থনের কোনো কমতি নেই। কিন্তু শুধু দর্শকের জোয়ারে তো আর ম্যাচ জেতা যায় না। মাঠের পারফরম্যান্সে মিইয়ে থাকল তারা। আরও একবার মুখ থুবড়ে পড়ল ব্যাটিং লাইন আপ। রংপুর রাইডার্সের বিপক্ষে বড় পরাজয়ে শেষ হলো নিজ শহরের মাঠে তাদের যাত্রা।

সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শনিবার ৭৭ রানে হেরেছে সিলেট স্ট্রাইকার্স। ১৬৩ রানের লক্ষ্যে ১৯ বল বাকি থাকতেই তারা গুটিয়ে গেছে স্রেফ ৮৫ রানে। 

ঘরের মাঠে পাঁচ ম্যাচের মধ্যে চারটিই হারল সিলেট। সব মিলিয়ে সাত ম্যাচে স্রেফ এক জয়ে তলানিতে পড়ে রইল গতবারের রানার্স-আপরা। 

ছয় ম্যাচে রংপুরের চতুর্থ জয় এটি। নেট রান রেটে খুলনা টাইগার্সের চেয়ে এগিয়ে থেকে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে উঠে গেছে তারা। 

রান তাড়ায় শুরু থেকেই নিয়মিত উইকেট হারায় সিলেট। একবারের জন্যও ম্যাচ জেতার কোনো সুযোগ তৈরি করতে পারেনি তারা। প্রথম ওভারের শেষ বলে ড্রেসিং রুমে ফেরেন হ্যারি টেক্টর।

পরের ওভারে শেখ মেহেদি হাসানের প্রথম বলেই ক্রিজ ছেড়ে মারতে গিয়ে ক্যাচ দেন নাজমুল হোসেন শান্ত। শর্ট ফাইন লেগে দারুণ ক্যাচ নেন হাসান মাহমুদ।

১ রানে আউট হয়ে টানা পাঁচ ম্যাচে দুই অঙ্ক ছুঁতে ব্যর্থ সিলেটের ভরসার ওপেনার। সাত ম্যাচে তার সংগ্রহ সাকুল্যে ৭৩ রান। 

পাওয়ার প্লেতে জাকির হাসান ও মোহাম্মদ মিঠুনকেও হারায় সিলেট। মেহেদির বলে কাট খেলতে গিয়ে ব্যাটে লাগাতে পারেননি জাকির। ফলো থ্রুতে মুহূর্তের জন্য উঠে যায় তার পেছনের পা। দারুণ উপস্থিত বুদ্ধি দেখিয়ে স্ট্যাম্প ভেঙে দেন নুরুল হাসান সোহান। ৪ রানে স্টাম্পড জাকির।

ষষ্ঠ ওভারে আক্রমণে এসে কোনো রান না দিয়েই উইকেট নেন সাকিব আল হাসান। ওভারের শেষ বলে ঝুলিয়ে দেওয়া ডেলিভারিতে মিড অনে ক্যাচ দেন মোহাম্মদ মিঠুন। নিজের পরের ওভারে সামিত প্যাটেলকে বিদায় করেন সাকিব।

নবম ওভারে হাসান মাহমুদের শিকার শামসুর রহমান। ৩০ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে তখন বিব্রতকর অবস্থায় সিলেট।

মাঠে তখনও রয়ে যাওয়া দর্শকদের কিছুটা বিনোদনের সুযোগ করে দেন রায়ান বার্ল। সাকিবের শেষ ওভারে দুটি ছক্কা মারেন জিম্বাবুয়ের ব্যাটসম্যান। পরের ওভারে মেহেদিকেও ওড়ান ছক্কায়। 

মোহাম্মদ নাবির বলে ছক্কা মারতে গিয়ে শেষমেশ থামে বার্লের ইনিংস। ৩টি করে চার-ছক্কায় ৩২ বলে ৪৩ রান করেন তিনি। পরের বলেই রিচার্ড এনগারাভাকে বোল্ড করে জয়ের আনুষ্ঠানিকতা সারেন নাবি।

১৩ রানে ৩ উইকেট নেন মেহেদি। শেষ ওভারে খরুচে বোলিংয়ের পরও ২ উইকেটের জন্য ৪ ওভারে সাকিব দেন স্রেফ ১৮ রান।

ম্যাচের প্রথমভাগে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে আরও একবার ব্যর্থ রংপুরের ওপেনার ব্র্যান্ডন কিং। দ্বিতীয় ওভারে সামিত প্যাটেলের সোজা যাওয়া ডেলিভারি ব্যাট-প্যাডের ফাঁক গলে আঘাত করে স্ট্যাম্পে।

তিন নম্বরে নেমে বাবর আজমের সঙ্গে ৫১ রানের জুটি গড়েন ফজলে মাহমুদ রাব্বি। বোলারদের গতি কাজে লাগিয়ে একের পর এক বাউন্ডারি আদায় করতে থাকেন বাবর।

পাওয়ার প্লেতে রংপুর করে ১ উইকেটে ৪৬ রান। যেখানে বাবরের অবদান ২০ বলে ৩৬ রান। 

নবম ওভারে আক্রমণে এসে জোড়া আঘাত করেন হ্যারি টেক্টর। তৃতীয় বলে ছক্কা মারতে গিয়ে লং অফে ক্যাচ দেন ২১ বলে ১৪ রান করা ফজলে। পরের বলে এলবিডব্লিউ হন সাকিব আল হাসান।

আগের দুই ম্যাচে ব্যাটিং না করা সাকিব এদিন চার নম্বরে নেমে প্রথম বলেই ল্যাপ শটের মতো খেলার চেষ্টা করেন। বল আঘাত করে প্যাডে। বাবরের সঙ্গে লম্বা সময় আলোচনার পর রিভিউয়ের সিদ্ধান্ত নেন তিনি। কিন্তু ততক্ষণে পেরিয়ে যায় নির্ধারিত ১৫ সেকেন্ড। রিপ্লেতে দেখা যায়, বলের 'ইমপ্যাক্ট' ছিল অফ স্ট্যাম্পের বাইরে। অর্থাৎ রিভিউ নিলে বেঁচে যেতেন সাকিব।

এরপর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি বাবরও। সামিত প্যাটেলের বলে এলবিডব্লিউ হন পাকিস্তানি ব্যাটসম্যান। ৭ চারে ৩৭ বলে ৪৭ রান করেন তিনি।

পাঁচে নেমে দলের দায়িত্ব নেন নুরুল হাসান সোহান। উদ্ভাবনী সব শটে উইকেটের চারপাশে রান করতে থাকেন রংপুর অধিনায়ক। রেজাউর রহমান রাজার বলে লং অফ দিয়ে মারেন ম্যাচের প্রথম ছক্কা। পরের বলে কিপারের মাথার ওপর দিয়ে মারেন বাউন্ডারি।

ছন্দে থাকা আজমাতউল্লাহ ওমারজাইও ধরে রাখেন ধারা। ষোড়শ ওভারে আরিফুল হককে এক চারের পর দুটি ছক্কায় ওড়ান আফগান অলরাউন্ডার। ওই ওভারের শেষ বলে আরও আগ্রাসী হওয়ার চেষ্টায় লং অফে ধরা পড়েন ১৪ বলে ২২ রান করা ওমারজাই।

এরপর দলকে দেড়শর কাছে নেন সোহান। রাজার স্লোয়ার বলে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে ডিপ স্কয়ারে ক্যাচ দেন তিনি। সমাপ্তি ঘটে ৫ চার ও ১ ছক্কায় খেলা ৩০ বলে ৪৬ রানের ইনিংসের।

শেষ ওভারে এনগারাভার বলে ১৩ রান নেন শামীম হোসেন ও মোহাম্মদ নাবি। রংপুর পৌঁছে যায় ১৬২ রানে। সেই রানকে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারেনি সিলেট।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

রংপুর রাইডার্স: ২০ ওভারে ১৬২/৭ (কিং ১, বাবর ৪৭, ফজলে ১৪, সাকিব ০, সোহান ৪৬, ওমারজাই ২২, নাবি ৭, শামিম ১০*; এনগারাভা ৪-০-৪১-১, সামিত ৪-০-১৪-২, নাঈম ৩-০-১৭-০, রাজা ৩-০-৩৮-১, টেক্টর ৩-০-২৪-২, আরিফুল ৩-০-২৭-১)

সিলেট স্ট্রাইকার্স: ১৬.৫ ওভারে ৮৫ (শান্ত ১, টেক্টর ৬, সামিত ১১, জাকির ৪, মিঠুন ১, শামসুর ৩, বার্ল ৪৩, আরিফুল ৫, নাঈম ৬, রাজা ১*, এনগারাভা ০; ওমারজাই ৩-০-১৭-১, মেহেদি ৩-০-১৩-৩, সাকিব ৪-১-১৮-২, হাসান ৩-০-১২-১, নাবি ২.৫-০-১৭-৩, রনি ১-০-৬-০)

ফল: রংপুর রাইডার্স ৭৭ রানে জয়ী

ম্যান অব দা ম্যাচ: নুরুল হাসান সোহান