সাজ্জাদুলের ৭ ছক্কার ঝড় ছাপিয়ে শেখ মেহেদির হ্যাটট্রিকে প্রাইম ব্যাংকের রুদ্ধশ্বাস জয়

বিধ্বংসী ইনিংস খেলে অসাধারণ এক জয়ের আশা জাগিয়েও শেষ পর্যন্ত পারলেন না সাজ্জাদুল, খরুচে বোলিংয়ের পরও শেষ তিন বলে উইকেট নিয়ে ম্যাচের নায়ক শেখ মেহেদি হাসান।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 March 2024, 01:39 PM
Updated : 17 March 2024, 01:39 PM

ঢিমেতালে এগোতে থাকা ম্যাচ জমে উঠল শেষ দিকে। শেষ ওভারে তো উত্তেজনা পৌঁছে গেল তুঙ্গে। জয়ের জন্য ৫ বলে সিটি ক্লাবের প্রয়োজন যখন ১৪ রান, শেখ মেহেদি হাসানের টানা দুই বলে চার ও ছক্কা মেরে দিলেন সাজ্জাদুল হক। ম্যাচ তখন বলা যায় তাদের মুঠোয়। কিন্তু বেদম মার খেয়ে তুলাধুনা হলেও হাল ছাড়লেন না শেখ মেহেদি। ওভারের চতুর্থ বলে বিদায় করে দিলেন তিনি সাজ্জাদুলকে। পরের দুই বলেও আদায় করে নিলেন উইকেট। ম্যাচের শেষ তিন বলে হ্যাটট্রিক করে প্রাইম ব্যাংককে এনে দিলেন তিনি রোমাঞ্চকর এক জয়। 

ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের তুমুল উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচে সিটি ক্লাবকে ৩ রানে হারিয়ে জয়ের ধারা ধরে রাখল প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব। 

বিকেএসপি চার নম্বর মাঠে পারভেজ হোসেন ইমনের টানা দ্বিতীয় সেঞ্চুরি ও জাকির হাসানের ৭৭ বলে ৭৯ রানের ইনিংসে প্রাইম ব্যাংক ৫০ ওভারে তোলে ৩০৫ রান। রান তাড়ায় অসাধারণ এক জয়ের সম্ভাবনা জাগিয়েও সিটি ক্লাব থামে ৩০২ রান করে। 

ম্যাচে নাটকীয়তা ফেরানো সাজ্জাদুল ৫ চার ও ৭ ছক্কায় খেলেন ৩৭ বলে ৭৬ রানের ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস। তবে একদম শেষবেলায় গিয়ে গড়বড় করেন তিনি। তীরে গিয়ে তরি ডোবে সিটি ক্লাবের।

শক্তিশালী প্রতিপক্ষের সঙ্গে রান তাড়ায় প্রথম থেকেই জুটি গড়ে তুলেছে সিটি ক্লাব। উদ্বোধনী জুটিতে সাদিকুর রহমান ও জয়রাজ শেখ তোলেন ৬০ রান। পরের জুটিতে জয়রাজের সঙ্গে শাহরিয়ার কমলের জুটি ৭৬ রানের। এমনকি পরের দুই জুটিতেও আসে ৪৬ ও ৪৭ রান। তবে তিনশর বেশি রান তাড়ার গতি ছিল না তাদের ব্যাটে। 

৪০ বলে ৩৫ করে আউট হন সাদিকুর, জয়রাজের ৫৫ রান আসে ৭৮ বলে। অধিনায়ক কমল ৬৬ রান করতে খেলেন ৮৪ বল, রাফসান আল মাহমুদ করেন ৪৫ বলে ৩৬। 

একটা সময় মনে হচ্ছিল, প্রাইম ব্যাংক সহজেই জিতে যাবে। কিন্তু সাজ্জাদুল নেমে বদলে দেন ম্যাচের চিত্র। 

শেষ ৯ ওভারে সিটি ক্লাবের প্রয়োজন ছিল ১১১ রান। সেই লক্ষ্যের পেছনে ছুটেই দলকে স্বপ্ন দেখান সাজ্জাদুল। তার তান্ডবের শুরু ৪৪তম ওভারে শেখ মেহেদিকে দুটি ছক্কা মেরে। এই অফ স্পিনারের পরের ওভারে তিনি মারেন ছক্কা-চার। নাঈম ইসলামের ওভারে মারেন দুটি ছক্কা। ৪৯তম ওভারের শেষ দুই বলে চার ও ছক্কা মারেন তিনি হাসান মাহমুদের বলে।

আরেক প্রান্তে আশিক-উল-আলমের ক্যামিও ইনিংসটিও ছিল দারুণ কার্যকর। ৩৪ বলে ৭৩ রানের জুটি গড়ে তোলেন দুজন। 

শেষ ওভারে ১৫ রানের সমীকরণে বোলিংয়ে আসেন শেখ মেহেদি। প্রথম বলে লেগ বাই থেকে আসে একটি রান। স্ট্রাইক পান সাজ্জাদুল। পরের দুই বলে চার ও ছক্কা মেরে দলকে নিয়ে যান জয়ের কিনারায়। তিন বলে প্রয়োজন আর চার রান। 

প্রাইম ব্যাংকের হার তখন মনে হচ্ছিল অবধারিত। কিন্তু আরেকটি ছক্কার চেষ্টায় সাজ্জাদুল ধরা পড়েন মিড উইকেট সীমানায়। পরের দুই বলে ইফরান হোসেন ও মইনুল ইসলামকে টানা দুই বলে এলবিডব্লিউ করে দেন শেখ মেহেদি। হ্যাটট্রিক করার পাশাপাশি দলকে এনে দেন জয়ের আনন্দ। 

ম্যাচের প্রথম ভাগে প্রাইম ব্যাংক ব্যাটিংয়ে নামে টস হেরে। শুরুটা ভালো হয়নি তাদের। অধিনায়ক তামিম ইকবাল তৃতীয় ওভারে বিদায় নেন ১১ বলে ৬ রান করে। তবে পারভেজ হোসেন ও জাকির হাসানের দারুণ জুটিতে শক্ত ভিত গড়ে তোলে তারা।

আগের ম্যাচে ১২৯ বলে ১৫১ রানের ইনিংস খেলা পারভেজ এ দিনও এগোতে থাকেন স্বচ্ছন্দে। তিনে নেমে আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে দলের রান বাড়ান জাকির। জুটিতে আসে ১৫৭ রান। 

জাকির ৭৭ বলে ৭৯ করে বিদায় নিলেও পারভেজ ঠিকই পৌঁছে যান টানা দ্বিতীয় সেঞ্চুরিতে। এরপর অবশ্য আর টিকতে পারেননি তিনি। ৫টি করে চার ও ছক্কায় তার ইনিংস থামে ১১৪ বলে ১০০ করে।

আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান শাহাদাত হোসেনকে এ দিন নামানো হয় ছয়ে। ৪০ ওভারের পর নেমে বিদায় নেন তিনি ১ রানেই। 

২৯ বলে ৪২ রান করে শেষ দিকে রান বাড়ান মোহাম্মদ মিঠুন। শেখ মেহেদি ২৫ বলে করেন ১৮। আগের ম্যাচে ৩৮০ রান তোলা প্রাইম ব্যাংক আবার তিনশ ছাড়িয়ে যায়। 

শেখ মেহেদি পরে বল হাতে বেধড়ক পিটুনি খেলেও শেষের নায়ক তিনি। ম্যাচ সেরার পুরস্কারও ওঠে তার হাতেই। 

প্রাইম ব্যাংকের এটি তিন ম্যাচে তৃতীয় জয়, সিটি ক্লাবের তৃতীয় হার। 

সংক্ষিপ্ত স্কোর: 

প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব: ৫০ ওভারে ৩০৫/৮ (তামিম ৬, পাভেজ ১০০, জাকির ৭৯, নাঈম ২২, মিঠুন ৪২, শাহাদাত ১, শেখ মেহেদি ১৮, এনামুল ৪, সানজামুল ১০*, হাসান ১*, ইফরান ১০-০-৪৮-১, মেহেদ ১০-০-৬৪-৪, সঞ্জিত ৮-০-৫৩-১, নাইমুর ৫-০-৩৩-১, রাফসান ৭-০-২৪-০, আশিক ৩-০-২৭-০, মইনুল ৭-০-৪১-১) 

সিটি ক্লাব : ৫০ ওভারে ৩০২/৭ (সাদিকুর ৩৫, জয়রাজ ৫৫, কমল ৬৬, রাফসান ৩৫, সাজ্জাদুল ৭৬, আশিক ২৪*, ইফরান ০, মইনুল ০; হাসান ১০-১-৫৬-০, এনামুল ১০-১-৫০-০, মেহেদি ১০-০-৮৬-৪, নাজমুল অপু ১০-০-৪৭-১, সানজামুল ৮-১-৩৬-১, নাঈম ২-০-২২-০) 

ফল: প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব ৩ রানে জয়ী

ম্যান অব দা ম্যাচ: শেখ মেহেদি হাসান