ছোট রানের ম্যাচে রাজার দারুণ বোলিংয়ে সিলেটের জয়

রাজার ক্যারিয়ার সেরা বোলিং, নতুন দলের হয়ে জয়ে শুরু বিপিএলের সফলতম অধিনায়ক মাশরাফির।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Jan 2023, 10:05 AM
Updated : 6 Jan 2023, 10:05 AM

বিপিএলের মিরপুর পর্ব মানেই মন্থর উইকেট আর কম রানের খেলা। নতুন আসরের প্রথম ইনিংসেও দেখা গেল সেই চেনা চিত্র। ধীরগতির ও অসম বাউন্সের উইকেটে দুর্দান্ত বোলিং উপহার দিলেন রেজাউর রহমান রাজা ও মোহাম্মদ আমির। সঙ্গে যোগ হলো ব্যাটসম্যানদের বাজে প্রদর্শনী। সব মিলিয়ে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স আটকে গেল অল্পতেই। বড় জয়ে বিপিএল শুরু করল নতুন দল সিলেট স্ট্রাইকার্স।

বিপিএলের নবম আসরের প্রথম ম্যাচে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সকে ৮ উইকেটে হারাল সিলেট স্ট্রাইকার্স।

মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে শুক্রবার ২০ ওভারে চট্টগ্রাম তুলতে পারে স্রেফ ৮৯ রান। সিলেট জিতে যায় ৪৫ বল হাতে রেখেই।

সিলেটের সন্তান রাজা সিলেটের ফ্র্যাঞ্চাইজির হয়ে প্রথমবার খেলতে নেমে ৪ উইকেট নেন ১৪ রানে। ২১ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে প্রথমবার ৪ উইকেটের স্বাদ পেলেন এই পেসার, সেটিও নিজের আগের আসরের দলের বিপক্ষে।

সিলেটের পাকিস্তানি পেসার আমির ২ উইকেট নেন ৪ ওভারে স্রেফ ৭ রান দিয়ে।

টসের সময় চট্টগ্রাম অধিনায়ক শুভাগত হোম চৌধুরি বলেন, এই উইকেটে তাদের লক্ষ্য ১৪০-১৫০ রান। কিন্তু তারা যেতে পারেননি কাছাকাছিও।

শের-ই-বাংলার উইকেট যথারীতি ব্যাটিং সহায়ক নয় মোটেও। তবে একশর নীচে আটকে পড়ার মতোও নয়। চট্টগ্রামের ব্যাটসম্যানরা পারেননি টিকে থাকতে।

টস জিতে বোলিংয়ে নেমে প্রথম ওভারে আক্রমণে আসেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। প্রথম ওভারেই সিলেট অধিনায়ক দেখান দারুণ কিছু আউট সুইঙ্গার। বোঝার উপায় নেই, ৮ মাস পর কোনো ম্যাচ খেলতে নেমেছেন ৩৯ বছর বয়সী পেসার। গতি স্বাভাবিকভাবেই ছিল কম, কিন্তু অন্যান্য কিছুতে কমতি ছিল না। ওভারের শেষ বলে ওভার থ্রো থেকে একটি রান না হলে তিনি শুরু করতে পারতেন মেডেন ওভার নিয়ে।

মাশরাফির পরের ওভারে অবশ্য একটি সোজা ব্যাটে একটি ছক্কা মারেন মেহেদি মারুফ। তবে ওই ওভারেই পয়েন্ট থেকে জাকির হাসানের দুর্দান্ত সরাসরি থ্রো রান আউট করে দেয় মারুফকে। 

এরপর থেকে শুরু হয় চট্টগ্রামের একের পর এক ব্যাটসম্যানের আসা-যাওয়ার পালা। মোহাম্মদ আমিরের দুর্দান্ত ডেলিভারি ফেরায় আফগান ব্যাটসম্যান দারভিশ রাসুলিকে। রাজার বল পয়েন্টে তুলে দেন চট্টগ্রাম অধিনায়ক শুভাগত। 

পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে রান ওঠে কেবল ২১। মারুফের ওই ছক্কাই ছিল একমাত্র বাউন্ডারি।

আল আমিন ও আফিফ হোসেন এরপর চেষ্টা করেন একটি জুটি গড়ার। সেই চেষ্টাও সফল হয়নি খুব একটা। কলিন আকারম্যানের অফ স্পিনে দশম ওভারে জীবন পেলেও ওই ওভারেই স্টাম্পড হয়ে যান তিনি ২০ বলে ১৮ রান করে। 

পাকিস্তানি ব্যাটসম্যান উসমান খান পুল খেলে উইকেট বিলিয়ে আসেন পরের ওভারেই। রাজা এরপর বিদায় করেন প্রথম ভারতীয় হিসেবে বিপিএল খেলতে আসা উন্মুক্ত চাঁদকেও। 

এক প্রান্ত আগলে রাখা আফিফ হোসেনও কাজটা শেষ করতে পারেননি। ২৩ বলে ২৫ রান করে তিনি বিদায় নেন আমিরের বলে। মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরিকে ফিরিয়ে মাশরাফি ধরেন ম্যাচে একমাত্র শিকার। নিহাদউজ্জামানকে ফিরিয়ে রাজা দেখা পান চতুর্থ উইকেটের।

শেষ পর্যন্ত চট্টগ্রাম অলআউট হয়নি। তবে ৯০ রানও করতে পারেনি। 

উইকেট যেমনই হোক, এই স্কোর নিয়ে লড়াই করা কঠিন। চট্টগ্রামও তা পারেনি। সিলেটের ডাচ ওপেনার কলিন আকারম্যান তৃতীয় ওভারে আউট হয়ে গেলেও তাদের বিপাকে পড়তে হয়নি একদমই। নাজমুল হোসেন শান্ত ও জাকির হাসান দ্বিতীয় উইকেট জুটিতেই দলকে এগিয়ে নেন অনেকটা।

৬৩ রানের জুটি গড়েন দুজন। শান্ত এক প্রান্ত আগলে দলকে এগিয়ে নেন। গত মাসে ভারতের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে অভিষেকেই নজর কাড়া জাকির খেলেন আত্মবিশ্বাসী কিছু শট। তাতে রান বাড়তে থাকে দ্রুতই।

২ চার ও ১ ছক্কায় ২১ বলে ২৭ রান করে জাকির এলবিডব্লিউ হয়ে যান লঙ্কান বাঁহাতি স্পিনার মালিন্দা পুস্পাকুমারার বলে। তবে ৪১ বলে ৪৩ রান করে শান্ত ফেরেন দলের জয়কে সঙ্গী করেই।

নতুন দলের হয়ে জয় দিয়ে যাত্রা শুরু হলো বিপিএলের সফলতম অধিনায়ক মাশরাফির।

সংক্ষিপ্ত স্কোর: 

চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স: ২০ ওভারে ৮৯/৯ (মারুফ ১১, রাসুলি ৩, আল আমিন ১৮, শুভাগত ১, আফিফ ২৫, উসমান ২, চাঁদ ৫, মৃত্যুঞ্জয় ৩, নিহাদ ৮, পুস্পাকুমারা ৬*, মেহেদি রানা ২*; মাশরাফি ৪-০-১৮-১, আমির ৪-১-৭-২, রাজা ৪-০-১৪-৪, আকারম্যান ৩-০-২২-১, পেরেরা ৩-০-১৮-০)।

সিলেট স্ট্রাইকার্স: ১২.৩ ওভারে ৯০/২ (শান্ত ৪৩*, আকারম্যান ১, জাকির ২৭, মুশফিক ৬*; মৃত্যুঞ্জয় ৩.৩-০-১১-১, মেহেদি রানা ২-০-২৩-০, শুভাগত ২-০-১৩-০, পুস্পাকুমারা ২-০-২২-১, আফিফ ২-০-১০-০, নিহাদউজ্জামান ১-০-৮-০)।

ফল: সিলেট স্ট্রাইকার্স ৮ উইকেটে জয়ী।

ম্যান অব দা ম্যাচ: রেজাউর রহমান রাজা।