দুই বলে ১০ রানের চ্যালেঞ্জ জয়ের ‘বিশ্বাস ছিল’ জাদেজার

শেষ দুই ছক্কা ও চার মেরে চেন্নাইকে জেতানোর পর অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনিকে শিরোপা উৎসর্গ করলেন জাদেজা।  

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 May 2023, 07:10 AM
Updated : 30 May 2023, 07:10 AM

প্রথম তিন বল ইয়র্কার, পরেরটি অনেকটা ইয়র্কারের মতোই লো-ফুল টস। চার বলে স্রেফ তিন রান। বাকি দুই বলে ১০ রান নেওয়া তখন মনে হচ্ছিল অসম্ভবের কাছাকাছি। কিন্তু সেটিকেই সম্ভব করে চেন্নাই সুপার কিংসকে শিরোপার উৎসবে ভাসালেন রবীন্দ্র জাদেজা। দলকে জিতিয়ে অভিজ্ঞ এই অলরাউন্ডার বললেন, শেষের কাজটি দুরূহ হলেও বিশ্বাস হারাননি তিনি। 

আইপিএলের ফাইনালে সোমবার শেষ ওভারের নাটকীয়তায় মঞ্চে ছিলেন জাদেজা ও শিবাম দুবে। ৬ বলে প্রয়োজন ছিল ১৩ রান। বল হাতে আসেন মোহিত শর্মা, এবারের আইপিএলে যার পুনর্জন্ম হয়েছে। 

এমনিতে এবারের আসরে গতি বৈচিত্র, স্লোয়ার ও লেংথের বৈচিত্র দিয়ে অনেক উইকেট শিকার করেছেন মোহিত। কিন্তু ফাইনালে শেষ ওভারে বেছে নেন ইয়র্কার বা ব্লক হোলে বল করার সেই চিরায়ত ও নির্ভরযোগ্য কৌশল। তাতে সফলও হতে থাকেন। প্রথম বলে ইয়র্কারে রান নিতে পারেননি দুবে। পরের তিন বলে আসে তিনটি সিঙ্গেল। 

তবে ইয়র্কারের চেষ্টায় ঝুঁকির বড় জায়গা যেটি, সেটিই শেষ পর্যন্ত কাল হয়ে আসে মোহিতের জন্য। ২ বলে যখন প্রয়োজন ১০ রান, ইয়র্কারের চেষ্টায় লেংথে সামান্য গড়বড় হয়। ব্যস, বলের নিচে গিয়ে সোজা ব্যাটে বোলারের মাথার ওপর দিয়ে বল গ্যালারিতে পাঠান জাদেজা।

শেষ বলটি লেগ স্টাম্পে ইয়র্কার করতে চেয়েছিলেন মোহিত। কিন্তু এবার গড়বড় হয় আরও বেশি, লেগ স্টাম্পের বাইরে ফুল টস হয়ে যায়। ফাইন লেগের ফিল্ডার ছিল বৃত্তের ভেতরে। তাকে ফাঁকি দিয়ে বল বাউন্ডারিতে পাঠাতে খুব একটা বেগ পেতে হয়নি জাদেজাকে। 

ম্যাচের পর জাদেজা বললেন, শেষ ওভারে ১৩ রানের সমীকরণে তার পরিকল্পনা ছিল স্রেফ সজোরে ব্যাট চালানো।

“আমার স্রেফ ভাবনা ছিল, যত জোরে সম্ভব ব্যাট চালাতে হবে। প্রতিটি ডেলিভারিই তখন গুরুত্বপূর্ণ। আমি ভাবছিলাম, বল কোথায় যাবে না যাবে, এত চিন্তা করা যাবে না। যতটা পারি, জোরে মারতে হবে। আর কিছু ভেবে লাভ নেই।” 

সেই চেষ্টায় প্রথম চার বলে সফল হননি তারা। তাতে ম্যাচ চলে গিয়েছিল গুজরাট টাইটান্সের মুঠোয়। তবে সেখান থেকেও জয় বের করে নেওয়ার বিশ্বাস ছিল বলেই দাবি করলেন জাদেজা। শেষ দুই বলের জন্য বিশেষ পরিকল্পনাও ছিল তার।

“হ্যাঁ, অবশ্যই (বিশ্বাস ছিল)… ক্রিকেটে তো যে কোনো কিছুই হতে পারে। ওই দুই বলে আমার পরিকল্পনা ছিল, সোজা ব্যাটে খেলা। কারণ জানতাম যে, মোহিত স্লোয়ার বল করতে পারে, ইয়র্কার বা ওয়াইড ইয়র্কার করতে পারে। আমি তাই চাইছিলাম, সোজা ব্যাটে জোরে মারতে।” 

দলকে জিতিয়ে খ্যাপাটে দৌড়ে যখন মাঠময় ছুটে বেড়াচ্ছেন জাদেজা, তার দিকে তখন ছুটে যান মহেন্দ্র সিং ধোনি। এমনিতে আবেগের প্রকাশ খুব একটা দেখান না ধোনি। পরম আনন্দ কিংবা চরম হতাশা, সবকিছুতেই অনেকটা নির্লিপ্ত দেখা যায় তাকে। কিন্তু এবার ছুটে গিয়ে চেন্নাই অধিনায়ক কোলে তুলে নেন জাদেজাকে। 

জাদেজাও পরে বললেন, চেন্নাইয়ের এই শিরোপা ধোনির জন্যই। 

“দল হিসেবে আমরা এই জয় উৎসর্গ করব আমাদের স্পেশাল একজনকে-এমএস ধোনিকে। এই শিরোপা তার জন্য।” 

ফাইনালের ভেন্যু আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়াম গুজরাট টাইটান্সের ঘরের মাঠ। তবে এ দিন গ্যালারির প্রায় ৭৫ হাজার দর্শকের মধ্যে চেন্নাই সমর্থকও ছিলেন প্রচুর। চেন্নাইয়ের হলুদ জার্সি গায়ে হাজার হাজার দর্শককে দেখা যায় গ্যালারিতে। তাদের প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা জানালেন জাদেজা। 

“অসাধারণ লাগছে। এটা সত্যি বলতে আমার ঘরের মাঠের দর্শক, আমি তো গুজরাটেরই… তারা যেভাবে মাঠে এসেছেন এবং চেন্নাইকে সমর্থন দিয়েছেন, এটা অসাধারণ। যারা মাঠে এসেছেন, চেন্নাইকে সমর্থন করেছেন, সবাইকে অভিনন্দন। আপনারা আমাদের এভাবেই সমর্থন দিয়ে যাবেন। ভবিষ্যতেও আমরা আপনাদের ট্রফি এনে দেব।”