ভারত-নিউ জিল্যান্ড সিরিজ
প্রথম ইনিংসে ৪৬ রানে গুটিয়ে যাওয়া ভারত দ্বিতীয় ইনিংসে ওয়ানডের গতিতে রান তুলছে রোহিত, কোহলি ও সারফারাজের আগ্রাসী ফিফটিতে।
Published : 18 Oct 2024, 06:27 PM
বছর খানেক আগে বেঙ্গালুরুর এম চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে প্রথমবার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খেলতে নেমে রাচিন রাভিন্দ্রা সেঞ্চুরি করেছিলেন ওয়ানডে বিশ্বকাপে। সেই আঙিনায় এবার প্রথমবার টেস্ট খেলতে নেমেও দারুণ এক শতক উপহার দিলেন তরুণ এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। সঙ্গে টিম সাউদির ফিফটিতে নিউ জিল্যান্ড পেল বিশাল লিড। ওয়ানডে ঘরানার ব্যাটিংয়ে লড়াইয়ে ফেরার চেষ্টায় আছে ভারত।
সিরিজের প্রথম টেস্টের তৃতীয় দিন প্রথম ইনিংসে ৪০২ রান করে ৩৫৬ রানের লিড নেয় নিউ জিল্যান্ড। আগের দিন ৪৬ রানে গুটিয়ে যাওয়া ভারত শুক্রবারের খেলা শেষ করে দ্বিতীয় ইনিংসে ৩ উইকেটে ২৩১ রান নিয়ে। ওভারপ্রতি রান তুলেছে তারা ৪.৭১ করে। এখনও ১২৫ রানে পিছিয়ে আছে স্বাগতিকরা।
দুই দল মিলিয়ে এদিন হয়েছে ৪৫৩ রান। ভারতের মাটিতে টেস্টে এক দিনে যা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। আর সর্বোচ্চ ৪৭০ রান হয়েছিল ২০০৯ সালে মুম্বাইয়ের ব্রাবোর্ন স্টেডিয়ামে ভারত-শ্রীলঙ্কা টেস্টের দ্বিতীয় দিনে।
দিনের আলোচিত নাম অবশ্যই রাভিন্দ্রা। ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় টেস্ট সেঞ্চুরিতে ১৫৭ বলে ১৩ চার ও ৪ ছক্কায় ১৩৪ রানের চমৎকার ইনিংস খেলেন ২৪ বছর বয়সী ক্রিকেটার।
অষ্টম উইকেটে টিম সাউদিকে নিয়ে তিনি গড়েন ১৩২ বলে ১৩৭ রানের জুটি। সাউদির ব্যাট থেকে আসে ৫ চার ও ৪ ছক্কায় ৭৩ বলে ৬৫ রানের ইনিংস।
ভারতের হয়ে এদিন আগ্রাসী ফিফটিতে ৬৩ বলে ৫২ রান করেন অধিনায়ক রোহিত শার্মা। দিনের শেষ বলে আউট হওয়া ভিরাট কোহলি ১০২ বলে করেন ৭০ রান। ৭৮ বলে ৭০ রানে অপরাজিত আছেন সারফারাজ।
এই ইনিংসের পথে ভারতের চতুর্থ ব্যাটসম্যান হিসেবে টেস্টে ৯ হাজার রানের মাইলফলক পেরিয়েছেন কোহলি।
উইকেট ব্যাটিংয়ের জন্য এখনও বেশ ভালো। ভারত ম্যাচ কতদূর টেনে নিতে পারে, সেটিই এখন দেখার।
নিউ জিল্যান্ড তৃতীয় দিন শুরু করে ৩ উইকেটে ১৮০ রান নিয়ে। আগের দিন ২২ রানে অপরাজিত ছিলেন রাভিন্দ্রা। নতুন দিনের প্রথম বলেই চার মেরে শুরু করেন তিনি।
অন্য প্রান্তে যদিও নিউ জিল্যান্ড উইকেট হারায় নিয়মিত। আগের দিনের ১৪ রানের সঙ্গে আর ৪ রান যোগ করে মোহাম্মদ সিরাজের অফ স্টাম্পের বাইরের বলে গালিতে ক্যাচ দেন ড্যারিল মিচেল। টম ব্লান্ডেল টিকতে পারেন কেবল ৮ বল। জাসপ্রিত বুমরাহর দারুণ ডেলিভারিতে তিনি ক্যাচ দেন স্লিপে।
একটি ছক্কা মেরে রাভিন্দ্রা জাদেজার সোজা বলের লাইন মিস করে বোল্ড হন গ্লেন ফিলিপস। জাদেজার পরের ওভারে টানা দুটি চারের পর বোল্ড হন ম্যাট হেনরিও।
নিউ জিল্যান্ডের রান তখন ৭ উইকেটে ২৩৩, রাভিন্দ্রার ৪২। কিউইদের তিনশর নিচে থামানোর আশায় তখন ভারত। কিন্তু ভেস্তে যায় তাদের সব পরিকল্পনা।
সাউদির সঙ্গে দারুণ জুটিতে ছুটতে থাকেন রাভিন্দ্রা। ৯৯ থেকে রাভিচান্দ্রান অশ্বিনকে চার মেরে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন তিনি ১২৪ বলে।
২০১২ সালে রস টেইলরের পর এই প্রথম নিউ জিল্যান্ডের কেউ ভারতে টেস্ট সেঞ্চুরি করতে পারলেন। এক যুগ আগে এই মাঠেই ১১৩ রানের ইনিংস খেলেছিলেন টেইলর।
সাউদি শুরুতে স্রেফ সঙ্গ দিয়ে যান রাভিন্দ্রাকে। পরে তিনি এগিয়ে যান আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে। লাঞ্চের আগে শেষ ৪ ওভার থেকে দুজন মিলে তোলেন ৫৮ রান!
প্রথম ৩৮ বল ১৭ রান করা সাউদি পরের ১৯ বলে ছুঁয়ে ফেলেন ফিফটি। জুটির শতরান পূর্ণ হয় কেবল ৯০ বলে।
সিরাজকে একটি ছক্কার পরের বলে ক্যাচ দিয়ে সাউদি থামলে ভাঙে ১৩৭ রানের জুটি। ভারতের বিপক্ষে অষ্টম উইকেটে বা এর নিচে নিউ জিল্যান্ডের যৌথভাবে সর্বোচ্চ রানের জুটি এটি। ১৯৯৮ সালে ওয়েলিংটনে অষ্টম উইকেটেই ১৩৭ রানের জুটি গড়েছিলেন ডিওন ন্যাশ ও ড্যানিয়েল ভেটোরি।
ভারতের মাটিতে স্বাগতিকদের বিপক্ষে অষ্টম উইকেটে বা এর নিচে বড় জুটি আছে আর কেবল একটি। ১৯৮৩ সালে কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে নবম উইকেটে ১৬১ রানের জুটি গড়েছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্লাইভ লয়েড ও অ্যান্ডি রবার্টস।
এদিন চারবার বল হাওয়ায় ভাসিয়ে বাইরে পাঠিয়ে টেস্টে সবচেয়ে বেশি ছক্কার তালিকায় ভারতের ভিরেন্দার শেবাগকে (৯১) ছাড়িয়ে ষষ্ঠ স্থানে উঠে যান সাউদি (৯৩)।
তার বিদায়ের পর দলের স্কোর চারশ পার করেন রাভিন্দ্রা। শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হন তিনি কুলদিপ ইয়াদাভের বলে। নিজের আগের ওভারে এজাজ প্যাটেলকেও ফেরানো বাঁহাতি এই রিস্ট স্পিনার নেন ৩ উইকেট। জাদেজার শিকারও ৩টি।
দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে সতর্ক শুরু করেন রোহিত ও ইয়াসাসভি জয়সওয়াল। পরে রানের গতি বাড়ান রোহিত।
বাজে শটে উইকেট বিলিয়ে আসেন জয়সওয়াল। বাঁহাতি স্পিনার এজাজকে বেরিয়ে এসে খেলার চেষ্টায় বলের লাইন মিস করে স্টাম্পড হন তিনি (৫২ বলে ৩৫), ভাঙে ৭২ রানের শুরুর জুটি।
ম্যাট হেনরির টানা তিন বলে দুটি চার ও একটি ছক্কায় রোহিত ফিফটি পূর্ণ করেন ৫৯ বলে। পরের ওভারে দুর্ভাগ্যজনকভাবে আউট হয়ে যান তিনি। এজাজকে ডিফেন্স করেছিলেন ভারত অধিনায়ক, বল এক ড্রপ খেয়ে আঘাত হানে স্টাম্পে।
প্রথম ইনিংসে শূন্য রানে ফেরা দুই ব্যাটসম্যান কোহলি ও সারফারাজ এরপর হাল ধরেন দলের। আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে নিউ জিল্যান্ডের বোলারদের এলোমেলো করে দেন শুবমান গিলের চোটে একাদশে ফেরা সারফারাজ।
৩ ছক্কা ও ৪টি চারে সারফারাজ ফিফটি পূর্ণ করেন ৪২ বলে, কোহলির লাগে ৭০ বল। জুটিতে শতরান পূর্ণ হয় ১০১ বলে।
দিনের খেলা শেষ করে দেওয়ার পথেই ছিলেন দুজন। কিন্তু দিনের শেষ বলে ফিলিপসের জোরের ওপর করা ডেলিভারিতে ডিফেন্স করার চেষ্টায় কট বিহাইন্ড হন কোহলি।
নিউ জিল্যান্ডের খেলোয়াড়রা উদযাপন শুরু করে দেন কিপারের গ্লাভসে বল জমা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই, আম্পায়ার আঙুল তুলে দেন একটু পরে। সারফারাজের সঙ্গে আলোচনা করে রিভিউ নেন কোহলি। আল্ট্রাএজে ধরা পড়ে, বল সামান্য ছুঁয়ে গিয়েছিল তার ব্যাট।
কোহলি-সারফারাজের জুটিতে ১৩৬ রান আসে ১৬৩ বলে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ভারত ১ম ইনিংস: ৪৬
নিউ জিল্যান্ড ১ম ইনিংস: ৯১.৩ ওভারে ৪০২ (আগের দিন ১৮০/৩) (রাভিন্দ্রা ১৩৪, মিচেল ১৮, ব্লান্ডেল ৫, ফিলিপস ১৪, হেনরি ৮, সাউদি ৬৫, এজাজ ৪, ও'রোক ০*; বুমরাহ ১৯-৭-৪১-১, সিরাজ ১৮-২-৮৪-২, অশ্বিন ১৬-১-৯৪-১, কুলদিপ ১৮.৩-১-৭২-৩, জাদেজা ২০-১-৭২-৩)
ভারত ২য় ইনিংস: ৪৯ ওভারে ২৩১/৩ (জয়সওয়াল ৩৫, রোহিত ৫২, কোহলি ৭০, সারফারাজ ৭০*; সাউদি ৭-১-২২-০, হেনরি ১১-৫২-০, ও'রোক ১১-১-৪৮-০, এজাজ ১২-২-৭০-২, ফিলিপস ৮-১-৩৬-১)