নিউ জিল্যান্ড-ইংল্যান্ড সিরিজ
আগামীতে অর্জনের মুকুটে আরও অনেক পালক যোগ করার লক্ষ্য ইংলিশ পেসারের।
Published : 07 Dec 2024, 04:39 PM
১০ টেস্টের ছোট্ট ক্যারিয়ার গাস অ্যাটকিনসনের। এরই মধ্যে অনেক অর্জন ও কীর্তিতে নাম উঠে গেছে তার। ওয়েলিংটনে তো হ্যাটট্রিক করে ইতিহাসই গড়ে ফেলেছেন ইংলিশ পেসার। তবে তৃপ্তির ঢেকুর তুলতে নারাজ তিনি। বললেন, রেকর্ডের আরও অনেক পাতায় নাম লেখাতে মুখিয়ে থাকার কথা।
নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে চলমান দ্বিতীয় টেস্টে শনিবার স্বাগতিকদের শেষ তিন উইকেট টানা তিন বলে নিয়ে রেকর্ড গড়েন অ্যাটকিনসন। অনেক ইতিহাসের স্বাক্ষী বেসিন রিজার্ভে হ্যাটট্রিক করা প্রথম বোলার তিনি।
টেস্ট ক্রিকেটের ১৪৭ বছরের ইতিহাসে এটি ৪৭তম হ্যাটট্রিক, ইংলিশদের হয়ে ১৫তম। ইংল্যান্ডের জার্সি গায়ে তিন বলে তিন উইকেট নেওয়ার কীর্তি গড়া ১৪তম বোলার অ্যাটকিনসন। দুইবার এই স্বাদ পেয়েছেন দলটির পেস বোলিং গ্রেট স্টুয়ার্ট ব্রড।
ইংলিশদের হয়ে অ্যাটকিনসনের আগের হ্যাটট্রিকটি ছিল মইন আলির। ২০১৭ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে এই কীর্তি গড়েছিলেন স্পিনিং অলরাউন্ডার।
ন্যাথান স্মিথকে ফিরিয়ে হ্যাটট্রিকের পথে হাঁটা শুরু করেন অ্যাটকিনসন। তার বাড়তি লাফানো বল ছাড়তে গিয়ে একটু দেরি করে ফেলেন স্মিথ। বল তার ব্যাটে লেগে ছোবল দেয় স্টাম্পে।
বাড়তি লাফানো পরের দারুণ ডেলিভারিটির জবাব ছিল না ম্যাট হেনরির। ক্যাচ তুলে দেন তিনি গালিতে। এরপর টিম সাউদিকে এলবিডব্লিউ করে উল্লাসে মাতেন ২৬ বছর বয়সী অ্যাটকিনসন।
কিংবদন্তি জেমস অ্যান্ডারসনের শেষ টেস্টে গত জুলাইয়ে এই সংস্করণে অভিষেক হয় অ্যাটকিনসনের। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে লর্ডসের ওই ম্যাচে তার আলোর ছটায় কিছুটা যেন আড়ালে পড়ে যান টেস্ট ইতিহাসের সফলতম পেসার। অভিষেক টেস্টের দুই ইনিংসে অ্যাটকিনসনের প্রাপ্তি ছিল ৪৫ রানে ৭টি ও ৬১ রানে ৫টি।
অগাস্ট-সেপ্টেম্বরে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে লর্ডসে ৬২ রানে ৫ উইকেট নেওয়ার ম্যাচে অ্যাটকিনসন জ্বলে ওঠেন ব্যাট হাতেও। চমৎকার এক সেঞ্চুরি উপহার দিয়ে পুরুষ ক্রিকেটার হিসেবে সবচেয়ে দ্রুততম সময়ে লর্ডসের তিন অনার্স বোর্ডেই (ইনিংসে ৫ উইকেট, ম্যাচে ১০ উইকেট ও ব্যাট হাতে সেঞ্চুরি) নাম লেখান তিনি।
ক্রিকেটের অভিজাত সংস্করণে পারফরম্যান্সের ধারাবাহিকতা ধরে রেখে ১০ টেস্টেই ৪৭ উইকেট হয়ে গেছে তার। তিন বার পেয়েছেন ইনিংসে ৫ উইকেটের স্বাদ, আর দুইবার ৪ উইকেটের।
নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করে দারুণ খুশি অ্যাটকিনসন দিনের খেলা শেষে বললেন, আরও অর্জনের নাম লেখাতে মুখিয়ে আছেন তিনি।
“আপনি সবসময় আরও বেশি পেতে চান এবং লোভী হয়ে ওঠেন। যতটা সম্ভব লুফে নিতে চান, ভবিষ্যতে আমিও এমন চেষ্টাই করতে চাই।”
“দারুণ ব্যাপার ছিল। এটা এমন কিছু নয়, যা একজন বোলার হিসেবে ভাবনায় থাকে। বোলাররা পাঁচ উইকেট এবং দশ উইকেট নিয়ে ভাবে। অবশ্যই, ব্যক্তিগতভাবে এটা আমার জন্য দারুণ একটা বছর এবং আশা করছি আরও কিছু মাইলফলক অর্জন করতে পারব এবং দলকে সাহায্য করতে পারব।”
হ্যাটট্রিক বলটির জন্য লেগ সাইডে সীমানায় ফিল্ডার রাখেন অ্যাটকিনসন। ব্যাটসম্যানকে বোঝাতে চান যে, শর্ট বল আসছে। কিন্তু ব্যাটসম্যানকে বিভ্রান্ত করে ডেলিভারিটি করেন ফুল লেংথ ও সোজা। বল ছোবল দেয় সাউদির প্যাডে।
ওই বল করার আগে তার মাথায় কী ঘুরছিল, সেটাও তুলে ধরেন ইংলিশ পেসার।
“আমি পুরোপুরি তাকে বোকা বানানোর চেষ্টা করি। তিনি (সাউদি) এমন একজন যে, হ্যাটট্রিক বলও হাঁকাতে পারে। এটাই ছিল ভাবনা; হ্যাটট্রিক বল হলেও তিনি মারার চেষ্টা করতে পারেন।”
“আমি ইয়র্কার করার কথা ভাবছিলাম, ফুল অ্যান্ড স্ট্রেইট। আমি লেংথ কিছুটা মিস করি। তবে সৌভাগ্যক্রমে, প্যাডে আঘাত করার সময় ডেলিভারিটি সোজা এবং তুলনামূলকভাবে ফুল ছিল।”
অ্যাটকিনসনের কীর্তির দিনে ১২৫ রানেই গুটিয়ে যায় নিউ জিল্যান্ডের প্রথম ইনিংস। পরে ওভারপ্রতি প্রায় পাঁচ করে রান তুলে ৫ উইকেটে ৩৭৮ রান করে দ্বিতীয় দিন শেষ করে ইংল্যান্ড। প্রথম ইনিংসের ১৫৫ রানের লিড মিলিয়ে এখন তারা এগিয়ে ৫৩৩ রানে।