বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজ
ওয়েস্ট ইন্ডিজে টি-টোয়েন্টি সিরিজে অন্তত একটি ম্যাচে নাহিদকে খেলাতে চান ফিল সিমন্স, তবে তরুণ এই ফাস্ট বোলারের শারীরিক ধকলের দিকেও খেয়াল রাখার কথা জানালেন কোচ।
Published : 04 Dec 2024, 04:47 PM
টেস্ট ক্রিকেটের আঙিনায় গত কিছুদিনে বেশ আলোড়ন ফেলে দিয়েছেন নাহিদ রানা। গত মাসে দেশের জার্সিতে ওয়ানডে ক্রিকেটের স্বাদও পেয়ে গেছেন তিনি। এবার আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টির সীমানায়ও পা পড়তে যাচ্ছে তার। সময়ের আলোচিত তরুণ এই ফাস্ট বোলারকে ওয়েস্ট ইন্ডিজে টি-টোয়েন্টি সিরিজের বাংলাদেশ স্কোয়াডে রাখা হবে এবং অন্তত একটি ম্যাচে খেলানো হবে বলে জানিয়ে রাখলেন কোচ ফিল সিমন্স।
জ্যামাইকা টেস্টের পর ধারাভাষ্যকার ইয়ান বিশপের সঙ্গে আলোচনায় এটি জানান সিমন্স। তিন সংস্করণে খেলালেও তরুণ এই ফাস্ট বোলারের শারীরিক সামর্থ্যকে গুরুত্ব দেওয়ার কথাও জানিয়ে রাখেন কোচ।
গত মার্চে টেস্ট অভিষেকে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দুই ইনিংস মিলে পাঁচ উইকেট শিকার করা নাহিদ আরও নজর কাড়েন অগাস্টে পাকিস্তান সফরে। রাওয়ালপিন্ডিতে দ্বিতীয় টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে তার চার উইকেট বাংলাদেশকে এগিয়ে নেয় জয়ের পথে। শুধু উইকেট শিকারেই নয়, গতির ঝড় তুলে তিনি শিরোনামে উঠে আসেন ক্রিকেট বিশ্বে।
সেই পথ ধরে এবার জ্যামাইকা টেস্টে আগ্রাসী বোলিংয়ে ক্যারিবিয়ান ব্যাটিং বিধ্বস্ত করে টেস্ট ক্যারিয়ারে প্রথমবার ৫ উইকেটের স্বাদ পান তিনি। যথারীতি গতি দিয়ে নজর কাড়েন তিনি এখানেও। দেড়শ কিলোমিটার ছাড়িয়ে যান নিয়মিতই।
গত কয়েক মাসে নাহিদ রানাকে নিয়ে বেশ কবারই সামাজিক মাধ্যমে উচ্ছ্বসিত প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বিশপ। সাবেক ক্যারিবিয়ান ফাস্ট বোলার ও সময়ের জনপ্রিয় ধারাভাষ্যকারের তেমনই একটি প্রতিক্রিয়া দেখে তাকে ম্যাসেজ পাঠিয়েছিলেন সিমন্স। এক সময়ের দুই সতীর্থ তখন আলোচনা করেন নাহিদকে নিয়ে।
জ্যামাইকা টেস্ট শেষে হাসতে হাসতে সেই ঘটনার কথা উল্লেখ করে বিশপ জানতে চান নাহিদকে নিয়ে সিমন্সের পর্যবেক্ষণ। বাংলাদেশ কোচ বললেন, এই টেস্টের পর তার মুগ্ধতা বেড়ে গেছে আরও।
“শারজাহতে ওকে দেখে যতটা মুগ্ধ হয়েছিলাম, এখানে আরও বেশি হয়েছি। শারজাহতে একটি ওয়ানডে খেলেছিল সে (আফগানিস্তানের বিপক্ষে) এবং দারুণ করেছিল। কিন্তু এখানে এই ধরনের উইকেটে এতটা ধারাবাহিক হওয়া এবং লেংথে টানা বল রেখে যাওয়া (দারুণ)। গতকাল দিনের শেষ সময়েও সে ১৪৫ কিলোমিটারের আশেপাশে গতিতে বোলিং করছিল।”
গতি আর আগ্রাসন তো আছেই। কোচকে নাহিদ রানা আরও বেশি চমকে দিয়েছেন পরিণত মানসিকতা দেখিয়ে। ২২ বছর বয়সী ফাস্ট বোলারের সেই পরিপক্কতার গল্পও শোনালেন সিমন্স।
“তরুণ ফাস্ট বোলার সে। তার ম্যাচ পরিস্থিতি বুঝতে পারার সামর্থ্যকে আমরা কিছুটা অবমূল্যায়ন করেছিলাম হয়তো। কারণ মাঠে নামার আগে যেসব কথা সে আমাকে বলেছে, তার দিকে তাকিয়ে আমি বলেছি, ‘তুমি কি নিশ্চিত যে এটা তোমার চতুর্থ বা পঞ্চম টেস্ট ম্যাচ!’ তার গতি অবশ্যই দারুণ, তবে আরও বেশি মুগ্ধতা জাগানিয়া ব্যাপার তার শেখার তাড়না। সে উন্নতি করতে থাকবে এবং আমি নিশ্চিত, তার আরও অনেক কিছু আমরা দেখব।”
আরও অনেক কিছু দেখার সেই প্রক্রিয়াতেই সামনে দেখা যাবে টি-টোয়েন্টির নাহিদ রানাকে। বিশপ-সিমন্সদের সঙ্গে এই আলোচনার অংশ ছিলেন এই সিরিজে ধারাভাষ্য দেওয়া কোর্টনি ওয়ালশও। বাংলাদেশের সাবেক বোলিং কোচ কিংবদন্তি এই ফাস্ট বোলার তার খেলোয়াড়ি জীবনে ছিলেন দারুণ ফিট। ওভারের পর পর ওভার বিরামহীন বোলিং করে যাওয়া ও চোটমুক্ত থেকে ম্যাচের পর ম্যাচ খেলার সামর্থ্য তার ছিল। টেস্ট ক্রিকেটে ৩০ হাজারের বেশি ডেলিভারি করা প্রথম পেসার ছিলেন তিনি। ওয়ালশের উদাহরণ দিয়ে বিশপ জানতে চান নাহিদের ফিটনেস ও তাকে ঠিকভাবে সামলানোর ব্যাপার নিয়ে।
সিমন্স তখন জানান, টি-টোয়েন্টিতেও নাহিদকে বাজিয়ে দেখতে চান তারা। তবে তরুণ ফাস্ট বোলারের শারীরিক ধকলের ব্যাপারটিকেও গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানান কোচ।
“আমরা এটা নিশ্চিত করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি, তার বোলিংয়ের পরিমাণ যেন ভারসাম্যপূর্ণ রাখা যায়, যাতে আমরা তাকে চোট থেকে দূরে এবং তীক্ষ্ন রাখতে পারি। সে একটি ওয়ানডে খেলেছে। আশা করি, তাকে টি-টোয়েন্টি স্কোয়াডেও পাব, যাতে এখানে অন্তত একটি টি-টোয়েন্টিতে তাকে খেলাতে পারি। আমরা তাহলে দেখতে পাব তার ভেতর আর কী আছে। না খেলালে জানতে পারব না, এই সংস্করণে আমাদের দেওয়ার কী আছে তার।”
“ওয়ানডেতে সে আছে, টি-টোয়েন্টিতে তাকে পরখ করব এবং দেখব, সেখান থেকে কোথায় যেতে পারে সে। তবে হ্যাঁ, অবশ্যই যতটা ভালোভাবে সম্ভব তাকে ‘ম্যানেজ’ করার চেষ্টা করছি আমরা।”
নাহিদ এখনও পর্যন্ত ছয়টি টেস্ট সিরিজে বাংলাদেশ দলের সঙ্গে থাকলেও পাকিস্তান সফর ছাড়া অন্য কোনো সিরিজে তাকে একটির বেশি টেস্ট খেলানো হয়নি। গত মাসে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের স্কোয়াডে রাখা হলেও কেবল একটি ম্যাচ তাকে খেলানো হয়। দল হারলেও সেই ম্যাচে বেশ ভালো বোলিং করে দুই উইকেট শিকার করেন তিনি।