প্রশ্নগুলোকে জিইয়ে রেখেই বাংলাদেশের হার

ত্রিদেশীয় সিরিজের প্রথম ম্যাচে পাকিস্তানের কাছে হেরেছে বাংলাদেশ, সমাধান মেলেনি ঘাটতির জায়গাগুলোতে।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Oct 2022, 06:36 AM
Updated : 7 Oct 2022, 06:36 AM

ফলাফল নয়, প্রক্রিয়া-গত কিছুদিন ধরে বাংলাদেশ দলের স্লোগান এটিই। ফলের কথা না ভেবে প্রক্রিয়া অনুসরণ করার কথা কোচিং স্টাফ থেকে শুরু করে ক্রিকেটার, সবার কণ্ঠে। তবে মাঠের ক্রিকেটে মিলছে না ফলাফল, না পড়ছে প্রক্রিয়ার প্রতিফলন। আরও একটি ম্যাচ কেটে গেল সেই আঁধারে থেকেই। ঘাটতি ও দুর্বলতাকে প্রকাশ্য করে, প্রশ্নগুলোকে আরও উচ্চকিত করে বাংলাদেশ এবার সহজে হেরে গেল পাকিস্তানের কাছে।

নিউ জিল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজের উদ্বোধনী ম্যাচে বাংলাদেশের বিপক্ষে পাকিস্তানের জয় ২১ রানে।

টি-টোয়েন্টিতে দুই দলের যা বাস্তবতা, তাতে পাকিস্তানের জয়টা অনুমিতই। বিশ্বকাপের প্রস্তুতিমূলক এই টুর্নামেন্টে জয়-পরাজয় ছাপিয়ে বাংলাদেশের চাওয়া নিজেদের নড়বড়ে জায়গাগুলো থিতু করা। কিন্তু প্রথম ম্যাচে সেসব নড়ে গেছে আরও। উদ্বোধনী জুটি ও ব্যাটিং অর্ডারের অস্থিরতা চলমান। ব্যাটিংয়ে বহু চর্চিত ‘ইনটেন্ট-ইম্প্যাক্ট’ উধাও। মূল স্ট্রাইক বোলার মুস্তাফিজুর রহমানের নির্বিষ বোলিং। ফিল্ডিংয়ে জড়তা। সব মিলিয়ে দুর্ভাবনার উপকরণ অনেক।  

ক্রাইস্টচার্চে শুক্রবার পাকিস্তান ২০ ওভারে তোলে ১৬৭ রান। ওপেন করতে নেমে শেষ পর্যন্ত দলকে টেনে নিয়ে মোহাম্মদ রিজওয়ান অপরাজিত থাকেন ৫০ বলে ৭৮ রান করে। আইসিসি টি-টোয়েন্টি র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ ব্যাটসম্যান সবশেষ ১২ ম্যাচে পঞ্চাশ ছুঁলেন এই নিয়ে ৮টিতেই!

এই উইকেটে লক্ষ্যটা তার পরও খুব বড় কিছু নয়। কিন্তু রান তাড়ায় বাংলাদেশ সম্ভাবনাই জাগাতে পারেনি সেভাবে। হার নিশ্চিত হয়ে যাওয়ার পর শেষ দিকে ইয়াসির আলি চৌধুরির ক্যামিও ইনিংসে ব্যবধান কমে কিছুটা।

লম্বা ভ্রমণের পর আগের রাতে দলের সঙ্গে যোগ দেওয়া অধিনায়ক সাকিব আল হাসানকে এই ম্যাচে খেলায়নি বাংলাদেশ। নেতৃত্ব দেন নুরুল হাসান সোহান। হ্যাগলি ওভালে টস জিতে ব্যাটিংয়ে পাঠান প্রতিপক্ষকে।

পাকিস্তানকে যথারীতি ভালো শুরু এনে দেন রিজওয়ান ও বাবর আজম। খুব গতিময় না হলেও ভালো ভিত গড়ে দেন তারা।

প্রথম ওভারটি যদিও বাংলাদেশের জন্য ছিল আশা জাগানিয়া। সুইং ও মুভমেন্ট মিলিয়ে ওভারে স্রেফ ১ রান দিয়ে শুরু করেন তাসকিন আহমেদ। কিন্তু এরপর অন্যরা ধরে রাখতে পারেননি সেই ধারা।

প্রথম চার ওভারে চার বোলার ব্যবহার করেন অধিনায়ক। দ্বিতীয় ওভারে মুস্তাফিজুর রহমানের বলে দুটি বাউন্ডারি মারেন বাবর, পরের ওভারে হাসান মাহমুদের ওভারেও দুটি। নাসুম আহমেদের প্রথম ওভারে ছক্কা মারেন রিজওয়ান।

চতুর্থ ওভারে বাবরকে রান আউট করার সুবর্ণ সুযোগ আসে, কিন্তু সাব্বির রহমান বলই ধরতে পারেননি ঠিকমতো।

পাওয়ার প্লেতে ৪৩ রান তুলে জুটির ফিফটিও চলে আসে একটু পর। এই নিয়ে ১৫ বার পঞ্চাশ স্পর্শ করল এই দুজনের জুটি।

অষ্টম ওভারে আক্রমণে এসে ৫২ রানের জুটি ভাঙেন মেহেদী হাসান মিরাজ। তার প্রথম বলে সুইপ করতে গিয়ে আউট হন বাবর (২৫ বলে ২২)।

দ্বিতীয় উইকেটে রিজওয়ান ও শান মাসুদ গড়েন আরেকটি কার্যকর জুটি। মাসুদ শুরুতে একটু সময় নিলেও পরে পুষিয়ে দেন। বিপজ্জনক হয়ে ওঠার মুখে তাকে থামান নাসুম আহমেদ (২২ বলে ৩১)।

পাকিস্তানের পরের ব্যাটসম্যানরা খুব বেশি সময় টিকতে পারেননি কেউ, খেলতে পারেননি ঝড়ো ইনিংস। তবে এক প্রান্ত থেকে উইকেট ধরে রাখা আর রান বাড়ানো, সবই করে যান রিজওয়ান। ৩৮ বলে ফিফটি ছুঁয়ে পরের ১২ বলে তিনি করেন ২৮ রান।

শেষ ৫ ওভারে পাকিস্তান তোলে ৫৮ রান।

১৬৮ রানের লক্ষ্যে বাংলাদেশ কখনোই সেভাবে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারেনি পাকিস্তানকে। সাব্বির ও মিরাজের উদ্বোধনী জুটির ‘ফাটকা’ আবার চেষ্টা করা হয় এ দিন। কিন্তু কাজে লাগেনি।

হারিস রউফকে দুর্দান্ত একটি শটে লং অন দিয়ে ছক্কা মারলেও মিরাজ করতে পারেন ১১ বলে ১০ রান। আরও একটি ম্যাচে অস্বস্তিময় উপস্থিতি শেষে সাব্বির ফেরেন ১৮ বলে ১৪ করে।

লিটন দাস তিনে নেমে চেষ্টা করেন রানের গতিতে দম দেওয়ার। শুরুতে একটু সময় নিয়ে পরে নিজের মতোই দারুণ কিছু শট খেলেন তিনি। আফিফ হোসেনের সঙ্গে জুটি গড়ে ওঠার ইঙ্গিতও মেলে।

কিন্তু বড় ইনিংস খেলতে পারেননি কেউই। ২৫ বলে ৩৫ করে লিটন বিদায় নেন মোহাম্মদ নাওয়াজের বলে স্লগ সুইপ খেলে। বাঁহাতি এই স্পিনারের পরের বলে আলসে শটে এলবিডব্লিউ হয়ে যান নতুন ব্যাটসম্যান মোসাদ্দেক।

পরের ওভারে যখন আফিফও বিদায় নেন (২৩ বলে ২৫), বাংলাদেশের লড়াই করার আশাও শেষ হয়ে যায়। অধিনায়ক সোহানও পারেননি ভালো কিছু করতে।

সব হারানোর পর শেষ দিকে কিছুটা বিনোদন দেন ইয়াসির। নিজের টি-টোয়েন্টি সামর্থ্যের ঝলক দেখিয়ে শাহনাওয়াজ দাহানির ওভারে তিনি মারেন চার ও ছক্কা, শেষ ওভারে রউফকে মারেন তিন চার ও এক ছক্কা। ৫ চার ও ২ ছক্কায় অপরাজিত থাকেন ২১ বলে ৪২ করে।

ইয়াসিরের আত্মবিশ্বাসের জন্য এই ইনিংস কাজে দেবে দারুণ, তবে বাংলাদেশ দলের জন্য আশার আলো খুব একটা নেই এই ম্যাচ থেকেও। পরের ম্যাচে রোববার তাদের প্রতিপক্ষ নিউ জিল্যান্ড।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

পাকিস্তান: ২০ ওভারে ১৬৭/৫ (রিজওয়ান ৭৮, বাবর ২২, মাসুদ ৩১, হায়দার ৬, ইফতিখার ১৩, আসিফ ৪, নওয়াজ ৮*; তাসকিন ৪-০-২৫-২, মুস্তাফিজ ৪-০-৪৮-০, হাসান ৪-০-৪২-১, নাসুম ৪-০-২২-১, মিরাজ ২-০-১২-১, মোসাদ্দেক ২-০-১৭-০)

বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১৪৬/৯ (মিরাজ ১০, সাব্বির ১৪, লিটন ৩৫, আফিফ ২৫, মোসাদ্দেক ০, সোহান ৮, ইয়াসির ৪২*, তাসকিন ২, নাসুম ০, হাসান ১*; দাহানি ৪-০-২৪-১, ওয়াসিম ৪-০-২৪-৩, রউফ ৪-০-৩৮-১, নাওয়াজ ৪-০-২৫-২, শাদাব ৪-০-৩০-১)

ফল: পাকিস্তান ২১ রানে জয়ী

ম্যান অব দা ম্যাচ: মোহাম্মদ রিজওয়ান