আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা মঙ্গলবার দিলেন মর্গ্যান। ঘরোয়া ক্রিকেটে অবশ্য খেলা চালিয়ে যাবেন সাদা বলের ক্রিকেটে ইংল্যান্ডের সফলতম নেতা।
নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে গত ১৯ জুন খেলা ওয়ানডে হয়ে রইল ইংল্যান্ডের জার্সিতে মর্গ্যানের শেষ ম্যাচ। সীমিত ওভারের দুই সংস্করণেই দলটির সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হিসেবে ক্যারিয়ার শেষ করলেন তিনি।
ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ডের (ইসিবি) মাধ্যমে বিবৃতিতে ৩৫ বছর বয়সী মর্গ্যান জানান, সিদ্ধান্তটি নেওয়া মোটেও সহজ ছিল না তার জন্য।
“গুরুত্ব সহকারে সবকিছু বিবেচনার পর, আমি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়ার ঘোষণা দিচ্ছি। নিঃসন্দেহে আমার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে উপভোগ্য এবং ফলপ্রসূ অধ্যায়ের ইতি টানা সহজ ছিল না। তবে আমার মনে হয়, এটাই সঠিক সময়; ব্যক্তিগতভাবে আমার জন্য ও ইংল্যান্ডের সাদা বলের দলের জন্যও, যে দলকে আমি নেতৃত্ব দিয়ে এই জায়গায় এসেছি।”
ব্যাট হাতে অনেক দিন ধরেই খুবই বাজে সময় কাটাচ্ছিলেন মর্গ্যান। ইংল্যান্ড দলে এখন যে প্রবল প্রতিযোগিতা, তাতে তার জায়গা নিয়ে উচ্চকিত হচ্ছিল প্রশ্ন। স্রেফ অধিনায়ক হিসেবে কত দিন টিকতে পারবেন, সেটা নিয়ে চলছিল আলোচনা।
নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে সদ্য সমাপ্ত সিরিজের আগেই মর্গ্যান ইঙ্গিত দিয়েছিলেন এমন কিছুর। বলেছিলেন, দলের জন্য অবদান রাখতে না পারলে সরে দাঁড়াবেন নিজ থেকেই।
তিন ওয়ানডের সিরিজটিতে ডাচদের হোয়াইটওয়াশ করে ইংল্যান্ড। দলগত পারফরম্যান্স দুর্দান্ত হলেও ব্যক্তিগতভাবে ব্যর্থ ছিলেন মর্গ্যান। প্রথম দুই ম্যাচে আউট হন রানের খাতা খোলার আগেই। তৃতীয় ও শেষ ম্যাচ খেলতে পারেননি কুঁচকির চোটের কারণে।
গত দেড় বছর ধরেই ব্যর্থতার বৃত্তে বন্দি মর্গ্যান। ২০২১ সালের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ঘরোয়া ও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সাদা বলে ৪৮ ইনিংস ব্যাটিং করে কেবল একটিতে ছুঁতে পারেন তিনি পঞ্চাশ। ওয়ানডেতে এই সময় ৫ ইনিংসে ব্যাটিং করে ২৫.৭৫ গড়ে রান করেন মোট ১০৩। একমাত্র পঞ্চাশ ছাড়ানো ইনিংসটি এই সংস্করণেই।
টি-টোয়েন্টি ৪৩ ইনিংসে রান করেন ৬৪৩। সর্বোচ্চ ৪৭, গড় স্রেফ ১৭.৮৬।
কঠিন সময়ে বরাবরের মতো সতীর্থদের পাশে পেলেও মর্গ্যান নিজের করণীয়টা ঠিকই বুঝে নেন। ক্রিকেট পরিচালক রবার্ট কি, কোচ মটের সঙ্গে সিদ্ধান্ত নিয়ে আলোচনাও করেন তিনি। স্কাই স্পোর্টস নিউজকে বললেন সেটাই।
“আমি সাবেক অনেক ক্রিকেটারের সঙ্গে কথা বলেছি, কখন তারা ক্যারিয়ারের ইতি টেনেছিল, কিভাবে ঘটেছিল সবকিছু…প্রত্যেকেই বলেছিলেন, একটা সময় তুমি বুঝতে পারবে। আরেকটি সাধারণ উত্তর ছিল, কোনো একদিন ঘুম থেকে ওঠার পরই তুমি বুঝতে পারবে, (সময় হয়ে গেছে)। আর আমার জন্য সেই মুহূর্তটি এসেছিল আমস্টারডামে (নেদারল্যান্ডসের রাজধানী)। ”
ক্যারিয়ারের শুরুটা জন্মভূমি আয়ারল্যান্ডের হয়ে করলেও পরে ইংল্যান্ডকে বেছে নেন মর্গ্যান। দলটির হয়ে খেলা শুরু করেন ২০০৯ সালে। ২০১৫ সালে সাদা বলে ইংলিশদের অধিনায়ক হিসেবে অ্যালেস্টার কুকের স্থলাভিষিক্ত হন তিনি। ওই বছর তার নেতৃত্বে ওয়ানডে বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্ব থেকে বাদ পড়ে যায় ইংল্যান্ড।
তার নেতৃত্বে এরপর সাদা বলের ক্রিকেটে পুরোপুরি বদলে যায় ইংল্যান্ড দলটি। এই পথচলায় তার সঙ্গী ছিলেন কোচ ট্রেভর বেলিস। এই দুইজনের হাত ধরে ২০১৯ সালে ঘরের মাঠে প্রথমবারের মতো ওয়ানডে বিশ্বকাপ উঁচিয়ে ধরে ইংলিশরা।
ওয়ানডেতে অধিনায়কত্ব করেছেন ১২৬ ম্যাচে, জয় ৭৬টি। টি-টোয়েন্টিতে মর্গ্যানের নেতৃত্বে ৭২ ম্যাচ খেলে ইংলিশরা জিতেছে ৪২ ম্যাচ। দুই সংস্করণেই ইংল্যান্ডের হয়ে সবচেয়ে বেশি ম্যাচে নেতৃত্ব দেওয়া ও জয়ের রেকর্ড তার।
ইংল্যান্ডের হয়ে ২২৫ ওয়ানডে খেলেছেন মর্গ্যান। ২৩ সেঞ্চুরি ও ৩৯.৭৫ গড়ে তার রান ৬ হাজার ৯৫৭। দলটির হয়ে এই সংস্করণে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলা ও রান করার কীর্তিও তার। ৬ হাজার রান আছে আর কেবল জো রুটের।
ইংল্যান্ডের হয়ে টি-টোয়েন্টিতেও সবচেয়ে বেশি ২ হাজার ৪৫৮ রান বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যানের। সবচেয়ে বেশি ১১৫ ম্যাচ খেলার রেকর্ডও তার। ফিফটি আছে ১৪টি, স্ট্রাইক রেট ১৩৬.১৭।
২০১০ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত ইংল্যান্ডের হয়ে ১৬টি টেস্টও খেলেছেন তিনি। ২ সেঞ্চুরি ও ৩ ফিফটিতে নামের পাশে রান ৭০০।
২০১০ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপজয়ী ইংল্যান্ড দলের অংশ ছিলেন মর্গ্যান। পরের আসরে তার নেতৃত্বে ফাইনাল খেলেছিল দলটি। কিন্তু সেবার শিরোপা ধরে রাখতে পারেনি তারা। গত বিশ্বকাপে ইংল্যান্ড খেলেছিল সেমি-ফাইনাল।
আগামী অক্টোবর-নভেম্বরে অস্ট্রেলিয়ায় হতে যাওয়া টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তার নেতৃত্বেই খেলার কথা ছিল ইংলিশদের। বদলে যাওয়া পরিস্থিতিতে এখন নতুন অধিনায়ক খুঁজতে হবে দলটিকে।
এই দৌড়ে অনেকটাই এগিয়ে আছেন জস বাটলার। ২০১৫ সাল থেকে সহ-অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করে আসা এই কিপার-ব্যাটসম্যান এরই মধ্যে ১৩ বার ইংলিশদের নেতৃত্ব দিয়েছেন। স্পিনিং অলরাউন্ডার মইন আলিও খুব একটা পিছিয়ে নেই। ৪টি টি-টোয়েন্টিতে নেতৃত্ব দেওয়ার অভিজ্ঞতা আছে তার।
মর্গ্যান অবশ্য বললেন আরও কয়েকজনের কথা।
“দলে আরও কয়েকজন অসাধারণ নেতা আছে। জনি বেয়ারস্টো, জেসন রয়, ক্রিস ওকস, ক্রিস জর্ডান, এই ছেলেরা দায়িত্বটি অবশ্যই পালন করতে সক্ষম।”
ইংল্যান্ড টেস্ট দলের প্রধান কোচ ব্রেন্ডন ম্যাককালাম প্রশংসায় পঞ্চমুখ মর্গ্যানের। নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ শেষে সোমবার স্কাই স্পোর্টসকে তিনি বলেছিলেন, শুধু ইংলিশ ক্রিকেট নয়, বিশ্ব ক্রিকেটেই সবচেয়ে প্রভাবশালী চরিত্রদের একজন হয়ে থাকবেন মর্গ্যান।
২০০৯ সালে ইংল্যান্ডের হয়ে মর্গ্যানের অভিষেকে সতীর্থ ছিলেন দলটির ক্রিকেট পরিচালকের দায়িত্বে থাকা কি। সাবেক এই ইংলিশ ব্যাটসম্যানের দেখা সেরা অধিনায়ক মর্গ্যান।