ম্যাথিউস ১৯৯, শ্রীলঙ্কা ৩৯৭

পয়েন্ট ফিল্ডারকে সীমানা থেকে আনা হলো বৃত্তের ভেতরে, মিড অন ও মিড অফ ফিল্ডারও। বৃত্তের ভেতরেই মিড উইকেট থেকে সাকিব আল হাসানকে আনা হলো স্কয়ার লেগে, অধিনায়ক মুমিনুল হক দাঁড়ালেন শর্ট মিড উইকেটে। সব আয়োজন একটি কারণে, ওভারের শেষ বলে অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউসকে একটি রান করতে না দেওয়া। ম্যাথিউসও যেন চ্যালেঞ্জটা নিতে গেলেন। ৫৭৮ মিনিট ক্রিজে কাটানো ব্যাটসম্যান ধৈর্য হারিয়ে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে খেললেন শট, আর পুড়লেন আক্ষেপে!

ক্রীড়া প্রতিবেদকচট্টগ্রাম থেকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 May 2022, 11:09 AM
Updated : 16 May 2022, 01:08 PM

যে স্কয়ার লেগ পজিশনে ফিল্ডার আনা হয়েছিল ওই বলের জন্য, সেখানেই আলতো ক্যাচ। ম্যাথিউস পেলেন সেই তিক্ত স্বাদ, যেখানে ১৯৯ রান করার চেয়েও বড় হয়ে ওঠে একটি রান করতে না পারার আফসোস!

ম্যাথিউসের ডাবল সেঞ্চুরি হলো না একটুর জন্য, অল্পের জন্য চারশ ছুঁতে পারল না শ্রীলঙ্কা। চট্টগ্রাম টেস্টের দ্বিতীয় দিনে প্রথম ইনিংসে তারা অলআউট ৩৯৭ রানে।

প্রথম দিনের মতো দ্বিতীয় দিনও শ্রীলঙ্কার ব্যাটিং ভার বয়ে নেন ম্যাথিউস। তবে অসাধারণ দৃঢ়তা দেখিয়েও শেষ পর্যন্ত পাননি ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ডাবল সেঞ্চুরি। নাঈম হাসানের অফ স্পিন উড়িয়ে মারতে গিয়ে তার ইনিংস থামে ৩৯৭ বলে ১৯৯ রানে। একই সঙ্গে শেষ হয় দলের ইনিংসও।

বাংলাদেশের মাঠে ১৯৯ রানে আউট হওয়া প্রথম ব্যাটসম্যান ম্যাথিউসই। বাংলাদেশের বিপক্ষে এই অম্ল-মধুর স্বাদ আর পেয়েছেন কেবল দক্ষিণ আফ্রিকার ডিন এলগার, ২০১৭ সালে পচেফস্ট্রুমে।

ম্যাথিউসকে মাইলফলকের আগে থামিয়ে নাঈম নিজে পা রাখেন নতুন উচ্চতায়। ১০৫ রানে তার শিকার ৬ উইকেট, ৮ টেস্টের ছোট্ট ক্যারিয়ারে যা তার ক্যারিয়ার সেরা বোলিং।

তার অর্জনের মাহাত্ম আরও বেড়ে যাচ্ছে, তিনি ১৫ মাস পর টেস্ট খেলতে নেমেছেন বলেও। মেহেদী হাসান মিরাজ ফিট থাকলে খেলা তো দূরের কথা, স্কোয়াডেও হয়তো জায়গা হতো না তার। প্রথম দিন সকালে দুটি উইকেট নিয়েছিলেন তিনি, দ্বিতীয় দিনেও দলকে খেলায় ফেরান এই অফ স্পিনারই।

৪ উইকেটে ২৫৮ রান নিয়ে দিন শুরু করে লঙ্কানরা এগোতে থাকে শক্ত পায়েই। আগের দিনের দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যান ম্যাথিউস ও দিনেশ চান্দিমাল অনায়াসেই বাড়াতে থাকেন রান।

আগের দিন সেঞ্চুরি করা ম্যাথিউস এগিয়ে যান দেড়শর দিকে, চান্দিমাল পেরিয়ে যান ফিফটি। বাংলাদেশের কোনো বোলারই খুব একটা প্রভাব রাখতে পারছিলেন না। কোনো উইকেট না হারিয়ে সেশন পার করার পথে ছিল শ্রীলঙ্কা। লাঞ্চের মিনিট পনের আগে হুট করেই আত্মঘাতী হয়ে ওঠেন চান্দিমাল। বাংলাদেশ পায় দারুণ একটি উপহার।

নাঈমের বলে আচমকাই সুইপ হিট খেলার চেষ্টা করেন চান্দিমাল। তাতেই ব্যাটে-বলে করতে না পেরে এলবিডব্লিউ হয়ে যান ৬৬ রানে। বাঁচতে পারেননি তিনি রিভিউ নিয়ে।

প্রথম সেশনে অবশ্য ম্যাথিউসকেও ফেরাতে পারতো বাংলাদেশ। তবে খালেদ আহমেদের বল তার ব্যাটে হালকা ছুঁয়ে উইকেটের পেছনে লিটন দাসের গ্লাভসে গেলেও বুঝতে পারেননি কেউ। আবেদনও তাই হয়নি। একটু পর টিভি রিপ্লেতে দেখা যায়, ব্যাটে সামান্য একটু স্পর্শ করেছিল বল। আগের দিন ৬৯ রানে ক্যাচ দিয়ে বেঁচে ডাওয়া ব্যাটসম্যান এবার রক্ষা পান ১২৯ রানে।

তবে চান্দিমালের ওই সুইচ হিট ঘুরিয়ে দেয় ইনিংসের মোড়। ওই ওভারেই নাঈমকে কাট করতে গিয়ে উইকেট বিলিয়ে দেন বিপজ্জনক নিরোশান ডিকভেলা। শ্রীলঙ্কা লাঞ্চে যায় অস্বস্তি নিয়ে।

সেই অস্বস্তি দুর্ভাবনায় রূপ নেয় লাঞ্চের পর প্রথম ওভারেই। ইনিংসজুড়ে অসাধারণ বোলিং করা সাকিব টানা দুই বলে ফেরান রমেশ মেন্ডিস ও লাসিথ এম্বুলদেনিয়াকে। লঙ্কানদের তখন সাড়ে তিনশ নিয়েই টানাটানি। ৯ রানের মধ্যে ৪ উইকেট হারিয়ে তাদের স্কোর ৮ উইকেটে ৩২৮।

ম্যাথিউস এখানেও দলেক জোগালেন নির্ভরতা। দশে নেমে বিশ্ব ফার্নান্দো হয়ে উঠলেন যেন বিশেষজ্ঞ ব্যাটসম্যান। আবার গড়ে উঠল জুটি। গোটা সেশনে আর কোনো উইকেট হারাতে দিলেন না তারা।

বিশ্বর কাজ ছিল স্রেফ উইকেট আঁকড়ে রাখা। প্রথম বাউন্ডারির আগে তার রান ছিল ৪৯ বলে ৪। পরে দ্রুত তিনটি বাউন্ডারি মারেন তিনি।

চা বিরতির একটু আগে শরিফুল ইসলামের বলে বিশ্ব আঘাত পান হেলমেটে। বিরতির আর ব্যাটিংয়ে নামেননি তিনি। আসিথা ফার্নান্দো কিছুক্ষণ টিকে থাকার পর বোল্ড হন নাঈমের বলে লাইন মিস করে। ক্যারিয়ারে তৃতীয়বার ইনিংসে ৫ উইকেটের স্বাদ পান এই অফ স্পিনার।

পরে বিশ্ব আবার নামেন ম্যাথিউসকে সঙ্গ দিতে। কিন্তু ম্যাথিউস নিজেই এবার হারিয়ে ফেললেন নিজেকে। উল্লাসে ভাসলেন নাঈম, স্বস্তির শ্বাস ফেললেন বাংলাদেশ দলের অন্যরা। টিভি ক্যামেরা তখন তাক করল শ্রীলঙ্কার ড্রেসিং রুমের দিকে। ম্যাথিউসকে অভিনন্দন জানাতে তারা প্রস্তুত ছিলেন। কিন্তু আচমকা ট্র্যাজেডিতে তারা হয়ে রইলেন স্তম্ভিত।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

শ্রীলঙ্কা ১ম ইনিংস: ১৫৩ ওভারে ৩৯৭(আগের দিন ২৫৮/৪) (ম্যাথিউস ১৯৯, চান্দিমাল ৬৬, ডিকভেলা ৩, রমেশ ১, এম্বুলদেনিয়া ০, বিশ্ব ১৭*, আসিথা ১; শরিফুল ২০-৩-৫৫-০, খালেদ ১৬-১-৬৬-০, নাঈম ৩০-৪-১০৫-৬, তাইজুল ৪৮-১২-১০৭-১, সাকিব ৩৯-১২-৬০-৩)।