ইমাম ও বাবরের সেঞ্চুরিতে পাকিস্তানের রেকর্ড গড়া জয়

সামনে রানের পাহাড়। জিততে হলে গড়তে হবে রেকর্ড। টানা দ্বিতীয় সেঞ্চুরিতে পথ দেখালেন ইমাম উল হক। বাবর আজমও খেললেন দুর্দান্ত ইনিংস। শেষ দিকে পেয়ে বসা শঙ্কা তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিলেন খুশদিল শাহ। অসাধারণ জয়ে সিরিজে ফিরল পাকিস্তান।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 March 2022, 06:24 PM
Updated : 31 March 2022, 07:23 PM

দ্বিতীয় ওয়ানডেতে পাকিস্তান জিতল ৬ উইকেটে। লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে বৃহস্পতিবার রাতে ৩৪৯ রানের লক্ষ্য স্বাগতিকরা পেরিয়ে গেল এক ওভার বাকি থাকতে। সমতা ফেরাল তিন ম্যাচের সিরিজে।

ওয়ানডেতে নিজেদের সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয়ের নতুন রেকর্ড গড়ল পাকিস্তান। ২০১৪ এশিয়া কাপে মিরপুরে বাংলাদেশের বিপক্ষে ৩২৭ রানের লক্ষ্য তাড়ায় জয় ছিল তাদের আগের রেকর্ড।

আর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে এই প্রথম তারা তিনশর বেশি রান তাড়া করে জিতল। ১৯৮৭ সালে পার্থে ইমরান খানের পাকিস্তান সর্বোচ্চ ২৭৪ রানের লক্ষ্য তাড়ায় জিতেছিল অ্যালান বোর্ডারের দলের বিপক্ষে।

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টানা ১০ ওয়ানডে হারের বৃত্তও ভাঙল পাকিস্তান।

এই সংস্করণে পাকিস্তানের বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়ার জয়রথ যেমন থামল, তেমনি বিফলে গেল বেন ম্যাকডারমটের প্রথম আন্তর্জাতিক সেঞ্চুরি।

দলকে বড় পুঁজি এনে দিতে ১০৮ বলে ১০ চার ও ৪ ছক্কায় ১০৪ রানের ইনিংস খেলেন ম্যাকডারমট। আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান ট্রাভিস হেড এবার অল্পের জন্য পাননি তিন অঙ্কের দেখা। ৭০ বলে ৮৯ রানের বিধ্বংসী ইনিংস খেলেন তিনি।

ম্যাচের পরের ভাগে সব আলো কেড়ে নিলেন ইমাম ও বাবর। ৮৩ বলে ১১ চার ও এক ছক্কায় ১১৪ রানের ইনিংস খেলে ম্যাচের সেরা পাকিস্তান অধিনায়ক। ৯৭ বলে ৬ চার ও ৩ ছক্কায় ১০৬ রান করেন ইমাম।

টস জিতে বোলিং নিয়ে পাকিস্তানের শুরুটা হয় দারুণ। চোট কাটিয়ে দলে ফিরে ইনিংসের তৃতীয় বলেই অ্যারন ফিঞ্চকে এলবিডব্লিউ করে দেন শাহিন শাহ আফ্রিদি।

তবে শুরুর ছন্দ ধরে রাখতে পারেনি স্বাগতিকরা। প্রথম ম্যাচের মতো যথারীতি ঝড় তোলেন হেড। ম্যাকডারমটের সঙ্গে জমে ওঠে তার জুটি।

হেড ফিফটি তুলে নেন ৪৫ বলে, পঞ্চাশ ছুঁতে ম্যাকডারমটের লাগে ৫২ বল। টানা দ্বিতীয় সেঞ্চুরির সম্ভাবনা জাগিয়ে হেড বিদায় নেন লেগ স্পিনার জাহিদ মাহমুদকে সুইপ করার চেষ্টায় বল আকাশে তুলে।

দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে ১৬২ রান আসে ১৪৪ বলে।

সতীর্থের মতো ম্যাকডারমট ভুল করেননি। ৬৮ রানে আম্পায়ার তাকে কট বিহাইন্ডের আউট দেওয়ার পর রিভিউ নিয়ে তিনি বেঁচে যান বল ব্যাটে না লাগায়। কুশদিলকে বেরিয়ে এসে ছক্কায় উড়িয়ে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন ১০২ বলে।

১৯৮৭ সালে এই মাঠে একই দলের বিপক্ষে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম ও একমাত্র পাঁচ উইকেট নিয়েছিলেন ক্রেইগ ম্যাকডারমট। সেখানে এবার তার ছেলে বেন ম্যাকডারমট করলেন ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি।

এরপর আর ইনিংস টেনে নিতে পারেননি তিনি। মোহাম্মদ ওয়াসিম জুনিয়রের ফুল টসে সহজ ক্যাচ দেন মিডউইকেটে।

সেখান থেকে দলের স্কোর সাড়ে তিনশর কাছাকাছি যায় মার্নাস লাবুশেন, মার্কাস স্টয়নিস ও শন অ্যাবটের ব্যাটে।

৪৯ বলে ৫ চারে ৫৯ রান করেন লাবুশেন। স্টয়নিস ৩৩ বলে ৫ চার ও এক ছক্কায় করেন ৪৯। পেসার অ্যাবট ১৬ বলে খেলেন ২৮ রানের ক্যামিও ইনিংস।

বড় রান তাড়ায় ১১৮ রানের উদ্বোধনী জুটিতে পাকিস্তানের ভিত গড়ে দেন ফখর জামান ও ইমাম। ফখরকে বোল্ড করে জুটি ভাঙেন স্টয়নিস। ৬৪ বলে ৭ চার ও ২ ছক্কায় ৬৭ রানের দারুণ ইনিংস খেলেন ফখর।

ইমাম ২৫ রানে একবার জীবন পান শর্ট মিডউইকেটে ম্যাকডারমট ক্যাচ নিতে না পারায়। দ্বিতীয় উইকেটে তিনি আরেকটি শতরানের জুটি গড়েন বাবরকে সঙ্গে নিয়ে।

৫০ বলে ফিফটি ছোঁয়া ইমাম তিন অঙ্ক স্পর্শ করেন ৯০ বলে। তার ওয়ানডে ক্যারিয়ারের নবম সেঞ্চুরি এটি। এর পরপরই তিনি বিদায় নেন অ্যাডাম জ্যাম্পার বলে বাউন্ডারিতে ক্যাচ দিয়ে।

বাবর এগিয়ে যান মোহাম্মদ রিজওয়ানকে সঙ্গী করে। ৭২ বলে তিনি তুলে নেন ক্যারিয়ারের ১৫তম ওয়ানডে সেঞ্চুরি।    

অধিনায়ক হিসেবে ১১ ম্যাচেই তার সেঞ্চুরি হলো চারটি, পাকিস্তানের কোনো অধিনায়কের যা সর্বোচ্চ। আজহার আলির আছে ৩টি, ইনজামাম উল হক ও শহিদ আফ্রিদির ২টি করে।

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ওয়ানডে সেঞ্চুরি করা পাকিস্তানের প্রথম অধিনায়ক তিনিই। ১৯৯০ সালে ব্রিজবেনে ইমরান খানের ৮২ ছিল আগের সর্বোচ্চ।

শেষ ৩৬ বলে ৮ উইকেট হাতে রেখে পাকিস্তানের দরকার ছিল ৪০ রান। কিন্তু পরপর দুই ওভারে বাবর ও রিজওয়ানের উইকেট তুলে নিয়ে নাটকীতার আভাস দেয় অস্ট্রেলিয়া।  

অতীতে হাতের মুঠোয় থাকা অনেক ম্যাচ শেষ দিকে তালগোল পাকিয়ে হারের তেতো অভিজ্ঞতা আছে পাকিস্তানের। এবার তেমন কিছু হতে দেননি খুশদিল। ১৭ বলে যখন দরকার ২৭, অ্যাবটকে পরপর চার-ছক্কা মেরে চাপ দূরে সরিয়ে দেন তিনি। পরের ওভারে ন্যাথান এলিসকেও চার-ছক্কা মারেন টানা দুই বলে।

চার মেরে দলের রেকর্ড গড়া জয়ে তুলির শেষ আঁচড় দেন ইফতিখার। ১৭ বলে ২টি করে চার ও ছক্কায় ২৭ রানে অপরাজিত থাকেন খুশদিল।

আগামী শনিবার একই মাঠে সিরিজের ফয়সালা হবে শেষ ম্যাচে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

অস্ট্রেলিয়া: ৫০ ওভারে ৩৪৮/৮ (হেড ৮৯, ফিঞ্চ ০, ম্যাকডারমট ১০৪, লাবুশেন ৫৯, স্টয়নিস ৪৯, কেয়ারি ৫, গ্রিন ৫, অ্যাবট ২৮, এলিস ১*, জ্যাম্পা ০*; আফ্রিদি ১০-০-৬৪-৪, রউফ ১০-১-৫৭-০, ওয়াসিম ১০-০-৫৬-২, জাহিদ ১০-০-৭১-১, ইফতিখার ৪-০-৩৮-১, খুশদিল ৬-০-৫৭-১)

পাকিস্তান: ৪৯ ওভারে ৩৫২/৪ (ফখর ৬৭, ইমাম ১০৬, বাবর ১১৪, রিজওয়ান ২৩, খুশদিল ২৭*, ইফতিখার ১১*; অ্যাবট ৯-০-৭৪-১, গ্রিন ৬-০-৩৫-০, এলিস ৯-০-৬৯-১, হেড ৪-০-২৮-০, জ্যাম্পা ১০-০-৭১-২, সোয়েপসন ৮-০-৫০-০, স্টয়নিস ৩-০-২৩-১)

ফল: পাকিস্তান ৬ উইকেটে জয়ী

সিরিজ: তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম দুটি শেষে ১-১ সমতা

ম্যান অব দা ম্যাচ: বাবর আজম