ওয়ানডের আগে ‘মেন্টালি ডিপ্রেসড’ নাঈম, টি-টোয়েন্টির আগে ঠিকঠাক

এক সপ্তাহও হয়নি, বাংলাদেশ ওয়ানডে দল থেকে জায়গা হারান মোহাম্মদ নাঈম শেখ। বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যানের প্রসঙ্গে তখন প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন বলেছিলেন ‘মেন্টালি ডিপ্রেসড।’ সেই নাঈমকেই এবার রাখা হলো টি-টোয়েন্টি দলে। প্রধান নির্বাচক এখন বলছেন, ‘অনেক দিন তো হয়ে গেল।’

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Feb 2022, 05:11 PM
Updated : 21 Feb 2022, 05:11 PM

আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের জন্য বাংলাদেশের স্কোয়াড ঘোষণা করা হয় গত মঙ্গলবার। আগের সিরিজে কোনো ম্যাচ না খেলেও এই সিরিজের দল থেকে জায়গা হারান নাঈম।

ম্যাচ না খেলে বাদ পড়লে দল নির্বাচনের প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। তবে নাঈমকে নিয়ে তেমন প্রশ্ন ওঠেনি তার সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সের কারণে। সবশেষ পাকিস্তান সিরিজে ও এরপর বিপিএলে তার ব্যাট কথা বলেনি একটুও। যদিও সংস্করণ ভিন্ন, তবে তার ব্যাটিংয়ে আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি ফুটে ওঠে স্পষ্ট।

প্রধান নির্বাচক তখন আরও যোগ করেছিলেন নাঈমের বিপর্যস্ত মানসিকতার কথাও।

“একজন ক্রিকেটারের যদি ধারাবাহিক ফর্ম না থাকে, তাহলে মেন্টালি ডিপ্রেসড থাকে। সেই হিসেবে আমি মনে করি, নাঈমকে ওভারকাম করার সুযোগ দেওয়া উচিত। চাঙা হয়ে আবার ফিরে আসুক।”

বিস্ময়করভাবে, সেই চাঙা হওয়ার সময়টা চলে এলো খুবই দ্রুত। আফগানিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজের জন্য সোমবার ঘোষিত দলে আছে নাঈমের নাম।

‘তাহলে নাঈমকে যে মেন্টালি ডিপ্রেসড বলা হয়েছিল?’, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের এই প্রশ্নে প্রধান নির্বাচকের উত্তর, “এজন্যই ওয়ানডে থেকে বিশ্রাম দিয়েছি। এখন তো অনেক দিন হয়ে গেছে, প্রায় দুই সপ্তাহ।”

কিন্তু প্রধান নির্বাচকের পরের কথায় আবার জন্ম হলো নতুন সংশয় কিংবা বিভ্রান্তির। মানসিকতার সমস্যা নাঈম কাটিয়ে উঠেছেন কিনা, এই প্রশ্নে মিনহাজুল বললেন, “এখন তো ম্যানেজমেন্টের বাইরে আছে। ভেতর ঢুকলে বুঝতে পারব।”

নাঈমের টিকে যাওয়ার কারণ নিয়ে তাই প্রশ্নের অবকাশ রয়ে গেল আরও। যেমন হাজারও প্রশ্ন তার ব্যাটিংয়ের ধরন নিয়ে। গত বছর টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান আসে তার ব্যাট থেকেই। ২৬ ইনিংসে করেন ৫৭৫ রান, তবে স্ট্রাইক রেট ছিল স্রেফ ১০০.৩৪।

সবশেষ পাকিস্তান সিরিজে গত নভেম্বরে প্রথম দুই ম্যাচে আউট হন ১ ও ২ রানে। তৃতীয় ম্যাচে ৪৭ করলেও বল খেলেন ৫০টি।

এরপর বিপিএলে তার অবস্থা ছিল শোচনীয়। মিনিস্টার ঢাকা তাকে ওপেনিংয়ে পাঠানোর মতো আস্থা রাখতে পারেনি তার ওপর। যদিও সেই দলের অধিনায়ক ছিলেন জাতীয় দলের টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ। তামিম ইকবালের সঙ্গে মোহাম্মদ শাহজাদকে ওপেনিংয়ে পাঠায় তারা, এমনকি ওপেনিংয়ে পাঠায় জাতীয় দলের ধারেকাছে না থাকা ইমরান উজ্জামানকেও। নাঈমের টি-টোয়েন্টি সামর্থ্য ও বাস্তবতা অনেকটা ফুটে ওঠে এতেই।

বিভিন্ন ম্যাচে তার ব্যাটিং অর্ডার নিয়ে টানাহেঁচড়া দেখে বোঝা গেছে, ম্যাচের কোনো পরিস্থিতিতেই ঠিক তার ওপর আস্থা রাখতে পারেনি দল। নিজের ব্যাটিং দিয়েও একটি জায়গায় থিতু হওয়ার দাবি তিনি জানাতে পারেননি। তিনে নেমে ১৫ রান করতে অবিশ্বাস্যভাবে খেলে ফেলেন ৩০ বল। চার নম্বর থেকে সাত, এমনকি আট নম্বরে পর্যন্ত ব্যাটিংয়ে পাঠানো হয়েছে তাকে।

সব মিলিয়ে ৭ ইনিংসে তার রান ৫০। গড় ৮.৩৩। স্ট্রাইক রেট স্রেফ ৬৫!

তার পরও টিম ম্যানেজমেন্ট ও নির্বাচকরা সবাই একমত হয়েই নাঈমকে দলে রাখা হয়েছে বলে জানালেন প্রধান নির্বাচক।

“নাঈম শেখ গত এক বছরে টি-টোয়েন্টিতে আমাদের সবচেয়ে বেশি রান করা ব্যাটসম্যান। স্ট্রাইক রেট কম, কিন্তু রান তো করেছে সবচেয়ে বেশি। বিপিএলটা ওর খারাপ গেছে। তবে টিম ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে আমাদের যে আলোচনা হয়েছে, তাতে মনে হয়েছে তাকে সিস্টেমের মধ্যে রাখা দরকার। সবাই মিলে একমত হয়েই নিয়েছি।”