বিপিএলে তারকাসমৃদ্ধ মিনিস্টার ঢাকার বিপক্ষে সিলেট সানরাইজার্সের জয় ৭ উইকেটে।
মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার সিলেটের ত্রিমুখী স্পিন আর শেষদিকে তাসকিন আহমেদের আক্রমণে ঢাকা গুটিয়ে যায় স্রেফ ১০০ রানে।
নতুন বলে দারুণ বোলিংয়ে সোহাগ গাজীর শিকার ২ উইকেট, আঁটসাঁট বোলিংয়ে অধিনায়ক মোসাদ্দেক হোসেন নেন ১টি। পরে তাদেরকে ছাপিয়ে যান নাজমুল ইসলাম অপু। ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে এই বাঁহাতি স্পিনার নেন ৪ উইকেট।
সহজ রান তাড়ায় খুব একটা বেগ পেতে হয়নি সিলেটকে। তিন উইকেট হারিয়ে তিন ওভার রেখে তারা ছুঁয়ে ফেলে লক্ষ্য।
৪০২ দিন পর মাঠের লড়াইয়ে ফিরে মাশরাফি বিন মুর্তজা নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে নেন ২ উইকেট। তবে ঢাকার অন্য বোলাররা পারেননি তাকে ততটা সঙ্গ দিতে। মূলত লড়াই করার পুঁজিই ছিল না তাদের।
চার ম্যাচে ঢাকা এই নিয়ে হারল তৃতীয়বার।
টুর্নামেন্টের আগের দিনগুলির ধারা মেনে দিনের ম্যাচে ব্যাটসম্যানদের ভোগান্তি দেখা যায় এ দিনও। তবে উইকেটের চেয়ে বাজে ব্যাটিং আর আম্পায়ারের দায়ই ছিল বেশি।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে তাসকিন আহমেদের করা প্রথম ওভার থেকে ৯ রান পায় ঢাকা। এরপরই সোহাগ গাজী ও মোসাদ্দেক হোসেনের স্পিনের সামনে খোলসে ঢুকে যায় ঢাকার ব্যাটসম্যানরা।
ম্যাচের দ্বিতীয় ওভারে সোহাগের টানা তিন বলে রান না পেয়ে অস্থির হয়ে মারতে গিয়ে স্টাম্পড হন আফগান ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ শাহজাদ (৭ বলে ৫)। পরের ওভারে মোসাদ্দেকের বলে এলবিডব্লিউ তামিম ইকবাল (৫ বলে ৩)। সিদ্ধান্ত নিয়ে যদিও প্রকাশ্যেই অসন্তোষ জানান অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান।
তিনে নামা জহুরুল ইসলাম ও মোহাম্মদ নাঈম শেখও পারেননি রানের চাকা গতিময় করতে। পাওয়ারপ্লের শেষ ওভারে বড় শটের চেষ্টায় উইকেট হারান জহুরুল ইসলাম (১০ বলে ৪)।
অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ নামার পর কিছু শট খেলেন। আগের ম্যাচের ম্যান অব দা ম্যাচ উইকেটে যাওয়ার পরপরই বাউন্ডারি মারেন সোহাগকে। পরে সোহাগের শেষ ওভারে বাউন্ডারি মারেন টানা দুটি।
ওই ওভারে আন্দ্রে রাসেলকেও এলবিডব্লিউ দেন আম্পায়ার শরফুদ্দৌলা ইবনে শহীদ। টিভি রিপ্লেতে স্পষ্ট ধরা পড়ে, বল লাগছিল রাসেলের ব্যাটের কানায়।
জোড়া ধাক্কায় টালমাটাল ঢাকা ঘুরে দাঁড়ানোর আগেই হজম করে আরেকটি বড় ধাক্কা। দারুণ খেলতে থাকা মাহমুদউল্লাহ (২৬ বলে ৩৩) উইকেট বিলিয়ে আসেন নাজমুল অপুকে সুইপ খেলে।
এরপর রান যা একটু বাড়ান শুভাগত হোম। সানজামুল ইসলামের স্পিনে চার-ছক্কা মারেন তিনি। ১৬ বলে ২১ রান করা শুভাগতকে ফিরিয়েই নাজমুল অপু ধরেন তার চতুর্থ শিকার।
৮৮ ম্যাচের ক্যারিয়ারে প্রথমবার ইনিংসে চার উইকেটের স্বাদ পেলেন তিনি।
শেষদিকে তাসকিন আহমেদ উইকেট নেওয়ার মিছিলে যোগ দিয়ে নেন ৩ উইকেট। রুবেল হোসেনের একটি ছক্কা ও চারে কোনোরকমে ১০০ ছুঁতে পারে ঢাকা।
এই পুঁজি নিয়ে সেভাবে লড়াই জমাতে পারেননি ঢাকার বোলাররা। মাশরাফি ইনিংসের চতুর্থ ওভারে ফেরান লেন্ডল সিমন্সকে (২১ বলে ১৬)। তবে রানের চাপ ছিল না, ঢাকার বোলিংয়ে ছিল না বারুদ। এনামুল হক ও মোহাম্মদ মিঠুন অনায়াসে এগিয়ে নেন দলকে।
ঢাকার দুর্দশায় যোগ হয় ক্যাচ মিসও। ১০ রানে জীবন পান মিঠুন, ২০ রানে এনামুল। এরপর আর ফেরার সুযোগ ছিল না ঢাকার।
১৫ বলে ১৭ রান করে মিঠুন আউট হন তরুণ বাঁহাতি স্পিনার হাসান মুরাদের বলে। এনামুল একপ্রান্ত আগলে রেখে দলকে নিয়ে যান জয়ের কাছে।
কাজটা শেষপর্যন্ত শেষ করে ফিরতে পারেননি এনামুলও। মাশরাফিকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে তার ইনিংস শেষ হয় ৪৫ বলে ৪৫ রান করে। কলিন ইনগ্রাম দলের জয় সঙ্গে নিয়ে ফেরেন ১৯ বলে ২১ রান করে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
মিনিস্টার ঢাকা: ১৮.৪ ওভারে ১০০ (তামিম ৩, শাহজাদ ৫, নাঈম ১৫, জহুরুল ৪, মাহমুদউল্লাহ ৩৩, রাসেল ০, শুভাগত ২১, মাশরাফি ২, উদানা ১, রুবেল ১২, মুরাদ ০; তাসকিন ২.৪-০-২২-৩, সোহাগ ৪-১-১৭-২, মোসাদ্দেক ৪-০-১২-১, মুক্তার ২-০-১২-০, নাজমুল অপু ৪-১-১৮-৪, সানজামুল ২-০-১৭-০)
সিলেট সানরাইজার্স: ১৭ ওভারে ১০১/৩ (সিমন্স ১৬, এনামুল ৪৫, মিঠুন ১৭, ইনগ্রাম ২১*, বোপারা ১*; রুবেল ২-০-১০-০, মাশরাফি ৪-০-২১-২, মুরাদ ৪-০-৩১-১, রাসেল ৪-০-১৭-০, উদানা ১-০-৭-০, শুভাগত ২-০-১১-০, মাহমুদউল্লাহ ১-০-৪-০)
ফল: সিলেট সানরাইজার্স ৭ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: নাজমুল ইসলাম অপু