মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টে প্রথম ইনিংসে ৩২৮ রান করেছে নিউ জিল্যান্ড। দেশের মাটিতে এই সংস্করণে যা বাংলাদেশের বিপক্ষে তাদের সর্বনিম্ন। ২০১৭ সালে ক্রাইস্টচার্চ টেস্টের ৩৫৪ রান ছিল আগের সর্বনিম্ন।
শেষ ৫ উইকেটে রোববার ৭০ রান যোগ করেেছ নিউ জিল্যান্ড। এর বেশিরভাগই এসেছে হেনরি নিকোলসের ব্যাট থেকে। ৩২ রান নিয়ে দিন শুরু করা বাঁহাতি ব্যাটসম্যান ১২ চারে ১২৭ বলে করেছেন ৭৫ রান।
মিরাজের মতো ৩ উইকেট নিয়েছেন পেসার শরিফুল ইসলামও। প্রথম দিন সেঞ্চুরিয়ান ডেভন কনওয়েকে থামানো মুমিনুল হক পেয়েছেন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান করা নিকোলসের উইকেট।
প্রথম ঘণ্টায় ১৩.৪ ওভারে ১ উইকেট হারিয়ে ৩৯ রান যোগ করে নিউ জিল্যান্ড। এর ২২ রানই আসে ইবাদত হোসেনের ১৫ বল থেকে! পানি পানের বিরতির পর ৩১ রানে হারায় শেষ ৪ উইকেট।
বে ওভালে ৫ উইকেটে ২৫৮ রান নিয়ে দিন শুরু করে নিউ জিল্যান্ড। আগের দিনের অসমাপ্ত ওভার শেষ করেন ইবাদত হোসেন। শেষ বল ছিল অফ স্টাম্পের বাইরে ফুলটস। উপহার কাজে লাগান নতুন ব্যাটসম্যান রাচিন রবীন্দ্র। বাউন্ডারি দিয়ে খোলেন রানের খাতা। তবে সেটই হয়ে থাকে তার একমাত্র স্কোরিং শট।
পরের টানা চারটি ওভার মেডেন নেন শরিফুল ও তাসকিন আহমেদ। অফ স্টাম্পের বাইরে চ্যানেল ধরে বোলিং করে যান দুই পেসার।
১৪টি ডট বল খেলার পর প্রথম রানের দেখা পান আগের দিনের অপরাজিত ব্যাটসম্যান নিকোলস। শরিফুলের বল প্যাডে পেয়ে ফ্লিক করে নেন ৩ রান।
রান দেওয়ার পরেই অফ স্টাম্পের বাইরের লাইনে ফিরেন শরিফুল। ড্রাইভ খেলানোর চেষ্টা করেন রাচিনকে। কাজেও লাগে পরিকল্পনা। তিন বলের মধ্য দুইবার শরীর থেকে দূরের বলে ড্রাইভ করেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। প্রথমবার ব্যাটে খেলতে পারেননি, পরেরটি ব্যাটের কানা ছুঁয়ে যায় তৃতীয় স্লিপে। সেখানে ঝাঁপিয়ে চমৎকার নিচু ক্যাচ মুঠোয় জমান সাদমান ইসলাম।
শরিফুলের মতো নিজের তৃতীয় ওভারে প্রথম রান দেন তাসকিন। তার অফ স্টাম্পের বাইরের শর্ট বলে আপার কাট করে চার মারেন নিকোলস। পরে শরিফুলকে পুল করতে গিয়ে একটুর জন্য লিটন দাসের গ্লাভসে ধরা পড়েননি নিকোলস। ডানদিকে ঝাঁপ দিয়ে একটুর জন্য বলের নাগাল পাননি বাংলাদেশের কিপার।
তাসকিনের জায়গায় বোলিংয়ে ফেরা ইবাদতকে চমৎকার ড্রাইভে বাউন্ডারি মেরে রানের খাতা খোলেন কাইল জেমিসন। ইবাদতের পরের ওভারে টানা তিনটি চার মারেন নিকোলস। এর প্রথমটিতে ৯৭ বলে ফিফটিতে যান নিকোলস। টেস্টে তার দ্বাদশ পঞ্চাশ, বাংলাদেশের বিপক্ষে চতুর্থ।
অসমাপ্ত ওভার থেকে শুরু করে নিজের প্রথম তিন ওভারেই বাউন্ডারি হজম করেন ইবাদত। তার জায়গায় বোলিংয়ে এসে উইকেট প্রায় পেয়েই যাচ্ছিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। অফ স্পিনারের বলে শর্ট লেগে ক্যাচ দিয়েও বেঁচে যান জেমিসন। ক্যাচ মুঠোয় জমাতে পারেননি মাহমুদুল হাসান জয়।
তবে এর জন্য খুব বেশি আক্ষেপ করতে হয়নি বাংলাদেশকে। মিরাজের পরের ওভারেই আউট হন জেমিসন। বেরিয়ে এসে অফ স্পিনারকে ছক্কায় ওড়ানোর চেষ্টায় লং অনে তিনি ধরা পড়েন সাদমানের হাতে। ৫ রানে জীবন পেয়ে জেমিসন যোগ করতে পারেন কেবল এক রান।
আগের দিন ২৭ ওভার বোলিং করে কোনো উইকেট না পাওয়া মিরাজ কিছুক্ষণ পর এক ওভারেই ধরেন জোড়া শিকার। অফ স্পিনারের টানা আট বলে রান নিতে ব্যর্থ হওয়ার পর বেরিয়ে এসে খেলার চেষ্টা করেন টিম সাউদি। ঠিক মতো পারেননি, মিডউইকেটে ক্যাচ মুঠোয় জমান মুমিনুল হক।
পরের বলেই দারুণ রিভিউয়ে মেলে নিল ওয়্যাগনারের উইকেট। পা বাড়িয়ে ডিফেন্স করার চেষ্টা করেন তিনি। কিন্তু স্পিন করে বেরিয়ে যাওয়ার পথে বল ছুঁয়ে যায় ব্যাট। কট বিহাইন্ডের জোরাল আবেদনে আম্পায়ার সাড়া না দিলে রিভিউ নেন মুমিনুল হক, পাল্টায় সিদ্ধান্ত।
হ্যাটট্রিক ঠেকিয়ে দেওয়া ট্রেন্ট বোল্টের উইকেট পরের ওভারে পেতে পারতেন মিরাজ। কিন্তু লং অনে ক্যাচ মুঠোয় জমাতে পারেননি সাদমান। উল্টো বাউন্ডারি পান ব্যাটসম্যান।
মুমিনুলের করা পরের ওভারেই অবশ্য ক্যাচ মুঠোয় জমান সাদমান, ম্যাচে তার চতুর্থ। দ্রুত কিছু রানের চেষ্টায় থাকা নিকোলস রিভার্স সুইপ করেন। কিন্তু ঠিক মতো পারেননি, শর্ট থার্ডম্যানে একটু লাফিয়ে ক্যাচ মুঠোয় জমান সাদমান।
সঙ্গে স্পর্শ করেন টেস্টে এক ইনিংসে দেশের সর্বোচ্চ ক্যাচের রেকর্ড। উইকেটকিপার ছাড়া বাংলাদেশের হয়ে এক ইনিংসে চারটি ক্যাচ নেওয়ার কৃতিত্ব এতদিন ছিল স্রেফ সৌম্য সরকারের। ২০১৭ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে শততম টেস্টে তিনি গড়েছিলেন এই কীর্তি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
নিউ জিল্যান্ড ১ম ইনিংস: (আগের দিন ২৫৮/৫) ১০৮.১ ওভারে ৩২৮ (নিকোলস ৭৫, রাচিন ৪, জেমিসন ৬, সাউদি ৬, ওয়্যাগনার ০, বোল্ট ৯*; তাসকিন ২৬-৭-৭৭-০, শরিফুল ২৬-৭-৬৯-৩, ইবাদত ১৮-৩-৭৫-১, মিরাজ ৩২-৯-৮৬-৩, শান্ত ২-০-১০-০, মুমিনুল ৪.১-০-৬-২)।