প্রথম দিনের দুই সেশনে দুই পেসারের বোলিং ছিল একদমই ধারহীন। দ্বিতীয় দিনে খেলা হলো স্রেফ ৬.২ ওভার। কিন্তু বৃষ্টিভেজা দিনে মিরপুরেও যেন ছিল অনেকটা ‘ইংলিশ কন্ডিশন।’ খালেদ ও ইবাদত যথারীতি ব্যর্থ।
বৃষ্টি ও আলোকস্বল্পতার মাঝে দুই দিনে যতটুকুই খেলা হয়েছে, সেখানে কোনো প্রভাবই ফেলতে পারেননি তারা। খুব একটা সুইং করাতে পারেননি। আদায় করতে পারেননি সিম মুভমেন্ট। এমনকি ধারাবাহিকভাবে এক জায়গায় বল রাখার কাজটিও তারা করতে পারেননি!
দিনের প্রথম ডেলিভারিটির কথাই ধরুন। প্রথম সেশন বৃষ্টিতে ভেসে যাওয়ার পর যখন খেলা শুরু হলো, কন্ডিশন বলা যায় পেস বোলিংয়ের জন্য প্রায় আদর্শ। খালেদ প্রথম বলটিই করলেন লেগ স্টাম্পের বেশ বাইরে। বাবর আজম অনায়াসেই সেটি পাঠালেন বাউন্ডারিতে। শুরুর যে স্নায়ুর চাপ, সরে গেল এক ঝটকায়।
পরের সময়টুকুতেও খালেদ ও ইবাদত পারলেন না দুই ব্যাটসম্যানকে একটু চাপে রাখতেও। বরং এমন কন্ডিশনেও রান এলো ওভারপ্রতি চার করে!
ফ্ল্যাট উইকেটে ব্যাটসম্যানদের ভোগানোর মতো স্কিল বাংলাদেশের পেসারদের আছে কী না, চট্টগ্রাম টেস্টের পর তা নিয়ে সংশয় জানান খোদ টেস্ট অধিনায়ক মুমিনুল হক। এবার দেখা গেল, কন্ডিশন থেকে সহায়তা পাওয়ার পরও একই রকম ছন্নছাড়া তাদের বোলিং।
স্কিলের ঘাটতি নাহয় বোঝা গেল। কিন্তু লাইন-লেংথে বল রাখা তো একদমই মৌলিক ব্যাপার। সেই ধারাবাহিকতাও উধাও ইবাদত ও খালেদের বোলিংয়ে। দুই-তিনটা ভালো বলের পরই করেছেন একটা-দুইটা করে আলগা বল। ব্যাটসম্যানরা চাপেই পড়েননি।
পেসারদের জন্য বেশ সহায়তা থাকার পরও প্রথম দিন বাংলাদেশের সেরা দুই বোলার ছিলেন তাইজুল ইসলাম ও সাকিব আল হাসান। দুই বাঁহাতি স্পিনার টানা ভালো বোলিং করে বেঁধে রাখেন ব্যাটসম্যানদের। এক পর্যায়ে নেন টানা ৬টি মেডেন। এই সময়েই আসে আগের টেস্টে দুইশর বেশি রান করা আবিদ আলির উইকেট।
তাইজুল ও সাকিবের ৩২ ওভারের ১১টি মেডেন। দুই পেসার ইবাদত ও খালেদের ১৯.২ ওভারে মেডেন মাত্র দুটি।
আবু জায়েদ চৌধুরির জায়গায় সুযোগ পেয়ে ২১ মাস পর টেস্ট খেলতে নামা খালেদ ছিলেন সবচেয়ে হতাশাজনক। তার শক্তির জায়গা লেংথ থেকে বল লাফিয়ে তোলা এবং স্কিড করানো। সেটি এখানে খুব একটা দেখা যায়নি। আগে তাকে ঘণ্টায় ১৪০ কিলোমিটার গতির আশেপাশে বল করতে দেখা গেছে। এই টেস্টে গতি ছিল বেশির ভাগ সময় ১৩০ থেকে ১৩৫ কিলোমিটারের মধ্যে।
দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসেন মিজানুর রহমান বাবুল। এখন ফিল্ডিং কোচ হলেও তিনি জাতীয় দলের সাবেক পেসার। দুই পেসারের বোলিংয়ে হতাশা লুকাননি তিনি।
“ওইভাবে যদি মূল্যায়ন করি, (ওদের বোলিং) ভালো নয়। প্রথম বলটা চার হয়েছে। যেখানে পয়েন্ট পিছনে ছিল, অফ স্টাম্পেই বেশি ফিল্ডার ছিল। বলব যে, ভালো বোলিং করা হয়নি। আবহাওয়া আমাদের অনুকূলে ছিল। ওই অনুযায়ী আমরা পারফর্ম করতে পারিনি। এটাই বাস্তবতা।”
সহায়ক কন্ডিশনেও কেন বাংলাদেশের পেসাররা পারফরম করতে পারছে না, এর কারণ খোঁজার চেষ্টা করলেন মিজানুর।
“যদি পাকিস্তানের সঙ্গে তুলনা করি, ওদের পেস বোলাররাই আমাদের ডমিনেট করছে। শুরুতে উইকেট নিচ্ছে। যদি তুলনা করি, আমাদের পেসাররা উইকেট নিতে পারছে না। উইকেট নেওয়ার জন্য হয়ত বাড়তি কিছু করতে গিয়ে, ওদের জায়গাগুলো নড়ে যাচ্ছে। এটা একটা কারণ হতে পারে।”
বোলিংয়ে ধারাবাহিক ছিলেন না খালেদ। ব্যাটসম্যানদের একদমই ভাবাতে পারেননি তিনি। প্রথম দিন ইবাদতের কয়েকটা বল একটুর জন্য ব্যাটের কানা নেয়নি। তবে সেই অর্থে প্রভাব ফেলতে পারেননি তিনিও। দ্বিতীয় দিন অনুমিত বোলিংয়ে উল্টো গুণেছেন রান। তাদের এই বোলিংয়ে খুব বেশি পয়েন্ট মিলছে না মিজানুরের কাছ থেকে।
“অন্যান্য দেশের সাথে যদি আমাদের পেসারদের তুলনা করেন, তাহলে ১০ এর মধ্যে হয়ত ৫-৬ দেব।”
পরের সিরিজে পেসারদের দায়িদ্ব থাকবে আরও বেশি। এই সিরিজ শেষ হওয়ার পরদিনই নিউ জিল্যান্ডের উদ্দেশে উড়াল দেবেন ইবাদত-খালেদরা। কিন্তু পেস বোলিংয়ের এই জীর্ণ অবস্থায় আশার জায়গা থাকছে কমই।
মিজানুর যদিও আশায় বুক বাঁধছেন, নিউ জিল্যান্ডে দেখা যাবে ভিন্ন কিছু।
“সবাই জানি নিউ জিল্যান্ডে পেস বান্ধব উইকেট থাকে। বাংলাদেশের সেরা পেস ইউনিটই যাচ্ছে আমাদের সঙ্গে। এখন পর্যন্ত যারা পারফর্ম করছে বা জোরে বল করতে পারে, তারা যাচ্ছে। আশা করি, ওখানে ভালো বোলিং করবে আমাদের ছেলেরা।”
“ওখানে আমাদের প্রস্তুতি ম্যাচ আছে, সেখানে যদি ভালো শুরু করি এবং অনুশীলনে যদি ভালো জায়গায় বোলিং করতে পারি, তাহলে আমার মনে হয়, নিউ জিল্যান্ডে আমরা ভালো করব।”