টেস্ট ইতিহাসের তৃতীয় বোলার হিসেবে ইনিংসে ১০ উইকেট নিয়ে মুম্বাই টেস্টে ভারতকে ৩২৫ রানে থামিয়ে দেন এজাজ। ৪৭.৫ ওভারে ১১৯ রানে নেন ১০ উইকেট।
১৪৪ বছরের টেস্ট ইতিহাসের তৃতীয় সেরা বোলিং এটি, নিউ জিল্যান্ডের সর্বকালের সেরা।
বাঁহাতি এই স্পিনারের অবিশ্বাস্য অর্জনের দিনে প্রথম ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে নিউ জিল্যান্ড গুটিয়ে গেল স্রেফ ৬২ রানে! টেস্টে ভারতের বিপক্ষে যেকোনো দলের এটি সর্বনিম্ন সংগ্রহ। ২০১৫ সালে নাগপুরে দক্ষিণ আফ্রিকার ৭৯ রান ছিল আগের রেকর্ড।
২৬৩ রানে এগিয়ে থেকেও তাদের ফলো-অন করায়নি স্বাগতিকরা। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে কোনো উইকেট না হারিয়ে ৬৯ রান নিয়ে দ্বিতীয় দিন শেষ করেছে ভারত। এগিয়ে আছে এখন ৩৩২ রানে।
এজাজের ছোবল সামলে প্রথম ইনিংসে ভারতকে তিনশ ছাড়ানো সংগ্রহ এনে দেওয়ার কারিগর মায়াঙ্ক আগারওয়াল। ১৭ চার ও ৪ ছক্কায় ১৫০ রানের দারুণ ইনিংস খেলেন এই ওপেনার। আকসার প্যাটেলের ব্যাট থেকে আসে ৫২ রান।
প্রথম দিন থেকেই স্পিনারদের জন্য সহায়ক ওয়াংখেড়ের উইকেটে নিউ জিল্যান্ডের ব্যাটিংয়ে ধস নামানোর সুর বেঁধে দেন মোহাম্মদ সিরাজ। ৪ ওভারের ছোট্ট স্পেলে ৩ উইকেট তুলে নেন এই পেসার। এরপর চারটি উইকেট নিয়ে কোণঠাসা প্রতিপক্ষকে আর দাঁড়াতেই দেননি রবিচন্দ্রন অশ্বিন।
আকসারকে নিয়ে দিনের শুরুর ধাক্কা সামাল দেন মায়াঙ্ক। দুইজনে কাটিয়ে দেন প্রথম সেশন। লাঞ্চ বিরতির পর দ্বিতীয় ওভারে আবার এজাজের ছোবল। মায়াঙ্ককে কট বিহাইন্ড করে দেন তিনি।
১১৩ বলে ফিফটি করা আকসার ফেরেন ৫২ রানে। পরের ওভারে আক্রমণে এসে বাকি দুই উইকেট নিয়ে ভারতের ইনিংস গুটিয়ে দেন এজাজ। গড়েন ‘পারফেক্ট টেন’ নেওয়ার কীর্তি। তার আগে এই অর্জন ছিল অনিল কুম্বলের। ১৯৯৯ সালে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানকে গুঁড়িয়ে ৭৪ রানে ১০ উইকেট নিয়েছিলেন ভারতীয় লেগ স্পিনার।
১০ উইকেটের চোখধাঁধানো কীর্তি টেস্ট ক্রিকেটে প্রথম দেখিয়েছিলেন জিম লেকার। ১৯৫৬ অ্যাশেজে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে ৫৩ রানে ১০ উইকেট নিয়েছিলেন ইংলিশ অফ স্পিনার।
ব্যাটিংয়ে নেমে নিউ জিল্যান্ড স্রেফ মুখ থুবড়ে পড়ে ভারতের সামনে। ২০ রানও করতে পারেননি কেউ। দুই অংকেই যেতে পেরেছেন কেবল দুইজন। সর্বোচ্চ আটে নামা কাইল জেমিসনের, ১৭ রান।
শুরুতে দুর্দান্ত এক স্পেলে সফরকারীদের ভিত নাড়িয়ে দেন সিরাজ। ইনিংসের চতুর্থ ওভারের প্রথম বলেই স্লিপে ধরা পড়েন উইল ইয়াং। ওই ওভারের শেষ বলে বাউন্সারে ডিপ স্কয়ার লেগে ক্যাচ দেন টম ল্যাথাম। পরের ওভারে এসে সিরাজ স্টাম্প এলোমেলো করে দেন অভিজ্ঞ রস টেইলরের।
বিপর্যয়ে পড়া নিউ জিল্যান্ডকে আর ঘুরে দাঁড়াতে দেননি স্পিনাররা। নিয়মিত বিরতিতে উইকেট তুলে নিয়ে সফরকারী দলটিকে বাজে এক অভিজ্ঞতা দেন অশ্বিন-আকসাররা।
৮ ওভারে মাত্র ৪ রান দিয়ে ৪ উইকেট নেন অশ্বিন। আকসারের শিকার ১৪ রান দিয়ে দুটি। প্রায় পাঁচ বছর পর টেস্ট খেলতে নামা অফ স্পিনার জয়ন্ত যাদবের প্রাপ্তি একটি।
নিউ জিল্যান্ডকে আবারও ব্যাটিংয়ে পাঠানোর সুযোগ থাকলেও তা করেনি ভারত। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে কোনো বিপদ ছাড়াই দিন পার করেছে তারা।
মায়াঙ্কের সঙ্গে ওপেন করতে নামেননি শুবমান গিল। ফিল্ডিংয়ের সময় ডান হাতের কনুইয়ে চোট পেয়ে মাঠ ছেড়েছিলেন তিনি। এখনও তার পুরোপুরি সেরে না ওঠার কথা জানিয়েছে বিসিসিআই।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ভারত ১ম ইনিংস: (আগের দিন ২২১/৪) ১০৯.৫ ওভারে ৩২৫ (মায়াঙ্ক ১৫০, ঋদ্ধিমান ২৭, অশ্বিন ০, আকসার ৫২, জয়ন্ত ১২, উমেশ ০*, সিরাজ ৪; সাউদি ২২-৬-৪৩-০, জেমিসন ১২-৩-৩৬-০, এজাজ ৪৭.৫-১২-১১৯-১০, সমারভিল ১৯-০-৮০-০, রাচিন ৪-০-২০-০, মিচেল ৫-৩-৯-০)
নিউ জিল্যান্ড ১ম ইনিংস: ২৮.১ ওভারে ৬২ (ল্যাথাম ১০, ইয়াং ৪, মিচেল ৮, টেইলর ১, নিকোলস ৭, ব্লান্ডেল ৮, রবীন্দ্র ৪, জেমিসন ১৭, সাউদি ০, সমারভিল ০, এজাজ ০*; উমেশ ৫-০-২-৭-০, সিরাজ ৪-০-১৯-৪, আকসার ৯.১-৩-১৪-২, অশ্বিন ৮-২-৮-৪, জয়ন্ত ২-০-১৩-১)
ভারত ২য় ইনিংস: ২১ ওভারে ৬৯/০ (মায়াঙ্ক ৩৮*, পুজারা ২৯*; সাউদি ৫-০-১৪-০, এজাজ ৯-১-৩৫-০, জেমিসন ৪-২-৫-০, সমারভিল ২-০-৯-০, রবীন্দ্র ১-০-৪-০)