তাইজুলের ৭ উইকেটের পর মুশফিক-ইয়াসিরের কাঁধে বাংলাদেশ

তাইজুল ইসলামের দারুণ বোলিংয়ে পাওয়া ৪৪ রানের লিডের সুবিধা হারাতে বসেছে বাংলাদেশ। দ্রুত ৪ উইকেট হারানো দলকে টানছেন মুশফিকুর রহিম ও ইয়াসির আলি চৌধুরি। পাকিস্তানকে চ্যালেঞ্জিং লক্ষ্যে দিতে এই দুই জনের সঙ্গে লিটন দাস ও মেহদী হাসান মিরাজের দিকে তাকিয়ে বাংলাদেশ।

অনীক মিশকাতঅনীক মিশকাতবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Nov 2021, 04:04 AM
Updated : 28 Nov 2021, 11:33 AM

বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস: ৩৩০

পাকিস্তান প্রথম ইনিংস: ১১৫.৪ ওভার ২৮৬

বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংস: ১৯ ওভারে ৩৯/৪

চার উইকেটেই দিন শেষ

প্রথম ইনিংসে ৪৯ রানে প্রথম চার ব‍্যাটসম‍্যানকে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। এবার ২৫  রানেই ফিরে গেলেন তারা। আবারও দাঁড়িয়ে গেছেন মুশফিকর রহিম। তার সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করছেন ইয়াসির আলি চৌধুরি। তাদের দৃঢ়তায় শেষ বেলায় আর কোনো উইকেট হারায়নি বাংলাদেশ।

চট্টগ্রাম টেস্টের যা চিত্র তাতে চতুর্থ দিন সকালে এই দুই জনের সামনে অপেক্ষা করছে কঠিন চ‍্যালেঞ্জ।

১৯ ওভারে ৪ উইকেটে ৩৯ রানে দিন শেষ করেছে বাংলাদেশ। প্রথম ইনিংসে ৪৪ রানের লিড নেওয়া স্বাগতিকরা এগিয়ে ৮৩ রানে। ৩০ বলে ১২ রানে খেলছেন মুশফিক। ইয়াসিরের রান ৩৪ বলে ৮। দুই জনেই মেরেছন একটি করে চার।

সুইং বোলিংয়ে বাংলাদেশকে ভুগিয়ে শাহিন শাহ আফ্রিদি নিয়েছেন ৩ উইকেট। অন‍্যটি হাসান আলি।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস: ৩৩০

পাকিস্তান প্রথম ইনিংস: ২৮৬

বাংলাদেশ ২য় ইনিংস: ১৯ ওভারে ৩৯/৪ (সাদমান ১, সাইফ ১৮, শান্ত ০, মুমিনুল ০, মুশফিক ১২*, ইয়াসির ৮*; আফ্রিদি ৬-৪-৬-৩, হাসান ৫-০-১৯-১, ফাহিম ৩-১-৬-০, নুমান ৪-১-৭-০, সাজিদ ১-০-১-০)

টিকলেন না সাইফও

প্রতিটা বল খেলার জন‍্য ব‍্যস্ত ছিলেন সাইফ। অফ স্টাম্পের বাইরে কিংবা বাউন্সার ছাড়ছিলেন না কিছুই। সব খেলার চেষ্টাতেই ফিরলেন তরুণ এই ওপেনার।শরীর তাক করে আসা শাহিন শাহ আফ্রিদির বাউন্সারে ক‍্যাচ দিলেন ফিরতি ক‍্যাচ।

প্রথম ইনিংসেও আফ্রিদির বাউন্সারেই ক‍্যাচ দিয়েছিলেন সাইফ।

৩৪ বলে তিন চারে ১৮ রান করেন সাইফ।

ইনিংসে তিনি আফ্রিদির তৃতীয় শিকার। চলতি বছরে ৪২তম। রবিচন্দ্রন অশ্বিনকে (৪১) পেছনে ফেলে চলতি বছরে সর্বোচ্চ উইকেট এখন বাঁহাতি এই পেসারের।

তামিমকে ছাড়িয়ে চূড়ায় মুশফিক

সম্ভাবনা জাগিয়েও পারেননি আগেরবার। দ্বিতীয় ইনিংসে তামিম ইকবালের একটি রেকর্ড নিজের করে নিলেন মুশফিকুর রহিম। বাংলাদেশের হয়ে টেস্টে সর্বোচ্চ রান এখন এই মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানের।

৪ হাজার ৬৯৬ রান নিয়ে পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট শুরু করেন মুশফিক। প্রথম ইনিংসে ৯১ রান করে যান তামিমের খুব কাছে। বাঁহাতি ওপেনার তখন এগিয়ে ছিলেন কেবল ১ রানে।

তৃতীয় দিনের তৃতীয় সেশনে বাঁহাতি ওপেনারকে ছাড়িয়ে গেলেন মুশফিক। প্রয়োজনীয় ২ রান করতে তিনি খেলেন ৬ বল।

চোটের জন্য আপাতত মাঠের বাইরে থাকা তামিমের ৪ হাজার ৭৮৮ রান এখন চলে গেছে দুই নম্বরে। তিনি এই রান করেছিলেন ৬৪ টেস্টে ১২৩ ইনিংসে। ৭৬ টেস্ট খেলতে নামা মুশফিকের লাগল ১৪০ ইনিংস।

বাংলাদেশের হয়ে চার হাজার রান নেই আর কারও। ৩ হাজার ৯৩৩ রান নিয়ে তিনে সাকিব আল হাসান। দ্রুত এগিয়ে আসছেন মুমিনুল হক। পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসের পর টেস্ট অধিনায়কের রান ৩ হাজার ৩৫৫।

বাজে শটে আউট মুমিনুল

প্রথম বলে আউট হতে হতে বেঁচে যাওয়া মুমিনুল হক ফিরে গেলেন পরের বলেই। এমন কোনো আহামরী বল ছিল না। হাসান আলির লেগ মিডল স্টাম্পের লেংথ বল ঠিক মতো খেলতে পারেননি বাংলাদেশ অধিনায়ক। ব‍্যাটের কানায় লেগ ক‍্যাচ যায় মিডউইকেটে। ঝাঁপিয়ে ক‍্যাচ মুঠোয় জমান আজহার আলি।

ক্রিজে সাইফ হাসানের সঙ্গী মুশফিকুর রহিম।

দ্রুত ফিরলেন সাদমান-শান্ত

সুইং বোলিংয়ে বাংলাদেশকে ভোগাচ্ছেন শাহিন শাহ আফ্রিদি। কখনও বল বাইরে নিচ্ছেন, কখনও ভেতরে ঢোকাচ্ছেন। বাঁহাতি এই পেসারের বলে ফিরে গেছেন সাদমান ইসলাম ও নাজমুল হোসন শান্ত।

ভেতরে ঢোকানো একটি বলে ফ্লিক করেছিলেন সাদমান। ব‍্যাটে খেলতে পারেননি। আম্পায়ার আউট দিলে রিভিউ নেন। বল ট্র‍্যাকিংয়ে দেখা গেছে স্রেফ লেগ স্টাম্প ছুঁয়ে যেত বল।

১২ বলে ১ রান করেন সাদমান।

প্রথম বলে খোঁচা মারতে গিয়েও মারেননি শান্ত। পরের বল ঠিকই খেলেন। শরীরের অত বাইরের বল খেলার  কোনো দরকার ছিল না। প্রথম স্লিপে ক‍্যাচ মুঠোয় জমান আব্দুল্লাহ শফিক।

মুমিনুল হকও ক্রিজে গিয়েই খোঁচা মেরেছিলেন। তবে সফট হ‍্যান্ডে খেলেছিলেন বলে বেঁচে যান মুমিনুল।

তাইজুলের ৭ উইকেটে ৪৪ রানের লিড

দিনের শুরুতে যেটা অভাবনীয় ছিল, সেটাই বাস্তব হলো তাইজুল ইসলামের দুর্দান্ত বোলিংয়ে। দুই সেশনের মধ‍্য পাকিস্তানকে গুটিয়ে দিয়ে ৪৪ রানের লিড পেল বাংলাদেশ।

বিনা উইকেটে ১৪৫ রানে প্রথম দিন শেষ করা বাবর আজমের দল থমকে গেল ২৮৬ রানে।

বাংলাদেশর মাথাব‍্যথার কারণ হয়ে ওঠেছিল পাকিস্তানের সবশেষ জুটি। ভাঙাই যাচ্ছিল না ফাহিম আশরাফ ও শাহিন শাহ আফ্রিদির প্রতিরোধ। চা-বিরতি পিছিয়ে দিয়েও কাজ হচ্ছিল না। শেষ পর্যন্ত ৭২ বল স্থায়ী ২৯ রানের জুটি ভাঙলেন তাইজুল।

ওভারের প্রথম বলে বেরিয়ে এসে ছক্কা মারেন ফাহিম। দুই বল পর সজোরে করেন সুইপ। বুঝতে পেরে আগেভাগেই সরে যান লিটন দাশ। বল জমা পড়ে তার দুই পায়ের মাঝে!

৮০ বলে তিন চার ও এক ছক্কায় ৩৮ রান করেন ফাহিম।

১১৬ রানে ৭ উইকেট নেন তাইজুল। টেস্ট পাকিস্তানের বিপক্ষে এটা বাংলাদেশের সেরা বোলিং। আগের সেরা ছিল ২০১১ সালে ঢাকা টেস্টে সাকিব আল হাসানের ৮২ রানে ৬ উইকেট।

সংক্ষিপ্ত স্কোর (তৃতীয় দিনের চা-বিরতি পর্যন্ত):

বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ৩৩০

পাকিস্তান ১ম ইনিংস: (আগের দিন ১৪৫/০) ১১৫.৪ ওভারে ২৮৬ (আবিদ ১৩৩, শফিক ৫২, আজহার ০, বাবর ১০, ফাওয়াদ ৮, রিজওয়ান ৫, ফাহিম ৩৮, হাসান ১২, সাজিদ ৫, নুমান ৮, আফ্রিদি ১৩*; আবু জায়েদ ১২-০-৪১-০, ইবাদত ২৬-৭-৪৭-২, তাইজুল ৪৪.৪-৯-১১৬-৭, মিরাজ ৩০-৭-৬৮-১, মুমিনুল ৩-০-১২-০)

নুমানকে ফিরিয়ে তাইজুলের ছয়

আগের দিন ঠিক একই রকম পরিস্থিতিতে পড়েছিলেন মুশফিকুর রহিম। নিশ্চিত হওয়ার উপায় ছিল না, বল তার ব‍্যাটে লেগেছে নাকি ব‍্যাট লেগেছে পায়ে। নুমান আলির ক্ষেত্রেও তাই হলো। বোঝার উপায় নেই, বল আগে ব‍্যাটে লেগেছ নাকি প‍্যাডে। রিভিউ নিয়েও এলবিডব্লিউ হয়ে যাওয়ার হতাশায় মাঠ ছাড়লেন তিনি।

তাইজুল ইসলামের ভেতরে ঢোকা বল পা বাড়িয়ে খেলেন নুমান। পা এবং ব‍্যাট ছিল খুবই কাছে। আম্পায়ার আউট দিলে সঙ্গে সঙ্গে রিভিউ নেন নুমান। মাঠের আম্পায়ার আউট দেওয়ায় পাল্টায়নি সিদ্ধান্ত।

১৪ বলে এক চারে ৮ রান করেন নুমান। তিনি তাইজুলের ষষ্ঠ শিকার।

ক্রিজে ফাহিম আশরাফের সঙ্গী শাহিন শাহ আফ্রিদি।

সাজিদকে বোল্ড করে ইবাদতের দুই

প্রথম সেশনেও আঁটসাঁট বোলিং করেছিলেন। কিন্তু তখন স্টাম্পে খুব একটা বল রাখেননি ইবাদত হোসেন। তাই সেভাবে পরীক্ষায় ফেলতে পারননিন ব‍্যাটসম‍্যানদের। দ্বিতীয় সেশনে লাইনে একটু পরিবর্তন এনে পেলেন সাফল‍্য। সাজিদ খানকে বোল্ড করে নিলেন নিজের দ্বিতীয় উইকেট।

অফ স্টাম্পের একটু বাইরে পড়ে ভেতরে ঢোকা লেংথ বল ব‍্যাটে খেলেননি সাজিদ। শেষ মুহূর্তে সরিয়ে নেন ব‍্যাট। ইবাদতের গতিময় ডেলিভারি উপড়ে ফেলে তার অফ স্টাম্প।

১২ বলে এক চারে ৫ রান করেন সাজিদ।

ক্রিজে ফাহিম আশরাফের সঙ্গী নুমান আলি।

হাসানকে ফিরয়ে তাইজুলের পাঁচ

কিছু বড় শট খেলে তাইজুল ইসলামের বোলিং এলোমেলো করে দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে যেন নেমেছিলেন হাসান আলি। কিন্তু শেষ হাসি হাসলেন বাংলাদেশের বাঁহাতি স্পিনারই।

ওভারের প্রথম বল প্রথম বলে হাসান মারেন চার। পরের বল স্লগ করে ওড়ান ছক্কায়। তৃতীয় বলে এগিয়ে গিয়ে আবার ছক্কা মারতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তাইজুলের ফ্লাইট ও টার্নে বলের লাইন মিস করেন। স্টাম্পিংয়ের সহজ সুযোগ কাজে লাগান লিটন দাস।

৮ বলে একটি করে ছক্কা ও চারে ১২ রান করেন হাসান।

পরের বলে রিভিউ নিয়ে এলবিডব্লিউর হাত থেকে বাঁচেন নতুন ব‍্যাটসম‍্যান সাজিদ খান। বল ট্র‍্যাকিংয়ে দেখা গেছে বল যেত লেগ স্টাম্পের বাইরে দিয়ে। পরের বলে চমৎকার কাভার ড্রাইভে চার মেরে রানের খাতা খোলেন তিনি।

ক‍্যারিয়ারে নবমবারের মতো পাঁচ উইেকট নিলেন তাইজুল। পাকিস্তানের বিপক্ষে দ্বিতীয়বার।

আবিদের প্রতিরোধ ভাঙলেন তাইজুল

প্রথম সেশনে টানা বোলিং করা তাইজুল ইসলাম একটু বিশ্রাম পেয়েছিলেন। দ্বিতীয় নতুন বলে এক প্রান্তে আবু জায়েদ চৌধুরিকে এনেছিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মুমিনুল হক। আবু জায়েদ তেমন একটা প্রভাব ফেলতে না পারায় তাইজুলকে আক্রমেণ ফেরান তিনি। বাঁহাতি এই স্পিনার ভাঙেন সেঞ্চুরিয়ান আবিদ আলির প্রতিরোধ।

লাঞ্চের আগে নাজমুল হোসেন শান্তর হাতে জীবন পাওয়া আবিদ আবার বাঁচেন ক‍্যাচ দিয়ে। তাইজুলকে বেরিয়ে এসে খেলার চেষ্টায় ক‍্যাচ দেন শর্ট লেগে। ডানদিকে সরে গিয়ে ক‍্যাচ প্রায় ধরেই ফেলেছিলেন ইয়াসির আলি চৌধুরি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ধরে রাখতে পারেননি।

এর জন‍্য অবশ‍্য তেমন কোনো মাশুল দিতে হয়নি। এক বল পরেই আবিদকে এলবিডব্লিউ করে দেন তাইজুল। পিছিয়ে গিয়ে বল ব‍্যাটে খেলতে পারেননি আবিদ। আম্পায়ার আউট দিলে রিভিউ নেন তিনি। বল ট্র‍্যাকিংয়ে দেখা যায়, বল ছুঁয়ে যেত লেগ স্টাম্প। টিকে যায় রিভিউ, ফিরে যান আবিদ।

২৮২ বলে ১২ চার ও দুই ছক্কায় ১৩৩ রান করেন এই ওপেনার।

ক্রিজে ফাহিম আশরাফের সঙ্গী হাসান আলি।

লাঞ্চের পর ইবাদতের বলে রিজওয়ানের উইকেট

প্রথম দুই দিন প্রথম সেশনের পর মিলেনি কোনো উইকেট। প্রথম দিন বাংলাদেশের মুশফিকুর রহিম ও লিটন দাস কাটিয়ে দেন  শেষ দুই সেশন। দ্বিতীয় দিন পরের দুই সেশনে বাংলাদেশ বিচ্ছিন্ন করতে পারেনি পাকিস্তানের দুই ওপেনারকে। তৃতীয় দিন মোহাম্মদ রিজওয়ানকে এলবিডব্লিউ করে এই ধারা ভাঙলেন ইবাদত হোসেন।

লাঞ্চের আগের ওভারে দ্বিতীয় নতুন বল নেয় বাংলাদেশ। সেই ওভারটি করেন তাইজুল। দুই পেসার ইবাদত ও আবু জায়েদ চৌধুরি দ্বিতীয় সেশনের শুরু থেকে বল হাতে পান। আগের দিন হাসান আলি যেভাবে বোলিং করেছিলেন, অনেকটা সেই পরিকল্পনাই যেন অনুসরণ করেন এই দুই পেসার।

গতি বেশি থাকায় ইবাদত একটু বেশি চ‍্যালেঞ্জ জানাচ্ছিলেন। তার হাত ধরেই আসে উইকেট।অফ স্টাম্পের বাইরে আউট সু্ইং করাতে করতে করেন ইনসুইং। রিজওয়ানের ব‍্যাট এড়িয়ে লাগে, প‍্যাডে। আম্পায়ার এলবিডব্লিউ দিলে রিভিউ না নিয়ে ফিরে যান এই কিপার-ব‍্যাটসম‍্যান। নিলেও লাভ হতো না, বল লাগতো মিডল স্টাম্পে। ভাঙে ৭৬ বল স্থায়ী ২৫ রানের জুটি।

৩৮ বলে ৫ রান করেন রিজওয়ান।

ভালো সেশন হতে পারত আরও ভালো

দ্বিতীয় দিন প্রথম সেশনে ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ। আঁটসাঁট বোলিংয়ে ফিরিয়ে দিয়েছে পাকিস্তানের চার ব‍্যাটসম‍্যানকে। ফিরে যেতে পারতেন সেঞ্চুরিয়ান আবিদ আলিও। স্লিপে তার ক‍্যাচ নিতে পারেননি নাজমুল হোসেন শান্ত।

তৃতীয় দিনের প্রথম সেশনে ৩১ ওভারে ৫৮ রান যোগ করতে আব্দুল্লাহ শফিক, আজহার আলি, বাবর আজম ও ফাওয়াদ আলমের উইকেট হারিয়েছে পাকিস্তান।

মধ‍্যাহ্ন-বিরতিতে যাওয়ার সময় পাকিস্তানের রান ৪ উইকেটে ২০৩। ২৬৯ বলে ১১ চার ও ২ ছক্কায় ১২৭ রানে খেলছেন আবিদ। ৩১ বলে রিজওয়ানের রান ৫।

১৬ ওভারের টানা স্পেলে ৩১ রানে ৩ উইকেট নিয়েছেন বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলাম। ম‍্যাচের প্রথম ওভারে পরপর দুই বলে শফিক ও আজহারকে বিদায় করেন তিনি। পরে নেন ফাওয়াদের উইকেট।

১০ ওভারে টানা স্পেলে ২৩ রানে বাবরের উইকেট নেন মেহেদী হাসান মিরাজ।

জীবন পেলেন আবিদ

এক প্রান্ত আগলে রাখা আবিদ আলিকে ফেরানোর একটা সুযোগ এসেছিল। কিন্তু স্লিপে ক‍্যাচে হাতই ছোঁয়াতে পারেননি নাজমুল হোসেন শান্ত।

শরীরের কাছের বল কাট করেছিলেন আবিদ। ঠিক মতো পারেননি, কিপার লিটন দাসের প‍্যাডের ফ্ল‍্যাপে লেগে যায় স্লিপের পাশ দিয়ে। প্রতিক্রিয়া দেখাতে দেরি করা শান্ত হাত নিতে পারেননি বলের লাইনে। জীবনের সঙ্গে বাউন্ডারি পেয়ে যান আবিদ। সে সময় ১১৩ রানে ছিলেন তিনি।

ফাওয়াদকে ফিরিয়ে তাইজুলের তিন

ফাওয়াদ আলমকে টিকতে দিলেন না তাইজুল ইসলাম। কট বিহাইন্ডের সফল রিভিউ নিয়ে তাকে ফিরিয়েছে বাংলাদেশ।

অফ স্টাম্পের বাইরে থেক তীক্ষ্ণ বাঁক নিয়ে ভেতরে ঢোকা বল ঠিক মতো খেলতে পারেননি ফাওয়াদ। গ্লাভস ছুঁয়ে প‍্যাডে লেগে একটু উপরে উঠে যায়। চমৎকার রিফ্লেক্সে ঝাঁপিয়ে দ্বিতীয় চেষ্টায় ক‍্যাচ গ্লাভসে জমান লিটন দাস।

১৫ বলে ১ চারে ৮ রান করেন ফাওয়াদ। সকাল থেকে এক প্রান্তে টানা বোলিং করা তাইজুলের তৃতীয় শিকার তিনি।

তৃতীয় দিন প্রথম সেশনে এ নিয়ে চার উইকেট হারাল পাকিস্তান। ক্রিজে সেঞ্চুরিয়ান আবিদ আলির সঙ্গী কিপার-ব‍্যাটসম‍্যান মোহাম্মদ রিজওয়ান।

মিরাজের দারুণ ডেলিভারিতে বোল্ড বাবর

প্রথম ওভারে জোড়া উইকেট হারানোর পর খুব সাবধানী ব‍্যাটিং করছিল পাকিস্তান। দেখেশুনে খেলছিলেন আবিদ আলি ও বাবর আজম। প্রথম পানি বিরতির ঠিক আগের ওভারে এই জুটি ভাঙলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। চমৎকার এক ডেলিভারিতে পাকিস্তান অধিনায়ককে বোল্ড করে দিলেন এই অফ স্পিনার।

অফ স্টাম্পে পড়ে সোজা যাওয়া বলের লাইনে যেতে পারেননি বাবর। সরে গিয়ে খেলার চেষ্টায় সফল হননি। এলোমেলো হয় যায় স্টাম্প। ভাঙে ৮৮ বল স্থায়ী ২৩ রানের জুটি।

খুব একটা স্বচ্ছন্দ ছিলেন না বাবর। এক বল আগে একটি চার মেরে শুরুর অস্বস্তি ঝেড়ে ফেলার আভাস দিয়েছিলেন। তবে ফিরে গেলেন এর পরপরই। এক চারে ৪৬ বলে ১০ রান করেন বাবর।

ক্রিজে সেঞ্চুরিয়ান আবিদ আলির সঙ্গী ফাওয়াদ আলম।

দায়িত্বশীল ব‍্যাটিংয়ে আবিদের সেঞ্চুরি

স্রেফ ৭ রান দূরে ছিলেন আবিদ আলি। তাইজুল ইসলাম ও ইবাদত হোসেনের চমৎকার বোলিংয়ে সেই রান করতে অনেকটা সময় লেগে গেছে। এই সময়ে ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করেছেন, এক-দুই নিয়ে এগিয়েছেন। শেষ পর্যন্ত ২০৯ বলে পৌঁছেছেন টেস্টে নিজের চতুর্থ সেঞ্চুরিতে।

৯৩ রান নিয়ে দিন শুরু করা আবিদ ৭ রান যোগ করতে খেলেছেন ২৯ বল।

প্রথম ওভারে দুই উইকেট হারানো পাকিস্তান দিনের শুরুতে সাবধানী। দেখেশুনে খেলছেন আবিদ ও বাবর আজম।

বাংলাদেশ বোলিংয়ে দারুণ সুশৃঙ্খল। অফ স্টাম্পের বাইরের চ‍্যানেল ধরে টানা বোলিং করছেন ইবাদত। নিজের বৈচিত্র ব‍্যবহার করে ব‍্যাটসম‍্যানদের সামর্থ‍্যের পরীক্ষা নিচ্ছেন বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল

প্রথম ওভারেই তাইজুলের জোড়া আঘাত

আগের দিন যিনি সবচেয়ে বেশি ভোগাচ্ছিলেন সেই তাইজুল ইসলামের হাত ধরে প্রথম ওভারেই দুটি উইকেট নিয়েছে বাংলাদেশ। বাঁহাতি স্পিনারের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে ফিরে গেছেন আব্দুল্লাহ শফিক ও আজহার আলি।

বাংলাদেশ তৃতীয় দিন শুরু করে তাইজুলের স্পিন দিয়ে। প্রথম বলে সিঙ্গেল নেন আবিদ আলি। পরের তিনটি বল ঠিকঠাকই খেলেন শফিক। পঞ্চম বল তিনি ব‍্যাটে খেলার আগে ছোবল দেয় প‍্যাডে। আগের দিন ঠিক এভাবে খেলেও বেঁচে গিয়েছিলেন, আম্পায়ার আউট না দেওয়ার পর রিভিউ নেয়নি বাংলাদেশও।

এদিন জোরালো আবেদনে সাড়া দিয়ে আউট দেন আম্পায়ার। রিভিউ নেওয়ার কথা ভেবেছিলেন শফিক। কিন্তু সিদ্ধান্ত নিতে বেশি দেরি করে ফেলেন। রিভিউ নিলেও লাভ হতো না, উল্টো একটি রিভিউ হারাত পাকিস্তান।

আগের দিনের ৫২ রানেই ফিরেন শফিক।

পরের বলেই ফিরে যান আজহার। তাইজুলের আর্ম বল ব‍্যাটে খেলতে পারেননি। জোরালো আবেদনে সাড়া না দিলে রিভিউ নেয় বাংলাদেশ। পাল্টায় সিদ্ধান্ত, গোল্ডেন ডাকের তেতো স্বাদ পান আজহার।

কঠিন চ‍্যালেঞ্জের সামনে বাংলাদেশ

দুই সেশনেও একটি উইকেট নিতে না পারা বাংলাদেশের সামনে অপেক্ষা করছে কঠিন চ‍্যালেঞ্জ।

১০ উইকেট হাতে নিয়ে স্রেফ ১৮৫ রানে পিছিয়ে পাকিস্তান।

হারিয়ে। পাকিস্তান দ্বিতীয় দিন শেষ করে ৫৭ ওভারে বিনা উইকেটে ১৪৫ রানে। ১৮০ বলে ৯ চার ও দুই ছক্কায় ৯৩ রানে খেলছেন আবিদ আলি। ১৬২ বলে দুটি করে ছক্কা ও চারে অভিষিক্ত আব্দুল্লাহ শফিকের রান ৫২।

সংক্ষিপ্ত স্কোর (দ্বিতীয় দিন শেষে):

বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ৩৩০

পাকিস্তান ১ম ইনিংস: ৫৭ ওভারে ১৪৫/০ (আবিদ ৯৩*, শফিক ৫২*; আবু জায়েদ ১০-০-৩০-০, ইবাদত ১২-৩-৩১-০, তাইজুল ১৯-৫-৩৯-০, মিরাজ ১৩-৪-৩৩-০, মুমিনুল ৩-০-১২-০)