দুইশর বেশি বল খেলে ফেলা শান্ত কিংবা দুই রানে আউট হওয়া সাইফ হাসান, বা দলের অন্য ব্যাটসম্যানরা, দিনজুড়েই বাংলাদেশ ‘এ’ দলের ব্যাটিংয়ে ফুটে উঠল এমন হতাশার চিত্র। শান্তর পাশাপাশি ফিফটি করলেন অধিনায়ক মুমিনুল হক। কিন্তু সামগ্রিক ব্যাটিংয়ের ছবিটা খুব উজ্জ্বল নয়। দুর্দান্ত বোলিংয়ে বরং নজর কাড়লেন তরুণ বাঁহাতি স্পিনার হাসান মুরাদ।
চট্টগ্রামে দ্বিতীয় চারদিনের ম্যাচের প্রথম দিনে বাংলাদেশ হাই পারফরম্যান্স (এইচপি) দলের বিপক্ষে বাংলাদেশ ‘এ’ দলের রান ৯ উইকেটে ২২৩।
দারুণ কিছু শটে মুমিনুল করেন ৬২। ৫ ঘণ্টা উইকেটে কাটিয়ে শান্ত বাজে বলে আউট হন ৭২ রান করে। দলের প্রথম সাত ব্যাটসম্যানের আর কেউ ছুঁতে পারেননি দুই অঙ্ক।
এইচপির অধিনায়ক আকবর আলি ৩৭ ওভার শেষে প্রথমবার বল তুলে দেন মুরাদের হাতে। ২০ বছর বয়সী এই স্পিনারই ধসিয়ে দেন ‘এ’ দলের মিডল ও লোয়ার-মিডল অর্ডার। ৪৭ রানে তার শিকার ৫ উইকেট।
জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে খানিকটা সবুজের ছোঁয়া থাকা উইকেটে টস জিতে বোলিংয়ে নামে এইচপি দল। নতুন বলে সুমন খান ও মুকিদুল ইসলাম নাড়িয়ে দেন ‘এ’ দলের দুই ওপেনার সাইফ হাসান ও সাদমান ইসলামকে। দুই টেস্ট ওপেনার একটুও স্বস্তিতে খেলতে পারেননি দুই তরুণ পেসারকে। প্রথম ৫ ওভারে রান আসে কেবল ১!
দুই ওপেনারকেই অল্পতে ফেরান সুমন খান। সাইফ হাসানের অস্বস্তিময় উপস্থিতি শেষ হয় ২৫ বলে ২ রান করে। অফ স্টাম্প ঘেঁষা বল জোড়া পায়ে ডিফেন্স করার চেষ্টা করেন তিনি। স্লিপে দারুণ ক্যাচ নেন পারভেজ হোসেন ইমন।
১০ ওভারে ‘এ’ দলের রান স্পর্শ করে ১০, দ্বিতীয় উইকেট ধরা দেয় এরপরই। পা না বাড়িয়ে শরীর থেকে দূরে ড্রাইভ করে গালিতে ধরা পড়েন সাদমান (২৯ বলে ৬)।
দারুণ স্পেলে প্রথম ৬ ওভারে ৭ রানে ২ উইকেট নেন সুমন, উইকেট না পেলেও মুকিদুল ৫ ওভারে দেন ৪ রান।
মুমিনুল অবশ্য শুরু থেকেই সাবলীল ব্যাটিং করতে থাকেন। সুমনকে পুল করে বাউন্ডারি মেরে শুরু করেন তিনি পথচলা, ওই ওভারেই অফ ড্রাইভে বাউন্ডারি পান আরেকটি। ৭ টেস্ট সেঞ্চুরি করা প্রিয় মাঠে এগিয়ে যেতে থাকেন তিনি অনায়াসেই। শান্ত এগোতে থাকেন সাবধানী ব্যাটিংয়ে।
বাঁহাতি স্পিনার তানভির ইসলামের বল ফাইন লেগে ঠেলে দুই রান নিয়ে মুমিনুল ফিফটি স্পর্শ করেন ৭০ বলে। ৭৫ বল খেলে তখন শান্তর রান ২৫।
৮৮ রানের এই জুটি ভাঙেন রেজাউর। রাউন্ড দা উইকেট করা বাউন্সার ঠিকমত সামলাতে পারেননি মুমিনুল। বল তার ব্যাটে ছোবল দিয়ে যায় দ্বিতীয় স্লিপের হাতে। ৬ চার ও ১ ছক্কায় ৮৫ বলে ৬২ করে ফেরেন অধিনায়ক।
এরপর দ্রুত তিন উইকেট নিয়ে ‘এ’ দলকে চাপে ফেলে দেন মুরাদ। ৫ রান করা মোহাম্মদ মিঠুনকে কটবিহাইন্ড করে তার শিকার শুরু। এরপর তিনি শূন্য হাতে বিদায় করেন ইয়াসির আলি চৌধুরি ও ইরফান শুক্কুরকে। টার্নের বিপক্ষে উড়িয়ে মারতে গিয়ে মিড অফে ধরা পড়েন ইয়াসির (১৫ বলে ০)। সোজা বল আলতো করে লেগে খেলতে গিয়ে এলবিডব্লিউ ইরফান (৯ বলে ০)।
১৭ রানের মধ্যে ৪ উইকেট হারিয়ে ফেলা দলকে এরপর এগিয়ে নেন শান্ত ও নাঈম হাসান। ঠাণ্ডা মাথার ব্যাটিংয়ে সপ্তম উইকেটে ৬৫ রানের জুটি গড়ে ফেলেন দুজন। শান্ত ফিফটি করেন ১৩১ বল খেলে।
দ্বিতীয় নতুন বলের আগে একটি ওভার চালিয়ে নিতেই হয়তো ৭৯তম ওভারে শাহাদতকে বোলিংয়ে আনেন এইচপির অধিনায়ক আকবর। সেই ওভারেই বোনাস মেলে শান্তর উইকেট। ৪ চার ও ১ ছক্কায় ২০৮ বলে ৭২ রান করে উইকেট উপহার দিয়ে ফেরেন তিনি।
এরপর নতুন বল না নিয়ে স্পিনই চলতে থাকে। সাফল্যও ধরা দেয়। ১০১ বলে ৩২ করা নাঈমকে থামান মুরাদ।
নয় নম্বরে নামা শহিদুল ইসলামের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে ‘এ’ দল পার হতে পারে দুইশ। শাহাদাতকে লং অন দিয়ে দুটি ছক্কা মারেন শহিদুল, মুরাদকে দুটি ছক্কায় ওড়ান লং অফ দিয়ে।
মুরাদ অবশ্য শোধ তোলেন ঠিকই। ৩১ বলে ৩৬ রান করা শহিদুলকে দিনের শেষ ওভারে এলবিডব্লিউ করে তিনি পূর্ণ করেন ৫ উইকেট। দিনের খেলাও শেষ হয় সেখানেই।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ ‘এ’: ৮৯.১ ওভারে ২২৩/৯ (সাইফ ২, সাদমান ৬, শান্ত ৭২, মুমিনুল ৬২, মিঠুন ৫, ইয়াসির ০, ইরফান ০, নাঈম ৩২, শহিদুল ৩৬, রকিবুল ৬*, সুমন ১৩-৪-৩৬-২, মুকিদুল ১২-৪-২৮-০, রেজাউর ১৬-৪-২৪-১, তানভির ১৫-০-৪৯-০, মাহমুদুল ৮-১-২১-০, মুরাদ ২২.১-৬-৪৭-৫, শাহাদাত ৩-১-১৬-১)।