‘নতুন মেন্ডিসের’ রেকর্ড গড়া বোলিংয়ে শ্রীলঙ্কার জয়

বোলিংয়ের ধরনে এতটাই মিল যে পার্থক্য করাই কঠিন। হঠাৎ দেখায় মনে হতে পারে, কলম্বোতে যেন আবার শ্রীলঙ্কার জার্সি পরে নেমে গেছেন এক সময়ের রহস্য স্পিনার অজন্তা মেন্ডিস। কিন্তু না তিনি নন, নিজের প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে নেমেছিলেন মাহিশ থিকশানা। নতুন এই রহস্য স্পিনার প্রথম বলেই নিয়েছেন উইকেট। অভিষেকে গড়েছেন সেরা বোলিংয়ের রেকর্ড। তার হাত ধরেই দক্ষিণ আফ্রিকাকে গুঁড়িয়ে সিরিজ জিতে নিয়েছে শ্রীলঙ্কা।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Sept 2021, 04:29 PM
Updated : 7 Sept 2021, 06:41 PM

তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে মঙ্গলবার দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৭৮ রানে হারিয়েছে শ্রীলঙ্কা। তিন ম্যাচের সিরিজ ২-১ ব্যবধানে জেতার সঙ্গে আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপ সুপার লিগে পেয়েছে মূল্যবান ১০ পয়েন্ট।

আর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে ৯ উইকেটে ২০৩ রানের সংগ্রহ দাঁড় করায় স্বাগতিকরা। রান তাড়ায় সফরকারীরা গুটিয়ে যায় কেবল ১২৫ রানে।

স্বাগতিকদের জয়ে সবচেয়ে বড় অবদান রাখা থিকশানা ৩৭ রান দিয়ে নেন ৪ উইকেট। তাতেই গড়েন রেকর্ড, ওয়ানডে অভিষেকে ৪ উইকেট নেওয়া প্রথম লঙ্কান স্পিনার তিনিই।

ম্যাচের শুরুতে শ্রীলঙ্কা অবশ্য ছিল কোণঠাসা। নিয়মিত বিরতিতে হারিয়েছে উইকেট। পঞ্চাশ রানের একটি জুটিও নেই তাদের ইনিংসে। ব্যক্তিগত ফিফটিও নেই কোনো।

চতুর্থ ওভারেই আভিশকা ফার্নান্দোকে ফিরিয়ে দেন মহারাজ। দলে ফেরা দিনেশ চান্দিমালকে টিকতে দেননি জর্জ লিন্ডা। দুই ওপেনারই হন এলবিডব্লিউ।

কামিন্দু মেন্ডিসকে নিয়ে ৩৩ রানে ৩ উইকেট হারানো দলের হাল ধরার চেষ্টা চালান ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা। কিন্তু বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি তাদের জুটি। বাঁহাতি স্পিনার লিন্ডাকে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান কামিন্দু।

ইনিংস বড় করতে পারেননি ধনাঞ্জয়াও। ২ চারে ৩১ রান করা এই ব্যাটসম্যান এইডেন মারক্রামের শিকার। দাসুন শানাকা, ভানিন্দু হাসারাঙ্গাকে দ্রুত ফিরিয়ে দেন বাঁহাতি স্পিনার মহারাজ।

সতীর্থদের আসা-যাওয়ার মাঝে এক প্রান্ত আগলে রাখেন চারিথ আসালঙ্কা। তার লড়াই থামান শামসি। বাঁহাতি রিস্ট স্পিনারের বলে কট বিহাইন্ড হন তিনি ২ চারে ৪৭ করে।

দুশমন্থ চামিরার ৩ চারে ২৯ রানের ইনিংসে কোনোমতে দুইশ পার করে শ্রীলঙ্কা। পরে দুই উইকেট নিয়ে এই পেসারই হন ম্যাচ সেরা।

সফরকারীদের সেরা বোলার টেম্বা বাভুমার চোটে নেতৃত্বের দায়িত্ব পাওয়া মহারাজ। ৩৮ রান দিয়ে তিনি নেন ৩ উইকেট।

রান তাড়ায় দক্ষিণ আফ্রিকা শুরুতেই দিক হারায়। পাওয়ার প্লেতে ফিরে যান প্রথম চার ব্যাটসম্যান, দলের খাতায় রান তখন কেবল ৪৫। মারক্রামকে দিয়ে যার শুরু। প্রাভিন জয়াবিক্রমার স্পিনে এই ওপেনার ধরা পড়েন স্লিপে।

নিজের পরপর দুই ওভারে রিজা হেনড্রিকস ও রাসি ফন ডার ডাসেনকে ফেরান চামিরা। আক্রমণে এসেই উইকেটের স্বাদ পান অভিষিক্ত থিকশানা। আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান ইয়ানেমান মালান স্লিপে ধরা পড়েন তার অফ স্পিনে। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম বলে উইকেট পাওয়া শ্রীলঙ্কার চতুর্থ বোলার তিনি।

এরপরই হানা দেয় বৃষ্টি। ৪০ মিনিট পর খেলা শুরু হলেও কমেনি ওভার সংখ্যা। তবে দক্ষিণ আফ্রিকা আর পারেনি ঘুরে দাঁড়াতে। লঙ্কান স্পিনারদের ছোবলে এলোমেলো হয়ে যায় তাদের ব্যাটিং। দলটির হয়ে ৩০ রানও করতে পারেননি কেউ।

দুই দলের তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথমটি আগামী শুক্রবার।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

শ্রীলঙ্কা: ৫০ ওভারে ২০৩/৯ (আভিশকা ১০, চান্দিমাল ৯, কামিন্দু ১৬, ধনাঞ্জয়া ৩১, আসালঙ্কা ৪৭, শানাকা ১৩, হাসারাঙ্গা ৬, চামিকা ১৬, চামিরা ২৯, থিকশানা ১০*, জয়াবিক্রমা ২*; রাবাদা ৮-০-৪৬-০, মহারাজ ১০-০-৩৮-৩, লিন্ডা ১০-১-৩২-২, মারক্রাম ১০-০-৪১-১, শামসি ১০-০-৩১-২, ফেলুকওয়ায়ো ১-০-১০-০, মুল্ডার ১-০-৩-১)।

দক্ষিণ আফ্রিকা: ৩০ ওভারে ১২৫ (মালান ১৮, মারক্রাম ২, হেনড্রিকস ১, ফন ডার ডাসেন ৫, ক্লাসেন ২২, মুল্ডার ২, ফেলুকওয়ায়ো ১৭, লিন্ডা ১৮, রাবাদা৮, মহারাজ ১৫, শামসি ৯*; চামিরা ৪-১-১৬-২, জয়াবিক্রমা ৪-০-১৮-১, হাসারাঙ্গা ৮-৩-৩২-২, থিকশানা ১০-০-৩৭-৪, ধনাঞ্জয়া ৩-০-১৮-০, আসালঙ্কা ১-০-৩-১)।

ফল: শ্রীলঙ্কা ৭৮ রানে জয়ী।

সিরিজ: ৩ ম্যাচের সিরিজ ২-১ ব্যবধানে জয়ী শ্রীলঙ্কা।

ম্যান অব দা ম্যাচ: দুশমন্থ চামিরা।

ম্যান অব দা সিরিজ: চারিথ আসালঙ্কা।