চলে গেলেন ভারতের এক সময়ের ‘বিপদের ভরসা’

ব্যাটিংয়ে তার সীমাবদ্ধতা ছিল অনেক। তবে সীমা ছিল না সাহস আর প্রতিজ্ঞার। লড়াই করতে পিছপা হতেন না। দলের বিপদের সময় বরাবর হয়ে উঠতেন ত্রাতা। সেই যশপাল শর্মার জীবনের ইনিংস এবার থেমে গেল। ৬৬ বছর বয়সে মারা গেলেন ভারতের ১৯৮৩ বিশ্বকাপ জয়ী দলের ব্যাটসম্যান।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 July 2021, 07:11 AM
Updated : 13 July 2021, 08:18 AM

দিল্লিতে মঙ্গলবার সকালে হাঁটতে বের হয়ে বাড়ি ফেরার পর কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে মৃত্যু হয় তার।

যশপালের ৬ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অধ্যায় নিঃসন্দেহে ১৯৮৩ বিশ্বকাপ। ভারতীয় ক্রিকেটের পালাবদলের ওই আসরে শিরোপা জয়ের পথে দলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান ছিল তার।

ওই টুর্নামেন্টে দলের প্রথম ম্যাচে পরাক্রমশালী ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারানোর পথে ৮৯ রানের অসাধারণ ইনিংস খেলে ম্যাচ সেরা হয়েছিলেন যশপাল। সেমি-ফাইনালে ইংল্যান্ডকে হারানোর পথেও রান তাড়ায় খেলেন ৬১ রানের মহামূল্য ইনিংস।

১৯৭৯ থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে ৩৭ টেস্ট ও ৪২ ওয়ানডে খেলেন যশপাল। টেস্টে ২ সেঞ্চুরিতে ৩৩.৪৫ গড়ে রান ১ হাজার ৬০৬। ওয়ানডেতে চার ফিফটিতে রান ৮৮৩, গড় ২৮.৪৮। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ২১ সেঞ্চুরিতে রান প্রায় ৯ হাজার।

পরিসংখ্যান খুব সমৃদ্ধ না হলেও ভারতীয় ক্রিকেটে আলাদা মর্যাদা পান তিনি লড়াকু মানসিকতার কারণেই। হাতে শট বেশি ছিল না তার, টেকনিক্যালিও নিখুঁত ছিলেন না। তবে ২২ গজে সীমাবদ্ধতাগুলো কাটিয়ে উঠতেন সাহস, মনোসংযোগ আর দৃঢ়প্রতিজ্ঞা দিয়ে।

দুই টেস্ট সেঞ্চুরির প্রথমটি করেন তিনি ১৯৭৯ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দিল্লিতে, আরেকটি ১৯৮২ সালে চেন্নাইয়ে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। তার আরেকটি স্মরণীয় ইনিংস ১৯৭৯ সালে অস্ট্রেলিয়া বিপক্ষে কলকতায়। শেষ ইনিংসে সময়ের সঙ্গে লড়াই করে ২৪৭ রান তাড়ায় যশপাল ৮৫ রানে অপরাজিত ছিলেন ১১৭ বল খেলে। কিন্তু ভারত ২০০ করার পর আলোকস্বল্পতায় ড্র হয় ম্যাচ।

খেলা ছাড়ার পর তিনি ধারাভাষ্য দিয়েছেন, কোচিং করিয়েছেন ও কাজ করেছেন ক্রিকেট প্রশাসক হিসেবে। ২০০০ থেকে ২০০৫ ও ২০০৮ থেকে ২০১১ পর্যন্ত সময়ে দুই মেয়াদে ছিলেন জাতীয় দলের নির্বাচকও। সবশেষ কাজ করছিলেন দিল্লির ক্রিকেট পরামর্শক কমিটিতে।

যশপালের এভাবে চলে যাওয়া মানতে কষ্ট হচ্ছে তার সাবেক সতীর্থ দিলিপ ভেংসরকারের। গত মাসে ১৯৮৩ বিশ্বকাপ জয়ী দলের একটি অনুষ্ঠানে দেখা হওয়ার কথা মনে করলেন ভারতের এই ব্যাটিং গ্রেট।

“এটা অবিশ্বাস্য, আমাদের মধ্যে সে সবচেয়ে বেশি ফিট ছিল। সেদিনই (ওই অনুষ্ঠানে) তার রুটিনের কথা জিজ্ঞেস করেছিলাম আমি। সে নিরামিষাশী ছিল, মদ্যপান করত না, রাতের খাবারে সুপ খেত, সকালের হাঁটা কখনও বাদ দিত না। হতবাক হয়ে গেলাম ওর খবরটি জেনে।”

“ক্রিকেটার হিসেবে সে ছিল দারুণ টিমম্যান ও লড়াকু একজন। আমি ওকে চিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের দিনগুলো থেকেই। এখনও বিশ্বাস করতে পারছি না।”