বৈশ্বিক আসরের আয়োজক: বিডিং না হলেই লাভ দেখছে বিসিবি

আইসিসি ভবিষ্যত সফরসূচির পরবর্তী চক্রে বৈশ্বিক টুর্নামেন্টগুলোর আয়োজক নির্ধারণে বিডিং প্রক্রিয়া না হলেই সুবিধা বেশি দেখছে বিসিবি। সেক্ষেত্রে আলোচনা ও কূটনীতির মাধ্যমে বড় কোনো টুর্নামেন্টের স্বাগতিক হওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে, বলছেন বিসিবির প্রধান নির্বাহী নিজাম উদ্দিন চৌধুরি।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 June 2021, 01:42 PM
Updated : 2 June 2021, 01:42 PM

২০২৪ থেকে ২০৩১ পর্যন্ত আইসিসি টুর্নামেন্টগুলোর তালিকা চূড়ান্ত হয় মঙ্গলবার আইসিসির বোর্ড সভায়। এই ৮ বছরে ছেলেদের ক্রিকেটে ওয়ানডে বিশ্বকাপ আছে দুটি, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ চারটি ও চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি আছে দুটি। সঙ্গে আছে চারটি আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল।

মেয়েদের ক্রিকেটেও আছে দুটি ওয়ানডে বিশ্বকাপ, চারটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ও দুটি টি-টোয়েন্টি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। যুব পর্যায়ে আছে ছেলেদের চারটি অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ, মেয়েদের চারটি অনূর্ধ্ব-১৯ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ।

২০১৯ সালের অক্টোবরে আইসিসি সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছিল, উন্মুক্ত বিডিং প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নির্ধারণ করা হবে টুর্নামেন্টগুলোর আয়োজক দেশ। বিডিংয়ে অংশ নেওয়ার সুযোগ থাকবে এমনকি আইসিসির সহযোগী দেশগুলোরও। তবে ভারত ও ইংল্যান্ড শুরু থেকেই উন্মুক্ত বিডিংয়ের বিপক্ষে ছিল। শেষ পর্যন্ত আইসিসিও বিডিং পদ্ধতি থেকে সরে এসেছে। মঙ্গলবারের সভায় সিদ্ধান্ত হয়, বিডিংয়ের বদলে আইসিসির বোর্ডই ঠিক করে দেবে আসরগুলোর স্বাগতিক।

বুধবার বিসিবির সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে বিসিবির প্রধান নির্বাহী নিজাম উদ্দিন চৌধুরি বললেন, উন্মুক্ত বিডিংয়েই আয়োজক ঠিক করা হবে এবং বাংলাদেশ তাতে অংশ নেবে।

পরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম থেকে তাকে জানানো হলো, আগের দিনের সভায় বিডিং প্রক্রিয়ার পথ থেকে সরে এসেছে আইসিসি। বিসিবির প্রধান নির্বাহী এটা জেনে অবাক হলেন শুরুতে। পরে তিনিও নিশ্চিত হতে পারলেন, আগের সিদ্ধান্ত থেকে ‘ইউ টার্ন’ নিয়েছে আইসিসি।

এবার বিসিবির প্রধান নির্বাহী বললেন, নতুন এই সিদ্ধান্তে বাংলাদেশের সম্ভাবনা বরং উজ্জ্বল হলো আরও।

“আয়োজক বাছাই প্রক্রিয়াটাকে আসলে মিনিমাইজ করা হয়েছে এবারের সভায়। দুটির কোনোটিতেই আমাদের ক্ষতি নেই। বিডিং প্রক্রিয়া হলে আমরা প্রস্তুতি নিয়েই অংশ নিতাম। তবে সত্যি বলতে, বিডিং না হওয়াতেই আমাদের সুবিধা বেশি।”

“বিডিং প্রক্রিয়া আমাদের জন্য অনেক চ্যালেঞ্জিং ছিল। কারণ, অনেক আর্থিক ব্যাপার চলে আসত। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলির সঙ্গে তখন পেরে ওঠা আমাদের জন্য কঠিন হতো। কাতার যেভাবে ফুটবল বিশ্বকাপ আয়োজন করেছে, এভাবেই স্টেডিয়াম বানিয়ে, দ্রুত অবকাঠামো গড়ে তারা আইসিসি টুর্নামেন্টের আয়োজক হওয়ার লড়াইয়ে নামত। আমাদের জন্য যা কঠিন হতো।”

বিসিবি প্রধান নির্বাহীর মতে, অতীতে আইসিসি টুর্নামেন্টের সফল আয়োজন করায় বাংলাদেশ এখন ভালোভাবে বিবেচনায় থাকবে।

“আইসিসি বোর্ডই যদি আয়োজক ঠিক করে দেয়, তাহলে আমাদের জন্য পজিটিভ ব্যাপার হলো, বড় আইসিসি ইভেন্ট সফলভাবে আয়োজন করার অভিজ্ঞতা আছে আমাদের। নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় এটি আমাদের পক্ষে থাকবে।”

“বিডিং হলেও আমরা চেষ্টা করতাম। নিজেদের দাবি তুলে ধরলে আমাদের সুযোগ থাকত। তবে আইসিসিই স্বাগতিক বাছাই করার ক্ষেত্রে আমাদের সুবিধা হলো, অতীতের ট্র্যাক রেকর্ড ভালো।”

২০১১ ওয়ানডে বিশ্বকাপের সহ-আয়োজক ছিল বাংলাদেশ, ২০১৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আয়োজন করেছিল এককভাবে। এছাড়াও ২০১৬ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের আসরও হয়েছিল বাংলাদেশেই।

সামনের আট বছরের চক্রে মেয়েদের টুর্নামেন্ট ও যুব টুর্নামেন্টগুলোর কোনো আসরের আয়োজক হওয়া বাংলাদেশের জন্য কঠিন কিছু হবে না। তবে বিসিবির চাওয়া থাকবে ছেলেদের আটটি বৈশ্বিক আসরের কোনোটি আয়োজন করা, আর্থিক দিক থেকে শুরু করে সবদিক থেকে যেগুলো বেশি আকর্ষণীয়।

চারটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দুটি এমনিতেই বিবেচনার বাইরে রাখতে হবে বলে জানালেন বিসিবির প্রধান নির্বাহী। ওই দুটি আসর হবে জুন-জুলাই মাসে, বাংলাদেশ তখন বৃষ্টির মৌসুম। তাই অন্য ছয় আসরকে লক্ষ্য করে এগোতে হবে বিসিবির। এক্ষেত্রে আইসিসিতে বাংলাদেশের অবস্থান, বড় দেশগুলির সঙ্গে পারস্পরিক সম্পর্ক ও ক্রিকেটীয় কূটনীতির ওপরই নির্ভর করতে হবে।

বিডিং পদ্ধতি বাতিল হওয়ায় বিসিবির খুশি হলেও শঙ্কার একটি জায়গা আছে। আইসিসি বোর্ডই যেহেতু স্বাগতিক ঠিক করবে, ভারত-ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ার মতো প্রভাবশালী দেশগুলি নিজেরাই ভাগাভাগি করে নিতে পারে সব টুর্নামেন্ট। নিজাম উদ্দিন চৌধুরি সেই শঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছেন না, তবে আশাও হারাচ্ছেন না।

“নিজেরা ভাগাভাগি করবে… এই শঙ্কা যে নেই, তা নয়। তবে এটা করতে হলেও একটা নির্বাচনী প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। চাইলেই পেয়ে যাবে, এমনটি নয়।”