পাল্লেকেলেতে দ্বিতীয় টেস্টের দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষে শ্রীলঙ্কার সংগ্রহ ৬ উইকেটে ৪৬৯।
সামগ্রিকভাবে এখনও শ্রীলঙ্কা শক্ত অবস্থানে। তবে প্রথম দিনের কোণঠাসা অবস্থা থেকে বেরিয়ে দ্বিতীয় দিনের পারফরম্যান্সে বাংলাদেশই একটু এগিয়ে।
আলোকস্বল্পতায় শুক্রবার খেলা শেষ হয় ২৪.১ ওভার আগেই। দিনের ৬৫.৫ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে শ্রীলঙ্কা যোগ করে ১৭৮ রান।
১ উইকেটে ২৯১ রান দিয়ে শুরু করে এ দিন রানের জন্য বেশ লড়াই করতে হয় লঙ্কানদের। প্রথম সেশনে ২৬ ওভারে যোগ করতে পারে তারা কেবল ৪৩ রান, হারায় তিন উইকেট। পরেও রানের গতি বাড়েনি খুব একটা।
অলরাউন্ডার রমেশ মেন্ডিসের সঙ্গে ডিকভেলার জুটি সপ্তম উইকেটে ১১৭ বলে ৮৭ তুলে ফেলেছে এর মধ্যেই। আক্রমণাত্মক এই জুটিতেই কিছুটা মলিন হয় বাংলাদেশের দারুণ লড়াইয়ের দিনটি।
সিরিজে জুড়ে দারুণ বোলিং করা তাসকিন ধারাবাহিকতা ধরে রাখেন এ দিনও। টানা ভালো বোলিং করার পুরস্কারও পেয়ে যান-সেঞ্চুরিয়ান লাহিরু থিরিমান্নে, অভিজ্ঞ অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস ও পাথুম নিসানকার উইকেট। পেতে পারতেন আরেকটি, কিন্তু আরও একবার তার বলে পড়েছে ক্যাচ। মেন্ডিসের ক্যাচ স্লিপে মুঠোয় জমাতে পারেননি নাজমুল হোসেন শান্ত।
উইকেট প্রথম দিনের মতো ব্যাটিং স্বর্গ ছিল না এ দিন। বাউন্স ছিল কিছুটা অসমান, নিচু হয় পেসারদের বল। টার্ন ও বাড়তি বাউন্স পান স্পিনাররা।
প্রথম দুই সেশনে এই সুবিধা বেশ ভালোভাবেই কাজে লাগান বাংলাদেশের বোলাররা। যথারীতি নেতৃত্বে ছিলেন তাসকিন। ১১৯ রানে ৩ উইকেট নিয়ে তিনিই দলের সেরা বোলার। বোলিং ফিগার যা বলছে, তার চেয়ে অনেক ভালো ছিল তার বোলিং।
১৩১ রানে দিন শুরু করা থিরিমান্নেকে ফিরিয়ে তাসকিন শুরু করেন শিকার। আঁটসাঁট বোলিংয়ের সামনে ধৈর্যশীল ব্যাটিংয়ে এগোচ্ছিলেন থিরিমান্নে। হঠাৎই একটু মনোযোগ হারান। শরীর তাক করে আসা বল শাফল করে খেলার চেষ্টায় তার গ্লাভস ছুঁয়ে জমা হয় কিপার লিটন দাসের গ্লাভসে।
ভাঙে ওশাদা ফার্নান্দোর সঙ্গে দ্বিতীয় উইকেটে ১০৪ রানের জুটি। ২৮৯ বলে ১৪০ রান করেন থিরিমান্নে।
দুই বল পরই তাসকিন উইকেট পেতে পারতেন আরেকটি। তার অফ স্টাম্প ঘেঁষা দুর্দান্ত ডেলিভারি ঠিকমতো খেলতে পারেননি ম্যাথিউস। বল যায় লিটনের গ্লাভসে। আবেদন করেননি বোলার, কিপার বা বাংলাদেশের কেউই। পরে আল্ট্রা এজ-এ মেলে ব্যাটে বলের স্পর্শের প্রমাণ।
সেটির চড়া মূল্য অবশ্য দিতে হয়নি। নিজের এক ওভার পরই তাসকিন ফিরিয়ে দেন ম্যাথিউসকে। উইকেটের পেছনে ঝাঁপিয়ে বল গ্লাভসে জমান লিটন। শূন্য রানে ‘বেঁচে যাওয়া’ ম্যাথিউস ফেরেন ৫ রানে।
দ্বিতীয় সেশনের প্রথম ঘণ্টায় মিলতে পারত নিসানকার উইকেট। কিন্তু আবু জায়েদের বলে পয়েন্টে ক্যাচে কেবল আঙুল ছোঁয়াতে পারেন তাইজুল। উল্টো বাউন্ডারি পেয়ে যান ব্যাটসম্যান।
সে সময় ১৪ রানে ছিলেন নিসানকা। তাইজুলের ব্যর্থতার জন্য বড় মাশুল দিতে হয়নি। খানিক পর আক্রমণে ফিরে চতুর্থ বলেই নিসানকাকে বোল্ড করে দেন তাসকিন। নিখুঁত লেংথে পিচ করা বল পড়তে গড়বড় করেন নিসানকা। সামনে খেলার বদলে পেছনে খেলতে গিয়ে তিনি সামলাতে পারেননি।
একপ্রান্ত আগলে রাখা ওশাদা ফার্নান্দোকে ফিরিয়ে মেহেদী হাসান মিরাজ পান প্রথম সাফল্য। সুইপ করার চেষ্টায় বল তার গ্লাভস-প্যাড-ব্যাট ছুঁয়ে উঠে যায় ক্যাচ। ব্যাটসম্যানের ইচ্ছা বুঝতে পেরে লিটন আগেই সরে যান লেগে, গ্লাভসে জমান ক্যাচ। শেষ হয় ২২১ বলে ৮১ রানের ইনিংস।
সেটাই হয়ে থাকে দিনের শেষ সাফল্য। ধাক্কা সামাল দিয়ে দলকে পাঁচশ রানের পথে রাখেন ডিকভেলা ও মেন্ডিস। দ্রুত এগোনো এই জুটি ভাঙার একটা সুযোগ এসেছিল তাসকিনের বলে। কিন্তু মেন্ডিসের সহজ ক্যাচ মুঠোয় জমাতে পারেননি শান্ত। প্রথম দিন তাসকিনের বলেই দিমুথ করুনারত্নের ক্যাচ ছেড়েছিলেন তিনি।
ডিকভেলা ফিফটি স্পর্শ করেন ৪৮ বলে। আটে নামলেও তার সঙ্গী মেন্ডিস ঘরোয়া ক্রিকেটে মূলত ব্যাটিং অলরাউন্ডার। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ৫টি সেঞ্চুরি আছে তার, যার মধ্যে একটি ট্রিপল সেঞ্চুরি। দিন শেষে তিনি অপরাজিত ২২ রানে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
শ্রীলঙ্কা ১ম ইনিংস: (আগের দিন ২৯১/১) ১৫৫.৫ ওভারে ৪৬৯/৬ (থিরিমান্নে ১৪০, ওশাদা ৮১, ম্যাথিউস ৫, ধনাঞ্জয়া ২, নিসানকা ৩০, ডিকভেলা ৬৪*, মেন্ডিস ২২*; আবু জায়েদ ২২-৪-৬৯-০, তাসকিন ৩২.৫-৭-১১৯-৩, মিরাজ ৩৪-৭-১০২-১, শরিফুল ২৯-৬-৯১-১, তাইজুল ৩৮-৭-৮৩-১)।