ফাহিম-রিজওয়ানের ব্যাটে ফলো-অন এড়াল পাকিস্তান

ফলো-অন এড়ানো বহুদূর, একশ করাই দায়! নিউ জিল্যান্ডের চার পেসারের আক্রমণে পাকিস্তানের ব্যাটিং তখন বিপর্যস্ত। সেই ধ্বংস্তস্তুপ থেকেই দলকে উদ্ধার করেন ফাহিম আশরাফ ও মোহাম্মদ রিজওয়ান। দুজনের দারুণ ব্যাটিংয়ে পাকিস্তান পায় ফলো-অন বাঁচানোর স্বস্তি।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Dec 2020, 07:10 AM
Updated : 28 Dec 2020, 07:11 AM

ফলো-অন বাঁচিয়ে অবশ্য বেশি দূর এগোতে পারেনি পাকিস্তান। মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টের বৃষ্টিবিঘ্নিত তৃতীয় দিনে তারা প্রথম ইনিংসে অলআউট ২৩৯ রানে। নিউ জিল্যান্ডের লিড ১৯২ রানের।

৮০ রানে ৬ উইকেট হারানোর পর রিজওয়ান ও ফাহিম সপ্তম উইকেটে যোগ করেন ১০৭ রান। ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক রিজওয়ানের ব্যাট থেকে আসে ৭০ রানের দায়িত্বশীল ইনিংস। ৮ নম্বরে নেমে পাল্টা আক্রমণে ৯১ রানের ইনিংস খেলেন ফাহিম, এই অলরাউন্ডারের ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস।

ব্যাটিং ধসের আগে দিনের শুরুটা পাকিস্তানের খারাপ ছিল না। নাইটওয়াচম্যান মোহাম্মদ আব্বাসকে নিয়ে প্রথম ১২ ওভার নির্বিঘ্নে কাটিয়ে দেন আবিদ আলি। যদিও রান আসে মাত্র ৯।

নিউ জিল্যান্ডকে ব্রেক থ্রু এনে দেন কাইল জেমিসন। দীর্ঘদেহী পেসারের দারুণ এক ডেলিভারিতে ব্যাট-প্যাডের ফাঁক গলে বোল্ড হন আবিদ (১০৪ বলে ২৫)।

আব্বাস প্রথম রানের দেখা পান ৩৭ বল খেলে। তবে সঙ্গীকে হারানোর পরের ওভারে শেষ হয় তার প্রতিরোধও। ৫৫ বলে ৫ রান করে স্লিপে ধরা পড়েন তিনি ট্রেন্ট বোল্টের বলে। রস টেইলর নেন তার ১৫০তম ক্যাচ।

বিপর্যয়ের তখন কেবলই শুরু। টিম সাউদি এক ওভারে ফিরিয়ে দেন আজহার আলি ও হারিস সোহেলকে। প্রথম সেশনে ২৬ ওভার খেলে পাকিস্তানের প্রাপ্তি ছিল ৪ উইকেট হারিয়ে ৩২।

কিউই পেসারদের আরেকটি সাফল্য। ছবি : নিউ জিল্যান্ড ক্রিকেটের টুইটার।

পরের সেশনে বৃষ্টি বাগড়া দেয় বারবার। এর ফাঁকে পায়ের আঙুলে চিড় নিয়েও বোলিং করতে নামা নিল ওয়্যাগনার তার চেনা শর্ট বলে ফিরিয়ে দেন ফাওয়াদ আলমকে।

৬ উইকেট হারিয়ে তখন ধুঁকছে পাকিস্তান। রিজওয়ান ও ফাহিম দৃশ্যপট বদলে দেন সেখান থেকেই। ফাহিমের প্রতিআক্রমণে পাকিস্তানের ঘুরে দাঁড়ানোর শুরু। বৃষ্টিতে খেলা বারবার বন্ধ হওয়ায় তাদের ছন্দ বিঘ্নিত হয়েছে। তবু দুজন চালিয়ে যান লড়াই।

বোল্টকে পুল করে ছক্কা মারার পর সাউদি-জেমিসনদের বলেও নিয়মিত চার আদায় করতে থাকেন ফাহিম। ভরসা পেয়ে রিজওয়ানও খেলতে থাকেন দারুণ সব শট। জুটি গড়ে ওঠে, রানও আসতে থাকে দ্রুততায়।

১০৭ রানের দারুণ এই জুটি ভাঙেন মিচেল স্যান্টনার। তবে বোলিংয়ে নয়, দুর্দান্ত ফিল্ডিংয়ে। মিড উইকেটে বল ঠেলেছিলেন ফাহিম, চেষ্টা ছিল দ্রুত দুটি রান নেওয়ার। স্কয়ার লেগ থেকে অনেকটা ছুটে এসে স্যান্টনার সরাসরি থ্রোয়ে নন-স্ট্রাইক প্রান্তে রান আউট করে দেন রিজওয়ানকে (৭১)।

এরপর ইয়াসির শাহ দ্রুত ফিরলেও শাহিন শাহ আফ্রিদিকে নিয়ে ফাহিম চালিয়ে যান তার অভিযান। টানা চারটি বাউন্ডারি মারেন সাউদিকে। ওয়্যাগনারের বলে আরেকটি বাউন্ডারিতে দলের ফলো অন এড়ানো আর নিজের আগের সর্বোচ্চ স্কোর পেরোনো, দুটিই হয়ে যায় একসঙ্গে।

প্রত্যাশিত সেঞ্চুরিটি অবশ্য শেষ পর্যন্ত পাননি ফাহিম। শাহিন আফ্রিদি আউট হয়ে যাওয়ার পর শেষ জুটিতে ফাহিম টেকেননি বেশিক্ষণ। ১৫ চার ও ১ ছক্কায় ১৩৪ বলে ৯১ রানে থামে তার ইনিংস।

কিউইদের চার পেসার ভাগাভাগি করে নিয়েছেন উইকেট। সেরা ছিলেন জেমিসন। প্রথম ১৭ ওভারে ১২টিই মেডেন নিয়ে তিনি রান দিয়েছিলেন মাত্র ৯। পরে ফাহিমের আক্রমণে কিছু রান গুনতে হয় তাকে। শেষ পর্যন্ত ফাহিমকেই তিনি পরিণত করেন তৃতীয় শিকারে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

নিউ জিল্যান্ড ১ম ইনিংস : ১৫৫ ওভারে ৪৩১

পাকিস্তান ১ম ইনিংস : ১০২.২ ওভারে ২৩৯ (আগের দিন ৩০/১) (আবিদ ২৫, আব্বাস ৫, আজহার ৫, হারিস ৩, ফাওয়াদ ৯, রিজওয়ান ৭১, ফাহিম ৯১, ইয়াসির ৪, আফ্রিদি ৬, নাসিম ০*; সাউদি ২৬-৭-৬৯-২, বোল্ট ২৬-৪-৭১-২, জেমিসন ২৩.২-১৩-৩৫-৩, ওয়্যাগনার ২১-৫-৫০-২, স্যান্টনার ৬-২-৭-০)।