রবির স্পিন ঝলকে উজ্জ্বল ঢাকা

১৭৯ রানের পুঁজি, প্রথম ইনিংস শেষে তবু আক্ষেপ থাকার কথা ঢাকার। রান তো হওয়ার কথা ছিল দুইশর আশেপাশে! কিন্তু সেই রানই জয়ের জন্য যথেষ্টর বেশি প্রমাণ করে ছাড়লেন রবিউল ইসলাম রবি। পাওয়ার প্লেতে, মাঝে, শেষে, সব স্পেলে উইকেট নিয়ে এই স্পিনার টুর্নামেন্টকে উপহার দিলেন প্রথম ৫ উইকেট। দারুণ জয়ে ঢাকা নিশ্চিত করে ফেলল শীর্ষ চারে থাকা।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Dec 2020, 08:35 AM
Updated : 10 Dec 2020, 12:13 PM

অফ স্পিনিং অলরাউন্ডার রবির শিকার ২৭ রানে ৫ উইকেট। বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপে জেমকন খুলনার বিপক্ষে বেক্সিমকো ঢাকার জয় ২০ রানে।

প্রথম ১০ ওভারে একশর বেশি রান করেও ২০ ওভারে ঢাকা করতে পারে ১৭৯। খুলনা অলআউট ১৫৯ রানে।

ঢাকার ইনিংসে একমাত্র ফিফটি সাব্বির রহমানের। ব্যর্থতার বলয় ছিঁড়ে তিনি খেলেন ৩৮ বলে ৫৬ রানের ইনিংস। সঙ্গে মোহাম্মদ নাঈম শেখ, আল আমিন ও আকবর আলির ব্যাট থেকে আসে ঝড়ো ইনিংস। তবে তারা কেউই বড় ইনিংস খেলতে পারেননি বলেই শেষ পর্যন্ত আরও বড় হয়নি ঢাকার স্কোর।

সাকিব আল হাসানের এক ওভারে ৪ ছক্কাসহ ২৬ রান নেন নাঈম। নাজমুল ইসলাম অপুর এক ওভারে ৪ ছক্কা মারেন আকবর। ওই দুই ওভার থেকেই আসে ৫০ রান। বাকি ১৮ ওভারে ঢাকার রান ১২৯।

মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে বৃহস্পতিবার টস জিতে বোলিংয়ে নামা খুলনাকে শুরুতেই চাপে ফেলে দেন নাঈম। ম্যাচের দ্বিতীয় ওভারে সাকিবকে উড়িয়ে দেন চারটি ছক্কায়। প্রথম দুই ডেলিভারিতে লং অন দিয়ে। ওভারের শেষ দুই বলে মিড উইকেট দিয়ে। ওই ওভার থেকে আসে ২৬ রান।

পরে সাকিবের জায়গায় বোলিংয়ে আসা শহিদুল ইসলামকে সোজা ব্যাটে দারুণ ছয় মারেন নাঈম। তার এই রোমাঞ্চকর ছুটে চলা শেষ হয় চরম হতাশায়। শহিদুলের ফুলটস বল তুলে দেন মিড অনে মাহমুদউল্লাহর হাতে (১৭ বলে ৩৬)।

তবে দলের রান প্রবাহ থামেনি। পেসার মেহেদি হাসান রানা আইসোলেশনে থাকায় তার বদলি হিসেবে টুর্নামেন্টে আসা আল আমিন প্রথম সুযোগেই মেলে ধরেন নিজেকে। সাব্বির শুরুতে টাইমিং পেতে ভুগলেও সময়ের সঙ্গে খুঁজে পান ছন্দ।

প্রথম ২ ওভারে মাশরাফি দিয়েছিলেন কেবল ২ রান। আল আমিনের চার ও সাব্বিরের ছক্কায় তার তৃতীয় ওভার থেকে আসে ১৫ রান। পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে ঢাকা তোলে ৬৩ রান।

পাওয়ার প্লের পরও আসতে থাকে রান। বাঁহাতি স্পিনার নাজমুল ইসলাম অপুর এক ওভারে চার ও ছক্কা মারেন আল আমিন, শুভাগত হোমের ওভারে চার-ছক্কা আসে সাব্বিরের ব্যাট থেকে। ১০ ওভার শেষে ঢাকার রান ১ উইকেটে ১০১।

আল আমিনকে (২৫ বলে ৩৬) ফিরিয়ে এই জুটি ভাঙেন নাজমুল। সীমানায় দারুণ ক্যাচ নেন শামীম।

এই উইকেট থেকে ঢাকার একটু ছন্দপতন। মাশরাফি তার শেষ ওভারের শেষ বলে ফিরিয়ে দেন মুশফিকুর রহিমকে। পয়েন্টে দুর্দান্ত ডাইভিং ক্যাচ নেন শামীম। পরের ওভারে ইয়াসির আলি চৌধুরি রান আউট হয়ে যান কোনো বল না খেলেই।

একটু ঝিমিয়ে পড়া ইনিংস জাগিয়ে তোলেন আকবর। নাজমুলের শেষ ওভারে চারটি ছক্কা মারেন ক্রিজে থেকেই।

আসরে প্রথম খেলতে নেমে নাজমুল ৪ ওভারে হজম করেন ৫১ রান। এই টুর্নামেন্টে প্রথম কোনো বোলার দিলেন ৫০ রান।

আকবর চালিয়ে যেতে পারেননি তার ঝড়। বিদায় নেন ১৪ বলে ৩১ রান করে।

দুঃসময় পেরিয়ে ফিফটি পেলেও কাজ শেষ করে ফিরতে পারেননি সাব্বির। ৫ চার ও ৩ ছক্কায় তিনি করেন ৫৬।

শেষ দিকে দ্রুত রান তুলতে পারতেন যিনি, সেই মুক্তার আলি ১২ বল খেলে করতে পারেন ৬ রান। শেষ ৩ ওভারে কেবল ১২ রান তুলতে পারে ঢাকা।

ব্যাটিংয়ের শেষটা ভালো করতে না পারলেও বোলিংয়ে শুরু থেকেই নিয়ন্ত্রণ নেয় ঢাকা। খুলনার রান তাড়া পথ হারায় দ্রুতই। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে রবির প্রথম বলেই উইকেটের পেছনে ধরা পড়েন জাকির হাসান।

রবির পরের শিকার সাকিব। তেঁড়েফুঁড়ে মারতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দেন নিজেকে হারিয়ে খোঁজা অলরাউন্ডার। ব্যর্থতার ধারাবাহিকতায় এবার তার সংগ্রহ ৮ রান। টুর্নামেন্টের ৮ ইনিংসে করতে পারলেন মোট ৮২ রান।

তৃতীয় উইকেটে জহুরুল ইসলাম ও মাহমুদউল্লাহ জুটি গড়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু কমে যায় রানের গতি। জহুরুল সাবলিল ব্যাট করলেও মাহমুদউল্লাহ ছিলেন মন্থর। খুলনা অধিনায়ক পরেও পুষিয়ে দিতে পারেননি। আউট হয়ে যান ২৬ বলে ২৩ রান করে।

রান বাড়াতে ব্যাটিং অর্ডারে প্রমোশন পাওয়া মাশরাফি ১ রানে ফেরেন মুক্তারের বাউন্সারে। রবিকে একটি ছক্কা মারার পরের বলেই আরিফুল হক বিদায় নেন আবার একই চেষ্টা করতে গিয়ে।

আরেক প্রান্তে একাই দলকে জয়ের পথে রাখার চেষ্টা করেন জহুরুল। নাসুম আহমেদকে ছক্কা মেরে ফিফটি স্পর্শ করেন ৩৫ বলে। কিন্তু রান বাড়ানোর চেষ্টার বলি হন তিনিও।

মুক্তারের এক ওভারে দুটি করে ছক্কা ও চার মেরে খেলায় কিছুটা উত্তেজনা ফিরিয়েছিলেন শামীম হোসেন। কিন্তু নাটকীয় কিছু উপহার দিতে পারেননি এই তরুণও। তার ৯ বলে ২৪ রানের ক্যামিও শেষ হয় রুবেল হোসেনের লেংথ বলে। শেষ দিকে হাসান মাহমুদের ৯ বলে অপরাজিত ১৫ রানে ব্যবধান কমে কিছুটা।

শেষ ওভারে দুই উইকেট নিয়ে রবি পূরণ করেন ৫ উইকেট। এই টুর্নামেন্টের আগে ৬ টি-টোয়েন্টিতে তার শিকার ছিল ১ উইকেট। এই আসরে ৫ ম্যাচেই নিলেন ১২ উইকেট।

ঢাকার জয়ে এই দুই দলের পয়েন্ট সমান হলেও রান রেটে এখনও এগিয়ে খুলনা। তবে প্রাথমিক পর্বে খুলনার আর ম্যাচ নেই, ঢাকার আছে একটি। শীর্ষ দুইয়ে থাকতে হলে তাই পরের ম্যাচ জিততেই হবে ঢাকাকে। গাজী গ্রুপ চট্টগ্রাম আগেই নিশ্চিত করেছে সেরা দুইয়ে থাকা।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বেক্সিমকো ঢাকা: ২০ ওভারে ১৭৯/৭ ( নাঈম ৩৬, সাব্বির ৫৬, আল আমিন ৩৬, মুশফিক ৩, ইয়াসির ০, আকবর ৩১, মুক্তার ৬*, রবি ১, নাসুম ৫*; মাশরাফি ৪-০-২৬-১, সাকিব ৩-০-৩৬-০, শহিদুল ৪-০-৩১-২, নাজমুল ৪-০-৫১-১, হাসান ৪-০-২৩-১, শুভাগত ১-০-১১-০)।

জেমকন খুলনা: ১৯.৩ ওভারে ১৫৯ (জহুরুল ৫৩, জাকির ১, সাকিব ৮, মাহমুদউল্লাহ ২৩, মাশরাফি ১, আরিফুল ৭, শামীম ২৪, শুভাগত ৫, শহিদুল ৮, হাসান ১৫*, নাজমুল ৪; রুবেল ৪-০-৩০-২, রবি ৩.৩-০-২৭-৫, নাসুম ৪-০-২৮-১, শফিকুল ৪-০-৩০-০, মুক্তার ৪-০-৩৫-২)।

ফল: বেক্সিমকো ঢাকা ২০ রানে জয়ী।

ম্যান অব দা ম্যাচ: সাব্বির রহমান।