অনৈতিক প্রস্তাব পেয়েও সংশ্লিষ্ট কোনো কতৃপক্ষকে না জানানোয় গত বছরের ২৯ অক্টোবর সাকিবকে নিষিদ্ধ করে আইসিসি। মূল শাস্তি ছিল দুই বছরের নিষেধাজ্ঞা, তবে এক বছরের নিষেধাজ্ঞা ছিল স্থগিত।
নিষিদ্ধ হওয়ার সময় সাকিব ছিলেন বাংলাদেশের টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক। শাস্তি পাওয়ার মাত্র ১ সপ্তাহ আগে ক্রিকেটারদের ধর্মঘটে তিনি ছিলেন নেতৃত্ব দেওয়া ক্রিকেটারদের একজন। সাকিব নিষিদ্ধ হওয়ার পর গত মার্চের জিম্বাবুয়ে সিরিজ ছাড়া বাকি সব সিরিজে মাঠের পারফরম্যান্সে ধুঁকেছে বাংলাদেশ দল।
গত বছরের অক্টোবরে ক্রিকেটারদের তিন দিনের ধর্মঘটের ধাক্কা সামলে উঠতে না উঠতেই বাংলাদেশের ক্রিকেটকে নাড়িয়ে দিয়েছিল সাকিবের নিষেধাজ্ঞার খবর। আইসিসি সেসময় সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছিল, ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল, এই চার মাসের মধ্যে তিনবার প্রস্তাব আসে সাকিবের কাছে। একবারও তিনি কোনো কতৃপক্ষকে জানাননি।
আইসিসির দুর্নীতি বিরোধী ধারা অনুযায়ী, কারও কাছ থেকে সন্দেহজনক কোনো বার্তা পেলেই আইসিসি বা সংশ্লিষ্ট বোর্ড কিংবা দায়িত্বশীল কাউকে জানাতে হয়। এটা গোপন করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। প্রতিটি সিরিজ, টুর্নামেন্ট, ফ্র্যাঞ্চাইজি আসরের আগে ক্রিকেটারদের এই নিয়ম মনে করিয়ে দেওয়া হয় বারবার। এসব নিয়ে ক্লাসও করানো হয়। অপরাধের মাত্রা অনুযায়ী ৬ মাস থেকে ৫ বছরের নিষেধাজ্ঞা পর্যন্ত হতে পারে শাস্তি।
গত জুন মাসে ক্রিকেট ওয়েবসাইট ক্রিকবাজ-এ জনপ্রিয় ধারাভাষ্যকার হার্শা ভোগলের সঙ্গে একটি সাক্ষাৎকারে সাকিব বলেছিলেন, ব্যাপারটিকে যথেষ্ট গুরুত্ব না দেওয়ার খেসারত দিতে হয়েছে তাকে।
“ আমার মনে হয়, এটা আমি একটু বেশিই হালকাভাবে নিয়েছিলাম। অবশ্যই এই প্ল্যাটফর্মে বিস্তারিত সবকিছু আলোচনা করতে চাই না। আমি যখন দুর্নীতি দমন কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করলাম এবং বললাম, তারা সবকিছু জানে, সব প্রমাণ দিলাম, ভেতরে-বাইরের সবকিছু তারা খুঁটিনাটি সব জানে, সত্যি কথা বলতে, এই কারণেই মাত্র ১ বছরের জন্য নিষিদ্ধ হয়েছি। নইলে ৫-১০ বছরের জন্য নিষিদ্ধ হতে পারতাম।”
“আমার মনে হয়, বোকার মতো ভুল করেছিলাম। কারণ যে অভিজ্ঞতা আমার আছে, যে পরিমাণ আন্তর্জাতিক ম্যাচ আমি খেলেছি এবং দুর্নীতি দমন ধারা নিয়ে যতগুলি ক্লাস করেছি, আমার ওই ভুল করা উচিত হয়নি। সেটা নিয়ে আমি অনুতপ্ত।”
নিষেধাজ্ঞার পর প্রথম কয়েক মাস দেশেই ছিলেন সাকিব। পরে করোনাভাইরাসের দুর্যোগ শুরু হলে যুক্তরাষ্ট্রে যান স্ত্রী-সন্তানের কাছে। তার দ্বিতীয় সন্তান পৃথিবীর আলোয় আসে গত এপ্রিলে। তাদের সঙ্গে সাড়ে ৫ মাস কাটিয়ে তিনি দেশে ফেরেন গত ২ সেপ্টেম্বর। শুরু হয় মাঠে ফেরার প্রস্তুতি পর্ব।
বিসিবির কোনো সুযোগ-সুবিধা ব্যবহারের নিয়ম নেই বলে সাকিব অনুশীলনের জন্য বেছে নেন তার বেড়ে ওঠার প্রতিষ্ঠান বিকেএসপিকে। সেখানে তার ঘনিষ্ঠ দুই কোচ নাজমুল আবেদিন ফাহিম ও মোহাম্মদ সালাউদ্দিনের তত্ত্বাবধানে চলে তার অনুশীলন। পাশাপাশি বিকেএসপির বিভিন্ন অনুশীলন সুবিধা কাজে লাগান তিনি। বিকেএসপির অ্যাথলেটিকস কোচ, বক্সিং কোচরাও সহায়তা করেন তাকে।
আগামী মাসে বিসিবির টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট দিয়ে সাকিব ক্রিকেটে ফিরবেন বলে কদিন আগে নিশ্চিত করেছেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান। নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে সাকিবের দেশে ফেরার কথা।
বাংলাদেশ জাতীয় দলের প্রধান কোচ রাসেল ডমিঙ্গো কদিন আগে বলেছেন, সাকিবের ফেরা নিয়ে তিনি ও সতীর্থরা বেশ রোমাঞ্চিত।
সাকিবের নিষেধাজ্ঞার এই সময়টায় এক পঞ্জিকাবর্ষে নিজেদের সবচেয়ে বেশি টেস্ট খেলার কথা ছিল বাংলাদেশের। এশিয়া কাপ, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মতো টুর্নামেন্ট ছিল সূচিতে। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে গত মার্চের পর কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে পারেনি বাংলাদেশ। পিছিয়ে গেছে এশিয়া কাপ, বিশ্বকাপও। এই এক বছরে কেবল ৪টি টেস্ট, ৩টি ওয়ানডে ও ৭টি টি-টোয়েন্টি মিস করেছেন সাকিব।
জুনে হার্শা ভোগলের সঙ্গে ওই সাক্ষাৎকারে সাকিব বলেছিলেন, এই নিষেধাজ্ঞা অবসর নিয়ে তার ভাবনাও বদলে দিয়েছে। আর বছর দুয়েক খেলেই অবসর নেওয়ার পরিকল্পনা ছিল তার। কিন্তু নিষেধাজ্ঞার পর এখন তিনি আরও তিন থেকে পাঁচ বছর খেলতে চান।