মুশফিকের প্রেরণায় ইরফানের মন্ত্র ‘ক্যারেক্টার শো’ করা

ঘরোয়া ক্রিকেটের নিয়মিত মুখ ইরফান শুক্কুর। তবে আলোচিত নন কখনোই। আলোয় আসার মতো তেমন কিছু যে করতেই পারছিলেন না সেভাবে! সেই ইরফান ইদানিং কিছুটা হলেও আড়াল থেকে সামনে আনতে পেরেছেন নিজেকে। বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান জানালেন নিজের বদলে যাওয়া মানসিকতার কথা। শোনালেন, মুশফিকুর রহিমের কাছ থেকে পাওয়া প্রেরণার গল্পও।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Oct 2020, 01:22 PM
Updated : 20 Oct 2020, 01:23 PM

চলতি প্রেসিডেন্ট’স কাপে সবচেয়ে বেশি নজর কেড়েছেন যে কজন, তাদের মধ্যে ওপরের দিকে থাকবে ইরফানের নাম। দলের বিপর্যয়ে তিনি হাল ধরছেন, স্থিতধি ব্যাটিংয়ে উদ্ধার করে দলকে নিয়ে যাচ্ছেন জয়ের ঠিকানায়। আবার কোনো ম্যাচে প্রয়োজনে শেষ দিকে নেমে খেলছেন ঝড়ো ইনিংস।

এমনিতে টপ কিংবা মিডল অর্ডারে ব্যাট করে অভ্যস্ত হলেও এই টুর্নামেন্টে শান্ত একাদশের হয়ে ব্যাট করছেন সাত নম্বরে। প্রথম ম্যাচে ১৯৭ রান তাড়ায় ৭৯ রানেই ৫ উইকেট হারায় শান্ত একাদশ। সেখান থেকে তৌহিদ হৃদয়ের সঙ্গে জুটিতে দলকে জয়ের পথে নিয়ে যান ইরফান। ফিফটি করে হৃদয় আউট হলেও ৭৮ বলে ৫৬ রান করে দলকে জিতিয়েই ফেরেন তিনি।

পরের ম্যাচে আবারও দলের বিপদের সময় নেমে খেলতে থাকেন স্বচ্ছন্দে। এবার ৫৯ রানের জুটি গড়েন মুশফিকের সঙ্গে। তবে এবার ২৪ রানে রান আউট হয়ে যান তিনি।

সবশেষ ম্যাচে দেখা গেছে ২৭ বছর বয়সী ব্যাটসম্যানের আরেক রূপ। এবার যখন উইকেটে গেলেন, দলের ভিত তখন বেশ শক্ত। প্রয়োজন ছিল দ্রুত রান। চোখধাঁধানো সব শটে ইরফান সেই দাবি মেটান ৩১ বলে ৪৮ রানের অপরাজিত ইনিংসে।

এর আগে গত বিপিএলেও রাজশাহী রয়্যালসের শিরোপা জয়ে রাখেন অবদান। খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন টুর্নামেন্টের শেষ ভাগে। প্রথম কয়েকটি ম্যাচে তেমন কিছু করতে না পারলেও দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে করেছিলেন ৪৫ রান। ফাইনালে তিন নম্বরে নেমে খেলেছিলেন ৩৫ বলে ৫২ রানের দারুণ ইনিংস।

সাম্প্রতিক এই যে ধারাবাহিকতা, তার আগে ক্যারিয়ারজুড়ে দেখা গেছে উল্টো চিত্র। ২০০৯ সালে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে যুব টেস্ট ও ওয়ানডে খেলেিলেন। ১০ বছরের বেশি সময় ধরে খেলছেন ঘরোয়া ক্রিকেটের শীর্ষ পর্যায়ে। সামর্থ্যের ছাপ রেখেছেন মাঝেমধ্যে। ধারাবাহিক হতে পারেননি কখনোই। গোটা মৌসুম খুব ভালো করতে পারেননি একবারও।  

তার রেকর্ড তাই সমৃদ্ধ নয় মোটেও। ৫৮টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচে সেঞ্চুরি দুটি, ৬৬টি লিস্ট ‘এ’ ম্যাচে একটিও নয়। দুই সংস্করণেই ব্যাটিং গড় তিরিশের নিচে।

তারপরও সম্ভাবনা আছে বলে এবং ব্যাটিংয়ের সঙ্গে কিপিং মিলে বেশ প্যাকেজ হিসেবে নানা জায়গায় তিনি সুযোগ পেয়েছেন খেলার। হাই পারফরম্যান্স ক্যাম্পে ডাক পেয়েছেন, একাডেমি দলের হয়ে ইংল্যান্ড সফর করেছেন, খেলেছেন বিসিবি একাদশে। ক্যারিয়ার তবু গতি পায়নি খুব একটা।

হতাশার অনেক প্রহর পেরিয়ে অবশেষে মনে হচ্ছে, নিজেকে ইরফান মেলে ধরতে শুরু করেছেন। মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার শান্ত একাদশের অনুশীলনের ফাঁকে তিনি জানালেন, দলের জন্য খেলার তাগিদ বের করে আনছে তার সেরাটা।

“এই টুর্নামেন্ট আমার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কারণ গত দুই বছর আমি আউট অব দা ট্র্যাক ছিলাম। তার আগে তিন বছর এইচপির ক্যাম্পে ছিলাম। এখন এই টুর্নামেন্ট ভালো যাচ্ছে। আমি মূলত চাচ্ছি, দলের জন্য খেলতে। দলের যা দরকার, সে অনুযায়ী খেলতে। দলের জন্য কার্যকর কিছু যেন করতে পারি।”

“আমি তো মূলত টপ অর্ডারে ব্যাট করি। এখন সুযোগ পেয়েছি সাতে, আমার লক্ষ্য হচ্ছে শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থেকে যেন দলের জন্য কার্যকর ইনিংস খেলতে পারি।”

এই টুর্নামেন্ট তাকে সমৃদ্ধ করছে নানাভাবেই। তার মধ্যে একটি, মুশফিকের সংস্পর্শ পাওয়া। দেশের অভিজ্ঞ এই কিপার-ব্যাটসম্যানের কাছ থেকে এগিয়ে যাওয়ার মন্ত্র জেনেছেন ইরফান।

“সৌম্যরা আমার অনূর্ধ্ব-১৯ দলের সতীর্থ। ওরা এখন অনেকদিন হলো জাতীয় দলে খেলছে। ওদের সঙ্গে এই ড্রেসিং রুম শেয়ার করে ভালো লাগছে। আর মুশফিক ভাই কিছু কথা বলেছেন। সবসময় যেন ক্যারেক্টার শো করার চেষ্টা করি।”

“আমি সেই অ্যাপ্রোচই চেষ্টা করছি। উনার কথা শোনার চেষ্টা করছি। উনি কথা কম বললেও যেটুকু বলেন, খুব প্রেরণাদায়ী কথা বলেন। ক্যারেক্টার ও মাঠের ভেতরের অ্যাপ্রোচের কথা বলেন। ওইটাই ধরে রাখতে চাই।”

ইরফান উঠে এসেছেন চট্টগ্রাম থেকে। একসময় বাংলাদেশ জাতীয় দলে চট্টগ্রামের প্রতিনিধি ছিল অনেক। পরে তৈরি হয় লম্বা শূন্যতা। অনেকদিন মানসম্পন্ন ক্রিকেটার উঠে আসেনি ওখান থেকে। এখন আবার জাতীয় দল ও আশপাশ মিলিয়ে আছেন বেশ কয়েকজন।

ইরফান জানালেন, চট্টগ্রামের ছেলে তামিম ইকবাল, কক্সবাজারের মুমিনুল হক তাদের উদ্বুদ্ধ করেছেন পরের ধাপে এগিয়ে যেতে।

“একটা সময় বড় গ্যাপ পড়ে গিয়েছিল আমাদের। কেউ ছিল না (চট্টগ্রামের)। এখন অনূর্ধ্ব-১৯, এইচপি, জাতীয় দল মিলিয়ে বেশ কজন আছে। মূলত আমাদের মানসিকতায় বদল এসেছে এখানে যে সবাই কঠোর পরিশ্রম করা শুরু করেছে।”

“তামিম ভাই, সৌরভ ভাই (মুমিনুল হক) উনারা যখন জাতীয় লিগে ছিলেন, আমাদেরকে বলেছেন যে পরিশ্রম ও অ্যাপ্রোচ যেন ঠিক থাকে, ফিটনেসে সবাই যেন জোর দেয়। এজন্য আমাদের সবাই প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটে ভালো করছে এখন।”

প্রেসিডেন্ট’স কাপের প্রাথমিক পর্বের শেষ ম্যাচে ইরফানরা বুধবার খেলবেন তামিম একাদশের বিপক্ষে। এই ম্যাচের ফলের ওপর নির্ভর করবে কোন দুই দল খেলবে শুক্রবারের ফাইনালে।