ইবাদতের ঝলকের পর মুমিনুলের সেঞ্চুরি

মাঠে দর্শক থাকার পরিস্থিতি নেই। তবে সাপোর্ট স্টাফের সদস্যরাই যথেষ্ট। মুমিনুল হক সেঞ্চুরি ছোঁয়ার পর রাসেল ডমিঙ্গো, রায়ান কুক, ওটিস গিবসনরা তুমুল করতালিতে ফেটে পড়লেন। দুর্দান্ত ইনিংসটির পর কিছুটা অভিনন্দন তো তার প্রাপ্য! মুমিনুলও হাসিমুখে ব্যাট উঁচিয়ে ধরলেন। অনুশীলন ম্যাচটি সবচেয়ে ভালো কাজে লাগালেন তিনিই।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Oct 2020, 01:14 PM
Updated : 3 Oct 2020, 02:10 PM

নতুন বলে যদিও দুর্দান্ত এক স্পেলে মুমিনুলদের নাড়িয়ে দিয়েছিলেন ইবাদত হোসেন। সেটিই মুমিনুলকে তৈরি করে দেয় ব্যাটিং অনুশীলনের আদর্শ মঞ্চ। বিপর্যয়ে দাঁড়িয়ে খেললেন তিনি দারুণ এক ইনিংস। বড় জুটিতে তার সঙ্গী হলেন মোহাম্মদ মিঠুন।

মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে দুই দিনের অনুশীলন ম্যাচের দ্বিতীয় দিনে শনিবার রায়ান কুক একাদশ ৫ উইকেটে তোলে ২৪৮ রান। আগের দিন ২৩০ রানে অলআউট হয়েছিল ওটিস গিবসন একাদশ।

তিনে নেমে মুমিনুল ১১৭ করে স্বেচ্ছায় মাঠ ছাড়েন অন্যদের সুযোগ দিতে। মিঠুনের ব্যাট থেকে আসে ৬২। চতুর্থ উইকেটে দুজনের জুটি ১৫৭ রানের।

আগের দিন নতুন বলে আগুনে বোলিং করেছিলেন তাসকিন আহমেদ। দ্বিতীয় দিনে তাকে অনুসরণ করলেন ইবাদত। নতুন বলে গতির ঝড় যেমন তুললেন এই পেসার, আগ্রাসন ও লাইন-লেংথও ছিল দারুণ। তাতে ঘায়েল দুই ওপেনার সাদমান ইসলাম ও ইয়াসির আলি চৌধুরি।

দুই বাউন্ডারির পর সাদমান ফেরেন অ্যাঙ্গেলে বেরিয়ে যাওয়া বলে ব্যাট ছুঁইয়ে দিয়ে। ইয়াসিরকে আউট করা ডেলিভারিটি যেমন দুর্দান্ত ছিল, দায় ছিল ব্যাটসম্যানেরও। অফ স্টাম্পের একটু বাইরে পিচ করা গতিময় ডেলিভারি লাফিয়ে ওঠে খানিকটা। ইয়াসির ছেড়ে দিতে পারতেন, কিন্তু লম্বা পা বাড়িয়ে ডিফেন্স করতে যান। বল তার ব্যাটের কানায় ছোবল দিয়ে যায় কিপারের হাতে।

এমনিতে মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান ইয়াসির ওপেন করতে নেমে করেন ২। ইবাদতের প্রথম স্পেল ছিল ৫-১-১১-২।

চারে নামা মুশফিকুর রহিম স্বস্তিতে ছিলেন না ইবাদত ও হাসান মাহমুদের বোলিংয়ের সামনে। টিকতেও পারেননি বেশিক্ষণ। হাসানের স্কিড করা বল উড়িয়ে দেয় তার স্টাম্প।

২৪ রানে ৩ উইকেট হারানোর পর মুমিনুল ও মিঠুনের জুটি। ইবাদতের বলে দু-একবার অস্বস্তিতে পড়েন মুমিনুল, এমনিতে ছিলেন সাবলীল। মিঠুনের শুরুটায় ছিল একটু জড়তা, পরে সামলে ওঠেন ধীরে ধীরে।

ইবাদত ও হাসান ভালো বোলিং করলেও ততটা ধার ছিল না মুস্তাফিজুর রহমান ও রুবেল হোসেনের বোলিংয়ে। নাঈম আক্রমণে আসার পর মুমিনুল-মিঠুন খেলেন দারুণ কিছু শট। দুজনই বেরিয়ে এসে ছক্কায় ওড়ান এই অফ স্পিনারকে।

হাসান ও নাঈমের বলে একবার করে জোরালো আবেদন হলেও টিকে যান মিঠুন। ফিফটির পর হাসানের বলে স্লিপে তার ক্যাচ ফেলে দেন শান্ত। শেষ পর্যন্ত তার বিদায়ে বোলারের চেয়ে বেশি কৃতিত্ব ফিল্ডার ইমরুল কায়েসের।

নাঈমকে দারুণ এক কাভার ড্রাইভে চার মারার পরের বলেই মিঠুন উড়িয়ে মারেন স্লগ সুইপে। মিড উইকেট সীমানা থেকে অনেকটা দৌড়ে দুর্দান্ত ডাইভে চোখধাঁধানো ক্যাচ নেন ইমরুল, ভারসাম্য ধরে রেখে শরীর রাখেন সীমানার ভেতরই।

মুমিনুল কয়েক দফায় আলগা শট খেলেছেন বটে, তবে দৃষ্টিনন্দন কিছু শটও খেলেছেন। টানা লস্বা সময় তার পরীক্ষা নেওয়ার মতো বোলিংও অবশ্য করতে পারেনি প্রতিপক্ষ। ৯৭ বলে ফিফটি ছুঁয়েছেন তিনি, ১৭৪ বলে সেঞ্চুরি। ১১৭ রানের ইনিংসে চার মেরেছেন ১৪টি, ছক্কা ১টি।

কিপার-ব্যাটসম্যান নুরুল হাসান সোহান থিতু হয়েছিলেন ভালোভাবেই। কিন্তু মাহমুদউল্লাহর বলে ক্যাচ দেন ২৯ রানে। মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিনের ব্যাটিং অনুশীলন আরেকটু হতে পারেনি আলোকস্বল্পতার কারণে খেলা আগেই শেষ হওয়ায়।

দিনের সেরা বোলার ছিলেন নিঃসন্দেহে ইবাদত। পুরনো বলে যদিও তার ধার কমে গিয়েছিল খানিকটা। তরুণ হাসান মাহমুদও বেশ গতিময় বোলিং করেছেন। মুস্তাফিজ ডানহাতি ব্যাটসম্যানের জন্য বল ভেতরে আনা ডেলিভারি খুব একটা করতে পেরেছেন বলে মনে হয়নি দূর থেকে। উইকেট নেওয়ার মতো বলও এই বাঁহাতি পেসার করতে পারেননি তেমন। অফ স্পিনার নাঈম কয়েকটি দারুণ ডেলিভারি করলেও লাইন-লেংথে বেশির ভাগ সময় ছিলেন অধারাবাহিক।

অনুশীলনে বিরতি থাকবে রোববার। সোমবার থেকে হবে আরেকটি দুই দিনের অনুশীলন ম্যাচ।  

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

ওটিস গিবসন একাদশ: ৬৩.৪ ওভারে ২৩০

রায়ান কুক একাদশ: ৭৬ ওভারে ২৪৮/৫ (সাদমান ১৩, ইয়াসির ২, মুমিনুল ১১৭ (স্বেচ্ছাবসর), মুশফিক ৩, মিঠুন ৬২, সোহান ২৯, সাইফ উদ্দিন ১০*, তাইজুল ৬*; মুস্তাফিজ ১৪-৩-৩৮-০, ইবাদত ১৩-২-৩৪-২, হাসান ৯-১-২১-১, রুবেল ১০-১-৩৩-০, নাঈম ১৫.১-২-৭৬-১, মাহমুদউল্লাহ ৮-০-২১-১, সৌম্য ১-০-৭-০, মোসাদ্দেক ৫.৪.১.১৭-০)।