শূন্যের মালা থেকে আতাপাত্তুর সাফল্যের ডালি

০, ০, ০, ১, ০ ও ০, এই যদি হয় কারও শুরু, ওখানেই শেষ হয়ে যাওয়ার কথা তার ক্যারিয়ার। কিন্তু এত বাজে শুরুর পরও ঘুরে দাঁড়িয়েছিলেন মারভান আতাপাত্তু। ব্যাট হাতে লিখেছিলেন দারুণ সব সাফল্যের গল্প। সাবেক লঙ্কান ব্যাটসম্যান জানালেন, শুরুর ওই শূন্যগুলোই বাড়িয়ে দিয়েছিল তার রান ক্ষুধা।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 June 2020, 06:46 AM
Updated : 8 June 2020, 07:23 AM

১৯৯০ সালে টেস্ট অভিষেকে ভারতের বিপক্ষে জোড়া শূন্য পান আতাপাত্তু। আবার টেস্ট খেলার সুযোগ পান দুই বছর পর। এবার অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ০ ও ১। আবার বাদ। আরেকটি সুযোগ আসে ১৯৯৪ সালে। এবার ভারতের বিপক্ষে জোড়া শূন্য। যথারীতি আবার বাদ। এবার অপেক্ষা তিন বছরের।

১৯৯৭ সালে সুযোগ মেলে আবার। নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে দুই ইনিংসে করেন ২০ ও ২৫। পরের টেস্টে পাকিস্তানের বিপক্ষে আবার শূন্য রানে আউট। তবে এবার শ্রীলঙ্কা তাকে বাদ দেয়নি। সুযোগের পর সুযোগ মেলে। কিন্তু প্রথম ১৭ ইনিংসে একবারও ৩০ ছুঁতে পারেননি আতাপাত্তু।

অবশেষে আস্থার প্রতিদান দিতে পারেন তিনি ওই বছরই, ভারতের বিপক্ষে মোহালি টেস্টে করেন সেঞ্চুরি। পরের টেস্টে মুম্বাইয়ে খেলেন ৯৮ রানের ইনিংস। ১৯৯০ সালে অভিষেকের পর থিতু হতে লেগে যায় সাত বছর! পরের সিরিজে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে করেন ডাবল সেঞ্চুরি।

শুরুর ৯ ইনিংসে ৬ শূন্য পাওয়া আতাপাত্তু পরে উপহার দিয়েছেন ৬টি ডাবল সেঞ্চুরি। টেস্টে রান করেছেন সাড়ে পাঁচ হাজার। নেতৃত্বও দিয়েছেন শ্রীলঙ্কাকে।

ক্রিকেট ওয়েবসাইট ইএসপিএনক্রিকইনফোর সঙ্গে সাক্ষাৎকারে আতাপাত্তু আলো ফেললেন তার ক্যারিয়ারের অন্ধকার সময়টায়। বললেন, বাজে শুরুর কারণেই তার বড় ইনিংসের নেশা ছিল তীব্র।

“ক্যারিয়ারে যখন পেছন ফিরে তাকাই, এতগুলো ডাবল সেঞ্চুরির কারণ খুঁজে পাই। একটি কারণ, ব্যাটিং উপভোগ করা-কতটা সময় কে উইকেটে কাটাতে চায়। আরেকটি কারণ, লোভ (রান করার)। আমার ক্ষেত্রে যা হয়েছিল, ক্যারিয়ারের শুরুতে এতবার শূন্য রানে আউট হয়েছি যে, এরপর মনে হয়েছে, উইকেটে থিতু হয়ে গেলে সর্বোচ্চটা কাজে লাগাতে হবে।”

“যখন আমি ছন্দে থাকতাম, আমার রান করার লোভ থাকত প্রচণ্ড। ছন্দে থাকা মানে দিনটি আমার, সেটি পুরোপুরি কাজে লাগানো উচিত।”

৪৯ বছর বয়সী সাবেক ওপেনার জানালেন, শুরুর টানা ব্যর্থতায়ও তিনি ভেঙে পড়েননি খেলার প্রতি ভালোবাসার কারণে।

“আমি ক্রিকেট খেলেছি, কারণ খেলাটা ভালোবাসতাম। না হলে, শুরুতে পাঁচ শূন্য করার পরও এত বছর খেলে যেতাম না।”

আতাপাত্তু নিজে যেমন পরে সাফল্যে সাজিয়েছেন ক্যারিয়ার, সনাৎ জয়াসুরিয়ার সঙ্গে তার জুটিও শ্রীলঙ্কাকে এনে দিয়েছে অনেক সাফল্য। দুজন ছিলেন পুরোপুরি দুই ঘরানার ব্যাটসম্যান। জয়াসুরিয়া চাইতেন বোলারদের গুঁড়িয়ে দিতে। আতাপাত্তুর ধরণ ছিল উইকেট আঁকড়ে রাখা, বোলারদের ক্লান্তিতে মিইয়ে দেওয়া। বিপরীত দুজন মিলেই গড়েছেন টেস্ট ও ওয়ানডেতে শ্রীলঙ্কার সফলতম উদ্বোধনী জুটি।

জুটির সাফল্যের বড় কৃতিত্ব আতাপাত্তু দিলেন জয়াসুরিয়াকে।

“সনাৎ ও আমি একই এলাকা থেকে এসেছি, শ্রীলঙ্কার দক্ষিণাঞ্চল। ১৩ বছর বয়স থেকেই পরস্পরকে চিনি আমরা।”

“ওর সঙ্গে ব্যাটিং আমার কাজটা কেবল সহজই করে তুলেছে। আমাকে আউট করার চেয়ে প্রতিপক্ষের ভাবনা জুড়ে থাকত সনাৎকে কীভাবে আউট করবে, কীভাবে আটকে রাখবে। কারণ তারা জানত, ওকে আউট না করলে দ্রুতই সে ম্যাচ ধরাছোঁয়ার বাইরে নিয়ে যাবে।”

বাজে শুরুর পর শেষ পর্যন্ত ক্যারিয়ারে অনেক সাফল্য পেলেও আতাপাত্তু ঠিক তৃপ্ত নন তার ক্যারিয়ার নিয়ে।

“দিনশেষে, ৯০ টেস্ট খেলে আমার ব্যাটিং গড় ৪০-এর কম (৩৯.০২), টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানের জন্য যা মোটেও ভালো নয়। এখন তো পঞ্চাশের বেশি গড় হরদম দেখা যায়। যদিও আমি ৬টি ডাবল সেঞ্চুরি করেছি, আমার গড় তারপরও চল্লিশের কম, কারণ কম রানের ইনিংস আমার অনেক আছে।”