যে কারণে নিলামে মাশরাফির দেড় যুগের ‘সুখ-দুঃখের সাথী’

স্টিলের একটি ব্রেসলেট, তাতে ইংরেজি অক্ষরে খোদাই করে লেখা ‘মাশরাফি।’ প্রায় ১৮ বছর আগে এক বন্ধুর মামাকে দিয়ে বানিয়ে নিয়েছিলেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। এরপর থেকে তিনি সেটি হাত থেকে খুলেছেন কম সময়ই। মাশরাফির নিজের ভাষায়, এটি তার ‘সব সময়ের সুখ-দুঃখের সাথী।’ নিজের সবচেয়ে প্রিয় জিনিসগুলোর একটি সেই ব্রেসলেট নিলামে তুলেছেন মাশরাফি। উদ্দেশ্য, বড় পরিসরে ও দীর্ঘ সময় ধরে করোনাভাইরাস দুর্গতদের সহায়তা করা।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 May 2020, 05:55 PM
Updated : 16 May 2020, 06:16 PM

ফেইসবুকে ‘Auction 4 Action’ পেজ-এ চলছে এই নিলাম, শেষ হবে রোববার রাত সাড়ে ১১টায়। সাকিব আল হাসানের ব্যাটসহ সম্প্রতি আরও বেশকিছু নিলাম হয়েছে এই প্ল্যাটফর্ম থেকে। মাশরাফির ব্রেসলেটের ভিত্তি মূল্য রাখা হয়েছে ৫ লাখ টাকা।

এই ব্রেসলেট তার হৃদয়ের কত কাছের, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তা জানালেন বাংলাদেশের সফলতম ওয়ানডে অধিনায়ক।

“গত ১৮ বছরে খুব কম সময়ই এটি খুলেছি হাত থেকে। অপারেশনের সময়, এমআরআই করানোর সময় খুলতে হয়েছে। আর কয়েকটি ম্যাচ বা কিছু সময়ের জন্য খুলেছি শুধু। তবে যখনই খুলেছি, কখনোই স্বস্তি বোধ করিনি। মনে হতো, কী যেন নেই, খালি খালি লাগত। আমার সবসময়ই মনে হয়েছে, এটি আমার সৌভাগ্যের প্রতীক।”

“আমার ক্যারিয়ারের সব উত্থান-পতনের স্বাক্ষী এই ব্রেসলেট। যত লড়াই করেছি, মাঠের ভেতরে-বাইরে যত কিছুর ভেতর দিয়ে যেতে হয়েছে, সব কিছুর স্বাক্ষী এটি। আমার ১৮ বছরের সুখ-দুঃখের সাথী। আমার অনেক আবেগ-ভালোবাসা জড়িয়ে এটিতে, এই ব্রেসলেটকে আসলে ব্যাখ্যা করা আমার জন্য খুব কঠিন।”

ব্যাখ্যাতীত ভালোবাসার এই জিনিস তিনি কেন হাতছাড়া করছেন? এমনিতেও তিনি যথেষ্ট সহায়তা করে চলেছেন। বাংলাদেশের সফলতম ওয়ানডে বোলার নড়াইল-২ আসনের সংসদ সদস্যও। করোনাভাইরাস দুর্যোগের শুরু থেকেই নিজ এলাকায় ব্যাপক আকারে ত্রাণ ও সহায়তা কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি উদ্ভাবনী সব পদক্ষেপ নিয়ে দারুণ প্রশংসিত হয়েছেন দেশজুড়ে। এছাড়াও ক্রিকেটারদের তহবিলে সহায়তা, ক্রিকেট সংশ্লিষ্ট আরও অনেক জায়গায়ও করেছেন সহায়তা। নিজ এলাকা থেকে শুরু করে ক্রিকেট আঙিনা, এই সহায়তা কার্যক্রমের বেশির ভাগই মাশরাফি করেছেন নিজের উদ্যোগে ও নিজস্ব অর্থায়নে।

কিন্তু করোনাভাইরাস পরিস্থিতি যেদিকে এগোচ্ছে, সেটি ভেবেই নিজের দীর্ঘ সময়ের সঙ্গীকে বিসর্জন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মাশরাফি।

“আমি আমার সাধ্যমত করার চেষ্টা করেছি। এখনও করছি। কিন্তু সেটিরও তো শেষ আছে, আমার তো অঢেল টাকা নেই। যতটুকু বুঝতে পারছি, এই সঙ্কট অনেক দিন থাকবে। আমার তো মনে হয়, আমাদের জীবদ্দশার সবচেয়ে বড় ক্রাইসিস চলছে এখন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর মনে হয় গোটা বিশ্ব এত বড় সঙ্কটে পড়েনি। আমাদের দেশের বাস্তবতা আরও কঠিন। প্রায় দুই মাস ধরে অনেক কিছু স্থবির হয়ে আছে। নিম্ন আয়ের মানুষ, এমনকি অনেক নিম্ন মধ্যবিত্ত, মধ্যবিত্ত পরিবারও কষ্টে আছে। ”

“আমার তাই মনে হয়েছে, আরও অনেক বড় পরিসরে সহায়তা করতে হবে সামনে এবং অনেক দিন ধরে করতে হবে। কেউই জানি না, কতদিন পরে আমরা মুক্তি পাব। আর করোনাভাইরাস চলে গেলেও কিন্তু আর্থিক কার্যক্রম স্বাভাবিক হতে সময় লাগবে অনেক। এজন্য মনে হয়েছে, আমার সবচেয়ে কাছের কিছু নিলামে তুলে যদি তহবিল সংগ্রহ করা যায়, তাহলে আরও বেশি মানুষকে বেশি দিন ধরে সহায়তা করতে পারব।”

নিলাম আয়োজনকারী সংস্থার অন্যতম কর্মকতা নাফিজ আহমেদ মোমেন জানালেন, এর মধ্যেই তুমুল আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে মাশরাফির ব্রেসলেট ঘিরে।

“অনেকের সঙ্গেই কথা হচ্ছে আমাদের। মাশরাফির আবেদন বাংলাদেশের ক্রিকেটে অতুলনীয়। তার সবচেয়ে আবেগের জিনিস যখন নিলামে উঠছে, আগ্রহ তাই অনেক। এই ব্রেসলেটকে তো আসলে টাকার অঙ্কে বিচার করা যাবে না। তারপরও উদ্দেশ্য মহৎ, যত বেশি মূল্য পাওয়া যাবে, তত বেশি মানুষ সহায়তা পাবে। আমরা আশা করছি, মাশরাফির আবেগকে সম্মান করার মত কিছু আমরা করতে পারব।”