বাংলাদেশকে হতাশায় ডুবিয়ে গিলেস্পির সেই রূপকথা

মার্ক ওয়াহকে তিনি খোঁচা দেন প্রায়ই। কেউ প্র্রথমবার ডাবল সেঞ্চুরি করলে তাকে স্বাগত জানান ‘অভিজাত’ ক্লাবে। সুযোগ পেলেই জানিয়ে দেন, কত বড় কীর্তি তিনি গড়েছেন। একটা ডাবল সেঞ্চুরি করতে পারায় জেসন গিলেস্পির চেয়ে বেশি গর্ব মনে হয় না আর কেউ কখনও করেছেন!

অনীক মিশকাতঅনীক মিশকাতবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 April 2020, 05:41 AM
Updated : 19 April 2020, 06:37 AM

তা গর্ব তিনি করতেই পারেন। ১৪৩ বছরের পথচলায় টেস্ট ক্রিকেট এখনও পর্যন্ত ডাবল সেঞ্চুরি দেখেছে ৩৮২টি। কিন্তু গিলেস্পির ডাবল ইতিহাসে অনন্য। নাইটওয়াচম্যান হিসেবে নেমে দুইশ রানের ইনিংস খেলতে পেরেছেন কেবল সাবেক অস্ট্রেলিয়ান এই ফাস্ট বোলারই।

গিলেস্পির অসাধারণ সেই কীর্তিই বাংলাদেশ ক্রিকেটের বিব্রতকর এক অধ্যায়। চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে বাংলাদেশকে যন্ত্রণায় মাড়িয়ে অস্ট্রেলিয়ান পেসার রচনা করেছিলেন নিজের গৌরবের সৌধ। ২০১ করেও আউট হননি, থেমেছিলেন দল ইনিংস ঘোষণা করায়। সেই দিনটির ১৪ বছর পূর্তি হলো রোববার।

২০০৬ সালের ১৯ এপ্রিল ছিল গিলেস্পির ৩১তম জন্মদিন। নিজেই সেদিন নিজেকে দিয়েছিলেন সবচেয়ে বড় উপহার।

এমন এক উপহার, যা তাকে নিত্য রাঙায় এখনও। ১০ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে অর্জন তার কম নেই। চারশর বেশি আছে আন্তর্জাতিক উইকেট। ছিলেন দোর্দণ্ড প্রতাপশালী অষ্ট্রেলিয়া দলের অন্যতম স্ট্রাইক বোলার। কিন্তু তিনি নিজে বরাবরই সবচেয়ে বেশি সরব সেই ডাবল সেঞ্চুরি নিয়ে। ক্রিকেট বিশ্বেও এটি নিয়ে চর্চা তুমুল!

দুর্দান্ত ব্যাটসম্যান হয়েও টেস্ট ক্যারিয়ারে কখনও ডাবল সেঞ্চুরির স্বাদ না পাওয়াদের তালিকাটা অনেক লম্বা। মার্ক ওয়াহ, মাইক হাসি, মোহাম্মদ আজহারউদ্দিন, মাইকেল আথারটন, অ্যালেক স্টুয়ার্ট, কলিন কাউড্রে, ডেসমন্ড হেইন্স, ইয়ান চ্যাপেল, মাইকেল ভন, অ্যান্ড্রু স্ট্রাউস এবং আরও অনেকে। গিলেস্পি তাই সুযোগ পেলেই কখনও হাসি-মজায়, কখনও কৌতুকময় খোঁচায়, কখনও গর্বভরে জানিয়ে দেন তার কীর্তির বিশালত্ব কতটা।

খোঁচা দেওয়ার জন্য বরাবরই গিলেস্পির প্রথম পছন্দ মার্ক ওয়াহ। ১২৮ টেস্ট খেলে, ৮ হাজারের বেশি রান আর ২০ সেঞ্চুরিতেও মার্কের সর্বোচ্চ ইনিংস কেন ছিল মাত্র ১৫৩, ক্রিকেটের বড় এক রহস্য সেটি। গিলেস্পি সেসব ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের ধার ধারেন না। একবার মার্ককে জিজ্ঞেস করেছিলেন, “ আচ্ছা বলো তো, ১৬০ রান করে ফেলার পরও ব্যাটিং চালিয়ে যাওয়া শারীরিক আর মানসিকভাবে কতটা কঠিন?” পরমুহূর্তে নিজেই আবার বলে দিয়েছেন, “ওহ সরি… তোমার তো এটা জানার কথা নয়!”

এছাড়াও নানা সময়ে মার্ক ওয়াহকে নিয়ে অনেক ফোঁড়ন কেটেছেন তিনি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এখনও মজা করেন প্রায়ই। এই তো, গত জানুয়ারিতে ক্যারিয়ারের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি স্বাদ পেলেন অস্ট্রেলিয়ার সাম্প্রতিকতম ‘সেনসেশন’ মার্নাস লাবুশেন। টুইটারে গিলেস্পি তাকে ডাবল সেঞ্চুরি ক্লাবে স্বাগত জানিয়েছিলেন তো বটেই, পরে আবেগঘন এক খোলা চিঠিও লিখেছিলেন ।

চিঠির শুরুটা করেছিলেন এভাবে, “প্রিয় মার্নাস, অস্ট্রেলিয়ান ক্রীড়াঙ্গনের সবচেয়ে অভিজাত ও সম্মানজনক ক্লাবগুলির একটিতে জায়গা করে নেওয়ায় তোমাকে অভিনন্দন।”

ওই চিঠির পরতে পরতে আছে ছিল রসবোধের প্রমাণ, “অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটের গ্রেট ব্যাটসম্যানদের সঙ্গে এখন তুমি কাঁধে কাঁধ মেলাতে পারবে, ব্র্যাডম্যান থেকে হার্ভি, পন্টিং থেকে পেরি, ব্রাউন থেকে বোর্ডার, সিম্পসন থেকে স্মিথ, এবং অতি অবশ্যই, জেসন গিলেস্পি।”

“মার্নাস, তোমাকে দিয়ে এই ক্লাবের সদস্য হলো ৪২। শুরুটা হয়েছিল সেই ১৮৮৪ সালে, কিংবদন্তি অধিনায়ক বিলি মারডক যখন ব্রিটিশদের পিটিয়ে ওভালে করেছিল ২১১।”

বাংলাদেশের বিপক্ষে ডাবল সেঞ্চুরিটির পথে কতটা দৃঢ়তা, স্থৈর্য ও জাদুকরী শক্তির প্রদর্শনী মেলে ধরেছিলেন তিনি, সেই গল্পও চিঠিতে শুনিয়েছেন লাবুশেনকে।

মজা করে বলেছেন বটে, তবে ওই ইনিংসটায় সত্যিকারের ব্যাটসম্যানই হয়ে উঠেছিলেন গিলেস্পি। এমনিতে অবশ্য তিনি ‘টিপিক্যাল’ লোয়ার অর্ডার ছিলেন না। নাইটওয়াচম্যানের কাজ কয়েকবারই করেছেন ক্যারিয়ারে। লোয়ার অর্ডারেও যখন নেমেছেন, তাকে আউট করা কঠিন হয়ে উঠেছে অনেক সময়ই। ওই ইনিংস ছাড়াও আরও ১২ ইনিংসে তিনি বল খেলেছেন ৭৫টির বেশি। টেস্ট ফিফটি করেছেন দুটি। ব্যাটিং কিছুটা তিনি পারতেন বটে। কিন্তু তাই বলে ডাবল সেঞ্চুরি!

ম্যাচের তৃতীয় দিন শেষে যখন সেঞ্চুরি করে অপরাজিত ছিলেন, সংবাদমাধ্যমে গিলেস্পি বলেছিলেন, ‘সুদূরতম কল্পনাতেও এটি ছিল না।” বলার অপেক্ষা রাখে না, ডাবল সেঞ্চুরি তাহলে তার কাছে কেমন ছিল!

৫৭৪ মিনিট উইকেটে থাকা বা ৪২৫ বলের ম্যারাথন ইনিংস, অনেক বিশেষজ্ঞ ব্যাটসম্যানের জীবনেও একবার আসে।

অথচ এর আগে কোনো ধরণের ক্রিকেটেই আগে কখনও শতরান ছিল না গিলেস্পির। তিনি মজা করে বলেছেন, ‘এমনকি বাড়ির আঙিনার ক্রিকেটেও নয়!’

যেভাবে গিলেস্পি গড়েছিলেন দুইশর সৌধ

ওই ইনিংসের সবকিছুই এখনও স্পষ্ট মনে পড়ে গিলেস্পির। অনেক সময়ই বলেছেন নানা জায়গায়, সংবাদমাধ্যমে নিজের কলামে লিখেছেন।

ম্যাচের প্রথম দিন ১৯৭ রানে অলআউট হয়ে যায় বাংলাদেশ। শেষ সেশনে ব্যাটিংয়ে নেমে ৬৭ রানের উদ্বোধনী জুটির পর ম্যাথু হেইডেনকে ফেরান মোহাম্মদ রফিক। দিনের খেলার তখন সম্ভাব্য ৬-৭ ওভার বাকি।

অস্ট্রেলিয়ানরা অনেক সময়ই নাইটওয়াচম্যাচ নামাতে চায় না, তাদের অহমে লাগে। কিন্তু সেদিন পরিস্থিতি ছিল কঠিন। গিলেস্পি  পরে স্মৃতিচারণ করেছিলেন তার ব্যাটিংয়ে নামার প্রেক্ষাপট।

“ বাংলাদেশের ইনিংস শেষে ড্রেসিং রুমে আরাম করেই বসে ছিলাম। বোলিংয়ে তিন উইকেট নিয়েছিলাম, ভেবেছিলাম দিনের কাজ শেষ। তখন আকাশ ছিল মেঘলা, শেষ বেলায় আলো মরে এসেছিল। বল সিম করছিল, স্পিনাররা টার্নও পাচ্ছিল। বাউন্স ছিল অসমান। অধিনায়ক (রিকি পন্টিং) বললেন, আমাকে ব্যাটিংয়ে যেতে হবে। আমি সানন্দেই রাজী হয়েছি।”

ওপেনার ফিল জ্যাকসের সঙ্গে দিনের বাকি সময়টা কাটিয়ে দেন গিলেস্পি। দিন শেষে অপরাজিত ছিলেন ৫ রানে।

পরের দিনের বেশির ভাগ সময় ভেসে যায় বৃষ্টিতে। খেলা হয় ২২ ওভারের একটু বেশি। জ্যাকসকে ৬৬ রানে থামান রফিক। দিনশেষে গিলেস্পি অপরাজিত থেকে যান ২৮ রানে। ১৯ রান নিয়ে তার সঙ্গী রিকি পন্টিং।

বৃষ্টি ঝামেলা পাকিয়েছে তৃতীয় দিনেও। তবে গিলেস্পি এ দিনই পৌঁছে যান তিন অঙ্কে। মাইক হাসির সঙ্গে তার ম্যারাথন জুটির শুরুও ছিল সেদিনই।

সেদিন ৫২ রানে গিলেস্পির সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে রান আউট হয়ে যান পন্টিং। গিলেস্পি পরে মজা করে বলেছিলেন, “আমি শট খেলার পর তাকিয়ে দেখছিলাম, ডিফেন্সটা ঠিক আছে কিনা। ক্যাপ্টেন কেন যে মাঝ পিচ পর্যন্ত দৌড়ে চলে এলো! তবে এটা বুঝে গিয়েছিলাম, ক্যাপ্টেনকে রান আউট করার পর ড্রেসিং রুমে ফেরাটা নিরাপদ নয়। ঠিক করলাম, উইকেটেই থাকতে হবে!”

নব্বই পেরোনোর পর মাশরাফি মুর্তজার একটি বলে এলোমেলো চালিয়ে দিয়েছিলেন, অল্পের জন্য স্টাম্প নাড়ায়নি বল। আরেকপাশ থেকে মাইক হাসি ছুটে গিয়ে তাকে মনে করিয়ে দিয়েছিলেন, কত বড় মাইলফলক তার অপেক্ষায়।

একটু পরই পান শতকের দেখা। টেস্ট ইতিহাসের মাত্র পঞ্চম নাইটওয়াচম্যান হিসেবে সেঞ্চুরি! আগের চার জনের মধ্যে মার্ক বাউচার ও সৈয়দ কিরমানি ছিলেন কিপার-ব্যাটসম্যান, পাকিস্তানের নাসিম-উল-গনি ছিলেন অলরাউন্ডার। কেবল গিলেস্পি ও আরেক অস্ট্রেলিয়ান টনি মান সত্যিকারের লোয়ার অর্ডার ব্যাটসম্যান।

সেঞ্চুরির পর তৃতীয় দিনের খেলা শেষে গিলেস্পি বলেছিলেন, “সেঞ্চুরির আশাও করিনি কখনও। অবিশ্বাস্য ব্যাপার, খুবই অদ্ভূত। মাঠ ছাড়ার সময় দেখলাম ওয়াসিম আকরাম, হার্শা ভোগলেরা (ধারাভাষ্যকার) টিভিতে আমার ব্যাটিং নিয়ে কথা বলছে, বিশ্লেষণ করছে। উদ্ভট সব কাণ্ড!-কারখানা!”

নিজেও জানতেন না, রোমাঞ্চকর এই পথচলায় পরদিন ছুঁয়ে ফেলবেন অবিশ্বাসের চূড়ান্ত সীমা!

৩২০ রানের জুটি শেষে ১৮২ রানে আউট হয়ে ফেরেন মাইক হাসি। গিলেস্পি ছিলেন অপ্রতিরোধ্য। ১৯৭ থেকে রফিকের বলে বাউন্ডারিতে পা রাখেন ইতিহাসের সীমানায়। ওই শটে তিনি দুইশ ছোঁয়ার পরই ইনিংস ঘোষণা করে দেয় দল।

মজার ব্যাপার হলো, ওই ইনিংসের পথে গিলেস্পি ব্যাট উঁচিয়ে ধরেছেন বেশ কয়েকবার। গ্যালারি আর টিভি পর্দার সামনে থাকা দর্শকেরা তাতে বিভ্রান্ত হয়েছে, উত্তর খুঁজে বেরিয়েছেন ধারাভাষ্যকাররাও। তিনি নিজেই পরে খোলাসা করেছেন কারণ। যথারীতি, সেখানেও মিশে ছিল কৌতুকের ছোঁয়া!

“ অনেকবার ব্যাট তুলেছি, কারণ মাইলফলক তো অনেক পেরিয়েছি! পঞ্চাশ ছোঁয়ার সামনে ছিল ৬১, গ্লেন ম্যাকগ্রার সর্বোচ্চ। আমি সে সময় ব্যাট তুলেছিলাম! সতীর্থরা খুব মজা পেয়েছিল তাতে, দর্শকেরা অবাক! এরপর ছাড়িয়ে যাই কাছের বন্ধু ডেমিয়েন ফ্লেমিংয়ের ৭১ রান, তখনও ব্যাট তুলি। ৯৯ রানে দাঁড়িয়ে অবশ্য একটু টেনশন থাকে। তবে আমি আগে থেকেই ঠিক করেছিলাম, তখন ব্যাট তুলব। ওয়ার্নের সর্বোচ্চ রান সেটি! দর্শকদের অনেকে অবশ্য মনে করেছিল, সেঞ্চুরি হয়েই গেছে।”

“ সেঞ্চুরি হওয়ার পর ড্রেসিং রুমের দিকে তাকিয়ে দেখি ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে দলের সবাই তালি দিচ্ছে আর হাসছে। আমি বুঝলাম না, হাসাহাসির কী আছে, আমার তো সেঞ্চুরি করারই কথা!”

দেড়শ পর থেকে তিনি ছাড়িয়ে যেতে থাকেন একের পর এক রথি-মহারথীকে। উইকেটে তার সঙ্গী মাইক হাসি একটু পরপরই তাকে জানিয়ে দিচ্ছিলেন, পেছনে পড়ল কোন কোন গ্রেট।

“ সে ( মাইক হাসি) সব ব্যাটসম্যানের সর্বোচ্চ স্কোর জানত। মাইকেল ক্লার্ক (তখন তার সর্বোচ্চ ছিল ১৫১), মার্ক ওয়াহকে (১৫৩) ছাড়িয়ে যাওয়ার পর সে আমাকে বলল। এরপর ড্যারেন লেম্যানের ১৭৭, মাইকেল ভনের ১৯৭ ছাড়িয়ে যাই। ডাবল সেঞ্চুরির শটে স্টিভ (ওয়াহ) ও বুনিকে (ডেভিন বুন) ছাড়িয়ে গেলাম (২০০)। টাগা (স্টিভ ওয়াহ) তো অপরাজিতও থাকতে পারেনি!”

ডাবল সেঞ্চুরি ছোঁয়ার সময় গিলেস্পির সঙ্গে উইকেটে ছিলেন মাইকেল ক্লার্ক। সুযোগ পেয়ে সেই সময়ের তরুণ প্রতিভা ক্লার্কের সঙ্গে রসিকতা করতে ছাড়েননি তিনি।

“ মাইকে ক্লার্ককে দেখলাম আমার অর্জনে দারুণ খুশি। ড্রেসিং রুমে ফেরার সময় (ইনিংস ঘোষণার পর) ভাবলাম, ওকে খানিকটা পরামর্শ দেওয়া যাক। বললাম, ‘শোনো বাছা, ডাবল সেঞ্চুরি এভাবেই করতে হয়!”

ব্যাটে-বলে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে ম্যাচের সেরা হয়েছিলেন তিনি। ধারাবাহিক পারফরম্যান্সে হয়েছিলেন সিরিজের সেরাও। তবে ইতিহাসগড়া ডাবল সেঞ্চুরির সেই টেস্টই হয়ে থেকেছে তার শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ!

এখন পেছন ফিরে তাকালে বিস্ময়কর মনে হতে পারে। তবে গিলেস্পি তখনই আঁচ করতে পারছিলেন, এটিই হয়তো শেষ। কারণ নির্বাচকেরা ভবিষ্যতের দিকে তাকাচ্ছিলেন। তখন অস্ট্রেলিয়ার বিজয় সঙ্গীত গাওয়ার দায়িত্ব ছিল জাস্টিন ল্যাঙ্গারের। এই ওপেনার ওই সফরে না থাকায় দায়িত্ব বর্তেছিল অ্যাডাম গিলক্রিস্টের ওপর। কিন্তু দলের অনেকের মতো গিলক্রিস্টও বুঝতে পারছিলেন, গিলেস্পি হয়তো আর খেলার সুযোগ পাবেন না। সেই টেস্ট শেষে তাই গিলক্রিস্ট বিজয় সঙ্গীতে নেতৃত্ব দিতে আহবান জানান গিলেস্পিকে। সেই সম্মানটুকু দেওয়ার জন্য গিলেস্পি আজও কৃতজ্ঞতা জানান গিলক্রিস্টকে।

বিস্ময়করভাবে, নিজের পরের জন্মদিনে আরেকটি সেঞ্চুরি করেন গিলেস্পি। এবার ইয়র্কশায়ারের হয়ে কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশিপে দশে নেমে। পরে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে সেঞ্চুরি উপহার দেন আরও একটি। কাউন্টি ও শেফিল্ড শিল্ডে বোলিং পারফরম্যান্সও খারাপ ছিল না। কিন্তু জাতীয় দলে আর সুযোগ মেলেনি।

শেষটা নিয়ে তবু আক্ষেপ নেই গিলেস্পির। কারণ, ওই ডাবল সেঞ্চুরি! ওই ইনিংসের পর সংবাদমাধ্যমে বলেছিলেন, “ এটা অবিশ্বাস্য। আমার কেবল হাসি পাচ্ছিল। সত্যি বলতে, এটি রূপকথার মতো। হ্যানজেল অ্যান্ড গ্রেটেল (জনপ্রিয় জার্মান রূপকথা) ও ডিজির ডাবল সেঞ্চুরি এখন একই পর্যায়ের!”

তার সেই হাসি থামেনি এখনও!

‘ডিজি’ তার ডাক নাম। ক্রিকেট বিশ্বে বেশ পরিচিত তার এই নামও।

সেবারের পর আর কখনও বাংলাদেশে আসা হয়নি গিলেস্পির। এটি নিয়েও মজা করেছিলেন একবার।

“ ওই ইনিংসের পর আর বাংলাদেশে যাওয়া হয়নি আমার, যদিও যেতে পারলে দারুণ লাগবে! শুনেছি সেখানকার অস্ট্রেলিয়ান হাই কমিশনের পানশালার নাম নাকি ‘ডিজির ডাবল সেঞ্চুরি বার!’

২০১৭ সালে অস্ট্রেলিয়ার বাংলাদেশ সফরের আগে উত্তরসূরীদের জন্য গিলেস্পির পরামর্শ ছিল, “অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যানদের উচিত, ইউটিউবে গিয়ে সার্চ করা, ‘টেস্ট ইতিহাসের সেরা ইনিংস।’ এটিই সার্চ দিলেই আমার ২০১ রানের ইনিংসটি আসবে। ১ ঘণ্টার মতো হাইলাইটস, ওদের উচিত মনোযোগ দিয়ে দেখা, বাংলাদেশে কীভাবে ব্যাট করা উচিত। ব্যাটিংয়ের একটা মাস্টারক্লাস দেখিয়েছিলাম!”

এই হলেন গিলেস্পি। একটি ডাবল সেঞ্চুরি তার জীবনকে করে তুলেছে আরও বর্ণময়, ক্রিকেটকেও করে তুলেছে রঙিন!