নারীদের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ‘এ’ গ্রুপের ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার কাছে ৮৬ রানে হেরেছে বাংলাদেশ।
২০১৪ বিশ্বকাপে সিলেটে ইংল্যান্ড ও ভারতের বিপক্ষে ৭৯ রানে হার ছিল বাংলাদেশের সবচেয়ে বাজে হারের আগের রেকর্ড।
ক্যানবেরায় বৃহস্পতিবার অ্যালিসা হিলি ও বেথ মুনির রেকর্ড জুটিতে অস্ট্রেলিয়া তোলে ২০ ওভারে ১ উইকেট হারিয়ে ১৮৯ রান। বাংলাদেশের বিপক্ষে এটি সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড।
জিততে হলে রান তাড়ায় নিজেদের রেকর্ড নতুন করে লিখতে হতো বাংলাদেশকে। মেয়েরা পারেনি সেটির সম্ভাবনা জাগাতেও। থমকে গেছে ১০৩ রানে।
ম্যাচের ভাগ্য বলা যায় প্রথম ভাগেই গড়ে দেন হিলি ও মুনি। অস্ট্রেলিয়ার দুই ওপেনারকে আলাদা করতেই গলদঘর্ম হতে হয় বাংলাদেশের বোলারদের।
মেয়েদের টি-টোয়েন্টির সবচেয়ে বিধ্বংসী ব্যাটারদের একজন হিলি খেলেছেন ৫৩ বলে ৮৩ রানের ইনিংস। ৫৮ বলে ৮১ রানে অপরাজিত ছিলেন মুনি।
১৫১ রানের জুটিতে দুজন জায়গা করে নেন রেকর্ড বইয়ে। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে যে কোনো উইকেটেই প্রথম দেড়শ রানের জুটি এটি। সেই ২০০৫ সালে চতুর্থ উইকেটে কেট ব্ল্যাকওয়েল ও কারেন রোল্টনের ১৪৭ ছিল আগের সেরা জুটি।
বাংলাদেশের বিপক্ষেও এটি সব দল মিলিয়ে যে কোনো উইকেটে রেকর্ড জুটি। আগের সর্বোচ্চ ১৩০ ছিল ভারতের পুনম রাউত ও থিরুস কামিনির, ২০১৩ সালে।
মানুকা ওভালের ব্যাটিং স্বর্গে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা অস্ট্রেলিয়া ঝড়ের বেগে শুরু করে হিলির সৌজন্যে। ম্যাচের প্রথম ওভারে জাহানারা আলমকে তিনবার পাঠান তিনি বাউন্ডারিতে। ইনিংস জুড়ে বাংলাদেশের বোলারদের ভুগিয়েছেন কিপার-ব্যাটার।
আক্রমণের ধারা চলতে থাকে পরের ওভারগুলোতেও। ৭ ওভারের মধ্যে ৫ বোলারকে ব্যবহার করেন অধিনায়ক সালমা খাতুন। রানের গতিতে রাশ টানতে পারেননি কেউই।
মুনি শুরুতে স্রেফ সঙ্গ দিয়ে গেছেন হিলিকে। সময়ের সঙ্গে তার ব্যাটও হয়ে উঠেছে উত্তাল।
বাংলাদেশের বোলিং ছিল এলোমেলো, ফিল্ডিং যাচ্ছেতাই। দেখা গেছে ক্যাচ মিসের মহড়া।
৮২ রানে জীবন পেয়ে হিলি আউট হয়েছেন ৮৩ রানে। ১০ চারের পাশে ইনিংসে মেরেছেন ৩ ছক্কা। সালমার বলে পয়েন্টে ক্যাচ নেন সানজিদা ইসলাম।
মুনি জীবন পেয়েছেন ৩ দফায়। শেষ পর্যন্ত আর আউটই হননি। ৯ চারে অপরাজিত থাকেন ৫৮ বলে ৮১ রান করে।
শেষ দিকে তাণ্ডব চালিয়ে ৩ চার ও এক ছক্কায় ৯ বলে ২২ রানে দলকে দুইশর কাছে নিয়ে যান অ্যাশলি গার্ডনার।
বাংলাদেশের বোলারদের সবাই ওভারপ্রতি রান দিয়েছেন সাতের ওপর। আগের ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে দারুণ বোলিং করা পান্না ঘোষ বিস্ময়করভাবে সুযোগ পাননি একাদশে। তার বদলে এসে অফ স্পিনার খাদিজা তুল কুবরা ছিলেন খরুচে।
১৯০ রানের লক্ষ্য বাংলাদেশের ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিল বরাবরই। দেখার ছিল, লড়াই কতটা জমাতে পারে মেয়েরা। হয়নি সেটিও।
বাংলাদেশের দুই ওপেনারকে দ্রুত ফেরান অস্ট্রেলিয়ার মূল স্ট্রাইক বোলার মেগান শুট। তিনে নামা সানজিদাও টেকেননি। ২৬ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ ছিটকে পড়ে লড়াই থেকে।
চতুর্থ উইকেটে ৫০ রানের জুটি গড়েন নিগার সুলতানা ও ফারজানা হক। তবে তাতে বল লেগেছে ৫১টি।
১৯ রান করতে নিগার খেলেছেন ৩২ বল। ফারজানা ৩৫ বলে ৩৬ রানের ইনিংসে চেষ্টা করেছেন রান কিছু বাড়াতে।
রুমানা আহমেদ থেমেছেন ১২ বলে ১৩ রান করে। শেষ ৫ ব্যাটারের কেউ ছাড়াতে পারেনি ৫ রান।
টানা দুই ম্যাচ হারের পর আগামী শনিবার বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ আরেক শক্তিশালী দল নিউ জিল্যান্ড। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে লড়াই সোমবার মেলবোর্নে। এই ম্যাচেই কেবল বলা যায় জয়ের বাস্তব সম্ভাবনা আছে বাংলাদেশের।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
অস্ট্রেলিয়া: ২০ ওভারে ১৮৯/১ (হিলি ৮৩, মুনি ৮১*, গার্ডনার ২২*; জাহানারা ৪-০-৪-০, সালমা ৪-০-৩৯-১, নাহিদা ৩-০-২৬-০, খাদিজা ২-০-২৯-০, রুমানা ৪-০-৩০-০, ফাহিমা ৩-০-২৩-০)।
বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১০৩/৯ (শামিমা ১৩, মুর্শিদা ৮, সানজিদা ৩, নিগার ১৯, ফারজানা ৩৬, রুমানা ১৩, ফাহিমা ৫*, জাহানারা ১, সালমা ০, খাদিজা ০, নাহিদা ০*; পেরি ৩-০-১২-০, শুট ৪-০-২১-৪, সাদারল্যান্ড ৩-০-২১-১, কেয়ারি ৩-০-১৬-১, ওয়েরহ্যাম ৩-০-১৫-০, জোনাসেন ৪-০-১৭-২)।
ফল: অস্ট্রেলিয়া ৮৬ রানে জয়ী।
প্লেয়ার অব দা ম্যাচ: অ্যালিসা হিলি