‘বলতে পারেন, অবসর সবাই করিয়ে দিয়েছে’

কিছুদিনের জন্য একটু থেমেছিল, প্রশ্নবাণ থেকে মিলেছিল একটু ফুসরত।কিন্তু আবার যখন শোনা যাচ্ছে জিম্বাবুয়ের আগমনী বার্তা, প্রশ্নগুলোও ফিরে এসেছে। এবারই কি শেষ মাশরাফি? বিপিএলের মধ্যেও শোনা গেল মাশরাফি বিন মুর্তজার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার নিয়ে সেই কৌতুহলের সুর। তাতে বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়কের কণ্ঠে শোনা গেল অভিমানের টান। বললেন, ক্রিকেটই তার জীবন। যতদিন উপভোগ করবেন, চালিয়ে যেতে চান খেলা।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Jan 2020, 03:10 PM
Updated : 10 Jan 2020, 03:34 PM

দেশের সফলতম ওয়ানডে বোলার মাশরাফি। তবে গত বিশ্বকাপ কেটেছে দুঃস্বপ্নের মতো। ৮ ম্যাচে নিতে পেরেছেন কেবল ১ উইকেট। ওভার প্রতি রান দিয়েছেন ৬.৪৪ করে।

এই বিশ্বকাপ দিয়েই তিনি বিদায় নিতে পারেন বলে ভাবনা ছিল অনেকেরই। বাজে পারফরম্যান্স সেই আলোচনাকে উসকে দিয়েছিল আরও। কবে ছাড়ছেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট, এই প্রশ্ন তাকে শুনতে হয়েছে নিত্যই। গত নভেম্বরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের আগে এই আলোচনা ছিল তুমুল।

সেই জিম্বাবুয়ে আবার সফরে আসছে আগামী মাসে। আইসিসির ভবিষ্যৎ সফর সূচী অনুযায়ী এই সফরে ওয়ানডে না থাকলেও ৫০ ওভারের সিরিজ যোগ করার সম্ভাবনা প্রবল। মাশরাফির অবসরের প্রসঙ্গও তাই উচ্চকিত হয়েছে আবার।

অবসর নিয়ে এত আলোচনায় অভিমান করেই কি বিদায় বলছেন না মাশরাফি? শুক্রবার বিপিএলে রংপুর রেঞ্জার্সের বিপক্ষে ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা প্লাটুন অধিনায়ক অভিমান মাখা কণ্ঠেই বললেন, অভিমান নেই।

“যখন টি-টোয়েন্টি থেকে বিদায় নিয়েছি, অনেক কারণ আপনাদের বলেছি। আমি অভিমান-টভিমান নিয়ে চলি না। এটা একেবারেই নাই। অবসর নিয়ে যেটা বললেন, আপনি বলতে পারেন, অবসর সবাই করিয়ে দিয়েছে।”

“আমি নিজে যে জায়গায় অবস্থান করছি, সেটা উপভোগ করছি। মাঠ থেকে অবসর নেব কি নেব না, এখনও সিদ্ধান্ত নেইনি। যদি সেরকম অবস্থা তৈরি হয়, ক্রিকেট বোর্ড যদি মনে করে, তাহলে হয়তোবা চিন্তা-ভাবনা করব।”

মাঠ থেকে মাশরাফির বিদায় নেওয়ার ভাবনাতেই মূলত তার অবসর ঘিরে এত আলোচনা। কিন্তু তিনি নিজে জানিয়ে দিলেন, মাঠ থেকে অবসরের ভাবনায় তিনি কাতর নন।

“নিজেকে আমার এত প্রাধান্য দেওয়ার দরকার আছে, এটা মনে করি না। নিজেকে আমি এত প্রাধান্য দেই না যে, আমাকে মাঠ থেকে বিদায় দেবেন সবাই, ফুলের তোড়া নিয়ে আসবেন। এটা প্রয়োজনীয় নয়। আমি যেমন আছি, ভালো আছি। উপভোগ করছি খেলা। জাতীয় দল অনেক দূরের ব্যাপার।”

‘জাতীয় দল দূরের ব্যাপার’ বলাটা যে কেবল বলার জন্যই নয়, সেই ব্যাখ্যাও দিলেন। সেখানে মিশে থাকতে পারে অভিমান কিংবা বাস্তবতাবোধ।

“সত্যি কথা বললে, ৮ ম্যাচে ১ উইকেট (বিশ্বকাপে) পাওয়ার পর তো আমি দলে জায়গা প্রত্যাশা করতে পারি না। নির্বাচকেরা যদি মনে করেন আমাকে সুযোগ দেবেন, আমি সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করব। এই মুহূর্তে আমি ৮ ম্যাচে ১ উইকেট পেয়ে কিভাবে বলি জাতীয় দলে সুযোগ পাব? অন্য কেউ হলে অবশ্যই আরও আগে বাদ পড়ে যেত।”

“শ্রীলঙ্কা সিরিজে ছিলাম (বিশ্বকাপের পরপর), সাকিবও ছিল না ( সেই সফরে)। হয়তো আমার একটা সুযোগ এসেছিল। এরপর তো আর কোনো খেলা ছিল না। আমি জানি না, নির্বাচকদের কী চিন্তা ভাবনা আছে। আমার সঙ্গে আলাপ হয়নি। এরপরও আরও খেলোয়াড়দের সঙ্গে কথা হয়েছে। আমি এক পক্ষ থেকে কিভাবে বলব?”

জিম্বাবুয়ে সিরিজে ওয়ানডে যোগ হলে ও দলে সুযোগ মিললে খেলবেন মাশরাফি, জানিয়ে দিলেন স্পষ্ট। পাশাপাশি জানিয়ে রাখলেন, এখনই থামার ভাবনা নেই।

“সাধারণ খেলোয়াড় হিসেবে যেভাবে চিন্তা করার, সেভাবেই করছি। যদি ওয়ানডে আসে, (নির্বাচকরা) মনে করেন আমার খেলা উচিত, তাহলে অবশ্যই আমি থাকব। দিনশেষে আমার কাছে ক্রিকেটটাই সব। যত দিন খেলছি, মন দিয়ে খেলব। বাকিটা নির্বাচকদের ব্যাপার, বোর্ড দেখবে।”

“যখন জিম্বাবুয়ে সিরিজের কথা আমাকে বলা হয়েছিল, তখনও বলেছি, আমি খেলব। আমার দিক আমি বলতে পারি। আমার জায়গায় যারা খেলেছে তারাও ভালো করেছে। বোর্ড যদি মনে করে, আমাকে খেলাতে চায় অবশ্যই আমি আছি। আর যেটা বললেন, আমি তো খেলে যাচ্ছি তো খেলার জন্যই, এমন তো নয় যে ফাজলামি করছি।”

যদি শেষ পর্যন্ত জাতীয় দলে সুযোগ না মেলে, বিকল্পও ভেবে রেখেছেন মাশরাফি। সেই ভাবনায় নেই ক্রিকেট ছেড়ে দেওয়া। বরং থেকে যাবেন মাঠেই।

“কেউ জাতীয় দল থেকে শুরু করে না। আমি আবার সেখানে ফিরে গেছি। বিপিএল খেলেছি, সামনে ঢাকা লিগ (প্রিমিয়ার) উপভোগ করব। সব সময় জাতীয় দলে খেলতে হবে, জাতীয় দলকে প্রতিনিধিত্ব করলেই খেলোয়াড়, সেরকম তো নয়!”