মৌলিকত্বের আশ্রয়েই থাকতে চান মিরাজ

ক্যারম বল, টপ স্পিন, স্লাইডার, এমনকি লেগ স্পিন, রবিচন্দ্রন অশ্বিনের বৈচিত্রময় বোলিং মুগ্ধ হয়ে দেখেন মেহেদী হাসান মিরাজ। ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগগুলোয় দেখেন, আর কত স্পিনার কত কারিকুরি করছেন। মিরাজেরও ইচ্ছে করে চেষ্টা করতে। তবে সেই ইচ্ছেকে প্রশ্রয় দেন না। নিজের ভিত যে শক্ত নয় এখনও! আপাতত অফ স্পিনের মৌলিক দিকগুলোই আরও পোক্ত করতে চান তিনি, বৈচিত্রের অভিযানে ছুটবেন পরে।

আরিফুল ইসলাম রনিআরিফুল ইসলাম রনিডাবলিন থেকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 May 2019, 02:06 PM
Updated : 11 May 2019, 02:06 PM

নিষ্প্রাণ উইকেট ও মারকাটারি ব্যাটিংয়ের যুগে টিকে থাকতে বোলিংয়ে অনেক বৈচিত্র যোগ করতে হচ্ছে অফ স্পিনারদের। বৈচিত্রের ক্ষেত্রে অশ্বিন এখন সবার সামনেই উদাহরণ। আরও বেশ কজন ফিঙ্গার স্পিনার দেখিয়ে চলেছেন বোলিংয়ের নতুনত্বের অনেক খেল। মিরাজ এখনও প্রথাগত অফ স্পিনারই। ফ্লাইট, ড্রিফট, গতি বৈচিত্র আর লাইন-লেংথ দিয়েই চেষ্টা করে যাচ্ছেন নিজের ছাপ রাখতে।

চারপাশের বদলে যাওয়া বাস্তবতা অবশ্য দেখছেন মিরাজ। সময়ের ডাকও শুনতে পাচ্ছেন। তবে সেই ডাকে সাড়া দেওয়ার সময় আসেনি, এই উপলব্ধিও হচ্ছে। শনিবার ডাবলিনের টিম হোটেলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে এই অফ স্পিনার জানালেন, নিজের শক্তির জায়গাগুলোই আপাতত আরও ধারাল ও পোক্ত করতে চান।

“আমি মনে করি, এখনও আমার নতুন কিছু করে দেখানোর সময় আসেনি। আগে তো মৌলিক ব্যাপারগুলো পুরোপুরি রপ্ত করি! বেসিক ব্যাপারগুলো নিয়ে নিজে যখন পুরো তৃপ্ত হব, এরপর নতুন কিছুর চেষ্টা করব।”

“অশ্বিনের কথাই ধরুন। একসময় কিন্তু প্রথাগত অফ স্পিনারই ছিলেন। পরে অভিজ্ঞ হয়ে আস্তে আস্তে ক্যারম বল বা অনেক কিছু যোগ করছেন। কিংবা সাকিব ভাই, উনারা এত অভিজ্ঞ যে নতুন কিছু করতে পারেন। আমি আগে বেসিক শক্তিশালী করতে চাই। ভালো জায়গায় বল করা, রান কম দেওয়া, প্রয়োজনের সময় উইকেট নেওয়া। যখন এসব খুব ভালো পারব, মাথায় পুরো গেঁথে যাবে, তখন নতুন কিছু নিজেই বের করতে পারব। এই মূহুর্তে অনেক কিছু চেষ্টা করতে গেলে মূল ব্যাপারটি হারিয়ে যেতে পারে। দলের পরিকল্পনাও ভেস্তে যেতে পারে।”

দলের চাওয়া আপাতত বেশ ভালোভাবেই পূরণ করে চলেছেন মিরাজ। গত বছরের মাঝামাঝি ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর থেকেই কার্যকর বোলিং করে চলেছেন। অশ্বিনদের মতো বৈচিত্র না থাকলেও নিজের কাজে মিরাজ যথেষ্টই সফল। এখনও পর্যন্ত ২৬ ওয়ানডেতে তার উইকেট ২৭টি। উইকেট নেওয়ার হার খুব বেশি নয়, তবে ওভারপ্রতি রান দিয়েছেন ৪.৩৭। এই যুগে যা দুর্দান্ত।

গত বছরের ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর থেকে বিবেচনায় নিলে ওভারপ্রতি রান আরও ভালো, ৪.০৯। আয়ারল্যান্ডের কন্ডিশনে তার বেলিংয়ের কার্যকারিতা নিয়ে সংশয় ছিল। ত্রিদেশীয় টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচে দারুণ বোলিং করেছেন। তাতে বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের উইকেটেও তার উপযোগিতা নিয়ে ভরসা মিলছে।

মিরাজ আপাতত সেই উপযোগিতার সমীকরণ মিলিয়ে যেতে চান। টেস্ট বোলারের তকমা যখন গায়ে সেঁটে যাচ্ছিল প্রায়, মুক্তির পথ খুঁজে নিয়েছেন। আপাতত সেই পথ ধরেই হাঁটতে চান।

“এখন আমি ওয়ানডে খেলছি কেন? রান কম দিচ্ছি বলেই। গত ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর থেকে নিয়মিত খেলছি। তার আগে কিন্তু ওয়ানডে দলে অনিয়মিত ছিলাম। সবাই বলছিল, মিরাজ টেস্টের বোলার। কিন্তু আমি শুধু টেস্টের বোলার হয়ে থাকতে চাইনি। ভেবেছি কি করা যায়। মাশরাফি ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলেছি। উনি বলেছেন, ‘তোর বোলিংয়ের যা ধরন, বেসিকটা ঠিক রেখে রান কম দেওয়ার বোলিং করতে হবে ওয়ানডেতে। সেটা পারলে একাদশে জায়গা পাবি।’ ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর থেকে সেটা করেই কিন্তু মোটামুটি নিয়মিত খেলছি।

“ওয়ানডেতে আমার ইকোনোমি কিন্তু ভালো। আমি আপাতত ওখানেই জোর দিচ্ছি। আমি যদি নানান কিছু চেষ্টা করতে গিয়ে রান বেশি দিয়ে ফেলি, অধিনায়ক বা দল কিন্তু আমাকে রাখবে না। তারা আমার কাছে মিতব্যয়ী বোলিং চায়। ৭০ রান দিয়ে ৩ উইকেট আমার কাছে চায় না। এভাবে যদি আমি নিয়মিত খেলতে পারি, জায়গা শক্ত করতে পারি, যখন একটা পজিশন হবে দলে, ভিত শক্ত হবে, তখন নিজেই অনেক কিছু বের করার চেষ্টা করব। নতুন কিছুর কথা ভাবব।”

নিজের বোলিংয়র শক্তি-দুর্বলতাও মিরাজের জানা আছে বেশ। তার বিশ্বাস, আপাতত নতুন বৈচিত্র যোগ না হলেও নিজের স্কিল দিয়ে ব্যাটসম্যানদের ভোগাতে পারবেন।

“আমার কাছে সমবসময় বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো বোলিংয়ের শেপ। সিমের পজিশন। হাত থেকে কতটা ভালো অবস্থায় বল বের হচ্ছে। বলের ডিরেকশনের ওপর অনেক কিছু নির্ভর করে। সাকিব ভাই পৃথিবীর সব কন্ডিশনে, সব উইকেটেই ভালো বোলিং করে কিভাবে? কারণ তার বোলিংয়ের শেপ ভালো। আমিও সেটাই চেষ্টা করছি। আমার শুরু থেকেই শেপ ভালো, এটা আরও ভালো করতে ও ধরে রাখতে চাই। ভালো শেপে ও ভালো জায়গায় বল করলে ব্যাটসম্যানের ভুল করার চান্স বেশি।”

মিরাজ শিখছেন দলের সিনিয়রদের ক্যারিয়ার থেকে। উপলব্ধি করছেন, নিজের কাজ ঠিকঠাক করতে পারলে, ওয়ানডে স্পিনার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারলে দলেরই লাভ।

“আজকে বাংলাদেশ দল ওয়ানডেতে এত ভালো দল কেন? কারণ দলের মূল ক্রিকেটাররা অনেক দিন থেকে খেলে নিজের জায়গা শক্ত করেছে। একটা জায়গায় নিজেকে নিয়ে গেছে। তাতে দল উপকৃত হয়েছে। আমিও সেই জায়গায় যেতে চাই। আমি যদি নিজের জায়গা শক্ত না করে অন্যকিছু করতে যাই, তখন জায়গা হারাতে হতে পারে। আমি চাই জায়গা পাকা করতে। সবাই যেন বলে, টেস্টের মতো ওয়ানডেতেও মিরাজ অপরিহার্য।”