ডট বল আর স্ট্রাইক রেট নিয়ে যা ভাবছেন তামিম

দলের কোচিং স্টাফদের সঙ্গে সম্পর্কের রসায়ন খুব গুরুত্বপূর্ণ তামিম ইকবালের জন্য। পারস্পরিক আস্থা ও নির্ভর করতে পারা যে সম্পর্কের উপাদান। জেমি সিডন্সের সঙ্গে তার সম্পর্ক ছিল দারুণ। চন্দিকা হাথুরুসিংহের সঙ্গেও। এখন জমে গেছে নিল ম্যাকেঞ্জির সঙ্গে। বাংলাদেশের ব্যাটিং কোচের সঙ্গে অনেক সময় কাটান তামিম। অনেক পরামর্শ নেন, কাজ করেন নিবিড়ভাবে। ইদানিং দুজনের আলোচনায় প্রায়ই থাকে দুটি ব্যাপার, ডট বল কমানো ও স্ট্রাইক রেট বাড়ানো।

আরিফুল ইসলাম রনিআরিফুল ইসলাম রনিডাবলিন থেকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 May 2019, 04:09 PM
Updated : 10 May 2019, 07:42 PM

শুক্রবার বাংলাদেশ দলের অনুশীলন ছিল ডাবলিনের ওয়াইএমসিএ স্পোর্টস গ্রাউন্ডে। সেন্টার উইকেটে অনেকটা সময় নিয়ে ব্যাট করলেন তামিম। কাছ থেকে গভীর মনোযোগ দিয়ে দেখলেন ম্যাকেঞ্জি। তার পর দীর্ঘক্ষণ কথা বলতে দেখা গেল দুজনকে। বলার অপেক্ষা রাখে না, আলোচনার বিষয়বস্তু ছিল শুধু ব্যাটিং।

তামিমের ব্যাটিং নিয়ে যে কোনো আলোচনায় দুটি দিক ফুটে ওঠে। গড় ও স্ট্রাইক রেটের সামঞ্জস্য। গত বিশ্বকাপের পর থেকে এখনও পর্যন্ত ৪৮ ইনিংসে করেছেন ২ হাজার ৪১৫ রান। গড় ৫৮.৯০। স্ট্রাইক রেট ৭৮.৩৩। ২০১৭ সালের শুরু থেকে ধরলে তার গড় ৬৪.৫৪; স্ট্রাইক রেট ৭৭.৮০। ব্যাটিং গড় দুর্দান্ত। কিন্তু স্ট্রাইক রেট? ভাবনার খোরাক জোগায় বটে।

দলের অবশ্য ভাবনা নেই এসব নিয়ে। গত কয়েক বছরে তামিমের যা পারফরম্যান্স ও ধারাবাহিকতা, দল তাতে যারপর নাই সন্তুষ্ট। স্ট্রাইক রেট বাড়ানোর কোনো তাড়া দেওয়া হয়নি। তাড়নাটা এসেছে তামিমের নিজেরই। কাজ করার চেষ্টাও করেছেন। তবে অনেক কিছু নিয়েই সাবধানী হতে হচ্ছে তাকে। দলের প্রয়োজনের সঙ্গে যে বিন্দুমাত্র আপোসও করতে চান না।

নিজের ব্যাটিংয়ের খুঁটিনাটি বা স্পর্শকাতর অনেক কিছু নিয়ে দলের বাইরে কিংবা সংবাদমাধ্যমে কথা বলতে অনেক সময় স্বচ্ছন্দ নন ব্যাটসম্যানরা। তামিম নিজেও তার ব্যাটিং, তার প্রস্তুতি, নিজের মতো করেই করতে ও রাখতে চান। ব্যাটিং নিয়ে অতি আলোচনার প্রভাব যেন তার ব্যাটিংয়ে না পড়ে, সেসব নিয়ে তিনি সবসময়ই সতর্ক। তবে স্ট্রাইকরেট ও ডটবল নিয়ে নিজের ভাবনা যথেষ্ট খোলামেলাভাবেই শোনালেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে।

“আচ্ছা, ১১০-১২০ স্ট্রাইক রেটে ব্যাটিং করলে আমার নিজের কি ভালো লাগবে না?”, স্ট্রাইক রেটের প্রসঙ্গ উঠতেই হেসে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলেন তামিম। উত্তরের অপেক্ষা না করে নিজেই শোনালেন, দলের প্রয়োজনের কথা ভেবে কিভাবে নিজের সহজাত ব্যাটিংয়ের সঙ্গে আপোস করছেন।

“একসময় অফ সাইড ছাড়া খেলতে পারতাম না। লেগে শটই ছিল না। তখনই আক্রমণাত্মক খেলেছি, এখন অনেক শট আছে হাতে। চাইলে শট খেলার চেষ্টা করতে পারি না? আমার কি অ্যাডভেঞ্চারাস হতে ইচ্ছে করে না? কিন্তু আমরা খেলি দলের জন্য। দলের চাওয়ার চেয়ে বড় কিছু নেই।”

নিজে মন খুলে শট না খেলতে পারলেও দলের সাফল্যে অবদান রাখতে পারাটাই তামিমকে তৃপ্তি দেয় দারুণভাবে।

“আমি দেড়শ স্ট্রাইক রেটে খেললাম, কিন্তু দল হারল। লাভ কি? কিন্তু ৬০ স্ট্রাইক রেটে খেলে সেটা দলের জয়ে লাগলেও আমি খুশি। দল চায় আমি যেন ৩০-৩৫ বা ৪০ ওভার পর্যন্ত খেলি। যখন আরেকপাশে উইকেট পড়ে, তখন আরও বেশি করে চায় আমি যেন টিকে থাকি। আমাকে এসব মাথায় রাখতে হয়।”

“দল যদি এখনই আমাকে বলে দেড়শ স্ট্রাইক রেটে খেলতে, আমি অবশ্যই চেষ্টা করব। পঞ্চাশ স্ট্রাইক রেট চাইলেও চেষ্টা করব। গত কয়েক বছরে যদি দেখেন, আমি যেভাবে খেলে রান করেছি, দলের জয়ে সেটিই কাজে লেগেছে। দলের কাছে এটিই কার্যকর মনে হচ্ছে। আমিও সেটিই করার চেষ্টা করে যাচ্ছি।”

এরপরও স্ট্রাইক রেট বাড়ানোর ভাবনা যে তার আসে না, তা নয়। নিজের জন্যই আসে। কিন্তু দলের কথা ভাবতে গিয়ে থমকে যান।

“আমি নিজেও জানি, যদি স্ট্রাইক রেট নব্বইয়ে নিতে পারি, তাহলে দুর্দান্ত হয়। নিজের ব্যাটিংকে যদি পরের ধাপে নিতে চাই, তাহলে স্ট্রাইক রেট বাড়ানো জরুরি। আপনারা যেটা বুঝছেন, আমি কেন বুঝব না? কিন্তু সেটা করতে গিয়ে আমি যদি দলের ক্ষতি করি, সেই স্বার্থপরতা আমি দেখাতে পারব না।”

তবে স্ট্রাইক রেট বাড়ানো মানেই যে চার-ছক্কার ফোয়ারা ছোটানো নয়, সেটি না বোঝার কারণ নেই তামিমের। সিঙ্গেলের হার বাড়িয়েও কিছুটা বাড়ানো যায় স্ট্রাইক রেট। তামিম এখন ম্যাকেঞ্জির সঙ্গে কথা বলছেন সেসব নিয়েই। বলা যতটা সহজ, করা ততটা নয়, সেই বাস্তবতাও তুলে ধরলেন বাংলাদেশের সফলতম ব্যাটসম্যান।

“আমি খুব ভালো করেই বুঝি, আর পাঁচটা সিঙ্গেল যদি বাড়তি নিতে পারি, তাহলেই হয়তো স্ট্রাইক রেট কিছুটা বাড়ল। আরও দুটি ডাবলস যোগ হলে আরও বাড়ল। কিন্তু এই যে বলে ফেললাম, করা কি এত সহজ? পাওয়ার প্লেতে এমনিতেই সিঙ্গেল বের করা কঠিন। পাওয়ার প্লের পরেও যদি বাড়তি কিছু করার কথা ভাবি, আমাকে দলের কথা ভাবতে হয়। কোনো কিছুতে একটু জোর দিতে গিয়ে যদি উইকেট হারানোর ঝুঁকি একটুও বাড়াই, ততে দলের ক্ষতি। সেই শঙ্কা থাকে।”

“আরেকটা ব্যাপারও বুঝতে হবে, ক্রিকেট বা ব্যাটিং, এসব কিন্তু একটা প্রক্রিয়া। আস্তে আস্তে হয়। দলের চাওয়ার সঙ্গে নিজের ব্যাটিং মানিয়ে নিতে আমাকে কিন্তু কষ্ট করতে হয়েছে। ব্যাটিংয়ের দিক থেকে, সাইকোলজিক্যালি মানিয়ে নিতে হয়েছে। অভ্যস্ত হতে সময় লেগেছে। এখন ব্যাটিংয়ে আরও কিছু যোগ করে সেটার সঙ্গে এখনকার ব্যাটিং সমন্বয় করা, সহজ নয়। আর সেটা করতে গিয়ে যদি এখনকার ছন্দও হারিয়ে ফেলি, আমি সময়ে সেটা কাটিয়ে উঠতে পারলেও এখন দলেরই ক্ষতি হবে।”

এরপরও, দলের চাওয়ার সঙ্গে আপোস না করে, ঝুঁকি না বাড়িয়ে, স্ট্রাইক রেট কিছু বাড়ানো যায় কিনা, সেটি গুরুত্ব দিয়েই ভাবছেন তামিম।

“এখন আমি ধীরগতিতে শুরু করলেও কিন্তু পরে ধরে ফেলতে পারি। হয়তো ঝুঁকি না নিয়ে বা নিজের ওপর চাপ না বাড়িয়ে আরেকটু সিঙ্গেল নেওয়া যায়। সেটি নিয়ে কাজ করছি। এখন সম্ভবত ৭৮ থেকে ৮২ স্ট্রাইক রেট থাকছে। দলের চাওয়া মতো খেলেও আমি যদি এটাকে ৮৫-তে নিতে পারি, তাহলেই আমি মনে করি দারুণ কিছু হবে।”