অভাবনীয় প্রাপ্তিতে রোমাঞ্চিত জাহানারা

আভাস মিলেছিল কয়েক দিন আগে। রোমাঞ্চের দোলা শুরু সেদিন থেকেই। সঙ্গে প্রত্যাশার দুরু দুরু কাঁপুনি। সেই আভাস পরে রূপ নিল জোরালো বার্তায়। শুরু হলো রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষা। অবশেষে যখন চূড়ান্ত খবরটিও পেলেন জাহানারা আলম, ডানা মেলে দিতে চাইলেন আকাশে। যা ছিল না তার স্বপ্নের সীমানায়, সেটিই ধরা দিয়েছে সত্যি হয়ে। কিছুদিন আগেও বাংলাদেশের পেসার ভাবতে পারেননি, সুযোগ পেয়ে যাবেন ভারতের টি-টোয়েন্টি লিগে!

আরিফুল ইসলাম রনিআরিফুল ইসলাম রনিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 April 2019, 03:54 PM
Updated : 25 April 2019, 03:55 PM

ভারতের উইমেন্স টি-টোয়েন্টি চ্যালেঞ্জের দল ভেলোসিটি দলে নিয়েছে জাহানারাকে। তার ডানা মেলতে চাওয়া আসলে বাংলাদেশের মেয়েদের ক্রিকেটেরই উড়ে চলা। বাংলাদেশের মেয়েদের মধ্যে তিনিই প্রথম ডাক পেলেন দেশের বাইরের ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে।

আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের হয়ে ৫ উইকেট শিকারের প্রথম কীর্তি ছিল তার। এবার তার হাত ধরেই আরেকটু প্রসারিত হলো মেয়েদের ক্রিকেটে বাংলাদেশের দিগন্ত। উচ্ছ্বসিত জাহানারা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে শোনালেন তার রোমাঞ্চের কথা।

“আমি স্বপ্ন দেখতাম বিগ ব্যাশে খেলব, ইংলিশ কাউন্টিতে খেলব। ভারতের টি-টোয়েন্টি লিগের মাত্রই শুরু, এত দ্রুত সুযোগ পাব, কল্পনায়ও ছিল না। কতটা ভালো লাগছে, বলে বোঝাতে পারব না। আমার জন্য এটি অনেক বড় এক প্রাপ্তি। বাংলাদেশের মেয়েদের ক্রিকেটের জন্যও বড় স্বীকৃতি।”

উইমেন্স টি-টোয়েন্টি চ্যালেঞ্জ গত বছর থেকে শুরু করেছে ভারত। তবে গতবার ছিল বলা চলে পরীক্ষামূলক আয়োজন, দুটি দলকে নিয়ে স্রেফ একটি ম্যাচ খেলানো হয়েছিল। এবার তিন দলকে নিয়ে পূর্ণাঙ্গ টুর্নামেন্টই হতে যাচ্ছে। আইপিএলের মেয়েদের সংস্করণ হিসেবে এটিকে প্রতিষ্ঠিত করতে চায় ভারত।

আগামী ৬ থেকে ১১ মে, জয়পুরে আইপিএলের পাশাপাশিই হবে মেয়েদের টুর্নামেন্ট। গতবারের দুই দল ট্রেইলব্লেজার্স ও সুপারনোভাস থাকছে এবারও, সঙ্গে যোগ হয়েছে ভেলোসিটি।

বাংলাদেশ থেকে এর আগে বিগ ব্যাশে গিয়েছিলেন রুমানা আহমেদ ও খাদিজা তুল কুবরা। তবে সেটি ছিল কেবল দলের সঙ্গে অনুশীলনের সুযোগ। দলে ডাক পাওয়া বা মূল দলের অংশ হওয়া নয়। জাহানারা দল পেলেন পারফরম্যান্স দিয়েই।

প্রতি দলের স্কোয়াড ১৩ জনের, সেখানে বিদেশী চারজন করে। জাহানারার পাশাপাশি বিদেশি ক্রিকেটার হিসেবে এবার সুযোগ পেয়েছেন নিউ জিল্যান্ডের সোফি ডিভাইন, সুজি বেটস, ইংল্যান্ডের নাটালি শিভার, ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্টেফানি টেইলরের মতো তারকা ক্রিকেটাররা।

সুপারনোভস দলের অধিনায়ক হারমানপ্রিত কাউর, ট্রেইলব্লেজার্সের অধিনায়ক স্মৃতি মান্দানা ও ভেলোসিটি দলে জাহানারার অধিনায়ক ভারতীয় কিংবদন্তি মিতালি রাজ। এই ক্রিকেটারদের সঙ্গে খেলার সুযোগ পাওয়াকে বড় প্রাপ্তি মানছেন জাহানারা।

“মাত্র ১২ জন বিদেশী ক্রিকেটার খেলবে, তাদের একজন আমি, এটা আসলে আমার জন্য অভাবনীয়। আমি মনে করি বাংলাদেশের মেয়েদের ক্রিকেট এগিয়ে চলার প্রমাণও। মিতালি রাজসহ আরও অনেক গ্রেট ক্রিকেটারের সঙ্গে খেলতে, তাদের সঙ্গে ড্রেসিং রুম ও অনুশীলনে সময় কাটাতে মুখিয়ে আছি আমি। অনেক কিছু শেখার আছে তাদের কাছ থেকে। যতটা সম্ভব শিখতে চাই আমি।”

বাংলাদেশের হয়ে এখনও পর্যন্ত ওয়ানডেতে ৩০ ও টি-টোয়েন্টিতে ৩৯ উইকেট নিয়েছেন জাহানারা। অনেক দিন থেকেই তিনি দলের সেরা পেসার। উন্নতি করছেন ব্যাটিংয়েও। নেতৃত্ব দিয়েছেন দুটি ওয়ানডে ও ৭টি টি-টোয়েন্টিতে। গত বছর মালেয়েশিয়ায় এশিয়া কাপে বাংলাদেশের অবিস্মরণীয় শিরোপা জয়ে ফাইনালে শেষ বলে জয়সূচক রান দুটি এসেছিল জাহানারার ব্যাট থেকে।

এবার তিনি রাঙাতে চান বিদেশের লিগ। এই টুর্নামেন্টে ক্রিকেটারের ম্যাচ ফি আড়াই হাজার ডলার। আছে অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাও। তবে জাহানারা সেসব নিয়ে ভাবছেনই না।

“এখানে খেলতে পারাই তো বড় সুযোগ। বিসিবিকে ধন্যবাদ জানাই আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য। সবার শুভ কামনা চাই যেন বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশকে ভালোভাবে উপস্থাপন করতে পারি। বাংলাদেশের একজন হিসেবে দেশের ক্রিকেটকে উজ্জ্বল করে তুলে ধরতে নিজেকে উজার করে দেব আমি।”