মুশফিক-মোসাদ্দেকের ব্যাটে শীর্ষে চিটাগং

মুশফিকুর রহিমের ব্যাটে রান আসছেই। চিটাগং ভাইকিংসের জয়রথ ছুটছেই। আরেকটি ম্যাচ জেতানো ইনিংস খেললেন মুশফিক। মোসাদ্দেক হোসেন দেখালেন যেন তার সেরা সময়ের ঝলক। রাজশাহীর চ্যালেঞ্জিং স্কোর অনেকটা অনায়াসে পেরিয়ে গেল চিটাগং।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Jan 2019, 09:24 AM
Updated : 23 Jan 2019, 11:39 AM

দারুণ এক জয়ে বিপিএলের পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে উঠে গেছে চিটাগং ভাইকিংস। বুধবার মিরপুরে রাজশাহী কিংসকে হারিয়েছে তারা ৬ উইকেটে।

৭ ম্যাচে চিটাগংয়ের এটি ষষ্ঠ জয়। ১২ পয়েন্ট নিয়ে তারা টপকে গেল ঢাকা ডায়নামাইটসকে। এক ম্যাচ বেশি খেলে ঢাকার পয়েন্ট ১০। ৮ ম্যাচ খেলে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের পয়েন্টও ১০। তবে পিছিয়ে আছে তারা রান রেটে।

বাজে শুরুর পর রাজশাহীকে আবারও টেনেছেন আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান লরি ইভান্স। ২০ ওভারে তুলতে পারে তারা ১৫৭ রান। চিটাগংয়ের শুরুটাও স্বস্তিময় ছিল না। তবে মুশফিক ও মোসাদ্দেক খুব একটা চাপে পড়তে দেননি দলকে। জিতে যায় তারা দুই বল বাকি রেখে।

রান তাড়ায় ওপেনার ক্যামেরন দেলপোর্তকে চিটাগং হারায় দ্বিতীয় ওভারেই। মোহাম্মদ শাহজাদ অবশ্য পাল্টা আক্রমণ করেছিলেন। কামরুল ইসলাম রাব্বির এক ওভারেই মারেন টানা চারটি চার। কিন্তু বাঁহাতি স্পিনার আরাফাত সানি এক ওভারেই ফেরান শাহজাদ ও তিনে নামা ইয়াসির আলি চৌধুরীকে।

৫ ওভারের মধ্যে তিন উইকেট হারিয়ে চিটাগং তখন বিপদে। চতুর্থ উইকেটে মুশফিক ও নাজিবউল্লাহ জাদরানের জুটিতে কেটে যায় সেই বিপদের রেশ।

১৯ বলে ২৩ রান করা নাজিবউল্লাহকেও ফেরান সানি। তবে চিটাগংয়ের জিততে সমস্যা হয়নি। মুশফিক ততক্ষণে থিতু হয়ে গেছেন। মোসাদ্দেক উইকেটে যাওয়ার পর থেকেই খেলতে থাকেন স্বচ্ছন্দে।

আগের ম্যাচে ৩৩ রান করে নিজেকে ফিরে পাওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন মোসাদ্দেক। এ দিন ছিলেন যেন নিজের সেরা চেহারায়। উইকেটে যাওয়ার পরপরই এক ওভারে দুটি ছক্কা মারেন মিরাজকে। মুশফিক তো ছিলেন অপ্রতিরোধ্য। দুজনের সামনে এমনকি খুব সুবিধা করতে পারেননি মুস্তাফিজও।

এবারের বিপিএলে নিজের তৃতীয় ফিফটিতে ৪৬ বলে ৬৬ রানে অপরাজিত থেকে যান মুশফিক। মোসাদ্দেক অপরাজিত থাকেন ২৬ বলে ৪৩ রানে। মুস্তাফিজকে বাউন্ডারি মেরে তিনিই দলকে এনে দেন জয়।

ম্যাচের মাঝ বিরতিতে মনে হচ্ছিল, ম্যাচটি জমতে পারে আরও বেশি। শুরুর ধাক্কা সামলে ইভান্সের দারুণ ইনিংসে রাজশাহী গড়েছিল লড়াইয়ের মতো স্কোর।

ইভান্সের শুরুটা ছিল ধীরস্থির। রাজশাহীর শুরুটাও ছিল বিবর্ণ। শাহরিয়ার নাফীসকে বাইরে রেখে এ দিন সৌম্য সরকারকে একাদশে ফেরায় তারা। কিন্তু চিত্র বদলায়নি। রবি ফ্রাইলিঙ্কের লেংথ বলে ক্রস ব্যাটে বাজে শটে সৌম্য ফেরেন ৩ রানে।

তিনে নেমে খালেদ হোসেনকে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে ফেরেন মার্শাল আইয়ুব। ৪ ওভার শেষে রাজশাহীর রান ছিল কেবল ২ উইকেটে ৮।

তৃতীয় উইকেটে রায়ান টেন ডেসকাটকে নিয়ে ইভান্স এগিয়ে নেন দলকে। তৃতীয় উইকেটে গড়েন ৫৪ রানের জুটি।

ইভান্স শুরুতে সময় নিয়েছেন, আগলে রেখেছেন উইকেট। রান বাড়ানোর কাজ সেসময় করেছেন ডেসকাট। এক পর্যায়ে ইভান্সের রান ছিল ২০ বলে ১৩। অফ স্পিনার নাঈম হাসানকে ছক্কা মেরে হাত খোলেন তিনি।

সেই নাঈমই পরে আবু জায়েদের বলে ইভান্সের ক্যাচ ছাড়েন ২৮ রানে। ওই ওভারেই অবশ্য সাফল্য পান আবু জায়েদ। তার বলে সীমানায় ইয়াসির আলি চৌধুরীর দুর্দান্ত ক্যাচে ফেরেন ২০ বলে ২৮ রান করা ডেসকাট।

ইভান্স ফিফটি ছুঁয়েছেন ৪৫ বলে। এরপর তুলেছেন ঝড়। আবু জায়েদের এক ওভারে মেরেছেন তিনটি বাউন্ডারি। খালেদের এক ওভারে চার ও ছক্কা। শেষ পর্যন্ত খালেদের বলেই আউট হয়েছেন ৫৬ বলে ৭৪ রান করে।

আরেকপাশে ইয়োঙ্কারের ব্যাট তখন ছিল চুপ হয়ে। মেহেদী হাসান মিরাজ উইকেটে গিয়ে ফ্রাইলিঙ্কের দুটি ফুলটসে মারেন বাউন্ডারি। ফ্রাইলিঙ্কের আরেকটি ফুলটসেই ছক্কা মারেন ইয়োঙ্কার।

শেষ ওভারে আবু জায়েদের প্রথম তিন বলেই একটি ছক্কা ও দুটি চারে দলের রান ইয়োঙ্কার নিয়ে যান দেড়শ ছাড়িয়ে। নিজে অপরাজিত থাকেন ২০ বলে ৩৬ রান করে।

শেষ ৪ ওভারে রাজশাহী তুলেছিল ৬৫ রান। শেষ পর্যন্ত মুশফিক-মোসাদ্দেকের সামনে যথেষ্ট হয়নি সেসব।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

রাজশাহী কিংস: ২০ ওভারে ১৫৭/৫ (ইভান্স ৭৬, সৌম্য ৩, মার্শাল ১, ডেসকাট ২৮, জাকির ৫, ইয়োঙ্কার ৩৬*, মিরাজ ১০*; ফ্রাইলিঙ্ক ৪-০-৩১-১, নাঈম ২-০-১৬-০, খালেদ ৪-০-৩০-০, সানজামুল ৪-০-১৯-১, আবু জায়েদ ৪-০-৪৩-১, দেলপোর্ত ২-০-১৯-০)। 

চিটাগং ভাইকিংস: ১৯.৪ ওভারে ১৫৯/৪ (শাহজাদ ২৫, দেলপোর্ত ১, ইয়াসির ৩, মুশফিক ৬৪*, নাজিবউল্লাহ ২৩, মোসাদ্দেক ৪৬*; কামরুল ৩-০-২৯-০, মিরাজ ৩-০-২৫-১, সানি ৪-০-২২-৩, মুস্তাফিজ ৩.৪-০-৩২-০, কাইস ৪-০-২১-০, সৌম্য ২-০-২০-০)।

ফল: চিটাগং কিংস ৬ উইকেটে জয়ী