টুর্নামেন্টের অন্যতম ফেবারিট কুমিল্লা ভিক্টারিয়ান্সকে ৩৮ রানে হারিয়েছে রাজশাহী কিংস। পয়েন্টের হিসেবে দুই দলই চলে এসেছে সমতায়। ৭ ম্যাচে দুই দলেরই জয় চারটি করে।
মিরপুরে সোমবার ইভান্সের অপরাজিত সেঞ্চুরি ও ডেসকাটের সঙ্গে রেকর্ড জুটিতে রাজশাহী ২০ ওভারে তুলেছিল ৩ উইকেটে ১৭৬ রান। কামরুল ইসলাম রাব্বির ৪ উইকেটে কুমিল্লা থেমেছে ১৩৮ রানে।
ইংল্যান্ডের গত টি-টোয়েন্টি ব্লাস্টে সর্বোচ্চ রান করে নজর কাড়া ইভান্স বিপিএলে হতাশ করছিলেন রাজশাহীকে। এদিন দেখা দিলেন স্বরূপে। ওপেন করতে নেমে শেষ পর্যন্ত ব্যাট করে অপরাজিত ১০৪ রানে। ডেসকাট করেছেন অপরাজিত ৫৯।
চতুর্থ উইকেটে ১৪৮ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়েছেন দুজন। চতুর্থ উইকেটে যা বিপিএলের রেকর্ড। ১২৩ রানের জুটিতে আগের রেকর্ড ছিল ২০১৬ বিপিএলে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের হয়ে মারলন স্যামুয়েলস ও মাশরাফি বিন মুর্তজার।
ডেসকাট পরে বল হাতে নিয়েছেন দুটি উইকেট। শুরু আর শেষে দারুণ বোলিংয়ে কামরুল রাব্বি ৪ উইকেট নিয়েছেন ১০ রানে।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা রাজশাহী শুরুতে এগিয়েছে ধুঁকতে ধুঁকতে। মেহেদি হাসানের বলে স্লগ সুইপ খেলতে গিয়ে বোল্ড হন ওপেনার শাহরিয়ার নাফীস। মেহেদী হাসান মিরাজ ও মার্শাল আইয়ুবকে ফেরান বাঁহাতি স্পিনার লিয়াম ডসন। সপ্তম ওভারে রাজশাহীর রান ছিল ৩ উইকেটে ২৮।
সেখান থেকে ইভান্স ও ডেসকাটের ব্যাটে ঘুরে দাঁড়ায় রাজশাহী। দুজন শুরুতে সময় নিয়েছেন বেশ। তবে পুষিয়ে দিয়েছেন পরে।
১৩ ওভার শেষেও রাজশাহীর রান ছিল ৭০। ইভান্সের রান তখন ৩৬ বলে ৩৭, ডেসকাটের ২৫ বলে ২৫। দুজনই পরে শেষ করেছেন দুর্দান্ত স্ট্রাইক রেটে।
থিসারা পেরেরার করা ১৪তম ওভার থেকে মোড় বদলের শুরু। ওই ওভারে দুই ছক্কা মারেন ইভান্স, ডেসকাট একটি। এরপর আর দুজনকে থামিয়ে রাখা যায়নি। চার-ছক্কা আসতে থাকে নিয়মিতই। ওয়াহাব রিয়াজকেও এক ওভারে দুটি ছক্কা মারেন ইভান্স।
থিসারার করা ইনিংসের শেষ ওভারের প্রথম বলে ডেসকাট স্পর্শ করেন ফিফটি, দ্বিতীয় বলে ইভান্স পূরণ করেন টি-টোয়েন্টিতে তার প্রথম সেঞ্চুরি। তৃতীয় বলে ডেসকাট মারেন ছক্কা, শেষ বলে বাউন্ডারি শেষ করেন ইভান্স।
ইভান্সের ৬২ বলে ১০৪ রানের ইনিংসে চার ৯টি, ছক্কা ৬টি। ডেসকাট ২ চার ও ৩ ছক্কায় ৪১ বলে ৫৯। শেষ ৭ ওভারে রাজশাহী তোলে ১০৬ রান।
দুটি করে চার ও ছক্কায় ২৫ রান করে তামিম ফিরেছেন কামরুল রাব্বিকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে। একটি করে চার ও ছয় মারলেও ইনিংসকে গতি দিতে পারেননি এনামুল হকও।
বিশাল ছক্কায় শুরু করলেও ইমরুল বিদায় নেন কাইস আহমেদের ফুল টসে ক্যাচ দিয়ে। পরের ডেলিভারিতেই এই আফগান লেগ স্পিনারের শর্ট বলে সীমানায় ধরা পড়েন কুমিল্লার বড় ভরসা থিসারা পেরেরা।
আফ্রিদি চেষ্টা করছিলেন ম্যাচ জমিয়ে তোলার। কাইসের এক ওভারে মারেন দুই ছক্কা ও ১ চার। কিন্তু পরের ওভারে দুর্দান্ত সব কাটারে আফ্রিদিকে নাকাল করে ছাড়েন মুস্তাফিজ। আগ্রাসী এই ব্যাটসম্যান ব্যাটে-বলে করতেই ধুঁকছিলেন।
সেই চাপ থেকে আর মুক্তি মেলেনি তাদের। দ্বিতীয় স্পেলে ফেরা কামরুল এক ওভারেই ফেরান আফ্রিদি, লিয়াম ডসন ও সাইফ উদ্দিনকে। রাজশাহী মাঠ ছাড়ে বড় জয় নিয়ে।
টি-টোয়েন্টিতে আগে কখনও ম্যাচে দুটির বেশি উইকেট না পাওয়া কামরুল নেন ৪ উইকেট। তবে তিনি বা ডেসকাট নন, দারুণ সেঞ্চুরিতে ম্যাচের সেরা ইভান্সই।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
রাজশাহী কিংস: ২০ ওভারে ১৭৬/৩ (শাহরিয়ার ৫, ইভান্স ১০৪*, মিরাজ ০, মার্শাল ২, ডেসকাট ৫৯*; সাইফ ৪-০-৩১-০, মেহেদি ১-০-৪-১, ডসন ৪-০-২০-২, ওয়াহাব ৪-০-৪৪-০, আফ্রিদি ৪-০-৩২-০, থিসারা ৩-০-৪৩-০)।
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স: ১৮.২ ওভারে ১৩৮ (তামিম ২৫, এনামুল ২৩, শামসুর ১৫, জিয়াউর ১২, ইমরুল ১৫, ডসন ১৭, থিসারা ০, আফ্রিদি ১৯, সাইফ ০, ওয়াহাব ১*, মেহেদি ১; কামরুল ৩-০-১০-৪, মিরাজ ৩-০-২৭-০, কাইস ৪-০-৪৬-২, মু্স্তাফিজ ৩.২-০-৮-১, সানি ৩-০-২৮-১, ডেসকাট ২-০-১৫-২)।
ফল: রাজশাহী কিংস ৩৮ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: লরি ইভান্স