অসাধারণ সেঞ্চুরিতে ভারতের ত্রাতা পুজারা

টেকনিক ও টেম্পারামেন্ট। মনোযোগ ও নিয়ন্ত্রণ। সবকিছুর প্রতিফলনে আদর্শ এক টেস্ট ইনিংস। ধ্রুপদী ব্যাটিংয়ে চেতেশ্বর পুজারা দেখালেন যেন ব্যাটিং মাস্টারক্লাস। অস্ট্রেলিয়ান বোলিং তোপ সামলে ভারতকে উদ্ধার করলেন বিপর্যয় থেকে।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Dec 2018, 11:43 AM
Updated : 6 Dec 2018, 12:20 PM

অসাধারণ এক সেঞ্চুরিতে বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফির প্রথম দিনটি রাঙালেন পুজারা। প্রথম সেশনে ডুবতে থাকা ভারত তাতে দিন শেষে পেল টিকে থাকার স্বস্তি। বৃহস্পতিবার অ্যাডিলেইড টেস্টের প্রথম দিনে ভারতের রান ৯ উইকেট ২৫০।

দিনের তৃতীয় ওভারে উইকেট গিয়েছিলে পুজারা। রান আউটে ফিরেছেন দিনের শেষ ওভারে। মাঝের সময় জুড়ে ছিলেন ব্যাটিং দৃঢ়তার প্রতিচ্ছবি। ব্যাটিং উইকেটেও সতীর্থদের বাজে শটের মহড়ায় বিপদে পড়েছিল দল। পুজারা রেখেছেন আগলে। ১৬তম টেস্ট সেঞ্চুরিতে ১২৩ রান করেছেন ২৪৬ বলে।

পুজারার ইনিংসটি ছিল যতটা গোছানো, টপ ও মিডল অর্ডারে অন্যদের ব্যাটিং ছিল ততটাই অগোছালো। টস জিতে ভারত নেমেছিল ব্যাটিংয়ে। উইকেট ব্যাটিং বান্ধব, খানিকটা কেবল সহায়তা ছিল শুরুতে। অস্ট্রেলিয়ান পেসাররা অবশ্য দারুণ বোলিং করেছেন। তবে ভারত বিপাকে পড়েছিল ব্যাটসম্যানদের বাজে শট নির্বাচনে।

দুই ওপেনার মুরালি বিজয় ও লোকেশ রাহুল আউট হয়েছেন আলগা ড্রাইভে। ড্রাইভের ফাঁদে পা দিয়েই বিরাট কোহলি ফিরেছেন গালিতে উসমান খাওয়াজার চোখধাঁধানো ক্যাচের শিকার হয়ে। একটু পর ড্রাইভের লোভ সামলাতে না পেরে বিদায় অজিঙ্কা রাহানেরও। ভারতের রান ৪ উইকেটে ৪১।

স্রোতের বিপরীতে তখন দাঁড়ানোর লড়াই করে যাচ্ছেন পুজারা। ছয়ে নেমে রোহিত শর্মা বেছে নিলেন প্রতিআক্রমণের পথ। খেললেন দারুণ কিছু শট। প্যাট কামিন্সের গতির জবাব দিলেন দুর্দান্ত দুটি ছক্কায়।

তবে অতি আগ্রাসনই কাল হলো তার। নাথান লায়নকে উড়িয়ে মেরে অল্পের জন্য ক্যাচ হননি সীমানায়, পান ইনিংসের তৃতীয় ছক্কা। পরের বলেই এই অফ স্পিনারকে আবার উড়িয়ে মারতে গিয়ে ৩৭ রানে আউট হলেন ভীষণ দৃষ্টিকটু শটে।

তবে ৪৫ রানের ওই জুটিতেই ঘুরে দাঁড়ানোর শুরু। ষষ্ঠ উইকেটে রিশাভ পান্তের সঙ্গে পুজারা যোগ করলেন ৪১ রান। রোহিতের পথে হেঁটে পান্তও খেলছিলেন সহজাত আগ্রাসী ঢংয়ে। ২ চার ও ১ ছক্কায় তার ২৫ রানের ইনিংস শেষ হয়েছে লায়নের দারুণ এক ডেলিভারিতে।

সপ্তম উইকেটে ভারত পায় ইনিংসের একমাত্র ফিফটি জুটি। পুজারা ততক্ষণে জমে গেছেন, তাকে দারুণ সঙ্গ দেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন। দুজনে যোগ করেন ৬২ রান। অস্ট্রেলিয়ার মাথাব্যথা হয়ে ওঠা এই জুটি ভাঙেন কামিন্স। ২৫ রানে ফিরিয়ে দেন অশ্বিনকে।

লোয়ার অর্ডারদের নিয়ে পুজারার লড়াই চলতেই থাকে। ৮৯ থেকে জশ হেইজেলউডকে পরপর দুই বলে ছক্কা ও চারে ৯৯, পরের ওভারে সিঙ্গেলে সেঞ্চুরি স্পর্শ ২৩১ বলে। ইনিংসটির পথে পেরিয়ে যান ৫ হাজার টেস্ট রানও।

সেঞ্চুরির পর টানা দুই বলে চার ও ছক্কা মারেন মিচেল স্টার্ককে। কোনো বোলারের যেন সাধ্য ছিল না তাকে থামানোর। শেষ পর্যন্ত থামলেন কামিন্সের অবিশ্বাস্য ফিল্ডিংয়ে। মিড অনে ঠেলেই পুজারা ছুটেছিলেন রান নিতে। ডান দিকে ছুটে বল ধরে শূন্যে ভেসেই কামিন্স সরাসরি থ্রোতে বল লাগান স্টাম্পে। পুজারা তখন ক্রিজ থেকে কয়েক ইঞ্চি দূরে।

ওই রান আউট দিয়েই দিনের খেলার সমাপ্তি। দিনশেষে এগিয়ে অস্ট্রেলিয়াই। তবে সকালের হতাশার ছবি মুছিয়ে দিয়ে বিকেলে স্বস্তি কিছুটা পাচ্ছে ভারত।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

ভারত ১ম ইনিংস: ৮৭.৫ ওভারে ২৫০/৯ (রাহুল ২, বিজয় ১১, পুজারা ১২৩, কোহলি ৩, রাহানে ১৩, রোহিত ৩৭, পান্ত ২৫, অশ্বিন ২৫, ইশান্ত ৪, শামি ৬*; স্টার্ক ২/৬৩, হেইজেলউড ২/৫২, কামিন্স ২/৪৯, লায়ন ২/৮৩, হেড ০/২)।