অভিষেক টেস্ট ভুলে যেতে চান আরিফুল

টেস্টের যা ফল, তাতে ম্যাচটি ভুলে যাওয়ার মতোই। কিন্তু আরিফুল হকের তো এটি ছিল অভিষেক টেস্ট। ব্যাটিংয়ে দলের সেরা পারফরমারও ছিলেন তিনিই। এই টেস্ট তার মনে আলাদা জায়গা নিয়েই থাকার কথা। আরিফুল তবুও ভুলে যেতে চান অভিষেক টেস্ট। প্রথম টেস্টের পারফরম্যান্সে স্বস্তি কিছুটা থাকলেও স্বপ্ন তার অনেক বড়। শুরুর স্বস্তিকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যেতে চান স্বপ্ন ছোঁয়ার পথে।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 Nov 2018, 12:14 PM
Updated : 9 Nov 2018, 06:07 PM

অপরাজিত ৪১ ও ৩৮, খুব বড় কোনো স্কোর নয়। তবে ম্যাচের প্রেক্ষাপটে খুব খারাপ ছিল না আরিফুলের অবদান। প্রথম ইনিংসে ছিলেন দলের সর্বোচ্চ স্কোরার, দ্বিতীয় ইনিংসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। দুই ইনিংসেই নেমেছেন সাত নম্বরে, ব্যাট করতে হয়েছে লোয়ার অর্ডারদের দিয়ে। প্রথম ইনিংসে অপরাজিত থেকে যান। দ্বিতীয় ইনিংসেও সঙ্গীর অভাবে বিকল্প ছিল সামান্যই, শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হয়েছেন শট খেলতে গিয়ে।

অভিষেকে নজরকাড়া কিছু করার সুযোগ না হলেও যেটুকু করতে পেরেছেন, তাতে আরিফুল পাচ্ছেন সামনে এগোনোর আত্মবিশ্বাস। মিরপুর টেস্টের আগে দলের প্রথম অনুশীলন সেশনের আগে শুক্রবার সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে শোনালেন নিজের ভেতরের পরিবর্তনের কথা।

“প্রথম টেস্ট ভালোই গিয়েছে আসলে। আত্মবিশ্বাস বেড়েছে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বোলাররা বাজে বল দেবে না, সেটির জন্য অপেক্ষা করতে হবে। যেটা বোঝা দরকার, সেটি বুঝতে পেরেছি। এই পর্যায়ে খেললে চিন্তা-ভাবনায় যে পরিবর্তন আসে, সেটা আমার হয়েছে। চিন্তা-ভাবনায় পরিবর্তন এসেছে।”

রানের চেয়েও বড় ব্যাপার ছিল, যেভাবে তিনি ব্যাট করেছেন। টি-টোয়েন্টি দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক, বড় শট খেলতে পারেন, এসব কারণে তাকে স্রেফ সীমিত ওভারের উপযোগী ক্রিকেটারের তকমা লাগিয়ে দিচ্ছিলেন অনেকে। অথচ ঘরোয়া ক্রিকেটে তার পারফরম্যান্স, তার ধারাবাহিকতা বেশি ভালো বড় দৈর্ঘ্যের ক্রিকেটেই। টেস্ট দলে তার ডাক পাওয়া, অভিষেক হয়ে যাওয়া নিয়েও বিতর্ক হয়েছে অনেক। প্রথম টেস্ট তাই আরিফুলের জন্য ছিল বড় পরীক্ষা। নিজেকে প্রমাণ করতে না পারলে আর সুযোগ পেতেন কিনা, সেই সন্দেহ ছিল যথেষ্টই।

সাতে নেমে বড় স্কোরের সুযোগ তিনি পানি সঙ্গীর অভাবে। তবে নিজের ছাপটুকু রাখতে পেরেছেন। প্রথম ইনিংসে জুটি গড়ে তোলার সুযোগ ছিল। ৯৬ বল খেলেছিলেন, বাউন্ডারি ছিল মাত্র তিনটি। দ্বিতীয় ইনিংসে শট খেলা ছাড়া খুব বেশি করার ছিল না। ৩৭ বলের ইনিংসে চার ছিল ৪টি, ছক্কা দুটি।

যতটুকু করার ছিল, করেছেন আরিফুল। দল নির্বাচন নিয়ে প্রশ্নের জবাব অন্তত দিতে পেরেছেন সীমিত সুযোগে। তবে ব্যক্তিগতভাবে তৃপ্ত নন এতটুকুতেই। অভিষেকের স্বস্তিকে তাই ভেতরে বাসা বাঁধতে দিতে চান না। স্বপ্ন তার অনেক বড়।

“এখনও ওরকম কিছু করিনি। আমার চিন্তা বড় কিছু করার। সেসবের শতভাগ না পারি, ৯০ ভাগ যেন যেতে পারি। টেস্ট ম্যাচে রান করেছি, ওটা ভুলে যেতে চাচ্ছি। যা খেলেছি, ভুলে যাচ্ছি। সামনে কিভাবে ভালো করা যায়, সেটাই মূল ভাবনা।”

“আমার স্বপ্ন ছিল টেস্ট খেলার। আমি চাই যে দীর্ঘদিন টেস্ট খেলতে বা জাতীয় দলে থাকতে। সব ফরম্যাটেই খেলার ইচ্ছা আছে। আমার চাওয়া হলো, যে ফরম্যাটে যেভাবে দরকার, সেভাবেই খেলব।”

ঘরোয়া ক্রিকেটে তার পরিচয় অলরাউন্ডার। বড় দৈর্ঘ্যের ম্যাচেও নতুন বল হাতে নিয়েছেন অনেকবার, প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে উইকেট আছে ১০০টি। তবে টেস্ট অভিষেকে দেখা যায়নি ততটা ধার। আরিফুল জানালেন, বোলিংয়ে আরও উন্নতির চেষ্টা করে যাচ্ছেন তিনি।

“বোলিং নিয়ে কাজ করছি। আসলেও ওটা আমার বোলিংয়ের জন্য মানানসই উইকেট ছিল না (সিলেটে)। আমার বোলিংয়ের উপযোগী উইকেট হলে হয়তো আরও বোলিং করতাম। আমি জানি আরও ভালো করতে হবে। ঘরোয়া ক্রিকেটে, বিপিএলে যদি আরও ভালো করতে পারি, তাহলে জাতীয় দলেও বোলিংয়ের সুযোগ পাব।”

সিলেটে প্রথম ইনিংসে ৪১ রানে অপরাজিত থাকা অবস্থায় যখন রান আউট হলেন শেষ ব্যাটসম্যান আবু জায়েদ চৌধুরী, আরিফুলকে দেখা গেছে বেশ ক্ষুব্ধ। জানালেন, তার চাওয়া ছিল দলের জন্য আরও কিছু রান বাড়ানো। সেবার পারেননি, সুযোগ পেলে করতে চান সামনে।

“ওভারের শেষ বলে সিঙ্গেল নিতে চেয়েছিলাম। ভেবেছিলাম শেষ দিকে মেরে-টেরে কিছু রান বাড়াতে পারতাম দলের। ভুল বোঝাবুঝি হয়ে গেল। আসলে আমার ভেতরে বড় টার্গেট আছে। চেষ্টা করব সামনে যেন সেই টার্গেট পূরণ করতে পারি।