ফখর-সরফরাজের ৬ রানের আক্ষেপ

রানসংখ্যায় নড়চড় নেই একটুও, কিন্তু উইকেট পড়ল টপাটপ। নাথান লায়নের স্পিনে একই রানে চার উইকেট হারিয়ে টালমাটাল পাকিস্তান। সেই ধ্বংসস্তুপে দাঁড়িয়েই অসাধারণ এক জুটি গড়লেন ফখর জামান ও সরফরাজ আহমেদ। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দুজনকে পুড়তে হলো একই আক্ষেপে। দুজনই আউট হয়েছেন ৯৪ রানে!

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 Oct 2018, 01:57 PM
Updated : 16 Oct 2018, 01:57 PM

ওই জুটি ছাড়া পাকিস্তানের ইনিংসে ছিল না বড় কিছু। আবু ধাবি টেস্টের প্রথম ইনিংসে পাকিস্তান গুটিয়ে গেছে ২৮২ রানে। ব্যাটিংয়ের শুরুটা ভালো করতে পারেনি অস্ট্রেলিয়াও। মঙ্গলবার প্রথম দিন শেষ করেছে তারা ২ উইকেটে ২০ রানে।

ফখর ও সরফরাজ, সেঞ্চুরিটা জরুরি ছিল দুজনের জন্যই। ফখরের এই টেস্ট খেলারই কথা ছিল না। কিন্তু সাদা পোশাকে অভিষেকের সুযোগ হলো চোটের কারণে ইমাম-উল-হক না খেলায়। অভিষেকে দারুণ এক সেঞ্চুরির দুয়ারেও চলে গিয়েছিলেন বাঁহাতি ওপেনার। কিন্তু পারলেন না।

সেই ২০১৪ সালে চার ম্যাচের মধ্যে তিনটি সেঞ্চুরি করেছিলেন সরফরাজ। টেস্ট ক্যারিয়ারে আর নেই কোনো সেঞ্চুরি। দল ও নিজের বাজে ফর্মে গত কিছুদিন ধরেই আছেন প্রচণ্ড চাপে। বিপর্যয়ের মধ্যে রান করায় স্বস্তি পাবেন। তবে এবারও ঘোচাতে পারলেন না দীর্ঘ সেঞ্চুরি খরা।

টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা পাকিস্তান দিনের তৃতীয় ওভারে হারায় মোহাম্মদ হাফিজকে। আগের টেস্টের সেঞ্চুরিয়ান এবার ৪ রানে ফিরেছেন শর্ট লেগে অবিশ্বাস্য এক ক্যাচে। মিচেল স্টার্কের বলে ফ্লিক করেছিলেন হাফিজ। তার ব্যাটে লেগে তুমুল গতিতে ছুটে বল, শর্ট লেগে দারুণ রিফ্লেক্স দেখালেন মার্নাস লাবুশেন। বল তার থাই প্যাডে লেগে, হাঁটুতে পড়ে, পায়ে গড়িয়ে জমল হাতে!

ফখর ও আজহার আলি মিলে সেই ধাক্কা অনেকটা সামাল দিয়েছিলেন। দ্বিতীয় উইকেটে ৫১ রানের জুটির পরই পাগলাটে কয়েকটি মিনিট।

বেরিয়ে এসে লায়নকে ফিরতি ক্যাচ দিলেন আজহার। পরের বলেই সিলি পয়েন্টে ক্যাচ দিলেন হারিস সোহেল। হ্যাটট্রিক হয়নি লায়নের, তবে এক বল পরই সিলি পয়েন্টে ক্যাচ দিলেন আসাদ শফিক। আরেক বল পর বেরিয়ে এসে খেলতে গিয়ে বোল্ড বাবর আজম। ১ উইকেটে ৫৭ থেকে পাকিস্তান হয়ে গেল ৫ উইকেটে ৫৭!

সেই নড়বড়ে ইনিংসকে থিতু করেন ফখর ও সরফরাজ। চাপের মধ্যেও বলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রান করতে থাকেন সরফরাজ। নিজের সহজাত আক্রমণাত্মক ব্যাটিংকে দমিয়ে রেখে ফখর খেলেছেন পরিস্থিতির দাবি মিটিয়ে। দুর্দান্ত জুটিতে দলকে এগিয়ে নেন দুজন।

এই জুটি ভাঙে চা বিরতির ঠিক আগে। আগের টেস্টের মতো এবারও জুটি ভাঙার নায়ক লেগ স্পিনিং অলরাউন্ডার লাবুশেন। তার দারুণ ডেলিভারিতে ১৯৮ বলে ৯৪ রানে শেষ ফখরের অভিষেক ইনিংস।

লাবুশেন থামেননি জুটি ভেঙেই। দারুণ এক ডেলিভারিতে ফিরিয়েছেন বিলাল আসিফকে। আর উপহার পেয়েছেন সরফরাজের উইকেট। হুট করেই মেজাজ হারিয়ে এলোমেলো শটে উড়িয়ে মারতে গেলেন পাকিস্তান অধিনায়ক। খেসারত দিলেন সেঞ্চুরি হারিয়ে। ৯৪ করেছেন ১২৯ বলে।

এরপর লোয়ার অর্ডারে ইয়াসির শাহর ৩ চার ও ১ ছক্কায় ২৮ রানে পাকিস্তান যেতে পারে ২৮২ পর্যন্ত। লায়ন নিয়েছেন সেই চার উইকেটই। পাশাপাশি তিন উইকেট নিয়ে লাবুশেন রেখেছেন উজ্জ্বল ভবিষ্যতের ইঙ্গিত।

এমন বোলিংয়ের পর দিনটা অস্ট্রেলিয়া শেষ করতে পারেনি স্বস্তিতে। আগের টেস্টে দুর্দান্ত খেলা উসমান খাওয়াজ ফিরে গেছেন মোহাম্মদ আব্বাসের লেগ স্টাম্পের বলে, কিপার সরফরাজের দুর্দান্ত ক্যাচে। অভিষিক্ত পেসার মির হামজা বা ইয়াসির শাহ এ দিন কিছু করতে পারেননি। তবে দিনের শেষ বলে আব্বাস ফিরিয়েছেন নাইটওয়াচম্যান পিটার সিডলকেও।

প্রথম দিনেই পড়েছে ১২ উইকেট, আবু ধাবিতে টেস্টের প্রথম দিনে যা রেকর্ড।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

পাকিস্তান ১ম ইনিংস: ৮১ ওভারে ২৮২ (ফখর ৯৪, হাফিজ ৪, আজহার ১৫, হারিস ০, শফিক ০, বাবর ০, সরফরাজ ৯৪, বিলাল ১২, ইয়াসির ২৮, আব্বাস ১০, হামজা ৪*; স্টার্ক ২/৩৭, সিডল ০/৩৯, মিচেল মার্শ ১/২৭, লায়ন ৪/৭৮, হল্যান্ড ০/৪৫, লাবুশেন ৩/৪৫)।

অস্ট্রেলিয়া ১ম ইনিংস: ৭ ওভারে ২০/২ (খাওয়াজা ৩, ফিঞ্চ ১৩*, সিডল ২; আব্বাস ২/৯, হামজা ০/৪, ইয়াসির ০/৭)।