সম্ভাবনার দুয়ারে মুমিনুল-শান্ত

দুজন দুই প্রজন্মের। দুজনের ক্যারিয়ারের গল্পটাও দুই রকমের। তবে একটা জায়গায় দুজনই এখন দাঁড়িয়ে একই দুয়ারে। মুমিনুল হক ও নাজমুল হোসেন শান্ত পা ফেলতে যাচ্ছেন নতুন চ্যালেঞ্জের পথে। রঙিন পোশাকে তাদের আলোর ঝলকানি দেখতে আগ্রহ ভরে তাকিয়ে বাংলাদেশ কোচ স্টিভ রোডস।

ক্রীড়া প্রতিবেদক দুবাই থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Sept 2018, 03:56 PM
Updated : 18 Sept 2018, 03:56 PM

এই সম্ভাবনা এসেছে অবশ্য অনেক বড় মূল্য চুকিয়ে। চোটের কারণে ছিটকে গেছেন দেশের সফলতম ব্যাটসম্যান তামিম ইকবাল। চোটের কারণেই বৃহস্পতিবার আফগানিস্তানের বিপক্ষে বিশ্রাম পেতে পারেন প্রথম ম্যাচের নায়ক মুশফিকুর রহিম। তামিমের জায়গায় ওয়ানডে অভিষেক প্রায় নিশ্চিত শান্তর। আর মুশফিক না খেললে কপাল খুলতে পারে মুমিনুলের।

গত ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের সর্বোচ্চ রান স্কোরার ছিলেন শান্ত। তরুণ বাঁহাতি ব্যাটসম্যানকে এবার স্কোয়াডে রাখা হয়েছে তামিমের চোট সমস্যা মাথায় রেখেই। সেই চোট ঝামেলা না বাধালেও নতুন পাওয়া চোটে ছিটকে গেছেন তামিম। সামনে এসেছেন শান্ত। গত বছরের জানুয়ারিতে কয়েকজনের ইনজুরিতে হুট করে একটি টেস্ট খেলে ফেলেছিলেন। অনেক দিন থেকেই দুয়ারে কড়া নাড়তে থাকা এই ব্যাটসম্যান এবার ওয়ানডেতে পাচ্ছেন নিজেকে মেলে ধরার সুযোগ।

মুশফিক না খেললে মুমিনুল ও আরিফুল হকের একজন ঢুকবেন একাদশে। আপাতত মিলছে মুমিনুলের ব্যাটে ভরসার ওজন রাখার ইঙ্গিত। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে ম্যাচের আগের দিন।

মুমিনুল ফিরলে তার জন্যও এটি একরকম শুরুর মতোই। ২৬টি ওয়ানডে খেলেছেন বটে, তবে শেষটি সেই ২০১৫ বিশ্বকাপে। গত কয়েক বছরে তার ওয়ানডে ক্যারিয়ারে জমেছে ধুলোর স্তর। একদিক থেকে তাই মুমিনুলের কাজটা বেশি কঠিন। তাকে লড়াই করতে হবে নিজের অতীতের সঙ্গে। নিজেকে চেনাতে হবে নতুন করে।

কোচ রোডস রোমাঞ্চিত দুজনকে নিয়েই। বাংলাদেশের কোচ হয়ে আসার পর শুরুর সময়টাতেই মুমিনুলকে বেশ মনে ধরেছিল কোচের। তবে দল সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলোর খবর, ক্রমে তার আগ্রহ বেশি জমেছে শান্তকে ঘিরেই। বাংলাদেশের ইংলিশ কোচের সবচেয়ে প্রিয় ছাত্রদের একজন ২০ বছর বয়সী শান্ত।

সম্ভাবনার কথা বলার আগে কোচের কণ্ঠে অবশ্য বিষাদের ছোঁয়া। তবে সেই অপ্রাপ্তিকেই কোচ রূপ দিতে চান নতুন প্রাপ্তিতে।

“তামিমকে এই টুর্নামেন্টে আর না পাওয়া দেশের জন্য ও দলের মনোবলের জন্য বড় ধাক্কা। তবে জীবনে একটি দরজা কারও জন্য বন্ধ হওয়া মানে আরেকজনের জন্য দরজা খুলে যাওয়া। অনেকেই আছে খেলাধুলায় নিজের নাম গড়তে চায় কিন্তু সুযোগ সেভাবে পায় না। তামিমের চোট মানে এখানে অন্য কেউ সুযোগ পাবে।”

সেই ‘অন্য কেউ’ এখানে আপাতত শান্ত। যদিও ওপেনিংয়ে তামিমের যোগ্য একজন সঙ্গী খোঁজার চলমান অভিযানে বার কয়েক কথা হয়েছে মুমিনুলকে বাজিয়ে দেখার। তবে বিকল্প ওপেনার হিসেবে স্কোয়াডে জায়গা পাওয়া শান্তই আপাতত এগিয়ে। তামিমের ঘাটতি পুষিয়ে দেওয়া সম্ভব নয়, তবে শান্তর মাঝে কোচ দেখছেন অমিত সম্ভাবনা।

“তামিম নেই, তবে মুমিনুল ও শান্তকে পেয়ে আমরা যথেষ্টই সৌভাগ্যবান, যারা তামিমের জায়গায় খেলতে পারে। তামিমের অভাব পূরণ করা মোটেও সহজ নয়। তবে ওরা দুজনই দারুণ সম্ভাবনাময়।”

“শান্ত আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খুব বেশি খেলেনি। মুমিনুলের চেয়ে ওর ব্যাপারটি আলাদা। ওর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ব্যাপার হলো প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাস। গত মাস তিনেকে নিজের খেলাও বেশ বিকশিত করেছে।”

ওপেনিংয়ে শেষ পর্যন্ত শান্ত সুযোগ পেলে মুমিনুলকে অপেক্ষায় থাকতে হবে মুশফিক না খেললে তার বদলি হিসেবে সুযোগ পাওয়ার আশায়। মুমিনুলকে আবার রঙিন পোশাকে দেখতে রোমাঞ্চ নিয়ে অপেক্ষায় কোচও।

“মুমিনুল টেস্ট ক্রিকেটে দারুণ সাফল্য পেয়েছে। ওর রেকর্ড দুর্দান্ত। তার মানে সে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খেলতে পারে। আমি খুবই খুশি যে সে ওয়ানডে স্কোয়াডে নিজের জায়গা আদায় করে নিয়েছে। কারণ ভালো ক্রিকেটার হলে সব ফরম্যাটেই ভালো খেলার কথা। আমার বিশ্বাস সে পারবে।”

বাংলাদেশের ওয়ানডে দলে তামিমের ভূমিকা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। ইনিংস ভালোভাবে শুরু করাই শুধু নয়, একটা প্রান্ত আগলে দলকে লম্বা সময় ভরসা জুগিয়েও যেতে হয় তাকে। দল তার দিকে তাকিয়ে থাকে বড় ইনিংসের জন্য। সেই ভূমিকা পালন করবে কে? শান্তর অভিষেক। লিটন দাস এখনও নিজের জায়গাই পাকা করতে পারছেন না।

দুই ওপেনারের সম্ভাব্য ভূমিকা নিয়ে তাই থাকছে কৌতুহল। রোডস ব্যপারটিকে খুব জটিল করে দেখতে চাইছেন না।

“আমি তাকে (তামিমের বদলি ওপেনার) তামিমের মতো ব্যাট করতে বলব না, তাকে নিজের মতোই ব্যাট করতে বলব। শান্ত হোক বা মুমিনুল, নিজেদের খেলাটাই খেলুক। ওয়ানডেতে শুরুটা ভালো করা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে মাঝের সময়টুকু। এই সময়টায় উইকেট হারাতে থাকলে দলকে ভুগতে হয়।”

“এখন শান্ত বা মিনি (মুমিনুল) যদি ভালো শুরু করতে পারে, নিজেদের কাজ ওরা জানে। পাওয়ার প্লের সর্বোচ্চ ফায়দা নিতে হবে। এমনও হতে পারে, লিটনের দায়িত্ব থাকল লম্বা ইনিংস খেলা। তবে সবাই জানে কিভাবে খেলতে হবে। দলের পরিকল্পনার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার মত ক্রিকেটার থাকা গুরুত্বপূর্ণ।”

শেষ পর্যন্ত ওপেনিং হোক বা মিডল অর্ডারে, শান্ত হোক বা মুমিনুল, রোডস দুজনকেই দেখতে চান নির্ভার ক্রিকেট খেলতে।

“ওদের প্রতি আমার বার্তা থাকবে নির্ভার থাকা। মিনি ভাবতে পারে যে দলে ফিরে তাকে কিছু প্রমাণ করতে হবে। অতিরিক্ত চেষ্টা করলে সেটি হবে সবচেয়ে বড় সমস্যা। নির্ভার থেকে চ্যালেঞ্জ উপভোগ করতে হবে। খুব ভালো ব্যাটসম্যান হতে পারে সে।”

“শান্তর ক্ষেত্রেও ব্যাপারটি একই। অভিষেকে কিছু করার চাপ নিতে পারে সে। হয়ত একটু নার্ভাসও থাকবে এমন বড় টুর্নামেন্টে খেলতে নেমে। কিন্তু সে যদি নির্ভার থেকে উপভোগ করতে পারে, আমার বিশ্বাস সেও খুব ভালো করতে পারে।”