এর মধ্যেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের স্বাদ কিছুটা পেয়েছেন আরিফুল। দেশের মাটিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজে খেলেছেন দুটি টি-টোয়েন্টি। খুব বেশি কিছু করার সুযোগ যদিও ছিল না সেভাবে। এরপর শ্রীলঙ্কায় ত্রিদেশীয় সিরিজের স্কোয়াডে থাকলেও খেলার সুযোগ পাননি।
গত বিপিএলে খুলনা টাইটানসের হয়ে নজরকাড়া পারফরম্যান্সই মূলত খুলে দিয়েছিল বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি দলের দুয়ার। ব্যাট হাতে বড় শট খেলার সামর্থ্যের কারণে আপাতত টি-টোয়েন্টি দলের বিবেচনায়ই আছেন আরিফুল। তবে অন্য সংস্করণগুলোতেও বিবেচনার দাবি রাখছে তার ঘরোয়া ক্রিকেটের পারফরম্যান্স।
তবে এই রেকর্ডের চেয়ে নির্বাচকদের বেশি আশা জাগাচ্ছে তার সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স। বিসিএলের সদ্য সমাপ্ত পঞ্চম রাউন্ডে মিরপুরে সবুজ উইকেটে করেছেন দারুণ এক সেঞ্চুরি। আগের রাউন্ডেই নিয়েছিলেন চার উইকেট। বিসিএলে এবার সেঞ্চুরি করেছেন আরও একটি। উত্তরাঞ্চলের হয়ে দক্ষিণাঞ্চলের বিপক্ষে ৮৩ বলে করেছিলেন অপরাজিত ১০৩। চার উইকেটও নিয়েছেন আরও এক ম্যাচে।
এবার বিসিএলে এখনও পর্যন্ত ৫৭ গড়ে তার রান ৩৪২। উইকেট ১৫টি, এখনও পর্যন্ত টুর্নামেন্টের তৃতীয় সর্বোচ্চ। পেসারদের মধ্যে সর্বোচ্চ।
জাতীয় দলের ক্যাম্প ও শ্রীলঙ্কা সফর মিলিয়ে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে প্রাইম ব্যাংকের হয়ে এবার সেভাবে সুযোগ পাননি। ৫ ম্যাচ খেলে তবু উইকেট নিয়েছেন পাঁচটি। ব্যাটিং আরও ভালো হতে পারত। এরপরও মোহামেডানের বিপক্ষে ৩৬ রানে ৬ উইকেট পড়ার পর নেমে খেলেছেন ৮৭ রানের ইনিংস।
এর আগে এবার জাতীয় লিগেও করেছেন দুটি সেঞ্চুরি। ব্যাটিং-বোলিংয়ে উন্নতি তাই প্রতীয়মান দারুণভাবেই। ফিল্ডিংয়ে সীমানায় তিনি নির্ভরতা, উন্নতি হয়েছে স্লিপ ক্যাচিংয়ে। বিসিএলের ম্যাচে বৃহস্পতিবার শের-ই-বাংলায় মুমিনুল হকের যে ক্যাচ নিয়েছেন স্লিপে, বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে এমন বিশ্বমানের স্লিপ ক্যাচ বিরল।
নির্বাচকের ভাবনা
আরিফুলের পরিশ্রম, একাগ্রতা ও উন্নতি চোখে পড়েছে জাতীয় নির্বাচকদেরও। নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার যে নিয়ত চেষ্টা এই অলরাউন্ডারের, সেটিই সবচেয়ে বেশি মুগ্ধ করেছে অন্যতম নির্বাচক হাবিবুল বাশারকে।
“সহজাত সামর্থ্য যতটা ছিল, সেটি অনেক বাড়িয়েছে পরিশ্রম করে। খুব কষ্ট করে ছেলেটা। অনেক দিন ধরেই কিন্তু খেলছে, তবে একটা সময় পর্যন্ত আলোচনায় ছিল না। পরিশ্রম করেই নিজেকে এই জায়গাটায় তুলে এনেছে। ওকে নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, জাতীয় দলে বিবেচিত হচ্ছে, এটাও ওর নিষ্ঠার একটা পুরস্কার।”
এখনই অবশ্য সব সংস্করণের জন্য আরিফুলকে প্রস্তুত মনে করছেন না হাবিবুল। সময় নিতে চান আরও, দেখতে চান আরও কিছুদিন। তবে ২৫ বছর বয়সী আরিফুল যে ঠিক পথেই আছেন, সেটিও জানিয়ে দিলেন।
“একটা ব্যাপার ওর পক্ষে আছে, বয়স। খুব তরুণ নয়, আবার বয়স বেশিও নয়। ঘরোয়া ক্রিকেট খেলে বেশ পোক্ত হয়ে উঠেছে। নির্বাচক হিসেবে আমরা খুশি যে একজন ক্রিকেটার এ রকম পরিশ্রম করে উঠে আসছে, যাকে আমরা ভবিষ্যতের জন্য ভাবতে পারি। তবে অবশ্যই এই প্রচেষ্টা, উন্নতির ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে হবে।”
একজন কার্যকর পেস বোলিং অলরাউন্ডারের জন্য বাংলাদেশ ক্রিকেটের যে দীর্ঘদিনের হাহাকার, সেটি আরও তীব্র হচ্ছে বিশ্বকাপ ঘনিয়ে আসার সঙ্গে। দরকার ইংল্যান্ডের মাটিতে ২০১৯ বিশ্বকাপে দলীয় সমন্বয়কে পূর্ণতা দিতে পারে এমন একজন অলরাউন্ডারের। গত কিছুদিন ধরেই অবশ্য নির্বাচকদের বাজি তরুণ অলরাউন্ডার মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন। দলের চাওয়ায় এখনও সাইফই এগিয়ে। তবে হাবিবুল আশার পথ দেখালেন আরিফুলের সামনেও।
“জাতীয় দলে পেস বোলিং অলরাউন্ডার হিসেবে আমরা আসলে এমন একজনকে চাই যে বোলিং প্রধান। সাইফ উদ্দিন এখানে এগিয়ে। ব্যাটিংয়ে অবশ্যই আরিফুল এগিয়ে। বোলিংয়ে আরিফুলের গতি খুব বেশি নয়। তবে এটাও ঠিক, খুব বিপজ্জনক মনে না হলেও উইকেট নেওয়ার প্রবণতা আছে ওর।”
“আসলে এভাবে তুলনা না করাটাই ঠিক। দুজনই নিজেদের জায়গা করে নিতে পারে। যেটি বললাম, ক্যাম্প বা ‘এ’ দলে আরিফুল থাকবে। সেখানে দেখা হবে। আপাতত যদি ওকে বিকল্প হিসেবেও ভাবি, এরকম একজন বিকল্প আমাদের প্রস্তুত আছে প্রয়োজনে যাকে পরখ করে দেখতে পারি, এটাও দেশের ক্রিকেটের জন্য ভালো খবর।”