রাজ্জাকের প্রত্যাবর্তনে নাঈমের শুরু

নাঈম হাসান মাঠে নেমে গিয়েছিলেন বেশ আগেই। আব্দুর রাজ্জাক নামলেন আরেকটু পরে। তবে রোববার দুপুরে চট্টগ্রামে দলের অনুশীলনে দুজনের ঠিকানা হলো একই নেটে। বাংলাদেশ ক্রিকেটের দুটি প্রজন্মের মেলবন্ধনও যেন রচিত হলো জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে। যেখানে প্রত্যাবর্তনের অপেক্ষায় ৩৫ বছর বয়সী রাজ্জাক, সেখানেই শুরুর অপেক্ষায় ১৭ বছর বয়সী স্বপ্নাতুর নাঈম।

আরিফুল ইসলাম রনিআরিফুল ইসলাম রনিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 Jan 2018, 01:11 PM
Updated : 29 Jan 2018, 01:11 PM

২০০২ সালের ১৬ জানুয়ারি, খুলনার হয়ে যশোরে যখন প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে পা রাখলেন রাজ্জাক, চট্টগ্রামে নাঈমের তখনও ‘হাঁটি হাঁটি পা পা’ শুরু হয়নি। বয়স তখন সবে পেরিয়েছে এক বছর। রাজ্জাকের আন্তর্জাতিক অভিষেকের সময় নাঈমের বয়স সাড়ে তিন বছর। সেই দুজনই একসঙ্গে আজ দাঁড়িয়ে ক্যারিয়ারের দারুণ মোড়ে।

দুদিন আগেও অনেকে ভাবতে পারেনি, আবার জাতীয় দলে দেখা যাবে রাজ্জাককে। তিনি নিজে মনের কোণে আশা নিয়ে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিলেন বটে; তবে বাস্তবতার প্রেক্ষিতে আশার সমাধি প্রায় দেখেই ফেলেছিলেন। সেই রাজ্জাক আচমকাই ফিরলেন দলে। সেটিও কিনা টেস্ট দলে, যেখানে তার অতীত বিবর্ণ বলে ভবিষ্যত সম্ভাবনাও ছিল ক্ষীণ!

নিরন্তর পরিশ্রম, ঘরোয়া ক্রিকেটে নিয়ত নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়া, বাংলাদেশের প্রথম বোলার হিসেবে প্রথম শ্রেণিতে ৫০০ উইকেটের উচ্চতায় ওঠা, নির্বাচকদের ভাবনায় বারবার নাড়া দেওয়ার পর রাজ্জাক পেলেন এই প্রতিদান।

নাঈমের গল্পটিও আশাতীত প্রাপ্তির। তবে প্রেক্ষাপট ভিন্ন। জাতীয় দলে খেলার স্বপ্ন নিয়েই নিজেকে এগিয়ে নিচ্ছিলেন। বড় দৈর্ঘ্যের ক্রিকেট বেশি ভালো লাগে বলে স্বপ্নের বেশির ভাগটা জুড়ে ছিল একদিন বাংলাদেশের টেস্ট দলে জাগা করে নেওয়া। অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে ছিলেন নিউ জিল্যান্ডে। মনে মনে ঠিক করেছিলেন, বিশ্বকাপ শেষে দেশে ফিরে নিজেকে তৈরি করবেন আরও বড় মঞ্চের জন্য। কে জানত, স্বপ্নের খোলা দুয়ার তাকে স্বাগত জানাচ্ছে এখনই!

যুব বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালে হারের পর মুষড়ে পড়েছিলেন নাঈম ও তার সতীর্থরা। মন খারাপের সেই প্রহরেই হঠাৎ ভালো লাগার নহর। এরপরই দলের ম্যানেজারের কাছ থেকে নাঈম জানতে পারলেন টেস্ট দলে ডাক পাওয়ার খবর। সতীর্থ এক জনের ক্রিকেটের সর্বোচ্চ পর্যায়ে সুযোগ পাওয়ার রোমাঞ্চ ছুঁয়ে গেল যুব দলের সবাইকেও। ম্যাচ হারের হতাশা এক সময় কেটে যাবে, কিন্তু স্বপ্নের যে আবেশ নাঈম মাখিয়ে দিয়েছেন, সেটিই তাদের টেনে নেবে অনেকদূর।

নাঈমের সামনেই যেমন একটি মানদণ্ড এই রাজ্জাক। হয়ত রাজ্জাকের টেস্ট রেকর্ড সমৃদ্ধ নয়। রঙিন পোশাকে যেভাবে আলো ছড়িয়েছেন, সেভাবে উজ্জ্বল নন সাদা পোশাকে। তবে যেভাবে লড়াই করে, হার না মানা মানসিকতার প্রমাণ রেখে এই ৩৫ বছর বয়সে ফিরলেন টেস্ট দলে, সেটি বাংলাদেশ ক্রিকেটেই আসলে বেধে দিয়েছে নতুন মানদণ্ড।

আজকের এই নাঈম বা আরও অনেকে হয়ত নতুন করে স্বপ্ন দেখবেন ক্যারিয়ারের পরিধি রাজ্জাকের মতো করতে। ১৭ বছর বয়সে শুরু করা নাঈম হয়ত ১৮ বছর পরও খেলতে চাইবেন সেই সময়কার কোনো ১৭ বছরের তরুণের সঙ্গে।

দলে ফেরার পর রাজ্জাকের সবচেয়ে বড় বিশ্বাস আর তৃপ্তি এটিই; আরও অনেকের জন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে দিয়ে যেতে পারলেন।

“আমার দলে ফেরা অবশ্যই ওদের জন্য দারুণ অনুপ্রেরণা। আমি যখন শুরু করলাম, তখন নাঈমের এক বছর বয়স। ক্রিকেট কী, সে বোঝেও না। জানতই না এমন কিছু। এখন জাতীয় দলে এসেছে, দেখছে যে আমি ফিরেছি এবং খেলছি এখনও। নাঈম এভাবেই চিন্তা করতে পারে যে আমার ক্যারিয়ারও এত বড় হতে পারে।”

“শুধু ওর না, সব তরুণ ক্রিকেটার বা অন্য আরও অনেকে যারা হতাশ হয়েছেন, তাদের সবার মধ্যেও একই বোধ কাজ করা উচিত।”

অনুপ্রেরণা শুধু অন্যের জন্যই নয়, নাঈমের শুরুর সঙ্গে নিজের ফেরায় রাজ্জাক অনুপ্রেরণা খুঁজে পেয়েছেন নিজের জন্যও।

“খুবই ভালো লাগার বিষয় এটি। নাঈম শুধু নয়, যারা এখন নতুন আছে, তারা সবাই দেখছে। আমাকে দেখেই শুধু শেখার ব্যাপার নয়, হয়ত ওদের কাছ থেকেও আমার অনেক শেখার আছে। নিশ্চয়ই এখনও আমার কিছু দেওয়ার আছে বলেই ওদের মত তরুণদের সঙ্গে দলে ফিরতে পেরেছি।”

নাঈমের শুরুর সঙ্গে রাজ্জাকের ফেরার মেলবন্ধন দারুণ সৌন্দর্যময় এই জায়গাতেই। দলে ডাক পাওয়া বা ফেরার পর দুজনই এখন একাদশে জায়গা পাওয়ার রোমাঞ্চকর অপেক্ষায়। তবে দুজনই সত্যিকার অর্থে ছাড়িয়ে গেছেন একাদশের সীমানা। শুরু আর ফেরাতেই দুজন পরস্পরের অনুপ্রেরণা। দুজনই অনুপ্রেরণা আরও অনেক অনেকের জন্য, তরুণ কিবা ‘বুড়ো!’