সাকিব, সাব্বিরের ফিফটি

উইকেট একদমই ফ্ল্যাট। কিউরেটর নিকো প্রিটোরিয়ার ভাষায় চারশ রানের উইকেট। কিন্তু সাকিব আল হাসান ও সাব্বির রহমান ছাড়া আর কারোর ব্যাটিং দেখে মনে হয়নি, উইকেটে এত রান আছে। কেউ আউট হলেন থিতু হয়ে, কেউ টিকতেই পারলেন না।

ক্রীড়া প্রতিবেদক ব্লুমফন্টেইন থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Oct 2017, 12:19 PM
Updated : 12 Oct 2017, 02:48 PM

ম্যানগাউং ওভালে বৃহস্পতিবার প্রস্তুতি ম্যাচে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে ৪৮ ওভার ১ বলে ২৫৫ রানে অলআউট হয়ে যায় বাংলাদেশ।

ওয়ানডে সিরিজের দলে থাকা কোনো বোলার নেই ক্রিকেট দক্ষিণ আফ্রিকা আমন্ত্রিত একাদশে। তারপরও ব্যাটিংয়ে খুব একটা সুবিধা করতে পারেনি অতিথিরা। বাংলাদেশের ইনিংসে দুটি ফিফটি রানের জুটি। দুটিতেই ছিলেন সাকিব। একটিতে তার সঙ্গী মাহুমদউল্লাহ, অন্যটিতে সাব্বির।

চোট থেকে পুরোপুরি সেরে না উঠায় প্রস্তুতি ম্যাচে খেলেননি তামিম ইকবাল। তার অনুপস্থিতিতে ইনিংস উদ্বোধন করেন ইমরুল কায়েস ও সৌম্য সরকার। খুব বেশি দূর যেতে পারেনি উদ্বোধনী জুটি। বিচ্ছিন্ন হয় অষ্টম ওভারে, ৩১ রানে।

শুরু থেকে দারুণ খেলছিলেন ইমরুল। শর্ট বল একদমই ভাবাতে পারেনি তাকে। দ্রুত রান তোলার দিকে ছিল তার মনোযোগ। বাঁহাতি এই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান ফেরেন সবার আগে। রবি ফ্রাইলিঙ্কের অ্যাঙ্গেলে বের হয়ে যাওয়া বলে খোঁচা মেরে ধরা পড়েন উইকেটরক্ষকের গ্লাভসে। ৩১ বলে খেলা ইমরুলের ২৭ রানের ইনিংসে চার ছয়টি।

অন্য উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান সৌম্য একদমই সুবিধা করতে পারেননি। ১ রানে স্লিপে সহজ ক্যাচ দিয়েও খায়া ঝন্ডোর হাতে জীবন পান। কিন্তু সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি।

ফ্রাইলিঙ্কের অফ স্টাম্পের অনেক বাইরের শর্ট বলে পুল করতে গিয়ে দৃষ্টিকটুভাবে মিড অনে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন তিনি। পরপর দুই বলে ইমরুল-সৌম্যকে ফিরিয়ে বাংলাদেশকে চাপে ফেলে দেন ফ্রাইলিঙ্ক।

দুই বছর আগে শেষ ওয়ানডে খেলা লিটন যেতে পারেননি দুই অঙ্কে। অফ স্টাম্পের অনেক বাইরের বলে ক্যাচ দেন উইকেটরক্ষককে।

ব্যাকফুট পাঞ্চে দারুণ এক চারে শুরু করা মুশফিকুর রহিম এগোচ্ছিলেন দ্রুত। তাকে ফাঁদে ফেলেন অ্যারন ফাঙ্গিসো। ডিপ স্কয়ার লেগ আর ডিপ মিডউইকেটে দুই জন ফিল্ডার দাঁড় করিয়ে একের পর এক শর্ট বল করে যাচ্ছিলেন বাঁহাতি স্পিনার। সাফল্যে আসে তাতেই। শর্ট বলে পুল করতে গিয়ে ডিপ মিডউইকেট ধরা পড়েন মুশফিক।

৬৩ রানে ৪ উইকেট হারানো বাংলাদেশ প্রতিরোধ গড়ে সাকিব ও মাহমুদউল্লাহর ব্যাটে। দুই জনে ৬০ বলে গড়েন ৫৭ রানের জুটি। ফাঙ্গিসোকে ছক্কা হাঁকিয়ে শুরু করা মাহমুদউল্লাহ নিচু হওয়া বলে এলবিডব্লিউ হয়ে ফিরেন।

এরপরই সাকিব-সাব্বির গড়েন ৭৬ রানের জুটি। তাদের ব্যাটে বাড়ে রানের গতি।

দারুণ সব কাভার ড্রাইভ উপহার দেন সাকিব। পুলগুলোও ছিল কার্যকর। খুব একটা ঝুঁকি নিতে দেখা যায়নি তাকে। ৫৪ বলে ফিফটি পাওয়া বাঁহাতি ব্যাটসম্যান ফিরেন ৬৭ বলে ৬৮ রান করে।

ফাঙ্গিসোকে এগিয়ে এসে কাভার দিয়ে চার হাঁকানোর পর আবার সেই চেষ্টা করতে চেয়েছিলেন সাকিব। এবার বল একটু টেনে দিয়েছিলেন বাঁহাতি স্পিনার। সহজ ক্যাচ উঠে যায় মিডঅনে।

সাব্বির খেলছিলেন নিজের মতো করেই। লংঅন দিয়ে হাঁকিয়েছেন দুটি ছক্কা। মিড অনের ছক্কা গিয়ে পড়ে গ্যালারির বাইরে। ফিফটিতে পৌঁছানোর পর উইকেটরক্ষককে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান তিনিও। ৫৪ বলে খেলা ৫২ রানের ইনিংসে দুটি চারের সঙ্গে ছক্কা তিনটি।

সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি নাসির হোসেন। ২৩ বলে ফিরেন ১২ রান করে। তার মতো মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিনের ইনিংসেও নেই কোনো চার-ছক্কা। ১৯ বলে অপরাজিত থাকেন ১৩ রানে।

একটি করে ছক্কা-চারে শেষ দিকে মাশরাফির ১৭ রানে আড়াইশ ছাড়ায় বাংলাদেশের স্কোর। বাংলাদেশ অলআউট হয়ে যায় ১১ বল বাকি থাকতে। 

দুটি করে উইকেট আমন্ত্রিত একাদশের চার বোলার। বোলিং খুব আহামরি হয়নি। উইকেট থেকেও খুব একটা সুবিধা পাননি বোলাররা। ব্যাটসম্যানরা নিজেদের ঠিকঠাক প্রয়োগ করতে না পারায় মাঝারি স্কোরেই আটকে যায় বাংলাদেশ। 

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বাংলাদেশ: ৪৮.১ ওভারে ২৫৫ (ইমরুল ২৭, সৌম্য ৩, লিটন ৮, মুশফিক ২২, সাকিব ৬৮, মাহমুদউল্লাহ ২১, সাব্বির ৫২, নাসির ১২, সাইফ ১৩, মাশরাফি ১৭, মুস্তাফিজ ০*; হেনড্রিকস ১/৪০, ফ্রেইলিঙ্ক ২/২৫, সিবোতো ২/৪৯, বুদাজা ২/৪১, দুমিনি ০/২৬, মুল্ডার ১/২৫)