এই ক্যাম্পে ডাক মানে অবশ্যই জাতীয় দল নয়। এমনকি প্রাথমিক দলও নয়। সঞ্জিতসহ আরেক তরুণ অফ স্পিনার নাঈম হাসানকে আনা হয়েছে নাথান লায়নকে সামলানোর প্রস্তুতির জন্য। তবু মেঘ কিছুটা সরে সঞ্জিতের মনে আলোর রেখা। জাতীয় দলের ক্যাম্পে থাকা, একসঙ্গে অনুশীলন করা, ড্রেসিং রুমের অভিজ্ঞতা, জাতীয় কোচদের সংস্পর্শে আশা, সবই তো একজন উঠতি ক্রিকেটারের জন্য বড় পাওয়া!
সঞ্জিতও সেটা জানেন। রোববার জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে অনুশীলনের ফাঁকে জানালেন, সুযোগটি কাজে লাগাতে চান। শিখতে চান যতটা সম্ভব।
“ইংল্যান্ড সিরিজের আগে ছিলাম, তবে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য। তিন দিন বোলিং করেছিলাম। এবার আরও বড় সুযোগ। দলের সঙ্গে থাকা, একসঙ্গে অনুশীলন করা, আমার জন্য এটা অনেক বড় সুযোগ। চেষ্টা করব সুযোগ কাজে লাগাতে।”
“আমার মূল কাজ এখানে জাতীয় দলকে সাহায্য করা, আমি সেটাতেই মনোযোগ দিচ্ছি বেশি। পাশাপাশি চেষ্টা করছি শিখতে। নিজের ভুলগুলো শোধরাতে, উন্নতি করতে। চেষ্টা করছি এখান থেকে যতটা সম্ভব শেখা যায়, যেন ভবিষ্যতে কাজে লাগাতে পারি।”
ক্যাম্পে থাকার একটা বড় দিক হলো, জাতীয় কোচদের নজরে আসা। শনিবার অনুশীলনের প্রথম দিনই যেমন সঞ্জিত ও নাঈমের বোলিংয়ের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন কোচ চন্দিকা হাথুরুসিংহে। সঞ্জিত এটিকে মানছেন বড় প্রাপ্তি।
বোলিং অ্যাকশনের প্রসঙ্গ উঠতোই। নিজে থেকেই প্রসঙ্গটি তুলে সঞ্জিত বুঝিয়ে দিলেন ব্যাপারটি কতটা ভাবাচ্ছে থাকে। ক্যারিয়ারের পথচলার শুরুতেই দুই দফায় হোঁচট খেলেন। তার প্রতিভা নিয়ে প্রশ্ন নেই। বয়সভিত্তিক ক্রিকেটের পর প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট ও লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটেও শুরুটা হয়েছে দারুণ। কিন্তু এর মধ্যেই দুবার প্রশ্নবিদ্ধ হলো অ্যাকশন।
প্রথমবার গত বছর দেশের মাটিতে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে। প্রথম ম্যাচের পর অ্যাকশন প্রশ্নবিদ্ধ হলে আর খেলতে পরেননি দলের অন্যতম সেরা অস্ত্র। সে সময় বড় দায় ছিল ম্যানেজমেন্টের। অ্যাকশন নিয়ে ফিসফাস থাকার পরও তা না শুধরে খেলিয়ে গেছে তারা। যেটার খেসারত দিতে হয়েছে মূল টুর্নামেন্টে।
পরে অ্যাকশন নিয়ে কাজ করে বিসিবির বোলিং অ্যাকশন রিভিউ কমিটির সামনে পরীক্ষা দেন। পরীক্ষায় উতরে অনুমতি পান বোলিংয়ের। জাতীয় লিগে সমস্যা হয়নি। পরে ঢাকা লিগেও শুরুর ৮ ম্যাচে নির্বিঘ্নেই পার করেছেন। ঝামেলা বাধে নবম ম্যাচে। আবারও প্রশ্নবিদ্ধ হয় অ্যাকশন। সঞ্জিত দাবি করলেন, স্রেফ দুটি ডেলিভারি নিয়ে প্রশ্ন ছিল আম্পায়ারের।
আগের বার তার জোরের ওপর করা ডেলিভারি নিয়েই ছিল আপত্তি। এবারও সেরকম কিছু হয়ে থাকতে পারে। ঢাকা লিগে চাপের ম্যাচে অনেক সময় রান ঠেকানোর কাজ করতে হয়। হতে পারে সে চেষ্টায়ই পুরোনো ভূত ফিরে এসেছিল ক্ষণিকের জন্য।
যেটিই হোক, বোলিংয়ের অনুমতি পাওয়ার পর বছর না ঘুরতেই আবার প্রশ্ন ওঠা মানে সমস্যাটি গুরুতরই। সঞ্জিতের ধারণা, আগেরবার তাড়াহুড়ো করে ম্যাচ খেলাতেই তার সর্বনাশ হয়েছে। এবার তাই যত সময় লাগুক, পুরোনো ভূতকে ‘নাশ’ করে তবেই ফিরতে চান ম্যাচে।
“আগের বার অ্যাকশন শোধরানার কাজ টানা লম্বা সময় ধরে করতে পারিনি। এটা আমার জন্য একটু ক্ষতি হয়ে গেছে। হয়ত এক মাস কাজ করেছি, এরপরই ঢাকা লিগ বা জাতীয় লিগের খেলা থাকত। আবার একটু কাজ করার পর ম্যাচ খেলতে হয়েছে। ওভাবে ঠিকভাবে সময় নিয়ে ঠিক করা হয়নি।”
“এবার এজন্য ঠিক করেছি, পুরোপুরি যেন শোধরাতে পারি। এটার জন্য যদি খেলার বাইরে থাকতে হয়, এক বছর যদি ঢাকা লিগ বা জাতীয় লিগ না খেলি, তবুও ঠিক করতে চাই। অবশ্যই স্যাররা (কোচরা) ভালো বুঝবেন। তারা যেভাবে বলবেন, সেভাবেই করব।”
“এটা অনেক শক্ত মানসিকতার ব্যাপার। কারণ সময়টা অনেক কঠিন থাকে। চেষ্টা করছি শক্ত থাকার। সোহেল স্যার (এইচপির কোচ) যেভাবে বলছেন, সেভাবে কাজ করার। টিপস গুলো কাজে লাগানোর। আশা করি অ্যাকশন ঠিক হবে।”
“আমার বাসা থেকে বাবা-মা, ভাই-বোন সবাই অনেক সমর্থন দেয়। কোচরা তো আছেনই ভালো। আশা করি, ভালো কিছু হবে।”
ক্রিকেট নিয়ে স্বপ্নের যে আকাশ এঁকেছেন মনে, সেটির সীমানা আপাতত ছুঁয়ে আছে জাতীয় দলে। সেই আকাশে তার কাছে ধ্রুবতারা মেহেদী হাসান মিরাজ, নাজমুল হোসেন শান্ত, মোহাম্মদ সাইফুদ্দিনরা। অনূর্ধ্ব-১৯ দলের সতীর্থরা তার অনুপ্রেরণার উৎস।
তবে সঞ্জিত জানেন, সেই সীমানা ছোঁয়া অনেক দূরের পথ। যে পথ পাড়ি দেওয়ার সবচেয়ে বড় জ্বালানী হতে পারে শুদ্ধ অ্যাকশন। লক্ষ্যে তিনি অটল, অ্যাকশন নিখুঁত হবেই হবে!