নির্বাচকদের ভরসা স্কোরকার্ড আর কোচের মত

এনামুল হক, লিটন দাসরা অস্ট্রেলিয়া গেলেন চোখে স্বপ্নের আবির মেখে। দারুণ কিছু করে ফিরতে চান জাতীয় দলে। হাই পারফরম্যান্স (এইচপি) দলের আরও অনেকেই চান ভালো করে নির্বাচকদের নজর কাড়তে। নির্বাচকরাও নজর রাখছেন এই সফরে। তবে এই ‘নজর কাড়া’ আর ‘নজর রাখার’ দূরত্ব আপাতত অস্ট্রেলিয়া-বাংলাদেশের দূরত্বের সমান। কোনো নির্বাচককেই যে পাঠানো হয়নি অস্ট্রেলিয়ায়!

আরিফুল ইসলাম রনিআরিফুল ইসলাম রনিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 July 2017, 02:33 PM
Updated : 3 July 2017, 02:33 PM

১৫ দিনের সফরে অস্ট্রেলিয়ায় গেছে বিসিবি এইচপি দল। ডারউইনে খেলবে পাঁচটি একদিনের আর একটি তিন দিনের ম্যাচ। ১৬ সদস্যের দলের সঙ্গে কোচ-সাপোর্ট স্টাফ আছেন, কিন্তু নেই কোনো নির্বাচক। সফরে কোন ক্রিকেটার কেমন করল, সেটি জানার জন্য নির্বাচকদের ভরসা স্কোরকার্ড আর কোচের প্রতিবেদন। নিজের চোখে দেখার উপায় নেই!

কদিন আগে ইংল্যান্ডে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতেও কোনো নির্বাচক পাঠায়নি বিসিবি। অন্যতম নির্বাচক ও চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দূত হাবিবুল বাশার কদিনের জন্য গিয়েছিলেন ব্যক্তিগত সফরে।

আইসিসি টুর্নামেন্ট নির্বাচকদের না পাঠানো নিয়ে বোর্ডের একটি ব্যাখ্যা আছে। কিন্তু এবার এইচপি দলের সফরে নির্বাচক না পাঠানো বিস্ময়কর। রোববার সংবাদ সম্মেলনে বিসিবি প্রধান নাজমুল হাসান যা বললেন, মনে হলো তিনিও বেশ অন্ধকারে আছেন।

“আইসিসি ইভেন্টের বাইরে সবগুলোতেই আমাদের নির্বাচক পাঠানো হয়। আইসিসি ইভেন্টে যেহেতু দল নির্বাচনের কিছু থাকে না, আগে থেকেই সব ফাইনাল থাকে, তাই পাঠানো হয় না।”

“এইচপিতে পাঠাতে পারত। আমাদের সবগুলো বাইরের খেলাতেই আমরা পাঠাই, এটা আমি জানি। এটা একটা ট্রেনিং সফর হিসেবে গেছে বলে হয়ত পাঠানো হয়নি নির্বাচকদের। ওরাই তো দল নির্বচন করে দিয়েছে। সেটা একটা কারণ হতে পারে। আমি ঠিক জানি না, আমি তো আজকেই ফিরলাম (দেশের বাইরে থেকে)।”

বোর্ড প্রধান না জানলেও বোর্ডের অন্য কর্তাদের অনেকে হয়ত জানেন। নাজমুল হাসানের উত্তরের সময়ই বোর্ড পরিচালক ও মিডিয়া কমিটির প্রধান জালাল ইউনুস পাশ থেকে যোগ করলেন, “এইচপির তো ওখানে ট্রেনিং ক্যাম্প হচ্ছে, কিছু প্রস্তুতি ম্যাচ হচ্ছে। রিপোর্ট পাওয়া যাবে। নির্বাচকদের যাওয়া মনে হয় জরুরি না।”

প্রথমটুকু অবশ্যই ঠিক। এইচপি দলের এই সফর তাদের অনুশীলন প্রক্রিয়ারই অংশ। কিন্তু সত্যিই কি নির্বাচকদের যাওয়া জরুরি নয়? ক্রিকেটাররা তো এই সফরে ভালো খেলে নির্বাচকদের নজর কাড়ার কথা বলেছেনই যাওয়ার আগে। প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীনও অনেক আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে এই সফরে।

“এইচপি দলের এই সফর অবশ্যই অনেক গুরুত্বপূর্ণ। ভবিষ্যতের জন্য ভাবনায় থাকা অনেকেই আছে দলে। পাশাপাশি নিকট ভবিষ্যতও আমাদের ভাবনায় আছে। জাতীয় দলে প্রয়োজন হলে এখনই যেন কাউকে নিতে পারি। গতবার যেমন মিরাজকে নিলাম এইচপি থেকেই। আসছে মৌসুমেও কাউকে প্রয়োজন হতে পারে আমাদের। এই সফরে তাই ভালোভাবেই নজর থাকবে আমাদের।”

নির্বাচকদের নজর বেশি থাকবে, এমন দুজনের নাম আলাদা করেই বললেন প্রধান নির্বাচক।

“বিজয় (এনামুল হক) কেমন করে, দেখতে চাই আমরা। বাইরে থাকার সময়ে কতটা উন্নতি করল। লিটনকে গত কিছুদিনে টেস্টেই বেশি বিবেচনা করা হয়েছে। এবার ঢাকা লিগে রান করেছে। সামনে ওয়ানডেতেও বিবেচনা করা হতে পারে। দুজনই ঘরোয়া ক্রিকেটে রান করেছে। পরের ধাপটা হলো এই এইচপি দলের সফর। এখানেও ভালো করলে জাতীয় দলে ফেরার পথ সহজ হবে।”

কিন্তু ঢাকায় থেকে ডারউইনে এনামুল-লিটনদের খেলা কিভাবে দেখবেন নির্বাচকেরা? মিনহাজুল এবার হাসেন। কোড অড কন্ডাক্টের জন্য প্রধান নির্বাচকের মুখ বন্ধ। হাসিতেই যেন বুঝিয়ে দিতে চাইলেন অসহায়ত্ব।

নিজেদের করণীয়টুকু অবশ্য করে রেখেছেন নির্বাচকরা। এইচপির প্রধান কোচ সাইমন হেলমটকে বুঝিয়ে দিয়ছেন, কোন কোন ব্যাপার দেখতে ও জানতে চান তারা। সফরের পর কোচ প্রতিবেদন দেবেন সেভাবেই।

পরবর্তী সিরিজের দল যখন গঠন করতে বসবেন নির্বাচকেরা, হয়ত এক হাতে থাকবে স্কোরকার্ড, আরেক হাতে কোচের প্রতিবেদন। এইচপির ক্রিকেটারদের পারফরম্যান্স মূল্যায়নে ওই দুটিই ভরসা!