আর এক ম্যাচ পরেই টি-টোয়েন্টিতে হয়ে যাবেন সাবেক অধিনায়ক। হয়তো প্রথমবারের মতো তিন অধিনায়কের যুগে প্রবেশ করবে বাংলাদেশের ক্রিকেট। প্রথম টি-টোয়েন্টি শ্রীলঙ্কার কাছে দল হেরেছে ৬ উইকেটে, সংবাদ সম্মেলনে ম্যাচ নিয়ে কিছু বলতে হলো না মাশরাফিকে। সবার আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে তার আচমকা অবসর।
মাশরাফি তরুণদের জন্য জায়গা ছেড়ে দেওয়া, আগামী বিশ্বকাপের জন্য দল গঠন- এমন অনেক কিছুই বললেন। কিন্তু সে সবে মন ভরলো না কারোরই, সংবাদ সম্মেলেন পরও অবসর নিয়ে অনেকক্ষণ বলতে হলো অধিনায়ককে।
“সিদ্ধান্ত নিয়েছি গতকাল রাত দুইটার দিকে, এনিয়ে ভাবতে গিয়ে সজাগ থাকতে হয়েছে সেই ভোর পাঁচটা পর্যন্ত। দুপুরে উঠেছি, সবার আগে জানিয়েছি মাকে। এরপর বাবা-স্ত্রী, মামা, ঘনিষ্ট বন্ধু-স্বজনদের জানিয়েছি।”
“এর বাইরেও অনেকেই আছেন তাদের জানিয়েছি, পিচ কিউরেটর জাহিদ রেজা বাবু ভাইকে জানিয়েছি। মাঠে আসার আগেই জানিয়েছি, বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসানকে। সতীর্থদের জানিয়েছি দুপুর সাড়ে তিনটার দিকে।”
বরাবরই মাশরাফির ফেভারিট ফরম্যাট টেস্ট। চোটে পড়ার পর থেকে ওয়ানডে নিয়েই ব্যস্ত। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট তাকে একদম টানে না সেটা বলেছেন আবারও। এই সংস্করণে খেলছিলেন একটা স্বপ্নকে সামনে রেখে।
“আমি কখনও এই ফরম্যাট উপভোগ করিনি। আমি পাঁচটি বিশ্বকাপ খেলেছি কিন্তু কখনও উপভোগ করিনি। তারপরও আমি চালিয়ে যাচ্ছিলাম, কারণ বোর্ড চাচ্ছিল, আমি অধিনায়ক হিসেবে চালিয়ে যাই। এই দলটাকে যতটা সম্ভব গড়ার জন্য কঠোর চেষ্টা করেছি। কতটা পেরেছি জানি না।”
শ্রীলঙ্কা যাওয়ার ঠিক আগে বিডিনিউজের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে বলে গিয়েছিলেন টি-টোয়েন্টি নিয়ে তার স্বপ্নের কথা। বলেছেন, ওয়ানডের মত টি-টোয়েন্টি দলটিকেও শক্ত ভিতের ওপর দাঁড় করাতে চান অবসরের আগে। প্রথম টি-টোয়েন্টির আগে সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, যেখানে দেখতে চান সেখানে নেই বাংলাদেশ দল। দলকে সেই জায়গায় নিয়ে যেতে সামনে থেকেই অবদান রাখতে চেয়েছিলেন তিনি।
সেই অবদান রাখার পথটা হয়তো ক্রমশ কঠিন হয়ে আসছিল তাই হুট করে অবসরের সিদ্ধান্ত। বোর্ড বা টিম ম্যানেজমেন্টের দিক থেকে কোনো চাপ ছিল কি না সংবাদ সম্মেলনে বারবারই জানতে চাওয়া হল তার কাছে।
“আমার মনে হয়, এই সময় বিতর্ক তৈরি না করে আমাদের ক্রিকেটের উন্নতির জন্য কাজ করা উচিত। আমাদের ক্রিকেট এগিয়ে যাক। আমার কাছে মনে হয় না, এইসব নিয়ে আলোচনা করার কিছু আছে।”
নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে বাংলাদেশের সফলতম বোলার ছিলেন রুবেল হোসেন। ৭ উইকেট পাওয়া বাঁহাতি পেসারের জায়গাই হয়নি এবার। তার জন্য মাশরাফি দায়ী করছেন নিজেকেই, তার জন্যই নাকি দলে নেই রুবেল!
“যখন দেখলাম ও দলে নেই, সেটা আমাকে খুব আহত করেছে। ও আমার জন্য খেলতে পারছে না। আমি বিশ্বাস করি, ওর প্রথম একাদশেই থাকা উচিত ছিল। যদি আমি অধিনায়ক না থাকতাম ও খেলতে পারতো। আমার চেয়ে ওর পারফরম্যান্স যেহেতু ভালো আমি মনে করি ওর খেলা উচিত।”
মাশরাফিকে মনে করিয়ে দেওয়া হল গত বছর টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি উইকেট তারই। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম টি-টোয়েন্টিতেও দলে সেরা বোলার তিনি। নিয়েছেন ২ উইকেট।
শ্রীলঙ্কায় বাংলাদেশ দল খেলছে ৫ পেসার নিয়ে। মাশরাফির সঙ্গে আছেন তাসকিন আহমেদ, মুস্তাফিজুর রহমান, মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন ও শুভাশীষ রায়। অধিনায়কের জন্য স্কোয়াড বা দলে কারোর জায়গা আটকে থাকেনি, পারফরম্যান্সে এখনও উপরের দিকেই আছেন তিনি।
একদিন বাংলাদেশের জার্সি উঠিয়ে রাখতেই হবে। মাশরাফিও হয়তো তৈরি হচ্ছিলেন তার জন্য। তবে সিদ্ধান্ত নিতে হলো হঠাৎ করেই। টেস্ট খেলেন না, তবে কি বিদায়ের পালা চলেই এলো?
“আমি এত চিন্তা করে কাজ করি না। ওয়ানডে আমি এখনও উপভোগ করছি। তবে দেশের হয়ে খেলা সত্যিই দারুণ সম্মানের। কিছুতে আলাদা করে মনোযোগ দেওয়ার জন্য না। সামনে আবার বিশ্বকাপ আছে, আড়াই বছর সময় পাবে ওরা নিজেদের খেলার উন্নতি করার।”
মাশরাফির প্রশ্নের জবাবে তৈরি হল আরও প্রশ্ন। অনেক প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে গেলেন, নিজের মতো করে কিছু ব্যাখ্যাও দিলেন। শেষ বেলায় পাওয়া গেল সত্যিকারের মাশরাফিকে।
“একটা ম্যাচ জিতলে সেটা বাংলাদেশ জিতে। এখানে মাশরাফির চেয়ে দেশ অনেক বড়। আমার মনে হয়, এই ম্যাচ হেরেছি বাংলাদেশ হেরেছে। দেশের চেয়ে বড় কিছুই আর নাই। আমরা শেষটা ভালো করতে চাই।”