টি-টোয়েন্টি সিরিজেও হারল বাংলাদেশ

স্কোর: বাংলাদেশ ১৮.১ ওভারে ১৪৮/১০; নিউ জিল্যান্ড ১৯৫/৭; নিউ জিল্যান্ড ৪৭ রানে জয়ী

অনীক মিশকাতঅনীক মিশকাতবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Jan 2017, 01:40 AM
Updated : 9 Jan 2017, 01:06 PM

বড় হারে সিরিজ খোয়াল বাংলাদেশ
 
বিশাল লক্ষ্য তাড়ায় সাব্বির রহমান ও সৌম্য সরকারের ব্যাটে এক সময়ে আশা জাগিয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু ৪৪ রানের মধ্যে শেষ ৭ উইকেট হারিয়ে দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে শেষ পর্যন্ত বড় ব্যবধানেই হেরেছে বাংলাদেশ। 
 
৪৭ রানের জয়ে এক ম্যাচ হাতে রেখেই ওয়ানডে সিরিজের মতো টি-টোয়েন্টি সিরিজও জিতল নিউ জিল্যান্ড। 
 
সাব্বিরের ৪৮, সৌম্যর ৩৯ রানের পরও ১৮.১ ওভারে ১৪৮ রানে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশের ইনিংস। ৩৬ রানে ৩ উইকেট নেন লেগ স্পিনার ইশ সোধি। কেন উইলিয়ামসন ও বেন হুইলার নেন দুটি করে উইকেট।
 
অলআউট বাংলাদেশ
 
৪৪ রানে শেষ ৭ উইকেট হারানো বাংলাদেশ গুটিয়ে যায় ১৯তম ওভারে। রুবেল হোসেনকে ফিরিয়ে ১৪৮ রানে বাংলাদেশকে থামিয়ে দেন বেন হুইলার। অতিথিরা শেষ ৪ উইকেট হারায় মাত্র ৪ রানে। 

ধসে সামিল নুরুলও
 
ধস বাংলাদেশের পিছু ছাড়েনি এ বছরও। ৩ উইকেটে ১০৪ রানের দৃঢ় ভিতের ওপর দাঁড়ানোর পর চির পরিচিত ধস নামে দলটির ইনিংসে। তার মধ্যে যোগ দেন উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান নুরুল হাসানও। ৪৩ রানের মধ্যে ষষ্ঠ ব্যাটসম্যান হিসেবে ফিরেন তিনি।

সোধির জোড়া আঘাত
 
মাহমুদউল্লাহর পর মাশরাফি বিন মুর্তজাকে বিদায় করেন ইশ সোধি। লেগ স্পিনারকে উড়াতে গিয়ে সীমানায় ক্যাচ দেন বাংলাদেশের অধিনায়ক। তিনি ফেরার সময় দলের স্কোর ১৪৭/৮, তখনও প্রয়োজন ৪৯ রান।

এবার পারলেন না মাহমুদউল্লাহ
 
রানের গতি বাড়ানোর চেষ্টায় ইশ সোধির বলে কলিন ডি গ্র্যান্ডহোমকে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন আগের ম্যাচে অর্ধশতক করা মাহমুদউল্লাহ। ১৫ বলে ১৯ রান করে তার বিদায়ের সময় দলের স্কোর ১৪৪/৭। তখনও বাংলাদেশের প্রয়োজন ৫২ রান।

দলকে বিপদে ফেলে মোসাদ্দেকের বিদায়
 
সৌম্য সরকার, সাব্বির রহমানের পর দ্রুত ফিরে যান মোসাদ্দেক হোসেন। কেন উইলিয়ামসনের বলে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে ক্যাচ দেন এই তরুণ অলরাউন্ডার।
 
চতুর্দশ ওভারে মোসাদ্দেক ফেরার সময় দলের স্কোর ১২১/৬। তখনও ৭৫ রান চাই বাংলাদেশের।

দ্রুত রান তুলে আউট সাব্বির
 
লেগ স্পিনার ইশ সোধিকে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে ফিরেন সাব্বির রহমান। ৩২ বলে তিনটি করে ছক্কা-চারে ৪৮ রান করেন এই ডানহাতি টপঅর্ডার ব্যাটসম্যান। ত্রয়োদশ ওভারে সাব্বির ফেরার সময় দলের স্কোর ১১৮/৫। তখনও ৭৮ রান চাই বাংলাদেশের।
 
শর্ট বলে সৌম্যর বিদায়
 
সাব্বির রহমানের সঙ্গে ৬.৪ ওভারে ৬৮ রানের জুটি গড়ে ফিরেন সৌম্য সরকার। ট্রেন্ট বোল্টের শর্ট বলে হুক করে ক্যাচ দেওয়ার আগে ৩৯ রান করেন এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। তার ২৬ বলের ইনিংসটি গড়া ৩টি চার ও দুটি ছক্কায়। সৌম্য ফেরার সময় দলের স্কোর ১০৪/৪।

সাব্বির-সৌম্যর অর্ধশত রানের জুটি
 
দ্রুত ৩ উইকেট হারানোর বাংলাদেশকে এগিয়ে নেন সাব্বির রহমান ও সৌম্য সরকার। ৪.৫ ওভারে আসে দুই তরুণ বিস্ফোরক ব্যাটসম্যানের অর্ধশত রানের জুটি। এতে সাব্বিরের অবদান ২২, সৌম্যর ২৮।

পাওয়ার প্লেতে তিন বাঁহাতির বিদায়
 
বিশাল লক্ষ্য তাড়ায় পাওয়ার প্লেতে ইমরুল কায়েস, তামিম ইকবাল ও সাকিব আল হাসানের উইকেট হারায় বাংলাদেশ। প্রথম ৬ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে ৪৮ রান সংগ্রহ করে অতিথিরা। পাওয়ার প্লেতে ৩ উইকেটে ৪৯ রান করেছিল নিউ জিল্যান্ড।

বাজে শটে আউট সাকিব
 
বাজে এক শটে ফিরেন সাকিব আল হাসান। বেন হুইলারের বলে কাভার-পয়েন্টে সহজ ক্যাচ দেন এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান।
 
২ বলে ১ রান করে সাকিব ফেরার সময় দলের স্কোর ৩৬/৩।

রান আউট তামিম
 
সাব্বির রহমানের সঙ্গে তামিম ইকবালের আশা জাগানো জুটি ভাঙে রান আউটে। রান নিতে অনেকটা এগিয়ে যাওয়া তামিমকে ফিরিয়ে দেন সাব্বির। বাঁহাতি ব্যাটসম্যান নিজের জায়গায় ফেরার কোনো সুযোগ ছিল না। বোলার প্রথমবার থ্রো ধরতে ব্যর্থ হলেও দ্বিতীয় প্রচেষ্টায় রান আউট করেন তামিমকে (৭ বলে ১৩)। বাংলাদেশের স্কোর তখন ৩৪/২।

প্রথম ওভারে ফিরলেন ইমরুল
 
বিশাল লক্ষ্য তাড়ায় শুরুতেই ইমরুল কায়েসকে হারায় বাংলাদেশ। মিচেল স্যান্টনারের করা ইনিংসের প্রথম ওভারে টম ব্রুসকে ক্যাচ দেন বাঁহাতি উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান।
 
শূন্য রানে ইমরুলের ফেরার সময় দলের সংগ্রহ ২/১।

মানরোর শতকে বাংলাদেশের সামনে বিশাল লক্ষ্য
 
ম্যাচের প্রথম বলে উইকেট, পাওয়ার প্লের মধ্যে কেন উইলিয়ামসনসহ বিদায় তিন ব্যাটসম্যানের। তবুও নিউ জিল্যান্ডকে কম রানে বেধে রাখা গেল না। কলিন মানরোরর ঝড়ো শতক, টম ব্রুসের অর্ধশতকে বিশাল সংগ্রহ গড়েছে স্বাগতিকরা। সিরিজে সমতা আনতে বাংলাদেশের চাই ১৯৬ রান।   
শুরু আর শেষটায় উইকেট পেল বাংলাদেশ। কিন্তু মাঝখানে ১২৩ রানের দারুণ জুটি গড়েন মানরো-ব্রুস। তাতে ৭ উইকেটে ১৯৫ রানের সংগ্রহ গড়ে নিউ জিল্যান্ড। 
 
৫৪ বলে ৭টি করে ছক্কা-চারে ১০১ রান করে ফিরেন মানরো। ৩৯ বলে ৫টি চার ও একটি ছক্কায় ৫৯ রানে অপরাজিত থাকেন ব্রুস। 
 
৩৭ রানে ৩ উইকেট নেন রুবেল হোসেন। মোসাদ্দেক হোসেন, সাকিব আল হাসান ও মাশরাফি বিন মুর্তজা নেন একটি করে উইকেট।
 
স্যান্টনার রান আউট
 
টম ব্রুসকে স্ট্রাইক দিতে বল খেলেই ছুটেন মিচেল স্যান্টনার। তবে ব্যাটের কানায় লাগা বল সরাসরি যায় বোলার রুবেল হোসেনের কাছে। রান আউটের সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া করেননি এই পেসার।
 
৪ রান করে স্যান্টনার ফিরে যাওয়ার সময় নিউ জিল্যান্ডের স্কোর ১৯৪/৭।
 
রুবেলের তৃতীয় শিকার নিশাম
 
শেষ ওভারের প্রথম বলে জেমস নিশামকে বোল্ড করে নিজের তৃতীয় উইকেট নেন রুবেল হোসেন। ৫ বলে ৫ রান করে নিশাম অলরাউন্ডার ফিরে যাওয়ার সময় নিউ জিল্যান্ডের সংগ্রহ ১৯০/৬।

রুবেলের জোড়া আঘাত
 
সপ্তদশ ওভারে তিন বলের মধ্যে দুই উইকেট নেন রুবেল হোসেন। কলিন মানরোকে কট বিহাইন্ড করার পর কলিন ডি গ্র্যান্ডহোমকে বোল্ড করেন এই পেসার। ফুল লেংথ বলে সজোরে হাঁকাতে গিয়ে ব্যাট ছোঁয়াতে পারেননি নিউ জিল্যান্ডের অলরাউন্ডার। ২ রান করে গ্র্যান্ডহোম ফিরে যাওয়ার সময় দলের সংগ্রহ ১৭১/৫।

মানরোকে ফেরালেন রুবেল
 
শতক করে দলকে বড় রানের পথে নিয়ে যাওয়া কলিন মানোরকে ফিরিয়ে ১২৩ রানের জুটি ভাঙেন রুবেল হোসেন। জায়গা করে নিয়ে খেলতে গিয়ে উইকেটরক্ষক নুরুল হাসানকে ক্যাচ দেন নিউ জিল্যান্ডের টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান।
 
৫৪ বলে খেলা মানরোর ১০১ রানের ইনিংসটি গড়া ৭টি করে ছক্কা-চারে। তিনি ফেরার সময় দলের স্কোর ১৬৯/৪।

মানরোর ঝড়ো শতক
 
টি-টোয়েন্টিতে ক্যারিয়ারের প্রথম শতকে নিউ জিল্যান্ডকে বড় সংগ্রহের পথে রাখেন কলিন মানরো। ৩১ বলে পঞ্চাশ ছোঁয়া এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যানের শতক আসে ৫২ বলে। তিন অঙ্কে যেতে ৭টি করে ছক্কা-চার হাঁকান তিনি।

মানরো-ব্রুসের শতরানের জুটি
 
ঝড়ো ব্যাটিংয়ে ৮.৪ ওভারে শতরানের জুটি গড়েন কলিন মানরো ও টম ব্রুস। জুটিতে মানরোর অবদান ৬৬ রান। নিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি খেলা ব্রুসের ৩১। সতীর্থকে স্ট্রাইক দিয়ে যাওয়ার সঙ্গে বাজে বলে এই সময়ে একটি করে ছক্কা-চার আদায় করে নেন তিনি।

মাহমুদউল্লাহর ২৮ রানের ওভার
 
নিজের প্রথম ওভারে ৪ রান দেওয়া মাহমুদউল্লাহর পরের ওভারটি যেন ছিল দুঃস্বপ্নের। খুনে মেজাজে ব্যাট করা কলিন মানরো সেই ওভার থেকে তিন ছক্কা আর দুই চারে নেন ২৮ রান। দ্বিতীয় বলটি থেকেই কেবল চার-ছয় হয়নি, সেই বলে ২ রান নিয়েছিলেন নিউ জিল্যান্ডের বাঁহাতি ব্যাটসম্যান।

ঝড় তুলে মানরোর অর্ধশতক
 
ম্যাচের দ্বিতীয় বলে ক্রিজে আসা কলিন মানরো অর্ধশতকে পৌঁছান একাদশ ওভারে। ৩১ বলে পঞ্চাশ ছোঁয়ার পথে চারটি চার ও একটি ছক্কা হাঁকান বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান।

পাওয়ার প্লেতে ৩ উইকেট
 
ম্যাচের প্রথম বলে মাশরাফি বিন মুর্তজা উইকেট নিলেও আক্রমণত্মক ব্যাটিং চালিয়ে যায় নিউ জিল্যান্ড। পাওয়ার প্লের শেষ দুই ওভারে সাকিব আল হাসান ও মোসাদ্দেক হোসেন একটি করে উইকেট নিয়ে রানের গতিতে বাধ দেন। প্রথম ৬ ওভারে ৪৯ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে কিছুটা চাপে পড়ে নিউ জিল্যান্ড।

মোসাদ্দেকের বলে বোল্ড কিউই অধিনায়ক
 
নিজের প্রথম ওভারে উইকেট পান মোসাদ্দেক হোসেনও। তার প্রথম বলে চার হাঁকানো কোরি অ্যান্ডারসন বোল্ড হন ব্যাট-প্যাডের ফাঁক গলে।
 
৪ রান করে অ্যান্ডারসনের ফেরার সময় দলীয় স্কোর ৪৬/৩।

উইলিয়ামসনকে ফেরালেন সাকিব
 
নিজের প্রথম ওভারেই কেন উইলিয়ামসনকে ফেরান সাকিব আল হাসান। দুটি বল ডট খেলার পর বাঁহাতি স্পিনারকে উড়ানোর চেষ্টায় তামিম ইকবালকে সহজ ক্যাচ দিয়ে ফিরেন নিউ জিল্যান্ড অধিনায়ক।
 
১৩ বলে ১২ রান করে উইলিয়ামসন ফিরে যাওয়ার সময় দলের সংগ্রহ ৪২/২।

প্রথম বলেই মাশরাফির আঘাত

ইনিংসের প্রথম বলেই আঘাত হানেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। অফ স্টাম্পের বাইরের বলে পয়েন্টে মোসাদ্দেককে সহজ ক্যাচ দিয়ে ফিরেন লুক রনকি।

একই একাদশ বাংলাদেশের

অনুমিতভাবেই একই একাদশ নিয়ে মাঠে নামছে বাংলাদেশ। সফরে এই প্রথমবার টানা দুই ম্যাচ অতিথিরা খেলছে একই দল নিয়ে।

বাংলাদেশ দল: তামিম ইকবাল, ইমরুল কায়েস, সাব্বির রহমান, মাহমুদউল্লাহ, সাকিব আল হাসান, সৌম্য সরকার, মোসাদ্দেক হোসেন, নুরুল হাসান, মাশরাফি বিন মুর্তজা (অধিনায়ক), রুবেল হোসেন, মুস্তাফিজুর রহমান।

নিউ জিল্যান্ড দলে বাড়তি স্পিনার 

নিউ জিল্যান্ড একাদশে নেই চোটে ছিটকে যাওয়া নিল ব্রুম। তার বদলে ফিরেছেন জেমস নিশাম। কেন উইলিয়ামসের সঙ্গে ইনিংস শুরু করতে পারেন লুক রনকি।

একজন বাড়তি স্পিনারও নিয়েছে কিউইরা। একাদশে জায়গা পেয়েছেন লেগ স্পিনার ইশ সোধি। ফিরেছেন টেন্ট বোল্ট। বিশ্রাম পেয়েছেন দুই ফাস্ট বোলার ম্যাট হেনরি ও লকি ফার্গুসন।

টস জিতলেন মাশরাফি

কেন উইলিয়ামসন চেয়েছিলেন আগে ব্যাট করতে। মাশরাফি বিন মুর্তজার চাওয়া আগে বোলিং। টসের ফল তাই খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠল না। টস জিতে বোলিং নিয়েছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক।

স্কাই টিভির পিচ রিপোর্টে ধারাভাষ্যকার স্কট স্টাইরাস জানান, উইকেট দারুণ ব্যাটিং বান্ধব। আগে-পরে ব্যাট করা খুব বেশি পার্থক্য গড়ে দেবে না। তবে মাশরাফি আগে বোলিং নেওয়ার কারণ হিসেবে জানালেন, এই মাঠে ঘরোয়া ক্রিকেটে পরে ব্যাট করা দলগুলির সাফল্যের কথা।

দলীয় পারফরম্যান্স বাংলাদেশের নজর

বিচ্ছিন্নভাবে ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স হচ্ছে কিন্তু ম্যাচ জেতানো দলীয় পারফরম্যান্সের দেখা এখনও মেলেনি। টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান সাব্বির রহমান জানান, বাঁচা-মরার ম্যাচে দল হিসেবে ভালো খেলার দিকে তাকিয়ে আছেন তারা। তিন বিভাগে এক সঙ্গে ভালো করলে জেতার ভালো সম্ভাবনা দেখেন তিনি।