সুযোগ হারিয়ে আরেকটি সিরিজ হার

শহর থেকে শহর, ভেন্যু থেকে ভেন্যু। বাংলাদেশ দল পেরিয়ে আসছে শত শত মাইল। কিন্তু পেছনে পড়ছে না দুঃসময়। নিউ জিল্যান্ডের প্রতিটি ভেন্যু অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি; তবে বাংলাদেশের জন্য যেন সুযোগ হারানোর বধ্যভূমি!

আরিফুল ইসলাম রনিআরিফুল ইসলাম রনি মাউন্ট মঙ্গানুই থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Jan 2017, 04:02 AM
Updated : 6 Jan 2017, 01:59 PM

অনেকটা দেশের মতোই আবহাওয়া, উইকেটও নিজেদের চেনা প্রাঙ্গনের মতো। কিন্তু ব্যাটে-বলে বাংলাদেশ সেই একই রকম বিবর্ণ। কলিন মানরোর খুনে সেঞ্চুরিতে তুলোধুনো হলো বোলিং। ব্যাটিংয়েও দেখা মিলল না একটি-দুটি বড় ইনিংসের। ওয়ানডের মতো টি-টোয়েন্টিতেও প্রথম দুই ম্যাচেই নিশ্চিত হলো সিরিজ হার।

দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে মাউন্ট মঙ্গানুইতে বাংলাদেশকে ৪৭ রানে হারিয়েছে নিউ জিল্যান্ড। এক ম্যাচ আগেই জিতে নিয়েছে ৩ ম্যাচের সিরিজ। নিউ জিল্যান্ডের ১৯৫ রান তাড়ায় বাংলাদেশ ১৪৮ রানে গুটিয়েছে ১১ বল আগেই।

অথচ এই ম্যাচেও ভালো সুযোগ ছিল বাংলাদেশের। বোলিংয়ে পাওয়ার প্লের ভেতরই ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে ছিল নিউ জিল্যান্ড। ব্যাটিংয়ে বাজে শুরুর পর একটি জুটিতে জেগেছিল আশা। কিন্তু শেষে আবার সেই ব্যাটিং ধস। ৪৭ রানের পরাজয় টি-টোয়েন্টিতে বড় হারই।

মানরোর ৫৪ বলে ১০১ রানের তাণ্ডব নিউ জিল্যান্ডকে তুলে দিয়েছিল রান পাহাড়ে। সেটা টপকানোর মত জোর ছিল না বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে।

প্রায় দুইশ রান তাড়ায় প্রয়োজন ছিল দারুণ সূচনা। বাংলাদেশ শুরুটা হয়েছে উল্টো। আগের ম্যাচের মতোই বাজে শটে ফিরেছেন ইমরুল কায়েস। নামের পাশে এবারও শূন্য।

ইমরুলকে হার বানানো বাজে শটে আউট সাকিব আল হাসান। মাঝে রান আউট তামিম ইকবাল। ৩৬ রানে নেই তিন সিনিয়র ব্যাটসম্যান, মাচ তো এক রকম ওখানেই শেষ! সাব্বির ও সৌম্যর দারুণ ব্যাটিংয়ে তবু জিইয়ে ছিল বাংলাদেশের আশা। সৌম্যকে নিয়ে টিম ম্যানেজমেন্টের ধৈর্য্যের অবশেষে কিছুটা ফল এসেছে। সাব্বির খেলেছেন নিজের মতোই। দুজনই খেলেছেন চোখধাঁধানো কিছু শট।

তবে ম্যাচ জিততে প্রয়োজন ছিল স্রেফ কিছু শটের চেয়েও বেশি কিছু। নিজের সেরা সময়কে মনে করিয়ে দেওয়া কিছু শট খেলে সৌম্য ফিরেছেন ২৬ বলে ৩৯ রানে। ৪০ বলে ৬৮ রানের জুটি ভাঙার পর আর দাঁড়াতে পারেননি কেউ।

সাব্বিরের বিদায়ের পর তো আবারও হুড়মুড় করে ভেঙে পড়ে ব্যাটিং। ৩২ বলে ৪৮ করে সাব্বির ফিরেছেন ছক্কার চেষ্টায়। বাংলাদেশ শেষ ৬ উইকেট হারিয়েছে ৩০ রানে। বে ওভালের এমন ব্যাটিং উইকেটে ২০ ওভারও খেলতে না পারা অপরাধের পর্যায়েই পড়ে।

অথচ ম্যাচের শুরুটা ছিল বাংলাদেশের জন্য দারুণ। ব্যাটিং উইকেট দেখেও মাঠে রান তাড়ার ভালো রেকর্ড মাথায় রেখে টস জিতে মাশরাফি নিয়েছিলেন বোলিং। ম্যাচের প্রথম বলে দলকে উইকেটও এনে দেন অধিনায়ক।

ওই ওভারের শেষ বলে চার মেরেই মানরোর শুরু। এরপর আর থামাথামি নেই। কেন উইলিয়ামস ও কোরি অ্যান্ডারসন সুবিধা করতে পারেননি। ৪৬ রানে নিউ জিল্যান্ড হারিয়েছিল ৩ উইকেট। সেই চাপ উড়ে গেছে মানরোর খুনে ব্যাটিং আর টম ব্রুসের সঙ্গে অসাধারণ জুটিতে।

মানরোর ব্যাটিংয়ে ছিল না চাপের প্রতিফলন। উইকেটের চারপাশে উড়িয়েছেন বল, নিজের জোনে বল পেলেই চালিয়েছেন। দারুণ সঙ্গ দিয়ে গেছেন ব্রুস। চতুর্থ উইকেটে ৬৭ বলে ১২৩ রানের জুটি গড়েছেন দুজন।

৩১ বলে মানরো ছুঁয়েছিলেন অর্ধশতক। এরপর আরও বেপরোয়া। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের এক ওভারেই তিন ছক্কা ও দুই চারে নেন ২৮ রান! দুটি ছক্কা ছিল তার ট্রেডমার্ক সুইচ হিটে। আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি স্পর্শ করেন ৫২ বলে। তুলোধুনো করেছেন সবাইকেই, কেবল মুস্তাফিজের ৭ বলে নিতে পেরেছেন ৪ রান।

নিউ জিল্যান্ডের হয়ে এটি টি-টোয়েন্টিতে চতুর্থ সেঞ্চুরি। ব্রেন্ডন ম্যাককালাম একাই করেছিলেন দুটি, একটি মার্টিন গাপটিল। বাংলাদেশের বিপক্ষেও চতুর্থ সেঞ্চুরি।

সেঞ্চুরির পরপরই মানরো উইকেট উপহার দিয়ে আসেন রুবেল হোসেনকে। ৭টি করে চার ও ছক্কায় ১০১। ব্রুসের সঙ্গে ১২৩ রানের জুটি চতুর্থ উইকেটে নিউ জিল্যান্ডের রেকর্ড। সব মিলিয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।

দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি খেলতে নামা ব্রুস অপরাজিত থেকে যান ৩৯ বলে ৫৯ রানে। নিউ জিল্যান্ডে ইনিংস তখন যেন মাউন্ট মঙ্গানুইয়ের পাহাড়!

সেই পাহাড় জয়ের চেষ্টায় বাংলাদেশ মুখ থুবড়ে পড়ল মাঝপথ থেকেই। হতাশার প্রহর তাই দীঘায়িত হলো আরও!

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

নিউ জিল্যান্ড: ২০ ওভারে ১৯৫/৭ (রনকি ০, উইলিয়ামসন ১২, মানরো ১০১, অ্যান্ডারসন ৪, ব্রুস ৫৯*, ডি গ্র্যান্ডহোম ২, নিশাম ৫, স্যান্টনার ৪, হুইলার ০*; মাশরাফি ১/৩২, রুবেল ৩/৩৭, মুস্তাফিজ ০/৩০, সাকিব ১/৩২, মোসাদ্দেক ১/২২, রিয়াদ ০/৩২)

বাংলাদেশ: ১৮.১ ওভারে ১৪৮ (তামিম ১৩, ইমরুল ০, সাব্বির ৪৮, সাকিব ১, সৌম্য ৩৯, মাহমুদউল্লাহ ১৯, মোসাদ্দেক ১, নুরুল ১০, মাশরাফি ১, রুবেল ১, মুস্তাফিজ ০*; স্যান্টনার ১/১৪, বোল্ট ১/২৮, হুইলার ২/১৬, ডি গ্র্যান্ডহোম ০/৩৩, সোধি ৩/৩৬, উইলিয়ামসন ২/১৬)

ফল: নিউ জিল্যান্ড ৪৭ রানে জয়ী

সিরিজ: ৩ ম্যাচ সিরিজে নিউ জিল্যান্ড ২-০তে এগিয়ে

ম্যান অব দ্য ম্যাচ: কলিন মানরো